আগের পর্ব
আমরা দুজনে প্রায় জড়াজড়ি করে বসে আছি। ভুল হলো ও আমাকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে। আর টুকটাক এটা ওটা কথা বলছি। এমন সময় ৬-৭ জন লোক কোথা থেকে যেন আমাদের সামনে এসে আমাদের চারপাশে ঘিরে দাঁড়িয়ে পড়ল। আমাদের এটা ওটা জিজ্ঞেস করল। কোথায় বাড়ি, মেয়েটা কে ইত্যাদি, ইত্যাদি। এরপর তারা মেয়েটিকেও সেই একই কথা জিজ্ঞেস করল। তারপর ওকে জিজ্ঞেস করল আমি ওর কি হই। ও একবাক্যে বলে দিল আমার স্বামী। নতুন বিয়ে হয়েছে আমাদের তাই ওকে নিয়ে একটু ঘুরতে বের হয়েছি। তারপরও লোকগুলো আজেবাজে কথা বলার চেষ্টা করতে আমি প্রতিবাদ করে উঠি। ঐ এলাকার এক নেতা আমার পরিচিত ছিল, আমি তার নাম তাদের বলতেই তারা চুপসে যায়। এর পর হঠাৎ করেই যেমন এসেছিলো তেমনি হঠাৎ করেই কোথায় যেন হারিয়ে গেলো। আমি তখন মেয়েটাকে বলি:
- তুমি কি ওদের চেনো?
- না, চিনি না। কিন্তু যাই হোক, এখন চল এখান থেকে চলে যাই।
- কেনো? কোথায় যাবো? দেখলে না তারা চুপচাপ চলে গেলো। এখন যতক্ষণ ইচ্ছে বসে থাকবো কোন সমস্যা নেই, কেউ কিছু বলবে না।
মেয়েটা তখন আবারও আমাকে জড়িয়ে ধরে বেশ আবেগ নিয়ে কথা বলতে লাগল। আমি শুধুমাত্র হু হ্যা করে তার কথার জবাব দিচ্ছিলাম।
এভাবে বেশ কিছু সময় কাটার পরে ও আমাকে বলল
- চল আমাদের কলেজের দিকে যাই। ওখানে একটু বসে তারপর বাসায় চলে যাবো।
- কেনো তোমার না আজ সারা দিন থাকার কথা আমার সাথে। এর পর দুজনে বিকেলে কেক কেটে দুজনের জন্মদিন একসঙ্গে পালন করে তারপর আমার ফিরে যাওয়ার কথা।
- তা তো ঠিক আছে, কিন্তু আমার ভালো লাগছে না। তাই বলছি কলেজে যাওয়ার পথে একটা দোকান রয়েছে সেখান থেকে কেক কিনে কলেজের মাঠে গিয়ে দু'জনে খোলা আকাশের নিচে কেক কেটে সেলিব্রেট করে তারপর ফিরে যেও।
- ওকে ঠিক আছে চল।
ওখান থেকে উঠে একটা রিকশা নিয়ে দু'জনে আবার চললাম তার কলেজের দিকে। পথে নির্দিষ্ট দোকান থেকে একটা বেশ বড় সাইজের কেক, মোমবাতি ও একটি ছুরি কিনে নিয়ে চললাম কলেজের মাঠে। নির্ধারিত যায়গায় পৌছে একটা গাছের নিচে ছায়ায় বসে পড়লাম দু'জনে। মাঠের সবুজ কচি, নরম দূর্বা ঘাসের ওপর কেক, মোমবাতি সাজিয়ে দিয়ে দু'জন দু'জনকে উইশ করে কেক কেটে আমাদের জন্মদিন পালন করি।
- আচ্ছা ঠিক আছে, তাহলে সোনা এবার চলি, তোমার সঙ্গে সময়গুলো আমার অনেক ভালো কেটেছে। আশা করি তুমিও সময়টা বেশ এনজয় করেছো।
ও কোন কথা বলছে না। শুধু চুপচাপ আমার চোখের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। আমিও তার চোখের দিকে তাকালাম। দেখি তার চোখে জল। আমারও হৃদয়টা কেঁপে উঠল।
আজ দুজনার দুটি পথ দুটি দিকে গেছে বেঁকে- কোথাও গানটি বাজছিল, কোনও এক দোকানে বা কারও বাড়িতে।
-২৫ মে, ২০১৭।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০১৯ দুপুর ২:৩২