somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা-১, ২

১৯ শে মে, ২০১৩ বিকাল ৩:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা-১

*************

আপনার নষ্ট মোবাইল ফোন অষ্টম শ্রেণী পাশ মেকানিক দ্বারা ঠিক করালে চার-পাঁচশ টাকার কম তো দেন না। তাহলে সারা জীবন সর্ব ক্ষেত্রে ভাল ফলাফল করে এতো বছর পরে যখন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হয়েছি তখন আপনার শরীর ঠিক করার সন্মানি হিসাবে আমাকে পাঁচশ টাকা দিতে আপনার এতো কষ্ট হয় কেনো?

মোবাইলের চেয়ে শরীরের মূল্য কি কম, নাকি অদৃশ্য বুদ্ধি শ্রমের চেয়ে দৃশ্যমান ঠোকাঠুকি শ্রমের মূল্য আপনার কাছে বেশি?

আর ফ্রি চিকিৎসা???

বাংলাদেশে গরীবের জন্য কোথাও কি ফ্রি খাওয়ার ব্যবস্থা আছে?

কোথাও কি ফ্রি কাপড়ের ব্যবস্থা আছে?

কোথাও কি ফ্রি বাসস্থান আছে?

আপনি ঢাকা থেকে চট্রগ্রামে কি ফ্রি যেতে পারেন?

অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান এই মৌলিক অধিকারগুলোই যখন ফ্রি পাওয়া যায় না তখন চিকিৎসার মতো এতো ব্যয়বহুল বিজ্ঞান কী ভাবে ফ্রি দেয়া সম্ভব!

স্বাস্থ্য শুধু সেবা নয়, স্বাস্থ্য একটি সেবামূলক পেশা।

পেশাকে পেশাদারিত্বের সাথে বেড়ে উঠতে না দিলে এর সঠিক মান ও বিকাশ অসম্ভব।



চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা-২

*************

স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মাঝে মধ্যে যাওয়ার সুযোগ হয়। নীতিনির্ধারকগণ আমাদের সুন্দর সুন্দর কথা বলে নছিহত করে থাকেন। ‘সেবার মানসিকতা নিয়ে আপনাদের কাজ করে যেতে হবে’—এই কথাটি তাঁরা প্রায়ই বলে থাকেন। কিন্তু এই কথাটির মানে আসলে কী? মহামান্যগণের শ্রুতিমধুর এই কথা শুনে আমরা কী পরবর্তী দিন থেকে সেবামূলক মানসিকতায় আপ্লুত হতে থাকবো? রোগিদের জন্য জান-প্রাণ দিয়ে দিনে ২০ ঘন্টা সার্ভিস দিবো?

আসলে ‘সেবার মানসিকতা’ একটি অপরিণত মস্তিষ্ক প্রসূত রোম্যান্টিক শব্দ ছাড়া আর কিছুই নয়। সেবা প্রদানের পদ্ধতি যদি আধুনিক ও যুগোপযোগী না হয় সেবার মানও যুগোপযোগী হবে না। বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরণের চিকিৎসক আছেন। শতকরা আশি ভাগ লোকের চিকিৎসা দেন গ্রাম-চিকিৎসক, বংশগত চিকিৎসক (যাদের দাদা-বাবা-ছেলে সবাই চিকিৎসক), হোমিও চিকিৎসক, আয়ুর্বেদি চিকিৎসক ও ওষুধের দোকানদারগণ। বাকি বিশ ভাগ লোকের চিকিৎসা দেন এমবিবিএস/বিডিএস ডিগ্রীধারী গ্র্যাজুয়েট চিকিৎসকগণ। আবার এই বিশ ভাগ লোকের অনেকেই পুর্বোক্ত তথাকথিত চিকিৎসক দ্বারা মেল-ট্রিটমেন্ট পেয়ে থাকেন । মজার ব্যাপার হচ্ছে, এরপরেও এ দেশের অনেক এমবিবিএস চিকিৎসক বেকার জীবন অতিবাহিত করছেন কিংবা স্বল্প বেতনে কোন ক্লিনিকে কাজ করছেন। যে দেশে চিকিৎসকের এতো ঘাটতি সে দেশে মেধার এই অপচয় কেনো? কী এর কারণ? চিকিৎসকেরা গ্রামে যেতে চান না কেনো?

বাংলাদেশে বর্তমানে যা জরুরী তা হলো, কে কতোটুকু চিকিৎসা দিবে তা নির্ধারন করা বিষয়ক একটি নীতিমালা করা। সামান্য সর্দি-জ্বরের কারণেই কেউ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হন, আবার কেউ কেউ দোকান থেকেই ওষুধ কিনে খান। কোনটিই ঠিক নয়। চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় “রেফারেল পদ্ধতি” খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি-বেসরকারি দুটো পদ্ধতি রেখেই রেফারেল পদ্ধতি চালু করা যায়। একজন রেজিষ্টার্ড গ্রাম চিকিৎসক কিংবা ডিপ্লোমা চিকিৎসক কিংবা গ্রাজুয়েট চিকিৎসক কতোদূর পর্যন্ত রোগিকে চিকিৎসা দিতে পারবেন তা নির্ধারণ করতে হবে সবার আগে। প্রয়োজন মতো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে রেফার করে চিকিৎসা দিতে হবে। ইমারজেন্সি চিকিৎসার জন্য থাকবে ইমারজেন্সি সিস্টেম।

প্যারাসিটামল, ওআরএস ইত্যাদি প্রাথমিক ওষুধগুলো ছাড়া বাকি ওষুধ রেজিষ্টার্ড চিকিৎসকের প্রেসক্রিপসান ছাড়া বিক্রি হওয়া অনুচিত। এটি বন্ধ করলে ওষুধের অপব্যবহারও হ্রাস পাবে।

সরকারি চিকিৎসকগণ সরকারি হাসপাতালেই প্র্যাকটিস করা উচিৎ। এবং তাঁদের প্রতিটি রোগি দেখা সাপেক্ষে ও অন্যান্য সার্ভিসের জন্য ফি দিতে হবে। সেই ফি রোগিকেই পরিশোধ করতে হবে কিংবা বিশেষ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র পরিশোধ করবে। প্রাইভেট চিকিৎসকগণ প্রাইভেট প্র্যাকটিস করবেন। প্রাইভেট ডায়াগনোস্টিকের চেম্বারগুলো সকাল-সন্ধ্যা দুই শিফটে চালু রাখতে হবে। বাংলাদেশের মতো অধিক জনসংখ্যার দেশে একই স্থাপনা দুই শিফট ব্যবহারের কনসেপ্ট চালু করতে হবে। এতে করে অপ্রয়োজনীয় স্থাপনা তৈরি হ্রাস পাবে।

একাডেমিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষকগণের জন্য হাসপাতালেই রাউণ্ড, রোগি দেখা, ছাত্র পড়ানো বাবদ ভাল সন্মানি পাওয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে। ইন্সটিটিউশনাল প্রাকটিসের ব্যবস্থা থাকা উচিৎ। শিক্ষকগণ যদি জেনারেল প্র্যাকটিসে ব্যস্ত থাকেন তবে শিক্ষকতা ও গবেষণার গুণগত মান ব্যাহত হয়। আরও স্পেসালাইজড ইন্সটিটিউট গড়ে তুলতে হবে বিশেষায়িত সেবা প্রদানের জন্য।

রেফারেল পদ্ধতি, রেজিষ্টার্ড চিকিৎসকের প্রেসক্রিপসান ছাড়া ওষুধ বিক্রি নিয়ন্ত্রণ, ইন্সটিটিউশনাল প্র্যাকটিস এবং সরকারি-বেসরকারি চিকিৎসকদের চিকিৎসা সেবা প্রদান পদ্ধতির যুগোপযুগী নীতিমালা করলে এমনিতেই সেবার মান উন্নত হবে। সকল শ্রেণীর চিকিৎসক স্ব স্ব ক্ষেত্রে ভালো অবস্থানে থাকবেন এবং রোগিরাও হয়রানির শিকার না হয়ে সঠিক সেবা পাবেন।

মহামান্যগণ শুধু সেবার মানসিকতা উন্নয়নের ছবক না দিয়ে সেবা প্রদান পদ্ধতি উন্নয়নের পরিকল্পনা হাতে নিলে দেশ-জাতি-চিকিৎসকসহ সবার উন্নয়ন হবে বলে আমার একান্ত বিশ্বাস।

(চলবে...
১৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×