আলফ্রেড নোবেলের উইলঃ ১৮৯৫ সালের ২৭ নভেম্বর আলফ্রেড নোবেল প্যারিসের সুইডিশ-নরওয়েজিয়ান ক্লাবে তাঁর তৃতীয় এবং শেষ উইল স্বাক্ষর করেন । আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুর পর যখন তাঁর এই উইল পড়া হয় তখন সুইডেনে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রচুর বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল কারণ তিনি নোবেল পুরষ্কারের জন্য প্রচুর অর্থ রেখে গিয়েছিলেন । তাঁর পরিবার নোবেল পুরষ্কার প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিল এবং তিনি পুরষ্কারদাতা হিসেবে যাঁদের মনোনীত করেছিলেন তাঁরাও পুরষ্কার প্রদানে অসম্মতি জানিয়েছিলেন । নানা চড়াই উতরাই এর পর ১৯০১ সালে নোবেল পুরষ্কার প্রদান শুরু হয় । শুধুমাত্র শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয় অসলো, নরওয়ে থেকে । বাকি ক্ষেত্রে স্টকহোম, সুইডেনে এই পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয় ।
অর্থনীতি ছাড়া অন্য বিষয়গুলোতে ১৯০১ সাল থেকে পুরস্কার প্রদান করা হচ্ছে, কিন্তু অর্থনীতিতে পুরস্কার প্রদান শুরু হয়েছে ১৯৬৯ সালে । আলফ্রেদ নোবেল তার উইলে অর্থনীতির কথা উল্লেখ করেননি । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য ১৯৪০ থেকে ১৯৪২ সাল পর্যন্ত পুরস্কার প্রদান বন্ধ ছিল । প্রত্যেক বছর পুরস্কারপ্রাপ্তদের প্রত্যেকে একটি স্বর্ণপদক, একটি সনদ ও নোবেল ফাউন্ডেশন কর্তৃক কিছু পরিমাণ অর্থ পেয়ে থাকেন । ২০১২ খ্রিস্টাব্দে এই অর্থের পরিমান ছিল ৮০ লক্ষ সুইডিশ ক্রোনা । নোবেল পুরস্কার মৃত কাউকে দেয়া হয় না । লরিয়েটকে অবশ্যই পুরস্কার প্রদানের সময় জীবিত থাকতে হবে ।
নোবেল পুরষ্কার -১৯০১:
পদার্থবিজ্ঞানঃ
Wilhelm Conrad Röntgen (ভিলহেলম কনরাড রন্টগেন) রঞ্জন রশ্নি আবিষ্কার এবং এ ধরণের রশ্মির যথোপযুক্ত ব্যবহারিক প্রয়োগে সফলতা অর্জনের জন্য তিনি ১৯০১ সালে পদার্থবিজ্ঞানে প্রথম নোবেল পুরস্কার লাভ করেন । ২০০৪ সালে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব পিওর অ্যান্ড কেমিস্ট্রি তার নামে ১১১তম মৌলের নামকরণ করে রন্টগেনিয়াম । তিনি মার্চ ২৭, ১৮৪৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ফেব্রুয়ারি ১০, ১৯২৩ সালে মৃত্যুবরণ করেন ।
রসায়নঃ
Jacobus Henricus van't Hoff (ইয়াকোবুস হেনরিকুস ফান্ট হফ, জুনি.) ছিলেন একজন ডাচ জৈব রসায়নবিদ এবং রসায়নে প্রথম নোবেল পুরস্কার বিজয়ী । তিনি রাসায়নিক গতিবিদ্যা, অভিস্রবণ চাপ প্রভৃতি সংশ্লিষ্ট গবেষণার জন্য বিশেষভাবে পরিচিত । তিনি ৩০ আগস্ট ১৮৫২ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১ মার্চ ১৯১১ সালে মৃত্যুবরণ করেন ।
চিকিৎসাঃ
Emil Adolf von Behring (এমিল ভন বেহরিং) নোবেল পুরস্কার বিজয়ী জার্মান জীব বিজ্ঞানী । তিনি জার্মানির মারবার্গের অধিবাসি ছিলেন । সিরাম থেরাপি (serum therapy) আবিষ্কারের জন্য চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান । তাঁর জন্ম মার্চ ১৫, ১৮৫৪ সালে এবং মার্চ ৩১, ১৯১৭ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন ।
সাহিত্যঃ
Sully Prudhomme (রনে ফ্রাঁসোয়া আরমঁ সুলি প্রুদোম) একজন ফরাসি সাহিত্যিক । ১৮৩৯ সালে ফ্রান্সের প্যারিসে জন্মগ্রহণ করেন । তার নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পিছনে কবিতার মান ও বিষয়বস্তু বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে । ১৯০১ সালের ডিসেম্বর ১০ তারিখে নোবেল পুরস্কারের অনুষ্ঠানে প্রুদোম উপস্থিত থাকতে পারেননি অসুস্থতার জন্য । ১৯০৭ সালের ৭ সেপ্টেম্বর তারিখে প্যারিসের দক্ষিণে অবস্থিত নিজ বাসভবন Chatenay Malabry-তে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর পূর্বে নোবেল পুরস্কার থেকে প্রাপ্ত সব অর্থ দিয়ে একটি অনুদানমূলক পুরস্কারের ব্যবস্থা করে যান। এটি নবীন লেখকদের উৎসাহ দেয়ার জন্য প্রদান করা হয়। এখনও ফ্রান্সে এই পুরস্কারের রীতি চালু আছে ।
শান্তিঃ
Jean Henri Dunant (জীন হেনরি ডুনান্ট) জন্ম: ৮ মে, ১৮২৮- মৃত্যু: ৩০ অক্টোবর, ১৯১০) একজন সুইস ব্যবসায়ী এবং সমাজকর্মী । ১৮৫৯ সালে তার একটি ব্যবসায়িক সফরে, তিনি ইতালির সলফেরিনো যুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেছেন । “সলফেরিনোর স্মৃতি” নামক বইয়ে তিনি তার সকল স্মৃতি ও অভিজ্ঞতা সংরক্ষন করেছিলেন । যা পরবর্তীতে তাকে ১৮৬৩ সালে আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটি প্রতিষ্ঠায় অনুপ্রেরনা দিয়েছে । ডুনান্টের ধারনার উপর ভিত্তি করে ১৮৬৪ সালে জেনেভা কনভেনশন তৈরি হয়। ১৯০১ সালে ফ্রেদেরীক পাসীর সাথে মিলিত ভাবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
Frédéric Passy (ফ্রেদেরিক পাসি) জন্ম: ২০ মে, ১৮২২ – মৃত্যু: ১২ জুন ১৯১২ ছিলেন একজন ফরাসী অর্থনীতিবিদ এবং শান্তিকর্মী ।
তথ্যসূত্রঃ http://www.wikipedia.org এবং http://www.nobelprize.org
আগামী পর্বে আসছেঃ নোবেল পুরষ্কার -১৯০২
আগের পর্ব দেখতে Click This Link
ফেসবুকে আমিঃ http://www.facebook.com/roysulomar