somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালোবেসে, সখী, নিভৃতে যতনে আমার নামটি লিখো-তোমার মনের মন্দিরে

১৬ ই মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কথাটা বলবে কি বলবে না তা নিয়ে ইলা অনেক দ্বিধাতে আছে ,একবার ভাবছে বলে ফেলি পরক্ষনেই মনে হচ্ছে যদি সব ভেস্তে যায় তবে রবির সামনে সে মুখ দেখাবে কি করে।

রবি হল সেই ছেলেটি যাকে ইলা গত চারটি বছরের বেশী সময় ধরে মনে মনে ভালোবেসে এসেছে, কিন্তু কোনোদিন মুখ ফুটে বলতে পারে নি। ওদের প্রথম দেখা হয় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেদিন ইলার এক বান্ধবী প্রীতি তার প্রেমিক অপুর সাথে ঝগড়া করে এক পাতা হিস্টাসিন খেয়ে ফেলেছিল। এর আগে ও পরে প্রীতি এই ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা অনেকবারই ঘটিয়েছি, কখনও ছুরি দিয়ে হাতে অপুর নাম লিখা কখনো বিষ পান এই সব চলতোই, সে কাহিনী না হয় অন্য একদিন। যাই হোক অপু ঘটনা জানার পর প্রীতিকে নিয়ে আসে রামেকের ইমারজেন্সিতে। প্রাথমিক চিকিৎসা মানে ওয়াশ করার পর ওকে মহিলা ওয়ার্ড এর মেঝেতে সিট পেতে রেখে যায়। বলা বাহুল্য যে খুব কমদিনই হাসপাতালে সিট পাওয়া যায়। খবরটা হলের এক বান্ধবী ইলাকে দিয়েছিল ফোন করে। ইলা তখন ছাত্র পড়াচ্ছিল। খবরটা শুনেই সে হাসপাতালে দৌড়ে গেল। বেশ কিছু বান্ধবী এল আবার চলেও গেল, রাতে থাকার জন্য কেবল ইলা আর এক বান্ধবী রয়ে গেল। এদিকে অপুর সাথে অপুর কিছু বন্ধু,রুমমেট এসেছিল, তাদের মধ্যে রবি ছিল একজন। সেদিনই পরিচয় হয় ইলার রবির সাথে। রবি আগে থেকেই ইলাকে চিনত, চিনবে না কেন ক্যাম্পাসে মেয়ে হাতে গোনা , তার উপর একই বিল্ডিঙে ক্লাস করে।

কিন্তু ইলা খুবই বিস্মিত হল এইভেবে যে সে এতদিন চিনে নি কেন রবিকে।এরপর ওদের ক্যাম্পাসে ,ফেসবুকে প্রায়ই কথা হত , বলা যায় লিখিত বন্ধু না হলেও মৌখিক ভাবে একে অপরের ভালো বন্ধু হয়ে গেল ।গল্পে গল্পে ইলা জেনেছিল রবির প্রেমিকার কথা , অনেক রূপবতী মেয়ে ,ধনীর দুলালী । কিন্তু বছর ঘুরতেই ইলা জানতে পারলো রবির প্রেমে ভাঙ্গন হয়েছে । সেই প্রেমিকার পরিবার বাড়ি নেই গাড়ি নেই এমন ছেলের কাছে তার মেয়ের বিয়ে দিবে না । সম্ভবত মেয়েটিও তার মনের মানুষের ধরন বদলে নিয়েছে । কথায় আছে “চোখের আড়াল হলেই মনের আড়াল হয়” । আমার ধারনা মেয়েটি সেজন্যই দূরে সড়ে গিয়েছে ।

এই ছ্যাঁকা খাওয়া প্রেমিকের গল্প শুনতে কোনোদিনই খারাপ লাগত না ইলার । কোনদিন প্রত্যাশাও করেনি সে রবিকে পাবার । তবুও মনে মনে ভালোলাগাটাই আফসোস হয়ে ধরা দিত । কেন ইলা ভাবতে পারতো না যে রবির ভালবাসার পাত্র সেও হতে পারে ? এজন্যই যে ইলা অতি সাধারণ নিম্ন মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে ,দেখতে মোটেই আহামরি কিছুই নয় । আর ভালোবাসা জয় করার পেছনে যে সময় আর মন ব্যয় করতে হয় তা কোনদিন ইলা করেনি । সে মনে করত তার পরিবারই সেই দায়িত্ত নিবে , ওর মনের সিদ্ধান্ত ভুলও হতে পারে । কোনদিন মুখ ফুটে আকারে ইঙ্গিতে বলে নি সে তার ভালোলাগার কথা ।

আর রবি সেই আগের জায়গাতেই আছে আজও পুরনো প্রেমের স্মৃতি নিয়ে আছে। ওর ভাষায় “প্রথম প্রেমের স্মৃতি ভোলা কঠিন পরের গুলা ডাইল ভাত” । এদিকে রবির এক বন্ধু মিশু ইলার ভালো বন্ধু , সে একদিন হঠাৎ করেই ইলাকে প্রপোজ করে ফেলল। মিশু অনেক ভালো একটা ছেলে ফেলার মতো নয় রবির চাইতে কোন অংশে কমও নয় কিন্তু ইলা তবুও সাথে সাথে প্রত্যাখ্যান করে ফেলল কেননা সেতো কারো সাথে কোনোদিন প্রেম করবে ভাবে নি ,আর ওর তো ভাললাগে অন্য একজনকে। সেই একজন মানে রবি যে কিনা আবার মিশুর হয়ে ওকালতি করল , ফোন দিয়ে ইলাকে বলল। ইলার তখন মাটির নিচে ঢুকে যেতে ইচ্ছে হচ্ছিল ,কেননা ও মুখ ফুটে বলতে পারছিল না যে “আমিতো মিশুকে না রবি তোমাকে পছন্দ করি” । কিন্তু পারে নি বলতে চুপ করে শুনে গেছে । এরপর প্রায় অনেকদিন গেছে ওরা এখনও বন্ধুই আছে , কথা হয় মাঝে মাঝে । রবি খুব ব্রাইট ছাত্র ছিল তাই পাশ করার সাথে সাথেই সে একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে জব পেয়ে যায় আর ইলা প্রায় বেশ কিছুদিন পর আরেকটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে জব পায় । নিয়তির কি চরম পরিহাস ওরা দুজনারই অফিস একই বিল্ডিঙয়ে । মাসে কালে ভাদ্রে কখনও দেখা হয়ে যায় । যেদিন ইলা চায় আজ দেখা হোক সেদিন হয়না আর যেদিন চায়না সেদিনই দেখা হয়ে যায় । এভাবেই লুকোচুরি চলছে ইলার মনের ভিতর।
আজ পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে ইলাকে । ইলা বরাবরই পরিবারের মতের বিপক্ষে কোনদিন চলে নি , আজও তার ব্যতিক্রম নয় । সে তার পরিবারের মতেই বিয়ে করবে । কিন্তু যখনি কোন প্রস্তাব আসে তখন ইলা না করেনা কিন্তু সারারাত ভেবে ভেবে ব্যাকুল হয় কিভাবে ভুলে যাবে না পাওয়া ভালোবাসাকে । তবুও প্রতিদিন ভোর হয় আর সেই প্রভাতে নিজেকে সামলে নিয়ে ইলা ভাবে যা হবার হবে তবুও সে রবিকে মুখ ফুটে কোনদিন বলবে না ।কিন্তু আজ তার ব্যতিক্রম আজ পাত্রপক্ষ দেখতে এসে কলমা পড়িয়ে দিবে। সব দেখাদেখি আগেই শেষ হয়েছে । পাত্র নিয়ে ইলার কোন মাথাব্যাথা নেই, পরিবার থেকে যাকে ঠিক করেছে সেই উত্তম । কিন্তু মনের মাঝে যাকে নিয়ে তার এত আকাঙ্ক্ষা তাকে ছাড়া কি চলবে ?

আর কিছুক্ষনের মাঝেই চলে আসবে সবাই। ইলা ফোনটা হাতে নিয়ে ভাবছে ফোনটা করে ফেলবে কিনা ,যা হবার হবে ।

কল্পনায়ঃ
ইলাঃ “আমি কিছু কথা বলব কিছু মনে কোরো না রবি , আজ আমায় পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে হয়তো বিয়ে হয়ে যাবে ।”
রবিঃ “ওও গ্রেট ,দাওয়াত পাচ্ছি কখন ?”
ইলাঃ “আমি জানি না তুমি কিভাবে নিবে তবে আজ শেষ সময়ে না বলে থাকতে পারছি না , আমি গত চার বছরের বেশী সময় ধরে তোমাকে ভালোবেসে এসেছি ।আমি কি তোমার কাছ থেকে কোন সাহায্য প্রত্যাশা করতে পারি ?”
রবিঃ

............পিনপাতন নিরবতা ফোনের এপারে ওপারেও ...............

না ইলা বলে নি কেননা “ না বলা ভালোবাসার কষ্ট প্রত্যাক্ষিত প্রেমের চাইতে উত্তম” ।তাইতো ইলা হয়তো ফোন হাতে নিয়েও রেখে দিবে । বিয়ের আসরে কবুল বলবে। মনের গভীরে কারো জন্য ভালোলাগা গুলোকে মমি করে রেখে দিবে যেখানে কারো কোনদিন প্রবেশ হবে না । হয়ত সুখী হবার আশায় বিয়ের পর স্বামীর মাঝে রবিকে খোঁজার চেষ্টা করবে , মেয়েরা এমনই মেনে নেয়ার চেষ্টায় সর্বসুখ বিসর্জন দিয়ে দেয়।

রবি ঠাকুরের গানটি মনে আসছে ইলার ________

“ভালোবেসে, সখী, নিভৃতে যতনে
আমার নামটি লিখো-তোমার
মনের মন্দিরে।
আমার পরানে যে গান বাজিছে
তাহার তালটি শিখো-তোমার
চরণমঞ্জীরে।।
ধরিয়া রাখিয়ো সোহাগে আদরে
আমার মুখর পাখি – তোমার
প্রাসাদপ্রাঙ্গণে।
মনে ক’রে সখী, বাঁধিয়া রাখিয়ো
আমার হাতের রাখী – তোমার
কনককঙ্কণে।।
আমার লতার একটি মুকুল
ভুলিয়া তুলিয়া রেখো – তোমার
অলকবন্ধনে।
আমার স্মরণ-শুভ-সিন্দুরে
একটি বিন্দু এঁকো-তোমার
ললাটচন্দনে।
আমার মনের মোহের মাধুরী
মাখিয়া রাখিয়া দিয়ো-তোমার
অঙ্গসৌরভে।
আমার আকুল জীবনমরণ
টুটিয়া লুটিয়া নিয়ো-তোমার
অতুল গৌরবে।।”


গানের লিঙ্ক
ইলা কি করবে বা করেছিল বা কি করা উচিত তা পাঠকের উপরেই ছেড়ে দিলাম । আমি লেখক হিসেবে ইলার সুখী জীবন কামনা করি । কোন মোহ আবেগ দিয়ে জীবন চলে না , জীবনে সুখী হতে হলে প্রকৃত ভালোবাসার প্রয়োজন ,একজনের না উভয়জনের । সে যেই হোক না কেন হোক সে রবি অথবা কোন স্বামী ।

বিদ্রঃ এই গল্প লেখকের প্রথম গল্প ,ভুল ত্রুটি থাকলে ধরিয়ে দিবেন ।সর্বোপরি ভালো মন্দ মন্তব্য আশা করছি ।


সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১১:৫৩
২০টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×