somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোট বেলায় সাঁতরে নদী পার হওয়া (জানের ফাড়া)

১০ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৩:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের বাড়ির পাশ দিয়েই বয়ে গেছে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ। এই নদীর সাথে আমাদের সম্পর্ক সেই পূর্বপুরুষ থেকেই। পূর্বপুরুষদের (দাদার বাবার) বসত ভিটা ছিলো নদীর ঐ পারে (লক্ষী চরে)। খেয়ালী নদী যখন কয়েক বার তার দিক পাল্টে দাদাদের ভিটা চেন্জ করাতে বাধ্য করলো (তিন বার) অবশেষে দাদা তার বসত ভিটা শিফ্ট করে নদীর এই পারে (নান্দিনা) চলে আসে। বাবা-চাচারা তথন ছোট।

এই রাক্ষসী নদীতে গোসল করতে গিয়ে জীবন হারিয়েছে আমার সবচেয়ে ছোট চাচা। চাচার বয়স তখন ১৯ । চাচা ছিলেন দক্ষ সাতারু। তাছাড়া ছোটবেলা (ন্যাংটা কাল) থেকেই নদীর সাথে সম্পর্ক। এর থেকে সাবধান থাকতে হবে এই কথা করো কখনো মনে হতো না। তাছাড়া পূর্বপুরুষদের মাঝে করো জীবনের দিকেও এই নদী কখনো হাত বাড়ায়নি।
সেদিন সকালে চাচা গেলেন নদীতে গোসল করতে। বরাবরের মতই খাঁড়া উঁচু পাড় থেকে নদীতে দিলেন ড্রাইভ। কিন্তু আজরাইল মনে হয় পানির নিচেই বসে ছিলো। পানির নিচে প্রচন্ড স্রোতের টানে চাচা ঢুকে পড়লেন নদীর কাঁফে (পানির নিচে মাটির লেয়ারের মাঝে বড় বড় গর্তে)। প্রায় ঘন্ট খানিক পরে আশেপাশের লোকজনের সন্দেহ হলো, এতখন তো পানিতে ডুপ দিয়ে থাকার কথা না! আরো ১০/১৫ মিনিটের মধ্যেই তারা বিপদ সম্পর্কে নিশ্চিত হলো। দাদাকে ডাকা হলো লোকজন জাল নিয়ে আসলো কিন্তু কিছুতেই লাশ পাওয়া গেলো না।(পাবে কি করে চাচা ঢুকে আছে কাফের ভিতরে)। অবশেষে আমাদের চরের রহিমউদ্দী দাদা আসলো, লোকে তাকে ডুবুরি মনে করতো। সেই দাদা অনেক চেষ্টা করে লাশ খুঁজে পেলেন। ততক্ষনে ৩ ঘন্টা পেরিয়ে গেছে কাজেই আর কোনো আশা থাকে না তবুও আল্লাহর মিরাকেল এর আশায় সবরকম চেষ্টা করা হলো।

এবার আমর কথা বলি : আমার বয়স তখন ১৩/১৪ । এরই ভিতরে কয়েক বার নদী পার হয়েছি। একদিন চাচাতো ভাই সোহাগের সাথে গেলাম নদীতে গোসল করতে। সোহাগ বললো চল নদী পার হই। আমিও খুশিতে রাজি হলাম কারন ঐ পারের চরের বালু মাটিতে দৌড়া দৌড়ি করতে ভালো লাগতে। আমি বললাম কিন্তু আমাদের লুঙ্গি (গোসলের পর যেটা পরবো) আর পায়ের সেন্ডেল কোথায় রাখবো। সোহাগ বললো লুঙ্গি মাথায় বেঁধে নিবো আর সেন্ডেল জোড়া হাতের তালুর সাথে আঙ্গুল দিয়ে আঁকড়ে নিবো। পরিণাম না ভেবেই নদীতে সাঁতার দিলাম। মাঝ নদী পর্যন্ত গিয়ে বুঝলাম কাজটা ঠিক হয় নাই। একে তো-হাতে সেন্ডল থাকায় হাতের তালু দিয়ে পানি কেটে সাঁতারে সমস্যা হচ্ছিলো, দুই- মাথায় লুঙ্গি বাঁধা থাকায় মাথা পানিতে ডুবাতে পারছিলাম না তাই ঘাড় লেগে যাচ্ছিলো।
নদী যখন ৩/৪ অংশ পার হয়েছি তখন আমার হাতের পেশী অবশ হয়ে আসছিলো। সোহাগ ছিলো আমার একটু সামনে তাকে বললাম সোহাগ আর তো পারছি না। সোহাগ বললো হাতের সেন্ডেল ছেড়ে দে পরে আবার সাঁতরে আনা যাবে(তার অবস্থায়ও যে একই রকম)। সেন্ডেল ছেড়ে দিলাম কিন্তু ততক্ষনে আমার সারা শরীরেই শক্তি প্রায় শেষের দিকে একটু সুবিধা হলেও বাকি ২০/২৫ হাত নদী পার হবার মত মন বল পেলাম না। মাথাটা ভিজাতে পারলে ভালো হতো কিন্তু মাথার লুঙ্গি ভিজে গেলে তার ওজন অনেক বেড়ে যাবে সেটা নিয়ে আর সাঁতার কাটতে পারবো না আর ছেড়ে দিলেও ভিজা লুঙ্গি পানিতে ডুবে যাবে। অবশেষে লুঙ্গির মায়া ত্যাগ করলাম। মাথা থেকে লুঙ্গি খুলে দিলাম চিল সাঁতার। কিন্তু একি যে চিল সাঁতার দিলে আগে আমি ভাবতাম এই ভাবে আমি সাগরও পাড়ি দিতে পারবো (কারন এতে শক্তি লাগে কম) কিন্তু এখন যে এই সাঁতার দেবার মতন ও শক্তি নেই।

যাই হোক অবশেষে পানিতে নাকানি চুপানি খেয়ে তীরে এসে পৌঁছলাম (আলহামদুলিল্লাহ)। কিন্তু যেখানে ল্যান্ড করেছি সেখানে পলি মাটি। হাঁটুর উপরে উঁরু পর্যন্ত ডেবে যাচ্ছে। কারন আমরা ভাসতে ভাসতে অনেক ভাটিতে চলে গিয়েছিলাম। পলি মাটিতে কিভাবে হাঁটতে হয় জানা ছিলো তাই গড়িয়ে গড়িয়ে উপরের শক্ত মাটিতে উঠে হাফ ছাড়লাম। উপরে উঠে দেখলাম আমার লুঙ্গিটা তখনও ভাসতেছে, একটু রেষ্ট নিয়ে সাঁতরে গিয়ে লুঙ্গী নিয়ে আসলাম। সেন্ডেল খুঁজে দেখলাম সেটা বেশ কিছু দূরে ভাটিতে চলে গেছে। দৌড়ে সেখানে গিয়ে সাঁতরে সেন্ডেল নিয়ে আসলাম।
তার পর প্রায় এক কিলো দূরে ফেরিঘাটের নৌকায় করে নদী পার হয়ে বাড়ি আসলাম। এর পর আরও অনেক বার নদী পার হয়েছি কিন্তু সেই শিক্ষা মনে রেখেছি ঐরকম বোকামি আর করি নাই।:D
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:০৬



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তির কোরাস দল

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৫



ঘুমিয়ে যেও না !
দরজা বন্ধ করো না -
বিশ্বাস রাখো বিপ্লবীরা ফিরে আসবেই
বন্যা ঝড় তুফান , বজ্র কণ্ঠে কোরাস করে
একদিন তারা ঠিক ফিরবে তোমার শহরে।
-
হয়তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাইডেন ইহুদী চক্তান্ত থেকে বের হয়েছে, মনে হয়!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮



নেতানিয়াহু ও তার ওয়ার-ক্যাবিনেট বাইডেনকে ইরান আক্রমণের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো; বাইডেন সেই চক্রান্ত থেকে বের হয়েছে; ইহুদীরা ষড়যন্ত্রকারী, কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধিমান। নেতানিয়াহু রাফাতে বোমা ফেলাতে, আজকে সকাল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজ ২৫শে বৈশাখ। ১৬৩তম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আমার গাওয়া কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত শেয়ার করলাম। খুব সাধারণ মানের গায়কী

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০৫

আপনারা জানেন, আমি কোনো প্রফেশনাল সিঙ্গার না, গলাও ভালো না, কিন্তু গান আমি খুব ভালোবাসি। গান বা সুরই পৃথিবীতে একমাত্র হিরন্ময় প্রেম। এই সুরের মধ্যে ডুবতে ডুবতে একসময় নিজেই সুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্ব কবি

লিখেছেন সাইদুর রহমান, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৭

বৈশাখেরি পঁচিশ তারিখ
কবি তোমার জনম
দিন,
বহু বছর পার হয়েছে
আজও হৃদে, হও নি
লীন।

কবিতা আর গল্প ছড়া
পড়ি সবাই, জুড়ায়
প্রাণ,
খ্যাতি পেলে বিশ্ব জুড়ে
পেলে নভেল, পেলে
মান।

সবার ঘরেই গীতাঞ্জলী
পড়ে সবাই তৃপ্তি
পাই,
আজকে তুমি নেই জগতে
তোমার লেখায় খুঁজি
তাই।

যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×