আগামীকাল বিশ্বকাপ ক্রিকেটের পর্দা উঠছে। বিশ্বকাপের টান টান উত্তেজনা বাইশ গজে ছড়িয়ে পড়ার আগে বর্ণিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখবে সারাবিশ্ব। আগামীকাল সন্ধ্যায় বিশ্বকাপ ক্রিকেটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। অনুষ্ঠান সাজিয়েছে ভারতীয় ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান উইজক্র্যাফট। তাদের সার্বিক সহযোগিতা করছে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান এশিয়াটিক। উইজক্র্যাফটের পক্ষ থেকে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের দায়িত্ব পালন করছেন প্রাপ্তি মালহোত্রা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য স্টেডিয়ামে বসানো হয়েছে তিন হাজার ৬০০ বর্গফুটের একটি মঞ্চ। অনুষ্ঠানটি তিনটি অংশে ভাগ করা হয়েছে। পুরো অনুষ্ঠানের ব্যাপ্তি ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট। এর মধ্যে বাংলাদেশ ২০ মিনিট, ভারত ১২ মিনিট ও শ্রীলংকার শিল্পীদের ৮ মিনিটের পরিবেশনা থাকছে।
বাংলাদেশ অংশের ২০ মিনিটের আয়োজন শুরু হবে স্বাগত সঙ্গীতের মাধ্যমে। এটি লিখেছেন জুলফিকার রাসেল আর সুর করেছেন সঙ্গীতশিল্পী ইবরার টিপু। গানটির কথা হলো_ 'ও পৃথিবী এবার এসে বাংলাকে নাও চিনে, ও পৃথিবী তোমায় জানাই স্বাগত এই দিনে।' এতে কণ্ঠ দিয়েছেন অর্ণব, বালাম, মিলা, এলিটা, কণা, সাবি্বর, রিজভী ওয়াহিদ ও ইবরার টিপু। গানটির সঙ্গীত আয়োজনে থাকছেন ১৮ জন যন্ত্রশিল্পী। এর কোরিওগ্রাফি করেছেন উইজক্র্যাফটের পক্ষ থেকে সন্তোষ শেঠি এবং বাংলাদেশের দুই নৃত্যশিল্পী শিবলী মহম্মদ ও শামীম আরা নীপা। এই নাচে তাদের সঙ্গে অংশ নেবেন ২০০ নৃত্যশিল্পী।
ভারতীয় সঙ্গীতশিল্পী সনু নিগম গেয়ে শোনাবেন অপেরা ধাঁচের গান 'লেটস গো ফর গ্গ্নোরি'। গানটির সুর ও সঙ্গীতায়োজন করেছেন সনু নিজেই। তার গান পরিবেশনকালে বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া ১৪ দলের অধিনায়ক উইজক্র্যাফটের তৈরি 'লিড' নামের বিশেষ রিকশায় চড়ে মাঠে ঢুকবেন।
এলইডি লাইট দিয়ে সাজানো হয়েছে রিকশাগুলো। সঙ্গে থাকবে আতশবাজির খেলা।
এবারের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আনুষ্ঠানিক থিম সং 'দে ঘুমাকে' বাংলা, হিন্দি ও সিংহলিজ ভাষায় তৈরি করেছেন ভারতীয় সঙ্গীতশিল্পী শঙ্কর-এহসান-লয়। হিন্দি ভাষার গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন ভারতীয় গায়ক শঙ্কর মহাদেবা। আর বাংলা গানে কণ্ঠ দিয়েছেন কলকাতার গায়ক রাঘব চ্যাটার্জি। এর কথা লিখেছেন ঢাকার গীতিকার শেখ রানা। গানটির কথা_ 'আরও জোরে সবার আগে চার ছক্কা মাঠ পেরিয়ে মার ঘুরিয়ে'। অনুষ্ঠানে স্বাগত সঙ্গীতের পর ভারতের অংশে শঙ্কর-এহসান-লয় ও রাঘব চ্যাটার্জি সঙ্গীত পরিবেশন করবেন।
মূল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরুর আগে ৫০ মিনিটের 'প্রি-শো'তে থাকবেন বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলংকার ৪ পুরুষ ও ৪ নারী কণ্ঠশিল্পী ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আমন্ত্রিত অতিথিবর্গ বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে প্রবেশের পর ৫টা ৫০ মিনিটে শুরু হবে মূল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। পুরো অনুষ্ঠানকে মোট ৫টি পর্বে ভাগ করা হয়েছে। এরপরই বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে সুসজ্জিত ও হাইড্রলিক পদ্ধতির মধ্যমঞ্চে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের স্বাগত সঙ্গীতের গায়ক ইবরার টিপু স্বাগত সঙ্গীত পরিবেশন করবেন। জুলফিকার রাসেল রচিত 'ও পৃথিবী এবার এসে... বাংলাদেশ নাও চিনে, ও পৃথিবী... তোমায় স্বাগত জানাই এই দিনে... গানটি গাইবেন ইবরার টিপু, বালাম, মিলা, কনা ও এলিটা। এলিটা গাইবেন ইংরেজি অংশ। গানটিতে বাঁশি, বেহালা, তবলা, ঢোল, সানাইসহ ১৮টি অ্যাকুস্টিক বাজিয়েছেন ৪০ যন্ত্রশিল্পী। স্বাগত সঙ্গীতের পর মাঠে প্রবেশ করবে বিশ্বকাপের মাসকাট। এর পেছনে বর্ণাঢ্য সাজে সজ্জিত 'লিড' নামক রিকশায় চড়ে ১৪টি দেশের অধিনায়কের নেতৃত্বে ক্রিকেট দলের প্রতিনিধিরা মার্চপাস্টে অংশ নেবেন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তৃতা শেষে ভিভিআইপিতে স্থাপিত অত্যাধুনিক ডিজিটাল পদ্ধতিতে বিশ্বকাপ-২০১১-এর উদ্বোধন ঘোষণা করবেন। এ সময় স্টেডিয়ামের পূর্ব পাশের বিডিবিএল ভবনে টানানো বিশাল পর্দায় বিশ্বকাপের প্রতিকৃতি ভেসে উঠবে। একই সঙ্গে শান্তির কপোতের দল ডানা মেলে আকাশে উড়ে যাবে। এরপর বাংলাদেশের নৃত্যশিল্পী শামীম আরা নীপা ও শিবলী মহম্মদের পরিচালনায় ২০ মিনিটের 'দি রাইজিং টাইগার অব এশিয়া' পরিবেশিত হবে।
এ পর্বে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও আর্মড ফোর্সেসের ২ হাজার ১শ' কোরিওগ্রাফার অংশ নেবেন। শুরুতেই বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের মধ্যমঞ্চটির মাটি ফুঁড়ে 'রাখালের বাঁশির সুরে' ওপরে উঠে আসবেন শিবলী মহম্মদ।
বাঁশির সুর শেষেই বাংলাদেশের উপজাতি রাখাইন, সাঁওতাল ও চাকমারা ১ মিনিট ৪০ সেকেন্ডের ঐতিহ্যবাহী নৃত্য পরিবেশন করবে।
দ্বিতীয় পর্যায়ে মহান একুশে ফেব্রুয়ারি স্মরণে মাঠের চারিদিক থেকে রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই ... স্লোগান দিয়ে মিছিল হবে। ওই সময় ওরা... আমার মুখের ভাষা... কাইড়া... নিতে চায়... ঐতিহ্যবাহী গান পরিবেশিত হবে।
এ সময় মাঠজুড়ে আলোকরশ্মির মাধ্যমে 'বাংলা বর্ণমালা' ফুটিয়ে তুলবেন চীনা বিশেষজ্ঞরা। তারপরই মাঠে দেখা যাবে একজন কিশোর গান গাইছে, আমার... ভাইয়ের... রক্তে রাঙানো... একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কী ভুলিতে পারি... পরে একজন মা এ গানটি গাইবেন। তৃতীয় পর্যায়ের শুরু হবে একাত্তরের মার্চ মাসের অসহযোগ আন্দোলনের মুহূর্ত দিয়ে। আলো ও গোলাগুলির শব্দ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের আবহ তৈরি করা হবে।
একদল ছেলেমেয়ে জয় বাংলা... স্লোগান দিয়ে ছুটে যাবে। শুরু হবে জয় বাংলা... বাংলার জয়... গানটি। এক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ 'এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রামে আমাদের মুক্তির সংগ্রাম' বেজে উঠবে। বঙ্গবন্ধু যখন বলবেন জয় বাংলা তখন স্টেডিয়ামের পূর্ব পাশের বিডিবিএলের দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখা ৬০ ফুট পর্দায় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের অগি্নঝরা মুহূর্ত ফুটে উঠবে। শুরু হবে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ৪০ সেকেন্ডের আলো ও শব্দের মাধ্যমে ঐতিহ্য চিত্র।
এরপর কবি নজরুলের 'কারার ওই লৌহ কপাট...' গান পরিবেশিত হবে। শেষ পর্যায়ে সুন্দরবনের গহিন বন ফুটিয়ে তোলার পর রয়েল বেঙ্গল টাইগারের গর্জন ও থিম সঙ্গীতের সুরের মাধ্যমে আইসিসির পতাকা মেলে ধরা হবে।
এর আগে ৮ মিনিটে শ্রীলংকার কোরিওগ্রাফার ও শিল্পীরা দি পার্ল অব ইন্ডিয়ান ওশান পর্বে শুরুতেই আলোকরশ্মি ও শব্দের মাধ্যমে সাগরের ঢেউ ফুটিয়ে তুলবেন। এক পর্যায়ে মধ্যমঞ্চে সুরের মূর্ছনায় ফুটিয়ে তোলা হবে মুক্তা। মুক্তাটির ভেতর থেকে বেরিয়ে আসবেন শ্রীলংকান একজন তারকা অভিনেত্রী। ভারতের কোরিওগ্রাফার সন্তোষ শেঠজির পরিচালনায় সে দেশের কোরিওগ্রাফার ও শিল্পীরা পরিবেশন করবেন 'সিম্পোনি অব কালারস'।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে আতশবাজি ও আলোকরশ্মির খেলা প্রদর্শন করবেন চীনের বিশেষজ্ঞরা।
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের গ্যালারি থেকে মাটি পর্যন্ত তিন ধাপে বিভিন্ন স্পট লাইট বসানো হয়েছে। মধ্যমঞ্চেও রয়েছে লাইট। পূর্ব ও উত্তর গ্যালারিতে ১৬টি টাওয়ারে লাইট বাঁধা হয়েছে। প্রতি টাওয়ারে রয়েছে ১৬টি করে লাইট। রঙবেরঙের লাল-নীল-সবুজ-হলুদ-সাদা-বেগুনি আলোর খেলা দর্শকদের আকৃষ্ট করবে।
এরপর ৬০ ফুট প্রশস্ত ও ২৫ ফুট উঁচু মাঠের মধ্যমঞ্চে বাংলাদেশের বরেণ্য শিল্পী সাবিনা ইয়াসমীন, রুনা লায়লা ও মমতাজ মেটলি স্টাইলে ৯ মিনিট গান গাইবেন।
এরপর অফিসিয়াল 'থিম সঙ্গীত' জিতবে এবার.... জিতবে ক্রিকেট... এবং হিন্দিতে দে ঘুমাকে... ঘুমাকে (মার ঘুরিয়ে) সঙ্গীত পরিবেশন করবেন ভারতের বিখ্যাত শিল্পী শংকর মহাদেবা। গানটি একই সঙ্গে পাঞ্জাবি ভাষায় জিতো, খিলাদি.. ওয়াহি...ওয়াহি... পরিবেশিত হবে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



