somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এজিদের চক্রান্তে মোহাম্মাদের (স) ইসলাম-২

২৭ শে মার্চ, ২০১১ সকাল ৭:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইসলামে তাসাউফ সাধনার গুরুত্ত

তাসাউফ কি?
বর্তমানে ইসলামী বিশ্বে তাসাউফ এখন আর অপরিচিত কোন শব্দ নয়। যদিও এ বিষয়ে নানা মতভেদ রয়েছে। অতি আশ্চর্য্যর বিষয় হলেও সত্য যে, তাসাউফ সম্পর্কে সাধারন মানুষের সাম্যক এলম না থাকাই মতভেদের মুল কারন। তাসাউফ দিয়ে যে বিষয়গুলো বোঝানো হয়, এর শাব্দিক অর্থ দিয়ে তার কিছুমাত্র পরিমাপ করা সম্ভব নয়। তাসাউফের পরিধি ও গভীরতা এত ব্যপক যে,সংক্ষেপে তা বোঝানো সম্ভব নয়, কেবল এটুকু সংগা দেওয়া চলে বিজ্ঞান অর্থ বিশেষ জ্ঞ্যান। ঠিক তেমনি তাসাউফের সংক্ষিপ্ত সংজ্ঞা দেওয়া চলে, এটা আত্মার জন্য বিশেষ জ্ঞান বা আত্মিক জ্ঞান বিশেষকে তাসাউফ বলে। মজার ব্যপার এই যে তাসাউফ বিজ্ঞানের মতই বাস্তব সত্য। বিজ্ঞান স্থুল দেহের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য তাসাউফ আত্মার ইন্দ্রিয় দিয়ে অনুভুত হয়। বিজ্ঞানের যে বিষয় বইয়ে লিপিবদ্ধ থাকে উপযুক্ত শিক্ষক ছাত্রকে ল্যাবরেটরিতে উহা বাস্তবে দেখাতে সক্ষম। তাসাউফ অনুরুপ বাস্তব-কোন কাল্পনিক বিষয় নয়। প্রয়োজনীয় পরিবেশে উপযুক্ত প্রশিক্ষকের কাছে এর প্রমান ও অস্তিত্ব বাস্তবে লাভ করা সম্ভব।

তাসাউফের প্রয়োজন কেন?
দেহ এবং আত্মার সমন্বয়ে পূর্ণত্ব সুস্থ দেহ এবং সুস্থ আত্মার অধিকারী মানুষই প্রকৃত সুস্থ মানুষ। দেহের সুস্বাস্থ্যর জন্য আমাদের কিছু জ্ঞান অর্জন ও তা আমল করতে হয়। কোন জিনিস শরীরকে রুগ্ন করে আর কোন জিনিষ শরীরকে পুষ্ট ও কর্মক্ষম করতে সক্ষম আমদের তা জানতে হয়। দেহকে সুস্থ রাখার জন্য পরিমিত আহার নিদ্রা, বিশ্রাম ও সেই সাথে পরিচ্ছন্নতা প্রয়োজন। এ বিষয়গুলি বইতে পড়ে মুখস্ত করে সকাল বিকাল আউড়ালে কাজ হয়না বাস্তবে যথাযথ প্রয়োগ করতে হয়। এত কিছুর পরেও আমাদের নানা রোগব্যধি হয়। আবার ডাক্তার ও হাসপাতালে আশ্রয় নিতে হয়। কারন স্বাস্থ্যই সকল সুখের মুল। রুগ্ন দেহ সবসময় কষ্টের কারণ হয় এবং স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যহত করে। রুগ্ন ব্যধি তার নিজের জন্য ক্লেশের কারন।অনেক ক্ষেত্রেই সুস্থ ব্যক্তি রোগাক্রান্ত ব্যক্তির সান্নিধ্য এলে অসুস্থ হয়ে পড়ে এর জন্য প্রয়োজন আবার উপযুক্ত প্রতিষেধকের। এসব কথা ছেলে বুড়ো সবার জানা। কিন্তু আত্মার বিষয়ে আমরা কতটুকু জ্ঞান অর্জন করেছি? আত্মাকে পরিচ্ছন্ন ও সুস্থ রাখতে আমাদের সচেতনতা ও সাধনা কতটুকু? অথচ দেহ সুস্থ রাখার চেয়ে আত্মা সুস্থ রাখার গুরুত্ম অনেক বেশি। রুগ্ন ব্যক্তির কষ্টের মেয়াদ তার মৃত্যু পর্যন্ত কিন্তু রুগ্ন আত্মাসম্পন্ন ব্যক্তির কষ্টের মেয়াদ ইহকাল ছাড়িয়ে অনন্ত পরকাল পর্যন্ত ব্যপৃত।যে অদৃশ্য আত্মা আমাদের জড়দেহ সচল রাখে সে আত্মার বিষয়ে উদাসীন থাকা নিশ্চই জ্ঞানীর পরিচায়ক নয়। সংক্ষেপে বলতে গেলে দেহাভ্যন্তরস্থ ষড়রিপূ আত্মাকে কলুষিত ও রুগ্ন করে। রিপুর তাড়নায় মানুষ যাবতীয় পাপ কাজ করে থাকে। যে সমাজে মানুষ যত চরিত্রবান ও সংযমী সে সমাজ ততই শান্তির। কিন্তু আমাদের সমাজের অবস্থা নিয়ে বেশি আলোচনার দরকার নেই কারন তা সবারই জানা। আত্মার জ্ঞান অর্থাৎ তাসাউফ আমাদের জানা নেই কিভাবে আমরা আলোর দিকে ফিরব। রিপুর দাসত্ব করতে করতে আমরা মানবিক মূল্যবোধসমূহ হারিয়ে পশুর চেয়েও অধম প্রানীতে পরিণত হয়েছি।তাসাউফ আমাদেরকে রিপু দমন করত বিবেকবান মানুষে পরিণত করতে সক্ষম। মহান আল্লাতায়ালা আমাদেরকে জমীনের বুকে তার খলীফা করে প্রেরন করেছেন এ সত্য কি কেবল কোরআনের মধ্য আয়াত হিসেবে লিপিবদ্ধ থাকার জন্য?
" নিশ্চই আমি পৃথিবীতে আমার প্রতিনিধি প্রেরন করবো- সুরা বাকারা-৩০"
একথা সত্য যে মানুষকে একদিন আল্লাহর কাছে তার কৃতকর্মের জন্য জবাব দিহি করতে হবে। তাসাউফ মানুষকে চরিত্রবান করতে সক্ষম। তাসাউফের মাধ্যমে মানুষ শুদ্ধভাবে ইবাদত করতে সক্ষম। তাসাউফের মাধ্যমেই রক্ত মাংসের মানুষ আল্লাহর বন্ধুতে পরিণত হয়।

তাসাউফ কোথায়?
তাসাউফের অস্তিত্ব সৃষ্টির পুর্ব থেকে। আল্লাহতায়ালা স্বয়ং তাসাউফের বিষয়। আত্মাসমুহের সৃষ্টি তাসাউফ, বান্দার সাথে আল্লাহর যোগাযোগ ও সম্পর্ক ইহা তাসাউফ। পথভোলা মানুষকে পুনরায় সৎপথ দেখাতে তাদের মধ্য থেকেই একজনকে নবী -রাসুল হিসেবে পাঠানো হয়েছে ইহাও তাসাউফ। আল্লাহ তায়ালার সাথে নবী রাসুলগনের যোগাযোগ হয়েছে তাসাউফ এর মাধ্যমে। নবী -রাসুলগনের কাছে মানবজাতির জন্য আল্লাহর বিধান কিংবা আসমানী কিতাব এসেছে তাসাউফের মাধ্যমে। তাসাউফের মাধ্যমে নবী-রাসুলগন পাপমগ্ন মানুষের মনের গতি পরিবর্তন করে আল্লাহর দিকে রুজু করেছেন মানুষকে পশুর স্তর থেকে তুলে আবার আপন মহিমান্বিত আসনে বসিয়েছেন। নবুয়তের যুগ গত হবার পরে আউলিয়া গনের মাধ্যমে হেদায়েতের কাজ চালু আছে এবং কেয়ামত পর্যন্ত থাকবে। ইসলাম তাসাউফে পরিপুর্ন। জাহেলিয়াতের যুগে কোরায়েশ বংশের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানবের স্বতন্ত্র ব্যক্তিক্ত হিসেবে জন্ম লাভ করাও তাসাউফ। রাসূলের ছিনা চাক ইহাও তাসাউফ।হেরাগুহায় তার ধ্যনমগ্নতা ,জিবরাইলের মারফত ওহী সবই হয়েছে তাসাউফের মাধ্যমে। ইসলাম গ্রহন করে যারা নবীর এশকে সবকিছু ছেড়েছেন, পাগল হয়েছেন সব যাতনা সহ্য করেও নবীর সংগ ত্যগ করেন নিযে আত্মিক দৃড়তার বলে ইহাও তাসাউফ। যে শক্তিবলে হযরত ওমর (র) নবীজীর মাথা কাটতে গিয়ে নিজের মাথা নবীজীর পায়ে লুটিয়ে দিয়েছেন ইহা তাসাউফ। যে শক্তিবলে নবীজীর শাহদৎ আংগুলি দইয়ে চাদ দুই টুকরা করেছেন,৩১৩ জন নও মুসলিম নিয়ে বদরের যুদ্ধে জয়ি হয়েছেন, যে শক্তিবলে নবীজির হাতে নিক্ষিপ্ত বালি কাফেরদের চোখ অন্ধ করেছে ইহা তাসাউফ।
" হে নবী বালি আপনি নিক্ষেপ করেন নি বরং আমি (আল্লাহ) এ বালি নিক্ষেপ করেছি: ( সুরা আনফাল-১৭)। এই সব ঘটনার ব্যখ্যা যে বিজ্ঙানে সম্ভব ইহা তাসাউফ।নবীজির তিরোধানের পর ইসলামের দ্রুত প্রচার এবং মুসলমানদের ব্যপক উন্ণতি তাসাউফের বলে হয়েছে। পরবর্তীতে আব্বাসীয় ও উমাইয়া শাসনামলে মুসলমাদের চারিত্রিক অধপতন তাসাউফ ত্যগের কারনে। বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী (রহ) নবীর দ্বিনকে প্রতিষ্ঠিত করে আবার ইসলামের গৌরব ফিরিয়ে এনেছেন তাসাউফের মাধ্যমে। উপমাহাদেশে মাত্র ১৭ জন অলি-আল্লাহ ইসলাম কায়েম করেছেন তাসাউফের মাধ্যমে। বাদশাহ আকবরের প্রবল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা তছনছ করে হযরত মোজাদ্দেদ আল ফেসানী ইসলামের দীপশিখা জ্বালিয়েছেন এবং সমগ্র উপমহাদেশ আলোকিত করেছেন তাসাউফের মাধ্যমে। আজকের আজমীর তার জলন্ত প্রমান। বাংলাদেশের কথাই ধরা যাক আমাদের পুর্বপুরুষ মুসলমান হয়েছেন কোন না কোন অলীর কাছে গিয়ে কালেমা পড়ে। ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্য বিভিন্ন সময় এ সকল আউলিয়াগন বাংলাদেশে র বিভিন্ন স্থানে খানকা নির্মান করত এদেশের ভাষা শিখে আপন চরিত্র মাধুর্য দিয়ে এলাকাবসীকে মুগ্ধ করেছেন। তাদের সংস্পর্শে এসে মানুষ তাসাউফের সন্ধান পেয়েছে এবং হেদায়েত লাভ করেছে। আজও খাটি অলী-আল্লাহগন অক্লান্তভাবে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে মানুষকে তাসাউফের শিক্ষা দিচ্ছেন যাতে মানুষ ধর্মান্ধতা ও ধর্মের ভুল ব্যখ্যা থেকে মুক্তি পায় এবং আল্লাহ ও রাসূলের প্রকৃত দ্বীনের সন্ধান পায়।
নিজের ক্বালবের ময়লা দুর করার একমাত্র উপায় আলোকময় ক্বালব ওয়ালা মহামানবের সোহবতে যাওয়া। জ্বালানো বাতির সাহচর্যে গিয়ে নিজের নেভানো বাতি জ্বালিয়ে নেয়া। অন্যথায় দোয়া দরূদ, নামাজ কালামে সারারাত জায়নামাজে কাটালেও মুক্তির লক্ষ্য এক কদমও আগানো যাবেনা।

(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মার্চ, ২০১১ সকাল ৭:০৮
৭টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×