somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এজিদের চক্রান্তে মোহাম্মাদের (স) ইসলাম-৩

২৭ শে মার্চ, ২০১১ সকাল ৯:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তাসাউফ বিলুপ্তির সুচনা-এজিদের ভূমিকা

বিশ্বনিয়ন্তা মহান আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয় হাবীব, বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব রাসূলে করিম (স) এর মাধ্যমে ইসলাম ধর্মকে মানবজাতির চির কল্যানকর একটি পূর্নাংগ জীবন বিধান হিসেবে জগতের বুকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

আর তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ৪ টি মূলনিতীর উপর। শরীয়ত, তরীকত, হাকীকত ও মারেফত। এ প্রসংগে রাসূল (স) ফরমান শরীয়ত আমার কথা, তরীকত আমার কাজ, হাকীকত্ আমার অবস্থা এবং মারেফত আমার নিগূড় রহস্য" এই ৪ টি মূলনীতিকে অনুসরন করতে হলে তাসাউফের জ্ঞান লাভ করা অত্যাবশ্যক। কেননা তাসাউফ ব্যতীত ইসলাম অসমাপ্ত। হযরত রাসূলে খোদা (স) এর জমানা থেকে শুরু করে খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগ পর্যন্ত ( ২৩+৩০=৫৩ বছর) ইসলাম ধর্ম তাসাউফ সাধনায় পরিপুর্ন ছিল। কিন্তু এর পর থেকে ( অর্থাৎ আমির মাবিয়ার আমল থেকে) ইসলাম ধর্ম হতে তাসাউফ চর্চা বিলুপ্ত হতে শুরু করে এবং এজিদের সময়ে অর্থাৎ কারবালার যুদ্ধে হযরত ইমাম হোসাইন (র) এর শাহদাতের পর থেকে ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের মাঝে তাসাউফ সাধনা দীর্ঘদিনের জন্য স্থিমিত থাকে।

খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগ
রাসুলে করীম (স) এর ওফাতের পর (প্রায় ৩০ বছর) খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগকেই ইসলামের স্বর্ণ যুগ বলা হয়।

১। হযরত আবুবকর সিদ্দিক (র) ৬৩২ খ্রি হতে ৬৩৪ = ২ বছর
২। হযরত ওমর ফারূক (র) ৬৩৪ খ্রি হতে ৬৪৪ = ১০ বছর
৩। হযরত ওসমান গনী (র) ৬৪৪ হতে ৬৫৬ খ্রি = ১২ বছর
৪। হযরত আলী (র) ৬৫৬ হতে ৬৬১ খ্রি = ৫ বছর

খোলাফায়ে রাশেদীনের মধ্য হযরত আবুবকর সিদ্দিক (র) ও হযরত ওমর (র) এর আমল মোটামুটি শান্তভাবে অতিবাহিত হলেও হযরত ওসমান গনি (র) এর সময় থেকে নান রকমের গোলমালের সূচনা হতে থাকে। তার জের স্বরূপ হযরত ওসমান (র) কে বিদ্রোহিরা নির্মমভাবে হত্যা করে। এর তীব্রতা এত মারাত্বক আকার ধারন করেছইল যে শেষ পর্যন্ত ৪র্থ খলিফা হযরত আলী (র) কেও খেলাফত লাভের কয়েকবছরের মধ্য শাহদৎ বরন করতে হয়েছে।এতেও কুচক্রিদের মনের আগুন নিভলোনা। তাদের চক্রান্তের শিকার হয়ে হযরত ইমাম হাসান (র) বিষপানে এবং হযরত ইমাম হোসাইন (র) কারবালার প্রান্তরে সীমারের অস্ত্রাঘাতে নির্মমভাবে শহীদ হলেন।

হযরত মাবিয়ার (র) পরিচয়

আমীর মাবিয়া এর পরিচয় দিতে গিয়ে খিলাফাতের ইতিহাস গ্রন্থের লেখক মুহাম্মদ আহসানউল্লাহ বলেন " আমীর মাবিয়া রাসূলে করীম (স) এর সাহাবী ছিলেন অবশ্যই কিন্তু এ কথাও স্পষ্ট যে তাহার খান্দান রাসুল (স) এর এতবড় দুশমন ছিলেন এবং অবশেষে নিরুপায় হয়ে মক্কা বিজয়ের পর মুসলমান হইয়াছিলেন। রাসূল (স) এর প্রবলতম শত্রু কুরাইশ দলপতি আবু সুফিয়ান তাহার পিতা ছিলেন। তাহার মাতা হেন্দা যিনি রাসূল (স) এর চাচা হামজার কলিজা চিবাইয়া খাইয়াছিলেন। প্রথমদিকে মাবিয়া একজন সামান্য সৈনিক, পরে ক্ষুদ্র একজন সেনানায়ক ছিলেন তারপর বিদ্রোহী হইয়াছিলেন, তারপর শিফফিনের লড়াইয়ের পরকৌশল ও প্রতারনা দ্বারা আমীর মাবিয়া ক্ষমতাবান হ্ইয়াছিলেন। আরব, ইরান,মিশর,ইয়েমেন-সমগ্র মুসলিম জাহানের শাহানশাহ হইয়া আমীরূল মুমিনিন উপাধী ধারণ করিয়াছিলেন। আবু সুফিয়ান জীবীত থাকিলে দেখিতেন রাসূল (স) এর যে সকল কাজের বিরোধিতা তিনি সর্বদা করিতেন সেই সকল কাজের বিরোধিতা করিয়াই তাহার বংশধর মুসলিম সালতানাতের অধিশ্বর বনিয়া গেলেন"

আমীর মাবিয়া (র) রাসূল (স) এর সাহচর্য্য তিনি বেশিদিন লাভ করার সুযোগ পান নাই। পক্ষান্তরে খোলাফায়ে রাশেদীংন রাসূল (স) এর আদর্শের অনুসারী ছিলেন বলেই তারা তাসাউফের পরিপুর্ন জ্ঞানের অধীকারী ছিলেন। তাই তারা শাসন কার্যেও ইসলামের সফল বাস্তবায়ন ঘটাতে সক্ষম হয়েছিলেন। হযরত রাসূল (স) খোলাফায়ে রাশেদিংন সম্পর্কে বহু হাদীস বর্ননা করেছেন। হযরত আলী (র) সম্পর্কে তিনি বলেন " আমি জ্ঞানের শহর এবং আলী উহার দরজা" সুতরাং খোলাফায়ে রাশেদীন গনের মধ্য থেকে কারো সাথে বিরোধিতা করা রাসূল (স) করার নামান্তর মাত্র। অথচ হযরত মাবিয়া (র) ও তার সমর্থকরা চতুর্থ খলিফা হযরত আলী (র) এর সাথে তীব্র বিরোধীতা করেছেন। আসলে হযরত মাবিয়া রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার জন্যই এ বিরোধিতা করেছিলেন। এলম তাসাউফের বিন্দউমাত্র জ্ঞান থাকলেও তিনি এ পথে অগ্রসর হতে পারতেন না।

হযরত আলী (র) এর সাথে মাবিয়ার বিরোধিতার কারণেই এজিদের উত্তরাধীকার লাভ এবং কারবালার ঘটনার সুত্রপাত ঘটে যা এলম তাসাউফ চর্চার অগ্রগতিকে স্থিমিত করে দেয়।

আমীর মাবিয়ার ইসলাম গ্রহন সম্পর্কে আলোচনা করলে দেখা যায় যে, মাবিয়াও পিতা মাতার সাথে আজীবন ইসলামের দুশমনি করে সেষ পর্যন্ত ৮ম হিজরীতে মক্কা বিজয়ের পর ( পিতামাতার সাথে ) ইসলাম গ্রহন করেন।মাবিয়া সম্পর্কে কোন কোন ঐতিহাসিক বর্ননা করেন যে মাবিয়া ইসলাম গ্রহন করার পর কিছুদিন রাসূল (স) এর সোহবতে থাকলেও তা তার ইসলামজ বিরোধী কার্যকলাপের তুলনায় খুব কম সময় ছিল। ফলে এলম তাসাউফের শিক্ষা তিনি তেমন লাভ করতে পারেন নি। যার ফলে পিতার মত কুটকৌশল অবলম্বন করে তিনি শাসন ক্ষমতা গ্রহন করেছিলেন। পক্ষান্তরে হযরত আলী (র) বাল্যবয়সেই ইসলাম গ্রহন করেন রাসূল (স) এর সোহবতে থেকে এলম তাসাউফের গভীর জ্ঞান লাভ করেছিলেন। তাছাড়া তিনি ছিলেন রাসূল (স) এর জামাতা।

মাবিয়া বিভিন্ন সময়ে হযরত আলী (র) এর প্রতি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তে লিপ্ত ছিলেন। উহুদের যুদ্ধেও তিনি বিদ্রোহিদের হযরত আলী (র) এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার উস্কানী দিয়েছিলেন। সিফফিনের যুদ্ধে তিনি দারূন ধুর্ততা অবলম্বন করেছিলেন। খিলাফাতের ইতিহাস নামক গ্রন্থে আছে সিফফিনের যুদ্ধ ক্ষেত্রে মাবিয়াকে দেখে হযরত আলী (র) বলে উঠলেন " তুমি নিজে ময়দানে আসছনা কেন? তাহলে ব্যপারটা সহজেই মিমাংসা হতে পারে"

মাবিয়ার সেনাপতি আমর সম্মান রক্ষার জন্য মাবিয়াকে হযরত আলীর (র) মোকাবিলা করিবার জন্য উৎসাহীত করলেন। কিন্তু মাবিয়া বললেন " হযরত আলী (র) সাথে যুদ্ধ করতে গিয়ে কেওই জীবীত থাকেনা"

মাবিয়ার শাসনকাল দীর্ঘদিনের। তিনি হযরত উমর (র) এর সময়ে সিরিয়ার গভর্নর নিযুক্ত হন। হযরত ওসমান এর সময়েও ঐ পদে ভাল থাকেন পরে হযরত আলী (র) এর শাসনামলে বিভিন্ন কলহের জের ধরে এক বছরের জন্য যৌথভাবে ( জেরুজালেম এলাকার ) খিলাফত লাভ করেন। অতপর আলী (র) ইন্তিকালের পর তিনি পুর্ন শাসন ক্ষমতা লাভ করেন। তিনি ৬৬১ খ্রি মোতাবেক ৪১ হিজরী থেকে ৬১ হিজরী পর্যন্ত সুদীর্ঘ ২০ বছর শাসনভার পরিচালনা করেন।

আমির মাবিয়াই মূলত উমাইয়া খিলাফতের প্রতিষ্ঠাকারী। তার আমল থেকেই রাজতন্ত্র শুরু হয়। ঐতিহাসি ইয়াকুবির মতে- তিনি (মাবিয়া) একবার বলেছিলেন "আরবীয় রাজাদের মধ্য আমিই প্রথম রাজা" মাবিয়া এবং তার বংশের লোকেরা শুদীর্ঘ ৮৯ বছর (৬৬১-৭৫০ খ্রী) পর্যন্ত রাজত্ব করেন। তার চতুর্থতম পূর্ব পুরুষের নাম ছিল উমাইয়া ( উমাইয়া বিন হারব বিন আবু সুফিয়ান বিন মাবিয়া)। এই উমাইয়ার নামেই মাবিয়ার প্রতিস্ঠিত খিলাফতকে 'উমাইয়া খিলাফত' বলে অভিহিত করা হয়েছে।

উল্লেখ্য এই উমাইয়া ইসলামের একজন বড় দুশমন ছিল। সে হযরত বেলাল (র) কে নির্মমভাবে নির্যাতন করেছে। কোন কোন ঐতিহাসিকের মতে উমাইয়া ও তার পৌত্র আবু সুফিয়ান ইসলামের বিরোধিতা করে যে ক্ষতি সাধন করেছে , হযরত মাবিয়া ও তার পুত্র এজিদের দ্বারা ইসলাম ধর্মের তার চেয়েও অনেক বেশী ক্ষতি সাধিত হয়েছে তা কোন দিন পূরন হবার নয়। কেননা মাবিয়ার সময় থেকেই ইসলামে নানা ফেরকার সুচনা হয় এবং এজিদের সময়ে তা পুর্নতা লাভ করে।

(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মার্চ, ২০১১ সকাল ৯:৫২
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×