somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলাম প্রচারে অলী-আল্লাহগনের অবদান-শেষ

৩০ শে এপ্রিল, ২০১১ সকাল ৮:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হযরত খান জাহান আলী (র)
বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের নিকট পরিচিত আর একজন মহান অলী-আল্লাহ ছিলেন হযরত খানজাহান আলী (র) তিনি একদিকে যেমন ছিলেন অনেক বড় সাধক অন্যদিকে যোদ্ধা হিসেবেও সমধিক পরিচিত ছিলেন। বাংলায় মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার ব্যপারে তিনি অগ্রনী ভুমিকা পাল করেছেন। দক্ষিন বাংলার বাগেরহাট জিলার দুর্গম এলাকা জয় করে তিনি সেখানে লোক বসতি স্থাপন করেন এবং ইসলাম প্রচার করতে থাকেন। তার আধ্যাত্মিক ও আলৌকিক কারামত দেখে অনেক বিধর্মী ইসলাম গ্রহন করেন।
বাগেরহাট জিলায় তার মাজার অবস্থিত। তার অন্যতম মুরীদ হযরত পীর আলী ( যিনি পুর্বে হিন্দু ছিলেন) কতৃক (১৪৫৮-৫৯) তার মাজার শরীফ নির্মিত হয়।
আজও এ মহান সাধকের নাম হিন্দু মুসলিম সকলেই শ্রদ্ধার সাথে স্মরন করে থাকেন।

হযরত খাজা নিজামুদ্দীন আউলিয়া (র):

এ মহাসাধক সুদুর বদায়ুন থেকে মাত্র ১৩ বছর বয়সে মায়ের সাথে দিল্লিতে চলে আসেন এবং ২০ বছর বয়সে বিখ্যাত অলীয়ে কামেল হযরত ফরীদুদ্দিন গণজে শকর (র) এর হাতে বায়াত গ্রহন করেন। বায়াত হওয়ার আগে তিনি দুর্ধর্ষ নিজাম ডাকাত নামে পরিচিত ছিলেন।আপন মোর্শেদের অনুকরনে তিনি কঠোর সাধনা করতেন সর্বদা রোজা রাখাতেন এবং সামান্য বাসী রুটি দিয়ে ইফতার করতেন।

তৎকালীন দিল্লীর বাদশাহ সুলতান আলাউদ্দীন হযরত খাজা নিজামুদ্দিন কে দরবারে নেয়ার জন্য ব হুবার অনুরোধ করেন এমনকি শেষ পর্যন্ত নির্যাতনের ভয় ও দেখান কিন্তু আল্লাহ প্রেমিক সাধক হযরত নিজামুদ্দীন (র) বাদশাহ কে বলে পাঠিয়েছিলেন " রাজা বাদশাহর দুয়ারে ধরনা দেয়া আমার মোর্শেদের রীতী নয়। সর্বরিক্ত ফকির, পার্থিব ধন গর্বিত সুলতানের প্রয়োজন হলে তার দরবারে আসবে"
সুলতান গিয়াসুদ্দীন তুঘলক একবার খাজা নিজামুদ্দীন (র) এর সাথে দুর্ব্যব হার করেছিলেন এমনকি তাকে দিল্লী থেকে চলে যেতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিছুদিন পর সুলতান যখন বাংলাদেশে যুদ্ধে এসে পুনরায় দিল্লীর দিকে রওনা দিলেন পথে তুগলকাবাদ শহরে এক অনুষ্ঠান শেষে মন্চ ভেংগে পড়ে সুলতানের মৃত্যু ঘটে ফলে তিনি আর দিল্লী ফেরত যেতে পারলেন না কিন্তু আল্লাহর ওলী হযরত নিজামুদ্দীন দিল্লীতেই রয়ে গেলেন।

এভাবে অনেক অলী আল্লাহগন ভারতবর্ষে আগমন করে পথভোলা মানুষদেরকে ইসলামের সুশীতল ছায়ার নিচে আশ্রয় দিয়েছেন। এর মধ্য হযরত বায়োজীদ বোস্তাম, শাহ মোহাম্মদ সুলতান রূমি, শেখ জালালুদ্দীন তাবরীজী , শেখ শরফুদ্দিন আবু তাওয়ামা, পীর বদরুদ্দীন ই আলম, হজরত মাইনুদ্দীন চিশতি, খাজা বাহাউদ্দীন নকশবন্দ, মোজাদ্দেদ আলফেসানী, হযরত ফতেহ আলী, শাহসূফি ওয়াজেদ আলী, খাজা এনায়েতপুরী, হযরত ইমাম শাহ চন্দ্রপুরী (র) প্রমুখ

অলী-আল্লাহ গনকে অনুসরন করে চলতে হবে কেন?

অলী -আল্লাহ গন আল্লাহর বন্ধু এবং রাসূলে খোদা (স) এর সুযোগ্য উত্তরসুরী। তারা আল্লাহর মনোনীত ও বাছাইকৃত ব্যক্তি। বেলায়েতের যুগে একমাত্র অলী আল্লাহগনই মানুষকে আল্লাহর নৈকট্য লাভের পথ দেখিয়েছেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই যে, যে মহান অলী-আল্লাহগন কঠোর পরিশ্রম করে ভারতবর্ষে ইসলাম প্রচার করেছেন আমরা তাদেরকে সম্মান না করে বরং কটাক্ষ করে থাকি। আমাদের মনে রাখা দরকারযে, অলী-আল্লাহগন আমদের মত মানুষ হলেও তারা আল্লাহর প্রতিনিধি এবং আল্লাহর ক্ষমতায় ক্ষমতাবান। তাদের মর্যাদা আল্লাহর কাছে অনেক বেশী।
উদাহরনস্বরূপ বলা যায়- হাকীম ও আসামী উভয় একই দেশের লোক। কিন্তু হাকীম সরকার কতৃক নিযুক্ত যার ফলে তিনি বিচার আসনে বসে আসামীর বিচার করতে পারেন, সরকারী ক্ষমতা বলে ইচ্ছা করলে তিনি আসামীকে ফাসী দিতে পারেন অনুরুপ ভাবে একজন ওলী ইচ্ছা করলে আল্লাহর প্রদত্ত ক্ষমতা বলে একজন পাপী মানুষকে ওলী আল্লাহ বানিয়ে দিতে পারেন। শিক্ষক বিহনে শুধু পুস্তক দ্বারা সঠিক শিক্ষা লাভ হয়না,ঠিক তেমনি আধ্যাত্মিক শিক্ষক ছাড়া শুধু শরীয়তের কিতাব পাঠ করে আল্লাহ সম্পর্কে পরিপুর্ন ভাবে জানা যায়না। কারন আল্লাহ নূরের, কালির অক্ষরের নয়, কালির অক্ষর পড়ে নুরের আল্লাহকে পাওয়ার প্রস্নই উঠেনা অলী -আল্লাহগন আল্লাহর প্রতিনিধি তাদের ভেতর আল্লাহর নূর রয়েছে।
হাদীস শরীফে আছে "মুমেন বান্দার দিল হলো আল্লাহর আরশ"
"মুমেন ব্যক্তি ক্বাবা শরীফ হতেও অধিক সম্মানীত" ( ইবনে মাজা)

এ প্রসংগে আল্লাহর রাসূল (স) ফরমান " নিশ্চই আল্লাহতায়ালা স্বয়ং ও তার ফেরেস্তাগন এবং আকাশ ও ভুমন্ডলের বাসিন্দাগন এমনকি পিপিলীকা তার গর্ত থেকে এবং ( সমুদ্রের) মাছগুলী ঐ লোকের উপর দূরদ পাঠ করে যিনি জন গনকে সুশিক্ষা (হেদায়েত) প্রদান করেন "
(তিরমিজী)

হযরত রাসূল (স) সাহাবাকেরাম দের যে মহান শিক্ষা দান করে গেছেন, তার পুর্ন আলোকে আলোকিত হয়েছিলেন খোলাফায়ে রাশেদিন। হযরত আলী (র) সম্পর্কে রাসূল (স) বলেছেন " আমি জ্ঞানের শহর এবং আলী উহার দরজা" (তাবরানী)
এ হাদীস থেকে হযরত আলী (র) এর গভীর পান্ডিত্যর স্বীকৃতি পাওয়া যায়। হযরত আলী (র) গভীর সাধনার মাধ্যমে আল্লাহর রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাই তিনি বলেছিলেন " আমি এমন প্রভুর ইবাদত করিনা যাকে আমি দেখিনা " ( সিররুল আসরার) অন্য যায়গায় বলেছেন " ইহা নির্বাক কোরান আর আমি সবাক কোরান
হযরত আলী (র) এর বর্ননা থেকে বুঝা যায়যে, তিনি আল্লাহকে দেখেছেন এবং কোরানের ভেদ রহস্য (হাকীকত) সম্পর্কেও তিনি পূর্ন ওয়াকেফহাল ছিলেন।

হযরত আবুবকর সিদ্দিক (র) হযরত ওমর (র) এবং হযরত ওসমান গনী (র) গভীর আধ্যাত্মিক জ্ঞানের অধীকারী ছিলেন। হযরত ইমাম হোসাইন (র) এর মধ্য এই এলেম পরিপুর্ন ভাবে বিদ্যমান ছিল, কিন্তু মাবিয়ার পুত্র কুখ্যাত এজিদ এ মহামূল্যবান এলেম থেকে পুর্ন অজ্ঞ ছিল। এজিদ ও তার দোসর রা ৮৯ বছর ক্ষমতায় থেকে মানুষকে বিভিন্ণ উপায়ে এমন শিক্ষা দিয়েছে যার কারনে সাধারন মানুষ অলী -আল্লাহগনের আলৌকিক ক্ষমতা বিশ্বাস করাতো দুরের কথা বরং অলীদের স্বীকার করতে কুন্ঠাবোধ করে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০১১ সকাল ৮:৩০
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যমদূতের চিঠি তোমার চিঠি!!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:০৮

যমদূতের চিঠি আসে ধাপে ধাপে
চোখের আলো ঝাপসাতে
দাঁতের মাড়ি আলগাতে
মানুষের কী তা বুঝে আসে?
চিরকাল থাকার জায়গা
পৃথিবী নয়,
মৃত্যুর আলামত আসতে থাকে
বয়স বাড়ার সাথে সাথে
স্বাভাবিক মৃত্যু যদি নসিব... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×