somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার বাবা

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ৮:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাবাকে নিয়ে লিখছি , কিভাবে শুরু করব বুঝতে পারছি না। আমার শুরুটা সবসময়ই খারাপ হয়।

আমি ছোটবেলায় খেলার সাথী হিসেবে বাবাকেই পেয়েছি। বড়লোক পরিবার খেকে আসিনি , দামী খেলনা কখনোই কিনতে পারতাম না। সস্তার মধ্যে পুতির গুলি-ওয়ালা পিস্তল কেনা যেত , কিন্তু ছোটবেলার থেকে গুলি-পিস্তল নিয়ে খেললে নাকি বাচ্চাদের মধ্যে ক্রাইম করার ঝোক তৈরি হয় , এজন্য কোনোদিন ওসব দিয়ে খেলাও হয়নি। আমি ক্রিকেট খেলতাম , আমি সবসময় ব্যাটিং করতাম , বাবা বোলিং করতেন । জীবনে কোনোদিন বাবাকে ব্যাটিং করতে দিয়েছি মনে পড়ে না .. ;) । বাবা খুব ভালো ক্যারম খেলতেন। বাবা আর একটা কাজ অবশ্য খুব ভালো করতেন , তা হল ক্যারম খেলার সময় গুটি চুরি করা। এই নিয়ে আমরা কত ঝগড়া করতাম , বাবা শুধু হাসত। বাবা আমার খেলাধুলা নিয়ে ও চেষ্টা কম করেননি , সেই কথা পরে একসময় বলব।

আমাকে নিয়ে বাবার হাজার স্বপ্ন। আমি কুলাঙ্গার পুত্র , তার একটা ও পূরন করতে পারিনি। স্বপ্ন নম্বর এক , তার ছেলে হবে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি। ১লা বৈশাখ , ১লা ফাল্গুন এইদিন গুলোতে মাঝরাত থেকে রমনা বটমূলের সামনে গিয়ে বসে থাকবে , রবীন্দ্র-নজরুল এর জন্ম-মৃত্যু-বিবাহবার্ষিকী হুবুহু মনে রাখবে , টিভি ওয়ালারা বছরে দুই-একদিন রবীন্দ্র-নজরুল নিয়ে পাড়াপাড়ি শুরু করলে টিভির সামনে বুদ হয়ে পড়ে থাকবে , আরও কত কি !! আমার সুশীল সমাজ নিয়ে বিশেষ এ্যালার্জি থাকার কারনে সেইগুলি করা হয়ে ওঠেনি।

ছোটবেলায় বাবা খুব চেষ্টা করেছিলেন আমাকে "সুশীল" বানানোর জন্য। আমি যখন খুব ছোট , পড়তে ও শিখিনি , তখন আমাকে কোলে নিয়ে বাবা রবীন্দ্রনাথের "দুই বিঘা জমি" আবৃত্তি করতেন। মনে ক্ষীন অাশা , ছেলে যদি শুনে-শুনে ও একটু আবৃত্তি শেখে । লাভের মধ্যে লাভ হয়েছে , আমি "দুই বিঘা জমি" ঝাড়া মুখস্থ করে ফেললাম। এবং এমন সুরে আবৃত্তি করতে লাগলাম যে বাবা স্বীকার করলেন " ভাগ্যিস রবীন্দ্রনাথ বেচে নেই , না হলে হয় নিজে মরে যেতেন , না হয় আমার ছেলেকে মেরে ফেলতেন "।

আমরা দুই ভাইবোন ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত বাংলা বাবার কাছেই পড়তাম। বাবার কাছেই শিখেছি যে লেখা পড়ার আগে লেখক পরিচিতি পড়তে হয় , যে মানুষটা এতো কষ্ট করে লেখাটা লিখল তাকে না জেনে শুধুমাত্র নম্বর পাওয়ার জন্য তার গদ্যটা ব্যবহার করা অন্যায়। আমি ইন্টারমিডিয়েটে বাংলায় এ- পেয়েছিলাম দেখে বাবা মনে যার পর নাই কষ্ট পেয়েছিলেন। আমি হয়ত কোনোদিন এক-আধটা স্কলারশিপ পেয়ে বাইরে চলে যাব , বিশেষ বড় একটা দুর্ঘটনা ঘটলে হয়ত বড় এন্জিনিয়ার ও হয়ে যেতে পারি , তবে আমার বাংলায় এ- পাবার কষ্টটা বাবার চিরকালই থাকবে।

বাবা আমাদের ঐশ্বর্য দিতে পারেননি। ঐশ্বর্য তো খুবই দূরের কথা , বাংলায় "স্বচ্ছল পরিবার" বলতে যা বোঝায় আমরা ছিলাম তা থেকে ও কয়েক যোজন দূরে। বাবা যখন পেপারে ল্যাপটপ এর অ্যাড দেখে উচ্ছাসিত হয়ে বলেন "বাবা দেখতো , এই মডেল দিয়ে তোর হবে কিনা" , তখন আমি বাবার দিকে তাকিয়ে থাকি , উচ্ছাস দেখি। ওই বস্তু কিনে দেবার স্বামর্থ্য বাবার কোনোদিন ও হবে না জানি , কিন্তু তার বদলে যে অমূল্য রত্ন আমরা দুই ভাইবোন আমাদের জীবনে পেয়েছি , তা কি কম !!

মেয়েরা বাবার সাথে বেশী ঘনিস্ঠ থাকে , আমাদের পরিবার ও তার ব্যতিক্রম না। "বাবা , আমি তোমাকে ভালবাসি" , আমি জানিনা শতকরা কয়জন বাঙালী ছেলে এই কথা বলতে পারবে , আমি পারিনা। হয়ত বাবাকে আমি কোনোদিন ই এই কথা বলতে পারব না , কিন্তু ব্লগে তো লেখা যেতে পারে .......

বাবা আমি তোমাকে ভালবাসি।

বাবা আমি তোমাকে অনেক অনেক অনেক ভালবাসি।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ৯:৫৮
৩০টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×