somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার আত্মা .... অর্পণ ( সম্ভবত প্রথম পর্ব )

০১ লা অক্টোবর, ২০০৯ দুপুর ২:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তাসফিয়া ফাতেমা অর্পণ। আমার বোন। জন্ম ৩০ নভেম্বর , ২০০৭। নাহ্ , ও আমার আপন বোন না। আমার মেজ ফুপুর মেয়ে।

অর্পন হবার দিনটার কথা আমার এখনো মনে আছে। সকাল বেলা থেকেই আমরা খুব চিন্তিত ছিলাম। ফুপ্পিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল। মনোয়ারা হাসপাতাল। হাতে পায়ে পানি চলে এসেছে। ফুপ্পিকে যখন নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন আমার কান্না পেয়ে যাচ্ছিল , আমাদের ৪ চাচা আর ৫ ফুপু ওয়ালা দাদাবাড়ীর জন্য কারো বাচ্চা হওয়া খুবই সাধারন একটা ব্যাপার তারপরও কেন চোখের পানি আটকাতে পারছিলাম না কে জানে !

তারপর বিকাল ৫ টার দিকে ( মনেহয় ৫ টাই হবে ) খবর আসলো যে মেয়ে হয়েছে , দুইজনই সুস্থ আছে। সবাই খুব খুশি। আমিও চোখের পানি মুছেটুছে মিষ্টি কিনতে গেলাম।

প্রথম দর্শন। জন্মের পর দিন। দেখি একটা বাদামী রঙের মাংশের টুকরা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ঠা ঠা করে কাঁদছে আর একটু পর পর তাকাচ্ছে। আমার দিকে তাকিয়ে কি যেন চিন্তা করলো কয়েক সেকেন্ড , তারপর আবার ঠা ঠা।

অর্পণের জন্মের পর কিছু সমস্যা দেখা দিল। সামান্য নিউমোনিয়া বোধহয়, আমি শিওর না। ডাক্তার বললো রোদে শুইয়ে রাখতে। আমার ইচ্ছা করছিলো ডাক্তারকে কাঁচা খেয়ে ফেলি। এতটুকুন একটা বাচ্চা , একে রোদে শুইয়ে রাখা কতটা মানবিক ! কিন্তু তারপর ডাক্তারের প্রতি কৃতজ্ঞ হই , আসলে ওই সময় ওই সামান্য কষ্টটুকু না দিলে ওকে বাঁচিয়ে রাখা দুরূহ হত।

৭ দিনের দিন ওকে বাসায় নিয়ে আসা হল। আমার সাথে পিচ্চির প্রথম থেকেই কতটা ইন্টারঅ্যাকশন ছিলো সেটা একটা কথা না বললে বোঝানো যাবে না , ও আমার কোলে আসলেই পিশু করতো মতান্তরে পিশু দেওয়ার সময় হলেই আমার কোলে আসতো। এমনিতে আমি কোলে নিলে কান্নাকাটি করতো। একদিন আমি কোলে নিয়েছি , দেখি কাঁদছে না , আমি ফুপ্পিকে বললাম "দেখসেন , আপনের মাইয়া তো আমারে চিন্যা ফালাইলো" একটু পরে দেখি কালো কালো কি যেন কাথার ফাঁক দিয়ে পড়লো ( ওইটা হাকু ছিলো , অর্পণ জন্মের পর প্রায় প্রথম ৩-৪ মাস কালা হাকু দিত :((:((:(( )

এখন একটু একটু কথা বলতে পারে। আমাকে ডাকে "উব্বো"। এর বোলিং স্টাইল অসাধারন , ২০৩০ সালের বাংলাদেশ প্রমীলা ক্রিকেট দলের ক্যাপ্টেন হবার সমূহ সম্ভাবনা আছে B-)B-)

আরো কিছু জিনিস যেমন :

১. সে ছেলেদের খুবই অপছন্দ করে। ওর বাপ , আপন ভাই আর আমি ছাড়া মোটামুটি দুনিয়ার কোনো পুরুষকেই ও সহ্য করতে পারে না। বড় হলে যদি দেখতে সুন্দর হয় তাহলে সে খালি পায়ে মাটিতে নামবে কিনা ( বা মাটিতে পা পড়বে কিনা ) যথেষ্ট সন্দেহ আছে ;);)

২. সে দুনিয়ার আরেকটা জিনিস খুবই অপছন্দ করে তা হলো চুল। আমার ফুপুর মাথার চুল একটু আলগা ধরনের , প্রায় সময়ই বাসায় মেঝেতে চুল পাওয়া যায়। তখন সে নিজের ভ্রু কুচকে ফেলে আর বলে "উব্বো টুইল , বাইয়ে পালা" মানে "শুভ চুল , বাইরে ফালা"।

৩. অতি প্রয়োজনের সময় ( যেমন বাইরে ঘুরতে গেলে ) সে মানুষকে তুমি করে সম্বোধন করে , না হলে সবসময় তুই তুই।

৪. তার দিদু চাওয়ার টাইমিং প্রশংসনীয়। বাইরের কোনো মানুষ সামনে আসলেই সে "আম্মু দিদু" বলে মায়ের কোলে ঝাপিয়ে পড়ে , আর শাড়ি ধরে খামচা খামচি শুরু করে।

৫. সে এমনিতে সারাক্ষন মোবাইলে হেলো হেলো করে শুধু কারো সাথে কথা বলতে বললে বোকার মতোন চুপ করে থাকে।

৬. তার হাকুর গন্ধ উল্লেখ করার মতোন শক্তিশালী। আসেপাশের মানুষদের টেকা দায় হয়ে যায়।

অর্পনকে নিয়ে লিখতে গেলে অনেকগুলো পর্বে শেষ করতে হবে। বড় বিলাই আপুর ভাগ্নেসমগ্র দেখলে বুঝতে পারি উনি ওনার ভাগ্নেকে কতটা ভালবাসেন। অর্পনকে নিয়ে আমার অনুভূতিটা হয়তো ওই রকমই। ও কে হয় আমার ? ফুপাতো বোন ? শুধুমাত্র এতটুকুই তো। তারপরও কেন যেন ওকে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ বলে মনে হয় , জানি না কেন ?

যদি আর কিছু লেখার মতোন পাই , বা লেখার মতোন মানসিকতা থাকে তাহলে লিখবো , নয়তো নয়।

অপর্নের কিছু ছবি :
অর্পন - ১
অর্পন - ২
অর্পন - ৩

উৎসর্গ : আমার আরো কিছু বোন গোল্লা কাঁকনাপু ,নুশেরা , ভেবে ভেবে বলি , সাদা কালো ধূসর , একলব্যের পূর্নজন্ম ( যে আমার ব্যানে পোস্ট দিয়ে এখন লজ্জিত B-)B-) ) , মেঘ , অগ্নিকন্যা , আর অগ্নিশিখা ( আমার আপন বোন )

===============================
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০০৯ সকাল ৭:৩০
১৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×