somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুই ভুবন || মিনি গল্প

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই বিশাল বাড়িতে আমার এক মাত্র শত্রু হলো কমলা রঙের পুঁচকে বিড়ালটা।

ভাবতেই অবাক লাগে একটা প্রাণী এতটা ভয়ঙ্কর হয় কি করে। যেন গভীর রাতের দুঃস্বপ্ন, যেন মাঝরাতের নেকড়ের ডাক, যেন ঝড়ো আকাশের বজ্রপাত। তার কন্ঠের মিউ ডাক আমার গলা শুকিয়ে কাঠ করে দিতে বাধ্য।

কি, হাসছেন না? হাসি তো পাবেই। ছোট্ট একটা প্রাণীকে দেখে ৩৩ বছরের একজন যুবক ভয় পাচ্ছে - এর থেকে হাসির ব্যাপার এই পৃথিবীতে আর হয় না।

তবে একবার ভেবে দেখুন, কমলা একটা বিড়াল সারাদিন আপনার পেছন পেছন ঘুরছে। আপনি যেখানে যাচ্ছেন সেখানেই যাচ্ছে। না, সে কামড় দিচ্ছে না। শুধু শান্ত দৃষ্টিতে আপনার দিকে তাকিয়ে আছে। বড় বড় চোখে তাকিয়ে আছে।

অস্বস্তিকর তাই না? এই অস্বস্তিকর ব্যাপারটাই আমার সাথে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর ধরে হয়ে আসছে।

মাঝে মাঝে মন চায় এই বাড়ি ছেড়ে পালাতে। কিন্তু পালিয়ে যাব কই। আমার তো কোনো ঠিকানা নেই।

এখন বসে আছি বাড়ির কোণার দেবদারুন গাছের ছায়ায়। বিড়ালটা আমার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে। আর বরাবরের মত আমার দিকেই বড় বড় চোখে তাকিয়ে আছে। এর সমস্যাটা কোথায় কে জানে?

নিজের গা একটু ঝাড়া দিয়ে ভয় দেখাবার চেষ্টা করলাম। বিড়ালটা গভীর কন্ঠে মিউ বলল। শুনে মনে হল না সে ভয় পেয়েছে।

ব্যাপারটা এমন নয় যে বিড়ালটা আমাকে খুব পছন্দ করে। আবার এমনও নয় বিড়ালটাকে আমি পছন্দ করি। সে আমাকে এমনভাবে দেখে যেন আমি খুব অদ্ভুত একটা কিছু। যদি আমগাছে কাঁঠাল ধরে তাহলে গাছের মালিক যেভাবে কাঁঠালের দিকে তাকিয়ে থাকবে বিড়ালটাও আমার দিকে ঠিক একই ভাবে তাকিয়ে থাকে। যেন আমার এখানে থাকার কথা না। আমি সম্পূর্ণ আনএক্সপেক্টেড।

বিড়ালটা তার লেজটাকে উপরে তুলে রেখেছে। লেজটাও মাশাল্লা এর শরীরের মতই স্বাস্থ্যবান। নিশ্চয়ই আম্মা একে প্রতিদিন দুধ-ভাত খেতে দেয়। আর না দিলেও সমস্যা নেই। চুরি বিদ্যা এর বেশ ভাল ভাবেই জানা আছে।

কি চাস? বিড়ালটার কাছে জানতে চাইলাম।

সে বলল, মিউ।

আমি বিড়ালের ভাষা বুঝি না। বুঝলেও সে যা চাচ্ছে তা দিতে পারতাম না। আসলে কাউকে কিছু দেয়ার ক্ষমতা আমার কোনো দিনই ছিল না। বেঁচে থাকতেই ছিল না, মারা যাওয়ার পর তো নয়ই।

আমি মারা গিয়েছি ঠিক আড়াই বছর আগে। একদিন সকালে পাঁচ বছরের বেকার জীবনকে পেছনে ফেলে বাসার ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়লাম। হালকা বাতাসের ধাক্কায় মিষ্টি রোদে আমার শরীরটা ধপাস করে মাটিতে আছড়ে পড়ল। আর সব শেষ।

আম্মার চিৎকার, আব্বার হাহাকার, ছোট বোনটির কান্নায় বাসা ভারী হয়ে উঠল। টানা পাঁচ বছর অক্লান্ত অপমান সহ্য করার পর সেটাই হয়ত ছিল আমার জীবনের এক মাত্র সুখের দিন।

আমার জানাজা হয় নি, বাসার পেছন দিকটায় শরীরটা মাটি চাপা দেয়া হয়েছে। নিয়ম করে টুনি প্রতিদিন সকালে বিকেলে দুইবার সেখানে যায়। বসে বসে আমার সাথে কথা বলে। আমি তাকে দেখি, তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করি। কিন্তু পারি না। আমার ভুবনে তাদের কন্ঠ এলেও আমার কন্ঠ তাদের ভুবনে পৌছায় না।

বিড়ালটা এখনও বড় বড় চোখে তাকিয়ে আছে। আমি উঠে পড়লাম। দেবদারুন গাছকে পেছনে ফেলে বাসার দিকে হাটতে লাগলাম। কমলা পুঁচকেটা আমার পিছু নিল।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১২:৩৭
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নারী একা কেন হবে চরিত্রহীন।পুরুষ তুমি কেন নিবি না এই বোজার ঋন।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১২:৫৪



আমাদের সমাজে সারাজীবন ধরে মেয়েদেরকেই কেনও ভালো মেয়ে হিসাবে প্রমান করতে হবে! মেয়ে বোলে কি ? নাকি মেয়েরা এই সমাজে অন্য কোন গ্রহ থেকে ভাড়া এসেছে । সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=সকল বিষাদ পিছনে রেখে হাঁটো পথ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৮



©কাজী ফাতেমা ছবি

বিতৃষ্ণায় যদি মন ছেয়ে যায় তোমার কখনো
অথবা রোদ্দুর পুড়া সময়ের আক্রমণে তুমি নাজেহাল
বিষাদ মনে পুষো কখনো অথবা,
বাস্তবতার পেরেশানী মাথায় নিয়ে কখনো পথ চলো,
কিংবা বিরহ ব্যথায় কাতর তুমি, চুপসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×