somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেসির সাথে দেখা করাই দুঃস্বপ্নে পরিণত খুদে ভক্তর

১২ ই ডিসেম্বর, ২০২২ সকাল ১০:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্লাস্টিকের ব্যাগ দিয়ে তৈরি আর্জেন্টিনার জার্সি পরা ছবি ভাইরাল হওয়ার পরে একটি পাঁচ বছর বয়সী আফগান শিশু ইন্টারনেট তারকা হয়ে উঠেছিল। তার নায়ক ফুটবল স্টার লিওনেল মেসি। এটি ২০১৬ সালের কথা। যুদ্ধবিদ্ধস্ত আফগানিস্তানের ৫ বছরের এক শিশু মূর্তজা আহামাদী তার বাবার কাছে আবদার করেছিল তার প্রিয় খেলোয়ার মেসির একটি জার্সি কিনে দিতে। কিন্তু অভারের সংসারে তার বাবার সে সামর্থ্য ছিল না। পরে বড় ভাই হুমায়ুন ছোট ভাইয়ের অবদার মিটিয়েছিল সাদা-নীল প্লাস্টিক ব্যাগ দিয়ে জার্সি বানিয়ে। নিজের হাতে জার্সির এক পাশে ইংরেজি বর্ণে লেখে মেসি আর নিচে লেখে মেসির আইকনিক জার্সি নাম্বার ১০। আর ছোট ভাইয়ের সেই প্লাস্টিকের জার্সি গায়ে ফুটবল খেলার ছবি ফেসবুকে দিয়েছিল হুমায়ুন।

রাতারাতি অনলাইনে ভাইরাল হয়ে যায় সেই ছবি। এমনকি খোদ মেসি আগ্রহী হয়ে উঠেন আফগানিস্তানের এই খুদে ভক্তের সাথে দেখা করতে। দাতা সংস্থা ইউনিসেফের হাত ধরে মেসি খুদে ভক্ত মূর্তজার কাছে নিজে স্বাক্ষর করা একটি জার্সি আর ফুটবল উপহার দেন।

সেখানেই শেষ নয়। কাতারের দোহায় অনুষ্ঠিত বার্সেলোনা ও আল আহলির প্রীতি ম্যাচে মেসির সাথে খুদে ভক্ত মূর্তজার দেখা করার ব্যবস্থা হয়। সেদিন ম্যাচের মাঠে নামা থেকে কিক অফ পর্যন্ত মেসির সাথে সময় কাটায় মূর্তজা। এমনকি গোটা দলের ফটো সেশনেও অংশ নেয় সে। আর এ সকল ঘটনার মধ্য দিয়ে রীতিমতো তারকা বনে যায় মূর্তজা।

কিন্তু গল্প এখানেই শেষ নয়। মূর্তজার ইচ্ছে ছিল মেসির সাথে দেখা করার। আর সেই মেসির সাথে দেখা করাই যেন একসময় দুঃস্বপ্নে পরিণত হয় তার। মেসির সাথে দেখা করে সে আর তার পরিবার যখন আফগানিস্তানে ফিরে আসে, তখন সবাই তাকে হিংসার চোখে দেখতে শুরু করে। অনেকে গোপনে মেসির দেওয়া জার্সি ও বল চুরির চেষ্টা করে।
শুধু তাই নয়। মূর্তজার বাড়ি ছিল আফগানিস্তানের গজনী প্রদেশে। আর এই অঞ্চলটি তালেবান গোষ্ঠির দখলে ছিল। তারা যখন যখন জানল মূর্তজাকে মেসি জার্সি ও বল উপহার দিয়েছে, তারা সহ অন্যরা ভাবল মেসি শুধু জার্সি আর বল নয়, হয়তো অনেক টাকা পয়সাও দিয়েছে। ফলে তালেবানরা টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে।

পরিস্থিতি এত খারাপ হয়ে যায় যে মূর্তজার পরিবার জায়গা জমি বিক্রি করে পাকিস্তান চলে যায়। এবং সেখান থেকে স্পেনের দূতাবাসের মাধ্যমে স্পেনের অভিবাসী হওয়ার আবেদন করে। কিন্তু স্পেন সরকার এই আবেদন নাকচ করে দেয়। ফলে তাদেরকে আবার আফগানিস্তানে ফেরত আসতে হয়।

কিন্তু আফগানিস্তানে ফেরত এসে আরও খারাপ হয় পরিস্থিতি। সবাই তাদের বড়লোক বলে দাবী করতে থাকে। তাদের মতে মূর্তজার কাছে মেসির দেওয়া অনেক টাকা আছে। ফলে মূর্তজার কাছে টাকা চেয়ে বেনামী চিঠি আর ফোন আসতে শুরু করে। মূর্তজাকে অপহরণের হুমকিও আসতে থাকে। আর এমন নিরাপত্তাহীনতায় বাধ্য হয়ে স্কুল ছাড়তে হয় তাকে। নিরাপত্তার জন্য বাধ্য হয়ে তার এক কাকার বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

হাসিখুশি মূর্তজার সেই হাসি মুখ আর নেই। এখন চুপচাপ থাকতেই ভালোবাসে সে। মেসির একটি ছোট্ট উপহার তার জন্য এমন অভিশাপ হয়ে আসবে, সে কি কখনো ভাবতে পেরেছিল?

এত কিছু হওয়ার পরও সে এখনও মেসিকেই ভালোবাসে। মেসি এখনও তার জীবনের একমাত্র আইডল। সে চায় একদিন মেসির মতো বড় খেলোয়াড় হতে। আর মাঠে বসে মেসির খেলা দেখার জন্য এখনও উদগ্রীব সে। মূর্তজা ভাবে একদিন সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। সে আগের মতো আবার স্কুলে যেতে পারবে, যেতে পারবে খেলার মাঠে।

বিশ্ব-রাজনীতি আর মানুষের কাছে ছোট্ট মূর্তজা আজ পরাজিত। এত কম বয়সে দেখে ফেলল মানুষের মনের অন্ধকার দিক। মূর্তজার জীবন এমন থমকে যাওয়ায় মেসির হাত নেই, তবুও যেন মেসি আজ দোষী।



সূত্র ১
সূত্র ২









সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২২ সকাল ১০:৫০
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×