একটা সময় নারীরা ঘরের বাইরে বেরোতে পারত না, উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করার সুযোগ ছিল না৷ধর্মের নামে থামিয়ে রাখা হয়েছে। অথচ ধর্মে এ ধরনের বিধিনিষেধ থাকার কথা না। এখন দিন বদলেছে। নারীরা যথেষ্ট সচেতন। তারা নিজেদের অধিকার বুঝতে শিখেছে। আগে যেমন সাত চড়ে রা বেরোত না, এখন উল্টো আঘাত করতে জানে। মুখ বুঝে অন্যায় সহ্য করে না।
নারীরা এখন বিমান চালায়, গাড়ি চালায়। তারা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হয়ে দেখিয়েছে সুযোগ পেলে তা কী করতে পারে। প্রধানমন্ত্রীসহ দেশের নেতৃত্বস্থানীয় অবস্থানে গেছে তারা নিজের যোগ্যতায়। দেশের অর্থনীতি খুঁটি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই যে নারীদের এগিয়ে যাওয়া; এসবের পেছনে বাধা ছিল, বাধা আছে, বাধা থাকবে। সম্প্রতি এক ক্রিকেটার সহশিক্ষা এবং নারীদের চাকরির বিরোধিতা করে ভাইরাল। তার সপক্ষে বহু মানুষের অবস্থান দেখে মনে হয় নারীদের নিয়ে অনেকের মনোভাব এখনও বেগম রোকেয়ার সময়েই পড়ে আছে। এরা নারীদের ঘরবন্দী করে রাখতে চায় এ ভেবে যে, যখন ঘরে থাকবে, পড়ালেখা করে চাকরির সুযোগ পাবে না, তখন এদের যা খুশি তাই করা যাবে।
যাদের অর্থসম্পদ আছে, তারা না হয় স্ত্রীদের ঘরবন্দী করে চলতে পারল, কিন্তু যাদের একজনের উপার্জনে সংসার চলে না, তারা কেমনে চলবে? দেশের গার্মেন্টস সেক্টরে যে লাখ লাখ নারীশ্রমিক, তারা ঘরে চলে গেলে দেশের অর্থনীতির কী দশা হবে?
নিজেদের প্রয়োজনে লোকে ধর্মকে ব্যবহার করে। যে লোকটা সুদের বিরোধিতা করছে, সে ধুমসে ঘুষ খাচ্ছে। যে স্ত্রীর অধিকার দেয়নি, দেখা যায় সে বহুবিবাহকে সমর্থন করছে। অথচ নিজের বাপ-বোনজামাইকে আবার সে সুযোগ দিচ্ছে না।
খেলাধুলার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন কতটুকু ধর্মসম্মত? অথচ সে ব্যক্তিই নারীদের নিয়ে বিরাট বিরাট ভাষণ দিচ্ছে। মনে হয় দুনিয়ায় যত অনিষ্ট সব নারীদের কারণে। এই যে চুরি, খুন, ধর্ষণ- সব বোধহয় নারীদের কারণে। এসব নিয়ে এদের কাউকে কথা বলতে দেখা যায় না।
সহশিক্ষা বা একসঙ্গে চাকরিতে নারী অপরাধী হলে, যে অপরাধ সংগঠিত হয়, তা তো কেবল নারী একা করে না, পুরুষও করে। না কি পুরুষতান্ত্রিক সমাজে অকাজ করলেও পুরুষ দায়মুক্ত?
অবশ্য এ সমাজে অনেক মানুষই আছে যারা ধর্ষণের জন্য নারীর পোশাককে দায়ী করে। এ শ্রেণি যে নারীদের প্রতি এমন বিদ্বেষ পোষণ করবে; এটা তো স্বাভাবিক। ধর্মীয় জ্ঞানের অভাবে এরা এমন করে না কি অতি জ্ঞানে এমন করে, বোঝা যায় না। ধর্মের নামে যত অবিচার সবই সমর্থন করে এরা। এরা সমকামিতার বিরোধিতা করে অথচ মাদ্রাসায় শিশু বলাৎকার নিয়ে এদের মুখে রা নেই। ধর্মের লেবাস পরলে সব অন্যায় জায়েজ হয়ে যায়?
অন্যায় অন্যায়ই। সে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা যেখানেই হোক। স্কুল-কলেজে অন্যায় হলে সমর্থনে কেউ থাকে না। অথচ মাদ্রাসায় কিছু হলেও স্কুল-কলেজের প্রসঙ্গ তুলে মাদ্রাসার অন্যায় জায়েজ করা হয়। যদিও দুটো পড়ার ধারা এক না। একটা জাগতিক, আরেকটা পারলৌকিক।
বাংলাদেশ নিশ্চয়ই আফগানিস্তান হয়ে যাবে না। তবুও মনে হয় দেশটা খুব একটা পিছিয়ে নেই। সুযোগ পেলে এরা যে আফগানিস্তান বানিয়ে ফেলবে, সে কথা বলাই যায়। উচ্চ শিক্ষিত লোকজন যখন ধর্মান্ধদের প্রশ্রয় দেয়, তখন ভয়টা বেশি হয়।