২০২৩ ভারত বিশ্বকাপ খেলতে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল দেশত্যাগ করল। অথচ দলে জায়গা হলো না ওপেনার তামিম ইকবালের। যদিও 'নড়াইল এক্সপ্রেস' খ্যাত মাশরাফী বিন মূর্ত্তজা জানিয়েছেন, তামিম ইকবালই দলে থাকতে চাননি। বিসিবিতে তামিমের থাকা না থাকা নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক চলল। তামিমকে নাকি মিডল অর্ডারে ব্যাটিংয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়। উনি রাজি হননি।
দলের প্রয়োজনে যেকোনো জায়গায় ব্যাটিংয়ের মানসিকতা থাকা দরকার। ভারতের বিরাট কোহলি কি দলের প্রয়োজনে ৩ নম্বর পজিশন ছাড়েননি? শ্রীলঙ্কার তিলকারত্মে দিলশান কি ৭-৮ নম্বর পজিশন থেকে ওপেনিংয়ে আসেননি?
যাহোক, তামিম ইকবাল বহুদিন ধরেই চোটাক্রান্ত। কিছুদিন আগে হুট করে অবসর নিয়ে বসেন। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে দলে ফেরেন। এবার ফিটনেসের অভাবে বাদ পড়লেন বলে শোনা যাচ্ছে। যদিও তামিম ইকবাল বলেছেন, তিনি পুরোপুরি ফিট। তাও কেন বাদ পড়লেন অথবা নিজেকে সরিয়ে নিলেন খোলাখুলি বোঝা যাচ্ছে না। ধারণা করা হচ্ছে, খোদ সাকিব-হাথুরুর ইচ্ছেতেই এমন হচ্ছে।
তামিম বাদ পড়ার পর তার বড় ভাই জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার নাফিস ইকবালকেও দলের টিম ম্যানেজারের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়, অন্যান্য খেলোয়াড়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতেই উনাকে বাদ দেওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে নাকি খেলোয়াড়দের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ। আবার লোকমুখে শোনা যায়, সাকিব আল হাসানই নাকি তামিমের অগ্রজকে ড্রেসিংরুমে চাচ্ছিলেন না।
জাতীয় দলের মধ্যে এই যে অরাজকতা; এসব ক্রিকেটপ্রেমীদের যে ভাবিত করে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বলা হচ্ছে, সাকিব-তামিমের দ্বন্দ্ব নোংরা পর্যায়ে চলে গেছে। বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপন নিজেও বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন। সাবেক ক্রিকেটার খালেদ মাহমুদ সুজন বললেন, ওরা তো আর বাচ্চা না, বাচ্চার বাপ। ওদের বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছি।
২০০৬ সালের অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ দলে ছিলেন সাকিব-তামিম। বিকেএসপিতে থাকাকালে দু'জনই তাদের প্রতিভার দ্যুতি ছড়াতে থাকেন। মোহামেডান-ভিক্টোরিরায় একসঙ্গে খেলেছেন। দু'জন নাকি একই রুমে থেকেছেন। ছিলেন জিগরি দোস্ত। ২০০৬ সালের ৬ আগস্ট সাকিবের জাতীয় দলে অন্তর্ভুক্তি। তার ঠিক পরের বছরের ৯ ফেব্রুয়ারিতে তামিম। দু'জন একসঙ্গে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়েছেন। হয়েছেন অধিনায়ক-সহঅধিনায়ক। আবার একসঙ্গে দল থেকে বাদও পড়েছেন। অথচ কী থেকে কী হয়ে গেল। একসময় দু'জনের মুখ দেখাদেখি বন্ধ হয়ে গেল।
কোচ চন্দ্রিকা হাথুরুসিংহের পরিকল্পনা ছিল শতভাগ ফিট খেলোয়াড় দলে নেবেন। এ জন্য মাহমুদউল্লাহকে বাদ দিয়েছিলেন। এশিয়া কাপে তরুণরা খারাপ করায় তাকে দলে নেওয়া হলো। তামিমের ফিজিও যেখানে তাকে ফিট বলল, সেখানে তার দলে না থাকাটা প্রশ্নের জন্ম দেয়। এমনও না যে দলে তারচেয়ে উপযুক্ত ওপেনার আছেন। তরুণ যাদের নেওয়া হলো, তারা কতটুকু সাফল্য দেখাতে পারে; সেটাই এখন দেখার বিষয়।
২০১১ তে দুঃখজনকভাবে মাশরাফী অধ্যায় শেষ হয়েছিল। ২০২৩ এ শেষ হলো তামিম অধ্যায়। ব্যক্তিগত রেষারেষি ও হিংসার যে বীজ বপন করা হলো, তার খেসারত বোধহয় দিতে হবে জাতীয় দলকে।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ২:৪৬