ভিন্ন মতাদর্শিক এক নারীর সাথে কিঞ্চিৎ বাতচিত হলো কাল। বলল, 'দেশটাকে তো ভারতের অঙ্গরাজ্য বানাতে চাচ্ছেন।' আমি হেসে হেসে বললাম, 'তা না। পারলে আমেরিকা বানাতে চাই।'
'কেন? আপনার মা-বোন কি আপনার সামনে প্যান্টি পরে?'
সে নিজেই আমেরিকা থাকে। নিশ্চয়ই প্যান্টি পরে থাকে না? বললাম, 'আপনি কি প্যান্টি পরেন?' বলল, 'আমি হিজাব পরি।'
বললাম, 'আপনারা তো দেশটাকে আফগানিস্তান, পাকিস্তান বানাতে চান। অথচ নিজেরা গিয়ে থাকেন ইহুদী-নাসারাদের দেশে।' উত্তর না দিয়ে বলল, 'একাত্তরে পাকিস্তানিরা হিন্দুদের নির্যাতন করেছে। এরা পাকি বীজ। হিন্দুরা সব ওই সময় ভারত চলে গেছে।'
বললাম, 'শুধু ২৫ মার্চের রাতে ঢাবি ছাত্রী হলগুলোর ব্যাপারে একটু খোঁজ নিন তো। দেখুন অত্যাচারিত নারীরা সবাই হিন্দু ছিল কি না। একাত্তরের যুদ্ধটা কি ধর্মযুদ্ধ ছিল? পূর্বাংশ পশ্চিমাংশ- দুই অংশই ছিল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ। এখানে হিন্দুরা যুদ্ধ করেনি, মুসলমানরা যুদ্ধ করেছে; এ প্রসঙ্গ আসে কেন?'
কোনো জবাব না দিয়ে গালাগাল করে ব্লক করে দিল।
যতই দেশপ্রেমের বুলি আওড়াই, ধারণা করি আমেরিকায় যাওয়ার সুযোগ পেলে দেশ খালি হয়ে যাবে। একটা বিষয় মাথায় খেলে না, এত এত মানুষ দেশটাকে আফগানিস্তান, পাকিস্তান বানাতে চায় অথচ নিজেরা কেন সেসব দেশে যেতে চায় না? আবার আমেরিকায় ঠিকই যেতে চায় কিন্তু দেশটাকে কেন আমেরিকা বানাতে চায় না? আমেরিকা বলতে আবার ওদের অঙ্গরাজ্য হওয়ার কথা বলছি না। শুধু নিয়মনীতির কথা বলছি। যদিও অঙ্গরাজ্য হওয়ার প্রস্তাব পেলে অনেকে রাজি হয়ে যাবে। অনেকে তো সরাসরি ওদের হস্তক্ষেপও চাচ্ছে।
যাহোক, আমেরিকা হলে প্যান্টি পরতে হবে নারীদের- এমন কোথাও লেখা আছে? আমেরিকা, বৃটেন বা আরও অনেক ভিন্ন ধর্মের লোকদের দেশে নারীরা স্বাধীনভাবে পোশাক পরে। দেশ আমেরিকার মতো হলেও নিশ্চয়ই পরবে? নিজেরা ঠিকই অন্য দেশের সুবিধা নিতে পারে অথচ অন্য কেউ দাবি করলেই দোষ।
দেশকে ক'জন মন থেকে ভালোবাসে? কোনো নেতা, বড় আমলা বা বিরাট পয়সাওয়ালা কেউ তাদের সন্তানদের দেশে পড়ায়? এমনকি তথাকথিত ধার্মিকরাও তো সন্তানদের বিদেশে পড়াতে উদগ্রীব। দেশ নষ্ট, দেশে ভবিষ্যৎ নেই- এই অভিযোগ তুলে দুর্নীতিবাজরাও বিদেশে বাড়ি বানায়। এরা কি মনে করে হুট করে একদিনে দেশ ভালো হয়ে যাবে? আদৌ কি ওরা চায় দেশ ভালো হয়ে যাক? দেশ ভালো হয়ে গেলে মানুষের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাবে কে?
সরকারি ব্যাংক আর বেসরকারি ব্যাংকে গেলে সেবার মান দেখে বোঝা যায় আমাদের মনস্তত্ব। এটা কেমনে তৈরি হলো? দুই সেক্টরেই শিক্ষিত লোক বসা। তাহলে বেসরকারিতে ভালো, সরকারিতে খারাপ আচরণ কেন? সরকারি চাকরি করলে খারাপ ব্যবহার করতে হবে- এমন কোথাও লেখা আছে?
নিজেদের নেই চরিত্র ঠিক, দোষ ধরি অন্যদের। দেশের ৫ ফুটবলারকে মদ বহনের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ভাগ্যিস কেউ বলেনি সিস্টেমের দোষ। সিস্টেম মানুষই তৈরি করে। নিজে ভালো না হলে সব একসাথে ভালো হয়ে যাবে না।
ইউরোপ-আমেরিকা মানে শুধু নারীরা প্যান্টি পরে থাকে; এমন না। হিজাবও পরে। তাদের মধ্যে নীতি-নৈতিকতাও আছে। আমাদের দেশে নীতি-নৈতিকতা, উদারতা আমদানি করলেও তো পারে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই অক্টোবর, ২০২৩ দুপুর ১২:১২