২০১৭ সালে আরাকানের সশস্ত্র গোষ্ঠী (আরসা) মিয়ানমারের সেনা চৌকিতে হামলা চালানোর পর এর প্রতিক্রিয়ায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী যখন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নির্বিচারে হামলা শুরু করলো, লাখে লাখে রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকতে চেষ্টা করলো। সরকার তাদের বাধা দিলে বেশিরভাগ মানুষ ধর্মের টানে তাদের এদেশে ঢুকতে দেওয়ার জন্য সরকারকে জোরালোভাবে আহ্বান জানাল। বললো, নিজেরা একবেলা খেয়ে হলেও মুসলিম ভাইবোনদের খেতে দেবে, পরনের কাপড় দেবে। দরকার পড়লে বিয়ে করে মেয়েদের উদ্ধার করবে। এরপর মানুষের চাপে সরকার রোহিঙ্গাদের এদেশে ঢুকতে দিতে বাধ্য হলো।
কয়েক বছরে রোহিঙ্গাদের আচরণে লোকজন মোটামুটি ত্যক্তবিরক্ত হয়ে গেল। দরদ নিয়ে তাদের জন্য পুরোনো কাপড় নিয়ে গেলে তারা মুখের ওপর ছুড়ে মারলো। রোহিঙ্গারা যে জাতিগতভাবে উচ্ছৃঙ্খল; এটা বুঝতে সময় লাগল না। দেখা গেল এদের যারা আশ্রয় দিয়েছে, এরা তাদের মাথায় ওপরেই ছড়ি ঘুরিয়েছে৷খুনখারাবি পর্যন্ত করেছে। শেষে সরকার বাধ্য হয়ে এদের জন্য আলাদা আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করলো।
যারা এদের আশ্রয় দিতে বলেছিল, তারা লজ্জায় যেখানে মুখ লুকানোর কথা; সেই তারাই পরে বলেছে সরকার নোবেল পুরস্কারের জন্য রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। কী একটা অবস্থা।
২০২১ সালের এপ্রিলে ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির নেতৃত্বে নির্বাচনে জয়ী সদস্যরা জাতীয় ঐক্যের সরকার গঠন করে। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সদস্যরাও এতে যোগ দেয়। সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে থাকা বিদ্রোহী বাহিনীর সঙ্গে মিলে তারা প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করে এবং সব গোষ্ঠীর সমন্বয়ে তৈরি করে ‘পিপল ডিফেন্স ফোর্স’।
২০২৩ সালের অক্টোবরের শেষদিকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ওপর একজোট হয়ে হামলা চালায় দেশটির উত্তরের জাতিগতভাবে সংখ্যালঘু তিনটি বিদ্রোহী বাহিনী, যাদের একসঙ্গে ডাকা হচ্ছে 'থ্রি গ্রুপ অ্যালায়েন্স' নামে। ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ), তায়াং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ) এবং আরাকান আর্মি (এএ) নিয়ে এই জোট গঠন করা হয়েছে। তারা একে নাম দেয় ‘অপারেশন ১০২৭’।
এছাড়াও শত শত স্বেচ্ছাসেবী জাতিগত বিদ্রোহীদের সাথে যোগ দেয়। তাদের সাথে অস্ত্রে সুসজ্জিত সেনাবাহিনীর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে দুই বছরের আপাত অচলাবস্থার অবসান ঘটে। সামরিক বাহিনীকে এই মুহূর্তে সারা দেশে নানা ধরনের হামলার সম্মুখীন হচ্ছে।
অক্টোবরে হামলা শুরু হবার পর থেকে হাজার হাজার সৈন্য তাদের সরঞ্জাম নিয়ে বিদ্রোহী বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। অন্যদিকে, সারা দেশে বিদ্রোহী বাহিনীর কাছে সেনাবাহিনী ৪০০রও বেশি সীমান্ত চৌকি হারিয়েছে।
পালিয়ে বাংলাদেশে চলে এসেছিল সেদেশের সীমান্ত রক্ষীবাহিনী, এমনকি সেনাবাহিনীর অনেক সদস্যও। ঝামেলা এখনও শেষ হয়নি। মিয়ানমার চাচ্ছে বাংলাদেশের সাথে যুদ্ধ হোক। বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ধৈর্য ধরছে।
তবে অতি উৎসাহী অনেকে যুদ্ধ লাগাতে বলছে। যুদ্ধ লাগলে কী হবে; এটা বোঝার মগজ কি এদের নেই? যুদ্ধ লাগলে নিজেরা নিশ্চয়ই গর্তে লুকাবে। এরা ভারত পাকিস্তান ঝামেলা হলেও চায় যুদ্ধ হোক। যুদ্ধ এদের কাছে রোমাঞ্চকর কিছু। যুদ্ধ হলে লাখ লাখ মানুষ যে কী দুর্বিষহ জীবনযাপন করে এরা কি বোঝে না?
আমেরিকা-ব্রিটেনের উসকানিতে ইউক্রেন রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে জড়ালো। দুই বছরে দশ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গেল। এরমধ্যে নারী শিশুই বেশি। দানব পুতিন যেখানে তার দেশের বিরোধীদলকেই সহ্য করতে পারে না, অভিযোগ উঠেছে তার সমালোচক বিরোধীদলীয় নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনিকে কারাগারে হত্যা করেছে; সে কি ইউক্রেনকে সহ্য করবে। ফলাফল তো সবাই দেখতেই পাচ্ছেন। এখন ইউক্রেনের অবস্থা ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি। জেলেনস্কি কী করবে? আমেরিকা-ব্রিটেন তো তাকে গাছে তুলে মই কেড়ে নিয়েছে।
কার উসকানিতে জানি না গাজার সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে হামলা চালালো। ১২০০ নিরীহ মানুষ মেরে বীরত্ব প্রকাশ করলো। জিম্মি করলো কয়েকশো। কী পরিণতি হবে একবারও ভাবলো না।
জিম্মি উদ্ধারের উছিলায় হামলা চালিয়ে গাজাকে গোরস্থান বানিয়ে ফেলেছে ইসরায়েল। কয়েক মাসে ২৯ হাজারের ওপর মানুষ নিহত হয়েছে। নারী-শিশু-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ কেউই রেহাই পাচ্ছে না। ইসরায়েল বহু বছর যাবত অত্যাচার করছে, তার প্রতিবাদ স্বরুপ ইসরায়েলে হামলা করে ইসরায়েলের ক্ষতির চেয়ে নিজেদের ক্ষতি বেশি করলো না হামাস? এগুলো কে তাদের বলবে?
দানব নেতানিয়াহুকে মনে হয় না কেউ থামাতে পারবে। সে গাজাকে তামা তামা করে ফেলছে। ২৫০ জিম্মি রেখে হামাস কী সুবিধা করবে কে জানে। যদিও শোনা যাচ্ছে যুদ্ধবিরতি করবে হামাস। যদি তাই হয়; এই যে এত এত মানুষ মরল; এদের জীবন কে ফিরিয়ে দেবে?
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সকাল ৮:২৩