থট হ্যাকার
কাজ: অন্যদের চিন্তা বুঝতে পারা
সময়: ২০৩০ সাল
গত বছর প্রথমবারের মতো মিথ্যা ধরার যন্ত্র আদালতে ব্যবহার শুরু হয়েছে। বর্তমানে মনের ভেতরের বিভিন্ন চিন্তাভাবনা বাইরে থেকে বোঝার জন্য প্রযুক্তি উদ্ভাবনে বিজ্ঞানীরা চেষ্টা চালাচ্ছেন। ক্যালিফোর্নিয়া অব বার্কলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জ্যাক গ্যালান্ট ইতিমধ্যে মানুষের মস্তিষ্ক স্ক্যান করার জন্য একটি যন্ত্রের নকশা করেছেন। ব্রেইন কম্পিউটার তাই হয়তো আর দূরের কোনো বিষয় নয়। ভবিষ্যতে হয়তো এমন কিছু আবিষ্কার হবে, যার সাহায্যে পক্ষাঘাতগ্রস্ত কোনো ব্যক্তি মস্তিষ্ক দিয়ে কম্পিউটার চালনা করতে পারবে। এ ছাড়া মনোবিদ্যা নিয়ে অনেক গবেষণা হচ্ছে। সাইকো থেরাপি ও প্রযুক্তির মনোবিদ্যা নিয়ে এখন গবেষণা হচ্ছে। এতে মানুষের চোখের ভাষা ও মস্তিষ্কের ভেতরের বিভিন্ন সংকেতের বিশ্লেষণ করা হবে আগামী দিনের একটি অন্যতম চ্যালেঞ্জিং পেশা।
পড়াশোনা: নিউরোসায়েন্স ও কম্পিউটার-বিজ্ঞানে পিএইচডি
ফিউশন-শ্রমিক
কাজ: ফিউশন রি-অ্যাক্টর নিয়ন্ত্রণ করা
সময়: ২০২৫ সাল
বাংলাদেশে বিদ্যুতের সংকট কাটাতে সরকার পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। ভবিষ্যতে এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রই হবে মানুষের বিদ্যুতের জোগানদাতা। তবে বর্তমানে ফিউশন প্রক্রিয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। ফ্রান্সে ২০১৯ সালে চালু হবে পৃথিবীর প্রথম থার্মো নিউক্লিয়ার রি-অ্যাক্টর, যেখানে ফিউশন বিক্রিয়ার মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে। এর ফলে কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করেই বাংলাদেশের মতো একটি দেশের বিদু্যুতের চাহিদা পূরণ করা যাবে। এসব ফিউশন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাতে প্রয়োজন পড়বে দক্ষ মানুষের, যারা ডায়াগনস্টিক পদার্থবিদ, ম্যাগনেট অক্সিলারি কর্মকর্তা, রেডিয়েশন কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেন।
পড়াশোনা: ইউএস বার্নিং প্লাজমা আইটিইআর সামার স্কুলের স্নাতক
মহাবৈশ্বিক স্থপতি
কাজ: মহাজাগতিক স্থাপনার পরিকল্পনা করা
সময়: ২০২৫ সাল
মার্কিন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা বলেছেন, ২০২৫ সালের মধ্যেই মানুষ অন্য গ্রহে যাবে। সেখান থেকে মূল্যবান খনিজ সংগ্রহের কথাও তিনি বলেছেন। সে সময় মঙ্গলগ্রহে শূন্যের নিচে তাপমাত্রা থেকে অত্যন্ত উষ্ণ তাপমাত্রার আবহাওয়ায় টিকে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি ও প্রযুক্তি আয়ত্ত করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন পড়বে উন্নত যন্ত্রপাতি। কীভাবে খরচ কমিয়ে ভালো ডিজাইন করা যায়, তার ওপর নির্ভর করবে মানুষ কত দ্রুত মঙ্গলে বসবাস শুরু করবে। এ ছাড়া অধিকসংখ্যক মানুষ বাস করা শুরু করলে প্রয়োজন হবে নির্দিষ্ট ধরনের জীবনধারা, যা তৈরি করে দিতে হবে প্রকৌশলী ও স্থপতিদেরই।
পড়াশোনা: মহাকাশ স্থাপত্যে স্নাতকোত্তর। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয় পড়ানো হয়।
মহাবিশ্ব পর্যবেক্ষক
কাজ: কৃত্রিম উপগ্রহ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা
সময়: ২০৩০ সাল
বর্তমানে জনসংখ্যা, বিভিন্ন এলাকা, তাপমাত্রা, সমুদ্রের গভীরতা, রোগ ও মহামারির ভয়াবহতা নির্ণয় ইত্যাদি কাজের জন্য কৃত্রিম উপগ্রহ ব্যবহূত হচ্ছে। ভবিষ্যতে পর্যবেক্ষণের এই কাজের গুরুত্ব ও পরিধি আরও বেড়ে যাবে। এত দিন মানুষ পৃথিবী থেকে মহাকাশ দেখত, সামনে হয়তো আকাশ থেকে পৃথিবী দেখার জন্য পর্যবেক্ষকের প্রয়োজন পড়বে।
পড়াশোনা: নৃবিজ্ঞান ও ভূ-পদার্থবিজ্ঞানের স্নাতকেরা অগ্রাধিকার পাবেন।
মানুষ-রোবট মিথস্ক্রিয়া বিশেষজ্ঞ
কাজ: মানুষ ও রোবটের মধ্যে দোভাষীর কাজ করা;
সময়: ২০৩০ সাল
ভবিষ্যতে শারীরিক পরিশ্রমের অধিকাংশ কাজই মানুষ করবে না, করবে রোবট। থালা-বাসন ধোয়া, বাজার করা, মশারি টানানো ইত্যাদি কাজের জন্য থাকবে বিশেষজ্ঞ রোবট। তবে তখনো মানুষের ভাষা রোবট বুঝতে পারবে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন না। ফলে মানুষ, বিশেষ করে বয়োবৃদ্ধ ও রোবটের মধ্যে ব্যবধান কমিয়ে আনতে প্রয়োজন হয়ে পড়বে মধ্যস্থতাকারীর। এই পেশাজীবী মানুষের সামাজিকতা, আচার-অনুষ্ঠান, অভিজ্ঞতা-অনুভব, সুখ-দুঃখ ইত্যাদি ব্যাপার-স্যাপার রোবটটিকে বুঝিয়ে বলবে। পাশাপাশি রোবটের যান্ত্রিক ব্যবহারকে মধ্যস্থতাকারী অযান্ত্রিকভাবে মানুষের তাছে তুলে ধরবে।
পড়াশোনা: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ে ডিগ্রিধারী হতে হবে। বিষয়টি এখন পৃথিবীর অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে মূল বিষয় হিসেবে পড়ানো হচ্ছে।
অঙ্গপ্রত্যঙ্গের নকশাবিদ
কাজ: মানুষের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তৈরি
সময়: ২০২০ সাল
মানুষের বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা দিনে দিনে বাড়ছে। এ কারণে বিভিন্ন হাসপাতালে বাইপাস সার্জারি, হূৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন ইত্যাদি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কিন্তু অনেক সময়ই প্রতিস্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় হূৎপিণ্ড পাওয়া যায় না। অন্যদিকে ২০৫০ সালে মানুষের সংখ্যা হবে দ্বিগুণ। ফলে প্রয়োজন পড়বে কৃত্রিম হূৎপিণ্ডের। তাই হূৎপিণ্ডসহ মানুষের সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, যেমন হাত-পা, কান, যকৃৎ, ফুসফুস, রক্তনালি, শ্বাসনালি—সবকিছুই বিজ্ঞানীরা কৃত্রিমভাবে বানানোর চেষ্টা করছেন।
পড়াশোনা: জীব প্রকৌশলী।
ডিজিটাল জ্যোতিষী!
কাজ: ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ধারণা প্রদান
সময়: ২০১৫ সাল
একটু আগেই বলেছি, ভবিষ্যতের একটি উল্লেখযোগ্য চাকরির ক্ষেত্র হবে কৃত্রিম উপগ্রহ দিয়ে তথ্য সংগ্রহ। কিন্তু সংগ্রহ করলেই হবে না, করতে হবে বিশ্লেষণ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। ভবিষ্যতে তাই আমরা ডিজিটাল জ্যোতিষী পেতে যাচ্ছি।ব্যবসায়ীরা এসবের ওপর ভিত্তি করেই বিনিয়োগ করবেন। এ ছাড়া অনেক মানুষই তার ব্যক্তিগত জীবনের পেশা, বিয়ে, ভ্রমণ ইত্যাদি সম্পর্কে এই ডিজিটাল জ্যোতিষীদের পর্যবেক্ষণ থেকে সিদ্ধান্ত নেবেন।
পড়াশোনা: পরিসংখ্যান ও কম্পিউটার-বিজ্ঞানের ওপর ডিগ্রিধারীরা এখানে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন।
অন্ধকারের চিকিৎসক
কাজ: জন্মের আগেই রোগ থেকে মুক্তি দেওয়া
সময়: ২০২০ সাল
ভবিষতে বিজ্ঞানের একটা বড় অংশ জুড়ে থাকবে জিনপ্রযুক্তি। ওষুধশিল্পেও চলে আসবে জেনেটিক ওষুধ। খাবারের ক্ষেত্রেও থাকবে জেনেটিক্যালি মডিফায়েড খাবার। তখন নিশ্চয় বিজ্ঞানীরা পুরোপুরিভাবে জেনে যাবেন কোন কোন রোগের জন্য কোন জিন দায়ী। এতে কিছু চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন হবে, যাঁরা শিশু মায়ের গর্ভে থাকতেই জেনেটিক প্রকৌশল খাটিয়ে রোগীর জন্য জিনগুলো সরিয়ে দেবেন। ফলে জন্মের পর তাকে আর ক্যানসার, ডায়াবেটিস বা অটিজমের মতো কঠিন রোগে আক্রান্ত হতে হবে না।
পড়াশোনা: জিনবিজ্ঞান নিয়ে বর্তমানে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণাগারে কাজ হচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন হাসপাতালেও জিনবিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদের নেওয়া হচ্ছে।
প্র্রাণী সংরক্ষণ প্রকৌশলী
কাজ: প্রাণীর টিকে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরি
সময়: ২০৩০ সাল
প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে প্রাণিবৈচিত্র্য হারিয়ে যাবে ভাবার কোনো কারণ নেই। বরং মানুষ তার নিজের প্রয়োজনেই প্রাণিবৈচিত্র্যকে ধরে রাখতে দিন-দিন সচেষ্ট হচ্ছে। বাংলাদেশেও ইতিমধ্যে সাফারি পার্ক চালু হয়েছে। ভবিষ্যতে প্রাণীদের বাসোপযোগী পরিবেশ তৈরির ব্যাপারটা আরও প্রাধান্য পাবে। যেসব প্রাণী বিলুপ্তপ্রায়, তাদের খুঁজে বের করতে হবে এবং তাদের জন্য পরিবেশ তৈরি করে সেখানে তাদের প্রতিস্থাপিত করতে হবে। পড়াশোনা: জীববৈচিত্র্য ও এর সংরক্ষণনিয়ে পড়াশোনা করতে হবে।
নভো পাইলট
কাজ: মহাবিশ্বে নভোযান চালনা
সময়: ২০২০ সাল
ভার্জিন গ্যালাক্টিক ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে, তারা ২০১২ সাল থেকে নিয়মিত মহাকাশভ্রমণ পরিচালনা করবে, যার প্রতিটি আসনের মূল্য হবে দুই লাখ পাউন্ড। অবশ্য অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এই খাতে বিনিয়োগ শুরু করলে বিশাল এই খরচটা নিশ্চিতভাবেই কমে আসবে এবং অনেক বেশি মানুষ মহাকাশ পরিভ্রমণে যাবে। ভবিষ্যতে বিনোদনের অন্যতম জায়গা হবে মহাকাশ। বিজ্ঞানীদের ধারণা, প্রতিদিন একটি নভোবিনোদন করে অভিযান পরিচালনা হবে। এখন যাঁরা বৈমানিক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর, তাঁরা বরং প্রস্তুত হয়ে যান ভবিষ্যতের বৈমানিক হওয়ার জন্য ।
পড়াশোনা: অবশ্যই বিমানে পড়ার স্কুল থেকে পড়াশোনা করতে হবে। সঙ্গে থাকতে হবে মহাকাশ গবেষণাগারের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




