প্রচলিত তথ্যমতে, পারমানবি বোমা ও মহাকাশ বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব সফলতার মূল কারিগর আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়ন কিন্তু প্রকৃত ইতিহাস আসলে সম্পূর্ণ আলাদা – যা তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে মিত্র বাহিনীর মূল ভয় ছিল হিটলারের গোপণ অস্ত্র ও নাৎসি বিজ্ঞানীদের নিয়ে । মিত্র বাহিনীর বিভিন্ন গোয়েন্দা কমান্ডো ইউনিট (যেমন- ব্রিটেনের 30 Au বা আমেরিকার ALOSS MISSION) ইউনিট সারা জার্মানি চষে বেড়িয়েছে নাৎসি বিজ্ঞানী ও গোপন অস্ত্র সংগ্রহের জন্য। তাদের ভয় ছিল হিটলারে চূড়ান্ত প্রতিষোধ নিয়ে। নাৎসি বিজ্ঞানীদের কব্জা করার জন্য তখন আমেরিকা, ব্রিটেন ও সোভিয়েত ইউনিয়ন এক গোপন প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছিল। যা পরবর্তীতে শীতল যুদ্ধের সূত্রপাত করে। এবং সেই দৌড়ে জয়ীরাই পরবর্তীতে শীতল যুদ্ধ ও তৎপরবর্তী পৃথিবী নিয়ন্ত্রণ করে চলছে।
“D DAY” - জুন ৬, ১৯৪৪ এই দিনটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভবিষ্যৎ প্রভাবিত করেছিল ব্যাপকভাবে। মিত্র বাহিনীর এই অভূতপূর্ব সফলতার দিনেও তাদের ভয় ছিল চরমে,হিটলারের সম্ভাব প্রতিষোধের তীব্রতা নিয়ে। “D DAY” এর ঠিক সাত দিন পরে সেই ভীতি সত্যে পরিণত হল যখন "ভি-১" নামক ক্ষেপনাস্ত্রটি লন্ডন শহরে আঘাত হানলো।
ওয়েনার ভন ব্রাউন(ব্যালিষ্টিক ক্ষেপনাস্ত্রের জনক):
ওয়েনার ভন ব্রাউন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন..
Wernher von Braun
১৩ জুন ১৯৪৪ সালে ঘন্টায় ৪০০ মাইল উড়ে এসে যে ওয়েপানটি লন্ডনের কেন্দ্রবিন্দুতে আঘাত হেনেছিল- সেটি তারপরও অনেক দিন অজানা ছিল মিত্রবাহিনীর কাছে। তারা এর নাম দিয়েছিল "উড়ন্ত বোম"। পরবর্তী ৪ দিনে প্রায় ১০০ টি উড়ন্ত বোম লন্ডন শহরকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছিল। এটি মূলত " ভি-১" ব্যালিষ্টিক ক্ষেপনাস্ত্র। যখন কিনা মিত্র বাহিনী এই ক্ষেপনাস্ত্র হামলা মোকাবেলা করতে সক্ষমতা অর্জন করেছিল ঠিক তখনই ব্রাউন তাঁর অধিকতরও হিংস্র ও কার্যকর "ভি-২" ক্ষেপনাস্ত্র ব্যবহার করতে শুরু করে।তৎকালীন সময়ে সারা পৃথিবীর সমরবিদদের কাছে এই অস্ত্রটি ছিল সম্পূর্ণ নতুন।১৯৪৫ সালের ২ মে আমেরিকা তাকে করায়াত্ত করার পর, তিনি সহ তাঁর রকেট প্রজেক্টের সহকর্মীরা ও সরঞ্জামাদি নিয়ে আমেরিকা চলে যায় এবং যার ফলশ্রুতিতে নাসার আজকের এই সফলতা।
ওয়েনার ভন ব্রাউন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে এই বিখ্যাত ডকুমেন্টারি টি দেখতে পারেন..
হেলমাট ওয়াল্টার (আধুনিক জেট ফাইটারের পাইওৈয়ার):
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে যে যুদ্ধবিমানটি মিত্রবাহিনীর কাছে ছিল সবচেয়ে ভীতির কারন সেই "লুবফটবাফা" নির্মাণের পিছনে যার ব্রেইন কাজ করেছে তিনি হলেন নাৎসী জিনিয়াস হেলমাট ওয়াল্টার। কয়েকদফা সংস্করনের পর সর্বশেষ যে লুবফটবাফাটি তিনি তৈরি করেছিলেন তাঁর গতি ছিল ঘন্টায় ৫৬৮ কি:মি:। এছাড়াও এর কিছু ইউনিক সুবিধা ছিল যার বদৌলাতে যুদ্ধক্ষেত্রে এটি রাজত্ব করেছিল।এই বিমানটি পরীক্ষা করতে গিয়ে ১০ জন জার্মান বৈমানিক প্রান দিয়েছিল।এর নিয়ন্ত্রণই ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেজ্ঞ। আর তখন মিত্রবাহিনীর কাছে যে সর্বোচ্চ গতিসম্পন্ন ফাইটার ছিল তার গতি ছিল ঘন্টায় মাত্র ৪৪৬ কি:মি:।বৃটিশ গোয়েন্দা সংস্হা "৩০ এইউ" তাকে ক্যাপচার করতে সক্ষম হয় এবং যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তিনি বৃটিশ সেনাবাহিনি তাঁর সহায়তায় অনেক অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্র তৈরি করে। ১৯৫০ সালে তিনি আমেরিকান সেনাবাহিনীর জন্য তৈরি করেন "f-16 Sabre" নামে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান- যেটি কোরিয়ান যুদ্ধের সময়ে অভূতপূর্ব সফলতা অর্জন করেছিল। সবচেয়ে মজার ব্যাপারটি হলো যুদ্ধের শেষ দিকে মিত্রবাহিনী নিজেদের মধ্যে যে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছিল নাৎসী বিজ্ঞানীদের দখল নিয়ে তাতে সোভিয়েত ইউনিয়ন খুব একটা সফলতা পায়নি। তারপরও সোভিয়েত বাহিনী বেশ কিছু মূল্যবান ডকুমেন্ট ও লুবফটবাফার নমুনা তারা সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছিল- যা পরবর্তীতে তাদের যুদ্ধবিমান শিল্পে অসাধারণ সফলতা এনে দেয়। রাশিয়ার আজকের মিগ বিমানের মূল সূত্রপাত "মিগ -১৫" দিয়ে। আর মিগ -১৫ এর উন্নয়ন মূলত লুফটবাফার নকশা থেকেই।
ওর্ণার হাইজেনবার্গ (পারমানবিক গবেষণার পাইওনিয়ার):
উইকিতে জানতে পারেন বিস্তরিত...।
Werner Heisenberg
"ম্যানহ্যাটেন প্রজেক্ট" যার ফলশ্রুতিতে আমেরিকা পারমানবিক বোমার অধিকারি হয় সেটা মূলত নাৎসী পারমানবিক ভীতির ভিত্তিতে গঠন করা হয়েছিল। হাইজেনবার্গ তাঁর টিম নিয়ে ইউরোনিয়াম সমৃদ্ধকরণ পরবর্তী ধাপে অবস্হান করছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে।Operation Alsos and Operation Epsilon যা মূলত আমেরিকা কতৃক পরিচালিত হয়েছিল নাৎসী বিজ্ঞানী তথা সিক্রেট ওয়েপান দখল করার জন্য সেই কমান্ডোরাই ৬ আগষ্ট ১৯৪৫ সালে তাঁকে করায়াত্ত করে। তাঁর পারমানবিক প্রজক্টে যেখানে ১০০ কিলোগ্রাম ইউরেনিয়াম ছিল সেখানে আমেরিকা জাপানে যে বোমাটি ব্যবহার করেছিল মাত্র ৫৬ কিলোগ্রাম ইউরেনিয়াম ব্যবহার করেছিল। যে কারনে নাৎসীদের পারমানবিক পরীক্ষা সফলতার মুখ দেখেনি সেই কারন গুলো চিহ্নিত করেই ম্যানহেটেন প্রজেক্টের মাধ্যমে আমেরিকা পারমানবিক বোমার অধিকারী হয়েছিল
ওর্ণার হাইজেনবার্গ সম্পর্কে জানতে পারেন এখান থেকে..
নাৎসী বিজ্ঞানী ও তাদের আবিষ্কৃত সিক্রট ওয়েপান এবং সেগুলো নিয়ে মিত্রবাহিনীর মধ্যে যে লড়াই শুরু হয়েছিল সে সম্পর্কে বিস্তরিত জানতে চাইলে আপনারা জিওগ্রাফি চ্যানেলের এক সপ্তাহ আগে মুক্তিপ্রাপ্ত অসাধারণ ডুকমেন্টারিটি দেখতে পারেন...
National Geographic the hunt for Hitler's scientists
কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, এই কৃতজ্ঞতা মিত্রবাহিনী কোনদিন স্বীকার করেনি এমনকি এই সংবাদগুলো যাতে সারা পৃথিবীর মানুষ না জানতে পারে সেজন্য ও তারা বিভিন্ন প্রকার ষড়যন্ত্রের আশ্রায় নিয়েছিল।সব সফলতা তারা তাদের নিজেদের বলে চালিয়ে যাচ্ছে বছরের পর বছর ধরে।