somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বউ কলজে ভুনা রাধেঁনি তাই আগামীকাল হরতাল

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :






গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অবরোধ , ধর্মঘট, অসহযোগ, হরতাল খুব পরিচিত শব্দ। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে এ অধিকারগুলো খুব বুঝে শুনে ব্যবহার করতেন নেতৃবৃন্দ। যদিও ‘৪৭ এ ধর্মভিত্তিক ভাগের পরপরই পাকিস্তানীদের শোষণের মনোভাব ক্রমশ স্পষ্ট হয়েছিল তাদের কাছে। তারপরেও হুটহাট রাজনৈতিক কর্মসূচী দেননি তারা। বরং চেষ্টা করেছেন শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার। যার প্রমাণ ৭ মার্চের ঐতিকাহাসিক ভাষনে যেমন রয়েছে তেমনি এর পরের ২৫ মার্চের আগ পর্যন্ত আলোচনায় তা ফুটে উঠে।
রেসকোর্সের ময়দানে অজ¯্র জনতার মাঝে দেয়া বঙ্গবন্ধুর ভাষন এখনো মানুষকে আবেগ তাড়িত করে। তার ভাষন লক্ষ্য করলে দেখা যাবে প্রতিপক্ষের প্রতি কোন রকম আবোলতাবল শব্দ ব্যবহার করেননি তিনি। পাকিস্তানী প্রেসিডেন্টের নামের আগে জনাব শব্দ ব্যবহার করেছিলেন তার স্বভাবসুলভ বিনয়ী ভঙ্গীতে। আবার যখন স্বাধীনতার ডাক দিয়েছেন তখন তিনি ছিলেন নির্ভীক এক নেতা। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ছিল কঠিন সঙ্কটে ভারসাম্যপূর্ণ অথচ আবেগময় অসাধারণ এক বক্তৃতা। আজকাল রাজনীতিকদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি কোন রকম বিনয়ী আচরন দেখা যায় না বলে সচেতন মহলে ক্ষোভ রয়েছে।ু

দেশ স্বাধীনের পর ‘৯০ এ স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে প্রায় সব রাজনৈতিক দল এক হয়েছিলেন। এ আন্দোলনে শুধু রাজনীতিক নন সাহিত্য- সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষ, সাংবাদিক, শিক্ষক, চিত্রকর সবাই একাত্মতা ঘোষনা করেছিলেন। যদিও কোন কোন রাজনীতিক এরশাদের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে গৃহপালিত বিরোধী দলের নেতা বনেছিলেন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে এরশাদও আজ সে ভূমিকায় রয়েছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বোদ্ধারা। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনেও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ আলোচনার মধ্য দিয়ে সমাধানের চেষ্টা করেছেন বার বার। তখনকার হরতালগুলোতে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা খুব একটা সহিংসতায় যেত না। হালে চিত্র পাল্টে গেছে।

অর্থনীতির চিত্রে ‘৯০ এ স্বৈরাচার পতনের পর বাংলাদেশ এগিয়েছে বেশ। এর আগে শুধুমাত্র বিদেশী সাহায্যের উপর নির্ভর করতে হত আমাদের। তখন এ দেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলা হত। এখন আমরা নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতুর মত বড় প্রকল্পের চিন্তা করতে পারি। মোদ্দা কথায়, দুই নেত্রীর আমলেই এ দেশ এগিয়েছে বলে আমার মত। আবার এ কথা বলাও ভুল হবে না দুইজনেই এ দেশকে পিছিয়ে নিয়েছেন কিছুটা। বিরোধী দলে থাকাকালিন তারা দুইজনেই হরতাল দিয়ে রেকর্ড গড়েছেন। যখন যিনি হরতাল দেন তখন তিনিই বলেন ‘ জনতা আমাদের সাথে আছেন’। এ ধারায় সম্প্রতি জামায়াতে ইসলামীর নাম আসে। এ দলটি দেশের স্বাধীনতার স্বাধীনতার বিরোধী ছিলেন। যা ছিল তাদের চরম রাজনৈতিক ভুল। যদিও এখন পর্যন্ত এ ভুলের জন্য কোন অনুতাপ দেখাননি তারা। চাননি জাতির কাছে ক্ষমা।
মানবতা বিরোধী অপরাধে বিজ্ঞ আদালত কর্তৃক নিজ দলের নেতা দন্ডিত হলেই হরতাল ডাকে জামায়াত- শিবির। আবার সে রায় মেনে নিয়ে উচ্চ আদালতে আপীলও করেন। আমার কাছে মনে হয় এটা একই চেহারার দুই রকম রুপ। অবশ্য এর আগেও এমন রুপে দেখা গেছে ওই দলের নেতাদের। সম্প্রত মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত মতিউর রহমান নিজামী এক সময় বলতেন শহীদ মিনারে ফুল দেয়া নাকি হারাম। আবার তিনি যখন বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে মন্ত্রী হলেন তখন শহীদ মিনারে গিয়ে ঠিকই শ্রদ্ধাঞ্জলী দিলেন। তখন সাংবাদিকদের প্রশ্নে মুচকি হেসে বললেন ‘ এটা রাষ্ট্রীয় ব্যাপার’। সেই নিজামীর রায়ের পর তিনি দলের নেতাকর্মীদের শান্ত থাকতে বললেও দল হরতাল ডাকল ঠিকই। এরপর কয়েকটি রায়ে একের পর এক হরতাল হল পুরো সপ্তাহ জুড়ে। হরতালে ব্যবসায়ীরাতো ক্ষতিগ্রস্থ হয়ই এবার এর রেশ সবচেয়ে বেশী পড়ল কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উপর। লন্ডভন্ড হয়ে গেল জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষার রুটিন। যদিও মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন ‘ এবার পরীক্ষার সময় হরতাল হবে না’। আমি বুঝলাম না তিনি কি কারো সাথে কথা বলে এতটা নিশ্চিত হয়েছিলেন। না-কি অনেক কথার মত এমনি এমনিই বলেছেন।
এদিকে জামায়াতের হরতাল শেষ হতে না হতেই বিএনপি হরতাল ডাকবে বলে সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে। বাংলানিউজ ২৪ জানিয়েছে - জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসে রাজধানীর সোহরাওর্দীর উদ্যানে জনসভা করতে অনুমতি না পেয়ে এ হরতাল ডাকতে পারে তারা। এ ব্যাপারে শনিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষনা আসতে পারে দলটির পক্ষ থেকে। তার মানে আবারও হরতালে পরীক্ষা পেছানোর আশংকা।
অনেকের মতে, অধিক ব্যবহারে হরতাল এখন একটি ভোতা অস্ত্র। যা দিয়ে সরকারকে খুব বেশী বেকায়দায় ফেলা যায় না। বরং যে দল হরতাল দেয় সে দলের নেতাকর্মীরা এর কুফল ভোগ করে বেশী। এ ছাড়া জনগন এখন হরতাল পছন্দ করে না। পরীক্ষার সময় হরতাল দিলে ক্ষুব্দ হয় অভিভাবকগণ। তারা হরতাল আহ্বানকারী দলের প্রতি বিরুপ মনোভাব প্রকাশ করে। এ অবস্থায় হরতাল দেয়া বিএনপির মত একটি রাজনৈতিক দলের চরম ভুল বলে মনে হচ্ছে।

এদিকে হরতালের এমন ব্যবহার দেখে আমার এক বন্ধু রসিকতা করে বলল ‘ দোস্ত গতকাল তোমার ভাবীর হাতে কলজে ভুনা খেতে চেয়েছিলাম। সে রাঁধেনি। তাই ঠিক করেছি আগামীকাল এর প্রতিবাদে হরতাল ডাকব। তুমি কি আমাকে সমর্থন কর ? করলে ‘হ্যা’ বল না করলে ‘না’ বল। ’ অনেকটা সামরিক শাসন আমলের হ্যা- না ভোটের মত।

আমি মুচকি হেসে বন্ধুকে বলে দিলাম ‘ না ’।


৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×