somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার নাম মফিজ ,ভাড়া হইছে তিরিশ

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ বিকাল ৪:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :










অনেকদিন আগের কথা বাংলাদেশের কোন এক গ্রামে বাস করত মফিজ। ছোট বেলায় মফিজ গ্রামের মানুষের আলু , পটল, নারকেল, লাউ ইত্যাদি চুরি করে তাঁদের উপকার করার চেষ্টা করত। গ্রামের মানুষ তাঁর উপকারে অতিষ্ট হয়ে পড়েছিল। অনেকবার তাঁকে তাঁর উপকারের পুরস্কার স্বরূপ মারধোর করেছিল। তখন মফিজ বলতে চেয়েছিল, আমার নাম মফিজ ; আমি আপনাগো সেবা করবার চাই। মফিজ সেদিন বলতে পারে নাই। তবুও মফিজ কখনোই মানুষের উপকার করা থেকে পিছপা হয়নি। মফিজের বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের জন্য উপকার করার প্রবনতাও বেড়ে গেল। একসময় গ্রামের মানুষ ভাবলো যে, মফিজ কেন শুধুমাএ একটা গ্রামের মানুষের উপকার করবে ? তারচেয়ে বরং গোটা দেশের উপকার করুক। তাই তাঁরা মফিজকে লাথি মেরে সম্মানের সাথে গ্রাম থেকে বের করে দিল।
এরপর মফিজ চিন্তা করল যে কোথায় গেলে একসাথে অনেক মানুষের উপকার করা যাবে। বুঝতে পারল যে ঢাকা গেলেই একসাথে অনেক মানুষের উপকার করা সম্ভব। মফিজ ঢাকায় চলে যায়।
ঢাকায় এসে মফিজ দেখলো যে ওখানকার লোকজনের উপকার করাটা অতিব জরুরি। আর উপকারের পুরস্কার ও বেশ আরামদায়ক। গ্রামে চুরি করে ধরা খেলে কয়েকজন মিলে মারধোর করে কিংবা বিচার সালিশ করে ছেড়ে দেয়। কিন্তু ঢাকায় চুরি করে ধরা খেলে একসাথে কতজন মারধোর করে তা তাৎক্ষনিকভাবে গুণে তাল পাওয়া যায়না। আবার মারধোরের পর খাওয়া থাকার ব্যাবস্থা স্বরূপ পুলিশ মারফত জেলে প্রেরন করে।

কিছুদিনের মধ্যেই মফিজ অনেক লাইন-ঘাট বুঝে ফেলল। সে দেখল যে এখানে একটু টাকা পয়সা খরচ করলেই পুরস্কারের মাএা কমানো যায়। তাই মফিজ কাঁচা টাকা পয়সার কথা চিন্তা করে একটা সম¥ানীয় পেশায় নিয়োজিত করল নিজেকে। সে পকেটমারা শুরু করল। এই লাইনে সে খুব অল্প সময়ের ভেতর বেশি করে জনসেবা করতে সফল হল। অনেকের সাথেই তাঁর পরিচয় হল যারা তাঁর মত জনসেবা করে বেড়ায়। অর্থাৎ সে বেশকিছু পকেটমার, চোর, ছিনতাইকারী বন্ধু পেয়ে গেল। ঢাকা শহরে একটা পেশায় নিয়োজিত থেকে চলা সম্ভব নয়। তাই মফিজ তাঁর এক বন্ধুর হাত ধরে অন্য একটি পেশায় নিয়োজিত হল। এটার মাধ্যমে মফিজ প্রত্যক্ষভাবে জনগনের সেবা করার সুযোগ পেল। সে ভাল ভাল মেয়ে মানুষের জন্য ভাল ভাল ছেলে যোগাড় করত। সে রাস্তা থেকে সেইসব ছেলেদের ধরে আনত যারা পতিতালয়ে যাবার রাস্তা জানত না। এতে মেয়েগুলোর উপকার হত, ছেলেগুলোর উপকার হত আবার তাঁর নিজের ও উপকার হত।
যাইহোক এই পেশা ধরেই কালু ভাইয়ের সাথে পরিচয় ঘটে মফিজের। কালু ভাই ছিলেন অত্যন্ত প্রভাবশালী একজন রাজনৈতিক নেতা। কালু ভাই মফিজের মধ্যে জনসেবা করার প্রবনতা দেখে আপ্লুত হন। তিনি মফিজকে রাজনৈতিক অঙ্গনে বৈনি করায় দেন। অভিষেকেই মফিজ সেঞ্চুরী হাঁকিয়ে কালু ভাইয়ের মন জয় করেন। এরপর থেকে কালু ভাই যেখানে যেত মফিজকে নিয়ে যেত। মফিজ আরও কাছে থেকে জনসেবা করার সুযোগ পেয়ে নিজেকে একদিন কালু ভাইয়ের সমকক্ষে নিয়ে যাবার স্বপ্ন দেখতে থাকে। এ কারনে কালু ভাইয়ের সকল আদেশ মফিজ অক্ষরে অক্ষরে পালন করত।
বেশকিছুদিন যাবার পরে মফিজ লক্ষ্য করল যে কালু ভাইয়ের সাথে থেকে সে কালু ভাইয়ের সমকক্ষ হতে পারবেনা। এত বছর গোলামি করেও তাঁর অবস্থান একটা জায়গায় এসে থেমে গেছে। সে কালু ভাইয়ের সাথে থেকেই নিজে একটা বড় দলে ঢোকার চেষ্টা করল। অদম্য মেধাবী আর দেশ সেবার নেশায় মত্ত মফিজ খুব তাড়াতাড়ি কালু ভাইকে টপকিয়ে একটা বড় দলে জায়গা পেতে সক্ষম হল। সব চোর ছ্যাঁচরা আর পকেটমাররাও দেশ সেবার জন্য যোগ দিল মফিজের সাথে। সকলে একসাথে দেশ সেবা করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হল।মফিজের সাফল্যে আশান্বিত হয়ে অনেক বড় বড় দলের সংস্কারপন্থী নেতা যারা দল ছেড়েছিল নিজেদের নৈতিকতার জন্য, তাঁরাও এসে ভিড় জমালো তাঁর সাথে। খুব অল্প সময়ে মফিজ রাজনৈতিক অঙ্গনে নিজের একটা পাকা অবস্থান করে নিল।
মফিজ তাঁর দেশ সেবার জন্য যে সকল গুণাবলী দরকার তার সবটাই অর্জন করল। যদিও আগে থেকেই তাঁর কিছু গুণ (যেমন:চুরি,ছিনতাই,দালালী) ছিল। মফিজ এত গুণ অর্জন করল যে তাঁর দলীয় নেএী তাঁকে নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন দিতে বাধ্য হল। সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশের যোগ্য কাছাখোলা পাবলিকেরা মফিজ কে দেশ সেবার সুযোগ করে দিল। মফিজ তাঁর দলীয় নেএীর সিদ্ধান্তকে সত্য প্রমাণ করে বিপুল ভোটে জয়লাভ করল। নেএী খুশি হয়ে প্রথম চান্সেই মফিজকে একটা মন্ত্রী পদ দিয়ে দিলেন।
মফিজের এখন অনেক কাজ। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্যস্ত থাকে সে। দেশের সেবা করে। জনগণ এখন আর মফিজের উপকারে অতিষ্ট না। বরং মফিজের সাথে কোনো জনমের সম্পর্ক আছে কিনা সেইটা খোঁজ করে তাঁর কাছ থেকে বেশী উপকার পাবার চেষ্টা করে।
মফিজ এখন যেখানে সেখানে সমাবেশ করতে পারে। মাশাআল্লাহ কাছাখোলা পাবলিকের অভাব হয়না তাঁর সমাবেশে। মফিজ এখন প্রাণ খুলে বলতে পারে,

আমার নাম মফিজ, ভাড়া হইছে তিরিশ।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ বিকাল ৪:৫২
৯টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×