somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মিশরের পিরামিড

০৩ রা অক্টোবর, ২০১২ রাত ১০:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যিশু খ্রিস্টের জন্মেরও প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে মিসরে গড়ে উঠেছিল এক অসাধারণ সভ্যতা। নীল নদের তীরে সভ্যতায় গড়ে উঠেছিল সপ্তাশ্চর্যের মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন রহস্যমণ্ডিত পিরামিড। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য এত প্রাচীন হলেও সপ্তাশ্চর্যের মধ্যে একমাত্র পিরামিডই এখনো পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। রাজবংশের রাজাদের মমি সমাধিস্থ করা হতো পিরামিডের ভিতরের গোপন কক্ষে। আর রাজার সঙ্গে সঙ্গে সমাধিস্থ করা হতো প্রচুর ধনরত্ন, দাস-দাসী।




Egypt-Pyramid-Sphinx

আজকের আধুনিক বিজ্ঞানীদের কাছেও পিরামিড এক অজানা রহস্য। যার কাঠামো আধুনিক বিজ্ঞানের সব শাখায়ই খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং আর্কিটেকচারাল হিসেবে এ ধরনের কাঠামো সবচেয়ে বেশি ভূমিকম্প প্রতিরোধক এবং স্থায়ী হয়ে থাকে। সম্প্রতি দেখা গেছে যে, পিরাপিড আসলে একটা রেশনাল স্ট্রাকচার। বিশাল সব পাথর কেমন করে শত শত ফুট ওপরে তোলা হয়েছিল জানে না কেউ। জানে না কেমন করে কাঁটা হয়েছিল পাথরগুলো। কারণ পাথরগুলোর ধার এতই মসৃণ যে, অতি উন্নত যন্ত্র ছাড়া যেটা সম্ভব নয়। এখানেই শেষ নয়, মৃতদেহকে দীর্ঘদিন সংরক্ষণের জন্য বিশেষ প্রক্রিয়ায় মমি করে রাখত। এ কাজে তারা বিশেষ কিছু রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করত। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞানীরা এখনো ধরতে পারেননি তাদের সেই পদ্ধতি।




Great Pyramids of Giza

পিরামিডের গঠনশৈলীর প্রভাব পৃথিবীব্যাপী। আজ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগেকার মানুষের তুলনায় অস্বাভাবিক রকম বড় পাথরগুলো কিভাবে এত উপরে তোলা হয়েছিল, আধুনিক যুগের মানুষের কাছে এটা খুব বড় একটা রহস্য। সাধারণ রাস্তার উপর দিয়ে কোনো গাড়ি বা যন্ত্র ছাড়া এত বড় পাথর টেনে আনা কত অসাধ্য তা আমরা সবাই কল্পনা করতে পারি। কিন্তু মিসরের মরুভূমির বালুর উপর দিয়ে এত বড় পাথর টেনে আনা কত অসাধ্য তা আমাদের কল্পনার বাইরে। কেউ কখনো বালির উপর দিয়ে সাইকেল চালাতে গেলেই দেখা যায় বালি কিভাবে তার উপর দিয়ে চলমান বস্তুকে টেনে ধরে। তখনকার সময়ে মিসরে এমন কোনো প্রযুক্তি ছিল না যার দ্বার তারা এ বিশাল বিশাল স্থাপনাগুলো তৈরি করতে পারে। আর এ কারণেই এখনো অপার রহস্যের নাম পিরামিড।

মিসরের পিরামিডই হলো সবচেয়ে বিস্ময় জাগানিয়া স্থাপত্যগুলোর মধ্যে একটি, কিন্তু শুধু মিসর নয় বরং পৃথিবীর আরো নানা স্থানে রয়েছে আরো অনেক পিরামিড। ঠিক কি কারণে এবং কোনো যান্ত্রিক সুবিধা ছাড়াই কীভাবে নির্মিত হয়েছিল এই পিরামিডগুলো? জানি, এ রকম নানা প্রশ্ন ঘোরাফেরা করেছে আপনার মনে কিন্তু হয়তো জানা হয়নি তেমন কিছুই।



Sahure Pyramid

মিসরে প্রচুর পিরামিড দেখতে পাওয়া যায়। তবে সর্ববৃহৎ এবং সবচেয়ে প্রাচীন গির্জার খুফুর পিরামিড পৃথিবীর প্রাচীন সপ্তমাশ্চর্যের একটি। খ্রিস্ট পু. ২৫৬০ সালে ফারাও রাজা খুফু নিজে এ পিরামিডটি তৈরি করেন। এই পিরামিড নিয়ে কয়েকটি মজার ব্যাপার রয়েছে। চার হাজার চারশত বছর ধরে এটিই ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু স্থাপত্য কর্ম। ১৮৮৯ এ আইফেল টাওয়ার নির্মাণের পর এটি তার গৌরব হারায়। খুফুর পিরামিডের পাথরের গায়ে মূল্যবান লাইমস্টোন প্লাস্টার করা ছিল। পরে অন্য পিরামিডগুলো নির্মাণের সময়ে অন্য রাজারা এখান থেকে লাইমস্টোন নিয়ে নিজের সমাধিসৌধে লাগাতে শুরু করে। এই পিরামিডটিতে তিনটি কক্ষ রয়েছে। আর এই কক্ষগুলোতে ঢোকার জন্য পেরোতে হতো অনেকগুলো গোলক ধাঁধা। ইতিহাসের জনক হেরোডেটাসের মতে, এই পিরামিড তৈরিতে ১ লাখ লোকের ২০ বছর লেগেছিল।



Pyramid

একটা সময়ে খুফুর পিরামিডের শীর্ষে যাওয়ার অনুমতি থাকলেও এখন আর দেওয়া হয় না। কেননা পর্যটকের এবং পিরামিড দুটোরই ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে এতে।খুফুর পিরামিড সম্পর্কে বলে গেছেন দার্শনিক হেরোডেটাস। কিন্তু তিনি যে মতবাদ দিয়ে গেছেন তা পরবর্তীকালে ভুল প্রমাণিত হয়। কেননা আধুনিক প্রত্নতাত্তি্বকরা জানাচ্ছেন, খুফু এ পিরামিডটি তৈরিতে মূলত নীলনদের তীরবর্তী মানুষদের কাজে লাগিয়েছিলেন। সময় ২০ বছরের চেয়ে অনেক কম লেগেছিল।



Pyramid of Djoser

তখনকার যুগে মিসরের লোকেরা ফারাও রাজাকে নিজেদের দেবতা মনে করত এবং মৃত্যুর পর তাদের পরবর্তী জীবনে চলার জন্য তার সমাধিতে তার মমিকৃত মৃতদেহের সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে ধন সম্পদও দিয়ে দিত। পরে ফারাও রাজাদের এ সমাধিকে নিরাপদ করে দেয়ার জন্য এর উপর তৈরি করা হত পিরামিড আকৃতির কাঠামো। এখন পর্যন্ত গবেষণা অনুসারে ১৫৩৯ বিসি থেকে ১০৭৫ বিসি পর্যন্ত পিরামিডের মতো করে বা নির্ভেজাল লাইমস্টোন কেটে প্রায় ৬৩টি সমাধি তৈরি করা হয়েছিল। যার বেশির ভাগই অনেক দীর্ঘ এবং ক্রমে নিম্নগামী অসংখ্য ছোটবড় করিডরের জটিল বিন্যাসের মাধ্যমে অবশেষে গিয়ে ফারাওদের সমাধিতে গিয়ে শেষ হয়েছে। এ সমাধিগুলোতে নানা রকমের প্রতীক, দেয়ালে খোদাইকৃত ছবি, অন্যজগতে ভ্রমণের তথ্য এবং নতুন জীবনের প্রয়োজনীয় সব উপাদান দেওয়া থাকত। ধন-সম্পত্তি তো থাকতই। এর রুমগুলোর একদম কেন্দ্রে থাকত স্বর্ণমণ্ডিত ফারাও রাজাদের শবাধার। এ রুমগুলো খুবই সতর্কতার সঙ্গে সিল করে দেওয়া হতো এবং এ সমাধির মূল্যবান দ্রব্য রক্ষা করার জন্য তখনকার মিসরের শ্রেষ্ঠ আর্কিটেকরা চোরদের ধোঁকা দেওয়ার উপযোগী ডিজাইন করার দায়িত্ব পেত। মাঝে মাঝে প্যাসেইজ রাস্তাগুলো বন্ধ করার জন্য বিশাল এবং মজবুত গ্রানাইটের প্লাগ ব্যবহার করা হতো। চোরদের দমন করার জন্য নকল দরজা, গোপন রুম ইত্যাদি অসংখ্য ব্যবস্থার পরও কিছু কিছু ক্ষেত্রে সমাধির প্রবেশ পথে কোনো অভিশাপ দিয়ে দেওয়া হতো। কিন্তু এসব পূর্ব সাবধানগুলোর বেশির ভাগই ব্যর্থ হয়েছিল। প্রাচীন যুগের চোর এবং ডাকাতরা তাদের নিজস্ব পদ্ধতিতে ঠিকই সমাধির পথ খুঁজে বের করত এবং ধন-সম্পত্তি আত্মসাৎ করত।



Sun Pyramid
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা অক্টোবর, ২০১২ রাত ১০:৩৮
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×