somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঢাকায় বাস দুর্ঘটনা: দৈনিক চুক্তিভিত্তিক চালক-হেলপার নিয়োগ পদ্ধতি ও মাফিয়া চক্র

১৩ ই মে, ২০১২ দুপুর ১:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাস চাপায় নিহত হয়েছেন ইংরেজি দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্টের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক বিভাস চন্দ্র সাহা। একই দিন শাহবাগ এলাকায় বাস চাপায় নিহত হন বরিশালের দৈনিক মতবাদ পত্রিকার ফটো সাংবাদিক শহীদুজ্জামান টিটু।

সাদাচোখে মনে হতে পারে এগুলো নিছক দুর্ঘটনা, কিন্তু আসলে কি তাই? ঢাকার বাসগুলোতে দৈনিক চুক্তিভিত্তিক চালক-হেলপার নিয়োগ পদ্ধতি ও বাসমালিক সমিতি, পরিবহণ শ্রমিক সমিতি, বিআরটিএ ও পুলিশের দুর্নিতি চক্রের মাফিয়া নেক্সাসই এই নিয়মিত মানবহত্যার কারণ। কেন সাংবাদিকরা এটি উন্মোচন করছেন না? কেন হাইকোর্টে কেউ রিট করে বিষযটাকে আদালতে তুলে আনছেন না আইন সংশ্লিষ্ট ও মানবাধীকার কর্মীরা দৈনিক চুক্তিভিত্তিক চালক-হেলপার নিয়োগ পদ্ধতি অবৈধ ঘোষনা করার জন্য। আর কতদিন এভাবে চলবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিক বিভাসের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু তাই কি যথেষ্ঠ? এই নেক্সাস ভেঙ্গে দিন, না হলে কেউই নিরাপদ নয়।

কিভাবে এই মাফিয়া খুনি চক্র কাজ করে ও জনপরিবহণে নিরাপত্তা হুমকিতে পড়ে তা আমি জেনেছি আমার এক আত্মীয় বাস ব্যবসা শুরু করবার পর। জঘন্য পরিস্থিতি দেখে তিনি ওই ব্যবসা থেকে সরে এসেছেন।

ধরুন আপনি বাসের ব্যবসা করবেন। স্বাভাবিক চিন্তা কি হতে পারে? আপনি একটি বাস কিনবেন, বিআরটিএর কাছে রুট পারমিটের কাগজপত্রের আবেদন করবেন ও অনুমোদন পেলে পছন্দমত যোগ্য ড্রাইভার ও হেলপার নিয়োগ দিয়ে দৈনিক ব্যবসা চালাবেন। কিন্তু বিধি বাম, এই মাফিয়া শহরে সেটি হবে না। আপনি কাগজপত্র পাবেন না। পেলেও তা রাস্তায় চালাতে পারবেন না। তবে কি করতে হবে?

আপনি একটি বাস কিনবেন। তারপর আপনি মালিক সমিতির মেম্বার হবেন। কাগজপত্রের জন্য মোটা অঙ্কের টাকা দিবেন (অথবা কাগজপত্র সহ চালু বাস কিনবেন)। তারপর প্রতিদিন রাত বারোটায় এক ড্রাইভার ও এক হেল্পার জুটির কাছে ২৪ ঘন্টার জন্য বাসটি ইজারা দিয়ে দিবেন। এর বিনিময়ে তারা আপনাকে প্রতিদিন চুক্তি পরিমান টাকা দেবে। অজানা এই ড্রাইভার হেল্পার জুটি আপনার বাস নিয়ে কি করবে কোথায় যাবে সেটা আপনার দেখার বিষয় না। পরের দিন রাত বারোটায় তারা আপনাকে বাসটি বুঝিয়ে দেবে ও তখনই তা আপনি অপর এক ড্রাইভার হেল্পার জুটির কাছে পরবর্তী ২৪ ঘন্টার জন্য ইজারা দিবেন।

এখন এই ড্রাইভার ও হেল্পার আপনার কর্মচারী নয়, ইজারা গ্রহণকারী। এবং তারা জেলা বাস শ্রমিক সমিতির সদস্য। মালিক হিসাবে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা বা কিছু বলা আপনার পক্ষে অসম্ভব। ঐ সমিতি নিয়মিত পুলিশকে ও বিআরটিএকে আপনার কল্পনারও বাহিরে এমন অঙ্কের দৈনিক উৎকোচ প্রদান করে, তাই তারা সকল নিয়ম কানুনের উর্দ্ধে। এর প্রমাণ বাসগুলোর দিকে তাকালেই বুঝবেন, বেশীরভাগের ব্রেক লাইট, ব্যাক লাইট পর্যন্ত নাই। যেগুলো না থাকলে ফিটনেস পাবার কথা না। দুর্ঘটনা ঘটলে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তীও অসহায় অতি শক্তিশালী এই সমিতির কাছে। পুলিশ আদালত সবই তাদের নিয়ন্ত্রণে, এগুলো হ্যান্ডেল করা তাদের প্রাত্যাহিক কাজ। মালিকের সাথে কোন ঝামেলা হলে মালিক সমিতি শ্রমিক সমিতি, পুলিশ বা বিআরটিএর সাথে বনিবনা করে থাকে।

শত শত বাসের কোটি কোটি টাকার এই ব্যাবসার যে সমিতি, বিআরটিএ ও পুলিশের দুর্নিতি চক্রের মাফিয়া নেক্সাস যতদিন আছে, ততদিন রাজধানীবাসী রাস্তায় নিরাপদ না। একটি দুর্ঘটনা ঘটলেই ঐ ড্রাইভার-হেলপার জুটি হয় পালিয়ে পরের দিনই অন্য জেলার সমিতিতে নতুন করে ইজারা পায়। অথবা সমিতির জোরে দ্রুতই আগের কাজে ফিরে আসে অন্য কোন মালিকের বাস চালায়। মালিকের এখানে কোন কিছুই করার থাকে না। এই সমিতি এতই শক্তিশালী যে মালিকরাও অনেক সময় অসহায়।

একটি আধুনিক শহরে এই মাফিয়া চক্র চলতে দেওয়া যেতে পারে না। সাংবাদিক ভাইদের প্রতি অনুরোধ, বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানি প্রতিবেদন তুলে নিয়ে আসুন। আইন পেশার ভাইদের ও হিউম্যান রাইটস্ নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের কাছে অনুরোধ, জনস্বার্থে এই দৈনিক কন্ট্রাক্ট পদ্ধতি বাতিল করতে আদালতে রিট করুন। সবার প্রচেষ্টা ছাড়া এই শহর নিরাপদ হবে কিভাবে? আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে আমরা এই মাফিয়া নেক্সাসের হাতে তুলে দুতে পারি না।
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×