কিছুদিন আগে এক পরিচিত প্রকৈশলী তার চাকরি ছেড়ে দিলেন। তিনি একটি খাম্বা কোম্পানীর মালিকের বাড়ীতে প্রকৌশলী ছিলেন। আমি প্রশ্ন করলাম চাকরি কেন ছাড়লেন। তিনি বললেন লাথি ঘুষি খেযে চাকুরি করতে চাইনা। তার চেয়ে গার্মেন্টসে কাজ করব। ঐ মালিক যিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল, তিনি নাকি পান থেকে চুন খসলে নিজ হাতে তার কর্মচারীদের ঘুষি, লাথি দেন।
কিছুদিন পরে হামিম গার্মেন্টসে গেলাম এক বন্ধুর সাথে দেখা করতে। দেখি অফিসের সব কর্মকর্তা ভয়ে কাপছে। সবাই চুপ চাপ, যেন ভয়ের রাজ্য, ল্যান্ড অব টেরর। প্রশ্ন করলাম বন্ধুটিকে কি হয়েছে, তোমরা সবাই এত ফিশ ফিশ করছ কেন? বললো এই অফিস এই রকমই। কর্নেল সাহেব অত্যন্ত কড়া। কিছুক্ষন পরেই দেখলাম হুঙ্কার ভেসে আসছে ঐ পরিচালকের কামরা থেকে। ঐ অফিসে নাকি সামরীক নিয়ম। কারুর মান সন্মান বলে কিছু নাই। ত্রুটি বিচ্যুতি হলে চরম বেইজ্জতী এমনকি শারিরীক ভাবে লাঞ্ছীত হওয়া সাধারণ ব্যাপার। ঐ পরিবেশে আর থাকতে ইচ্ছা হলো না। চলে এলাম।
সামরীক বাহিনীর সদস্যরা সাধারণ মানুষের মত নয়। তাদের বিশেষ প্রশিক্ষন দেওয়া হয় নিজেদের মনের সব আবরোধ যথা লাজ, লজ্জা, ভদ্রতা ও অন্যান্ন সামাজীক চেতনা সম্পুর্ণ ভেঙ্গে ফেলবার জন্য। তাই কোন সন্মানীত ব্যাক্তির সন্মানহানী করা তাদের কাছে কোন ব্যাপারই নয়। তাদের শেখানো হয় প্রয়োজনে মানুষের মনুষত্বকে সম্পুর্ণ অবজ্ঞা করে তাকে কুকুর বিড়াল হিসাবে বিবেচনা করা ও নিয়ন্ত্রণ করা। অবশ্যই যাদের অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করতে হবে তাদের এমন প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে। এটা না থাকলে তারা নিগের প্রান বাচাতে পারবে না, মহাবিপদের সময় কমান্ড হাতে রাখতে পারবে না। কিন্তু সমস্যা হলো যখন কিছু ব্যাবসায়ী এটাকে শ্রমিক নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করেন।
আজকাল বেশ দেখা যাচ্ছে অনেক শ্রম ভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠানে অবসরপ্রাপ্ত সামরীক কর্মকর্তাকে উচ্চ বেতনে এক্সিকিউটিভ ডিরেকটর, জেনারেল ম্যানেজার, সিনিয়র ম্যানেজার ইত্যাদী পদ দিয়ে আসলে শ্রমিকদের উপর মিলিটারি শাষণ চালাবার জন্য নিয়োগ করা হচ্ছে। এমনও অনেক দেখা যায় যে ঐ কারখানার কিছু নীচু স্তরের কর্মচারীরাও অনেকে সময় পুলিস বা বিডিআর এর অবসরপ্রাপ্ত সদস্যরা হয়ে থাকে। মালিক ও অন্যান্য কর্মচারীরা থাকে শ্রমিকদের থেকে সামরীক আইন দ্বারা বিচ্ছিন্ন। গ্রাম থেকে আসা অল্পশিক্ষিত কর্মীরা ধরেই নেয় শ্রমিক জীবন বোধহয় এমনই। প্রায়ই তারা দেখে অবাধ্যদের পেটানো হচ্ছে চুরি বা অন্য কোন অভিযোগ তুলে। এই নিয়মিত পেটানেোতে অসুস্থ হয়ে গেলে যখন মৃত্যুর গুজব রটে যায়, তখনই শ্রমিকরা শুরু করে গাড়ী ভাংচুর। তারপরে পেটানোর জন্য আসে পুলিশ। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ঘটনা এমন ঘটেছে।
পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের ঘামে দেশ চলে। এই ঘাম পবিত্র, তবে তা যেন শ্রমের ঘাম হয়। এই ঘাম যদি ভীতির ঘাম হয়, শঙ্কার ঘাম হয় তবে তা হবে অপবিত্র। তা থেকে আসা উপার্জনে থাকবে অভীশাপ। আমরা চাইনা তাদের এই ঘাম সামরীক প্রশাসনের নিষ্পেষণ থেকে আসুক। প্রবৃদ্ধী কম হোক, দেশের উন্নয়ন দশ বছরের যায়গায় বিশ বছরে হোক। তবুও তা যেন মানুষের উপরে অমানুষিক ব্যবহারের ফসল থেকে না হয়।