somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চায়না সিরিজ ২ - চায়নার Zhuozhou শহরের পথে

১৩ ই মে, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ফরবিডেন সিটি

আগের পর্বের লিংকঃ চায়না সিরিজ ১ - সেবার চীনের হেবেই প্রদেশে

৩/
চায়নার উদ্দেশ্য পরের ফ্লাইটে আমরা সময়মত চেপে বসলাম। চাইনিজ দিয়ে ভরে গেল প্লেনটা তখন। থাইল্যান্ড থেকে বেইজিং প্রায় ছয় ঘন্টার জার্নি। যদিও সারারাত না ঘুমিয়ে অনেক টায়ার্ড, তাও এই ফ্লাইটে ঘুমাতে পারলাম না। খাবার খেয়ে আর মুভি দেখেই সময়টা পার করে দিলাম।

প্লেনটা যখন বেইজিং-এর কাছাকাছি পৌছালো তখন বিমানবালারা কাস্টমস ডিকলারেশন ফর্ম পূরণ করতে দিল। সেই ফর্মে একটা প্রশ্ন ছিল “চীনে গিয়ে কোথায় থাকা হবে?”

বেশ জটিল প্রশ্ন। একে তো আমি Zhuozhou শহরের নাম উচ্চারণ করতে পারি না, তার উপর আমরা যেই হোটেলে থাকব সেটার নাম আরেক কাঠি সরেস। সেই হোটেলের এমন বিদঘুটে নাম যে আমি সেটা লিখতে পর্যন্ত পারি না। ওটা লেখতে গেলে আমার মাথা ঘুরায়, বমি বমি লাগে, ব্লাড প্রেসার বেড়ে যায়। তাই আমি কাস্টমসের ফর্মে লেখলাম, “Zhuozhou শহরের কোন এক হোটেলে থাকব।”

বেইজিং এয়ারপোর্টে যখন পৌছালাম তখন শেষ বিকেল। বিশাল এয়ারপোর্ট, লোকে লোকারণ্য। ইমিগ্রেশনের জন্য বিশাল লাইন। তবে দেখলাম, লাইনগুলো বেশ তাড়াতাড়ি আগাচ্ছে আর ইমিগ্রেশন অফিসারেরাও তেমন কোন প্রশ্ন না করে সবাইকে ছেড়ে দিচ্ছে। আমি ভয়ে ছিলাম যে আমার কাস্টমস ফর্মে লেখা “Zhuozhou শহরের কোন এক হোটেলে থাকব” এটা আবার কোনভাবে ইমিগ্রেশন অফিসারকে আহত করে ফেলে নাকি? পরে যদি আমাকে বাধ্য করে আসল হোটেলের নাম লিখতে তখন তো বিপদ। আমার হাত ভেঙ্গে যাবে, তাও ওই নাম আমার কলম দিয়ে বের হবে না।

ইমিগ্রেশন অফিসার আমার কাস্টমসের কাগজ হাতে নিয়ে মুচকি হেসে বললেন, “ছেলে Zhuozhou শহরের কোন এক হোটেলে থাকবে, হা হা” এই বলে পাসপোর্টে সিল মেরে দিলেন। ব্যাস, চীনে চলে এলাম।

বেইজিং এয়ারপোর্ট এত বিশাল যে লাগেজ সংগ্রহ করার জন্য এয়ারপোর্ট ট্রেনে করে সেই পর্যন্ত যাওয়া লাগল। তাড়াতাড়ি লাগেজগুলো সংগ্রহ করে রফিক ভাই ড্রাইভারকে ফোন দিলেন। গাড়ি আগে থেকে ঠিক করা ছিল। যখন গাড়িতে বসলাম তখন প্রায় শেষ বিকেল।


বেইজিং এয়ারপোর্টের বাহিরে

৪/
এবার গন্তব্য Zhuozhou শহর।

Zhuozhou হল হেবেই প্রভিন্সের একটি ছোট্ট শহর। এটি প্রভিন্সিয়াল রাজধানী নয়। এটি হেবেই প্রভিন্সের রাজধানী Shijiazhuang থেকে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত। যদিও শহরটি প্রভিন্সিয়াল রাজধানী থেকে অনেক দূরে কিন্তু শহরটি বেইজিং-এর দক্ষিণ দিকের সীমান্ত ঘেঁষে অবস্থান করছে। তাই এক হিসাবে শহরটি Shijiazhuang এর চেয়ে বেইজিং থেকে বেশি কাছে। উদাহরণ হিসাবে যদি বলি আমাদের দেশের সাতক্ষীরা জেলা ঢাকা শহরের চেয়ে ভারতের কলকাতার বেশি কাছাকাছি অবস্থান করছে। Zhuozhou শহরের ব্যাপারটাও এমন।

হেবেই প্রভিন্সটি বলতে গেলে প্রায় সাড়ে তিন দিক থেকেই চীনের রাজধানী বেইজিং শহরকে ঘিরে রেখেছে। বেইজিং-এর যে অংশটির অর্ধেক অংশ বাকি রয়েছে সেটার দক্ষিণ-পূর্ব কোল ঘেঁষে খুব অল্প সীমান্ত জুড়ে তিয়ানজিং প্রভিন্সের অবস্থান। মজার ব্যাপার, বেইজিং ও তিয়ানজিং প্রভিন্সের মাঝখানেও হেবেই প্রভিন্সের একটা অংশ এনক্লেভড হয়ে আছে। হয়ত এর পিছনে কোন ইতিহাস আছে। কিন্তু সেটা আমার জানা নেই।


হেবেই প্রভিন্স প্রায় সাড়ে তিন দিক থেকে বেইজিং-কে ঘিরে রেখেছে। আবার বেইজিং আর তিয়ানজিং প্রভিন্সের মাঝেও এক টুকরো হেবেই আছে। Zhuozhou শহর বেইজিং থেকে বেশি কাছে, অথচ হেবেই এর প্রভিন্সিয়াল রাজধানী প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দূরে। [ছবিসূত্রঃ ইন্টারনেট]


বেইজিং-এর রাস্তাগুলো


বেইজিং এয়ারপোর্ট থেকে Zhuozhou শহরে গাড়িতে যেতে প্রায় দুই ঘন্টা লাগে। বেইজিং-এর বিশাল রাস্তাগুলো দেখতে দেখতে সময় চলে গেল। খেয়াল করে দেখলাম বেইজিং-এর অনেক বিল্ডিং-এর মাঝখানে বড় বড় চারকোণা গর্ত। বিল্ডিংগুলোতে এই রকম বড় বড় গর্ত রাখা হয় এক লোকজ বিশ্বাস থেকে। চাইনিজদের বিশ্বাস এই শহরে যদি আবার কোনদিন ড্রাগণ ফিরে আসে তাহলে ড্রাগণগুলো যেন বিল্ডিংগুলোকে কোন আঘাত না করে এই বড় বড় গর্তগুলো দিয়ে বের হয়ে যেতে পারে।


বেইজিং-এ বড় বড় গর্তওয়ালা বিল্ডিং। যদি কোনদিন ড্রাগনেরা এই শহরে ফিরে আসে তাহলে যেন বিল্ডিংকে আঘাত না করে এই গর্তগুলো দিয়ে ড্রাগন বের হয়ে যেতে পারে - এমন বিশ্বাস থেকে এগুলো করা হয়েছে।


Zhuozhou শহরে যখন পৌছালাম তখন রাত নয়টা। চীনের বেশিরভাগ শহরে রাত আটটার ভিতরেই সবকিছু বন্ধ হয়ে যায়। এর পরের সময়টা সবাই নিজের পরিবার বা বন্ধু-বান্ধবের সাথে কাটায়। Zhuozhou শহরও এর ব্যাতিক্রম না। শহরের বেশিরভাগ খাবারের দোকান বন্ধ হয়ে গেছে অনেক আগেই। চারিদিকে সুনশান নীরবতা। শহরের প্রায় ফাঁকা বিশাল রাজপথগুলোতে লাল রঙের নিয়ত বাতি দিয়ে তৈরি করা বিশাল বিশাল সাইনবোর্ড। চারিদিকে লাল রঙের বাতি দিয়ে ডেকোরেশন করা। এমনকি বেশিরভাগ দোকানের সাইনবোর্ডগুলোও লাল রঙের চাইনিজ হরফে লেখা। কেন যেন রাতের চীনে লাল রঙের আধিক্য অনেক বেশি। এমনকি ওদের পতাকাটাও টকটকে লাল যার ভিতর হলুদ রঙের কয়েকটি তারা।


রাতের চীনে লাল রং-এর আধিক্য

আমাদের চাইনিজ হোস্টেরা এক বিশাল রেস্টুরেন্ট বুকিং দিয়ে রেখেছিল বলে রক্ষা। তা না হলে চীনে সারারাত না খেয়ে থাকতে হত। তারাও আমাদের সাথে ডিনার করার জন্য সেই রেস্টুরেন্টে অপেক্ষা করছিল।

চাইনিজ খাবার আমার খারাপ লাগে না, বরং বেশ ভালোই লাগে। তবে এই খাবারের সাথে বাংলাদেশের চাইনিজ রেস্টুরেন্টের খাবারের কোন মিল নেই। চীন থেকে আসা কোন চাইনিজ যদি বাংলাদেশের চাইনিজ রেস্টুরেন্টের খাবার খায় তাহলে সে নির্ঘাৎ ভিমরি খেয়ে বলবে “এগুলো আবার কোন জনমে চীনের খাবার ছিল?” তবে আসল চীনের খাবার বাংলাদেশের চাইনিজ রেস্টুরেন্টের মত না হলেও বেশ স্বাস্থ্যপ্রদ ও সুস্বাদু। যদিও বেশিরভাগ বাংলাদেশি মানুষের মুখের স্বাদের সাথে চাইনিজ খাবার ঠিক যায় না। তবে আমার চীনের চাইনিজ খাবার সবসময়ই ভালো লাগে। তাই ভালোমত ডিনার করে হোটেলের উদ্দেশ্য রওয়ানা দিলাম। সাথে অবশ্য চাইনিজ হোস্টেরা ছিল। কারণ, চীনের বেশিরভাগ শহরের লোকেরা ইংরেজি বলতে পারে না, এমনকি Yes-No এর মানেও বেশিরভাগই বুঝে না। তাই চাইনিজ ভাষা জানা কেউ সাথে না থাকলে আর রক্ষা নেই।

হোটেলে পৌছাতে পৌছাতে আর রুম বুঝে পেতে পেতে প্রায় রাত এগারোটা বেজে গেল। হোটেলের রুম বুঝে পাওয়ার পর আর সহ্য হচ্ছিল না। কারণ পুরো এক রাত না ঘুমানো। আর জার্নির ধকল তো আছেই। তাই কোনমতে গোসল করে বিছানাতে গা এলিয়ে দিলাম। হোটেলের রুমের কয়েকটা জিনিস বেশ মজা লাগল।

১/ আমার রুমটা নন-স্মোকিং, মানে রুমের ভিতর সিগারেট খাওয়া বারণ। কিন্তু, রুমে সুন্দর করে কনডম সাজানো। এতে কোন বারণ নেই।
২/ ওয়াশরুমের দরজাতে সিটকিনি লাগানোর কোন ব্যবস্থা নাই। পুরো দরজাই স্লাইডিং। আর ওয়াশরুমটা কাঁচের তৈরি। এরমানে, সকালবেলা কেউ প্রাতঃক্রিয়া করার সময় রুমে অন্য কেউ থাকলে সেও পুরো দৃশ্যটি দেখতে পাবে।
৩/ এখানেও টয়লেটে কোন বদনা বা “পুশ শাওয়ার” নাই। তাই এখানেও টিস্যু পেপার ভরসা।


__________________________________
পরের পর্বের লিংকঃ চায়না সিরিজ ৩ - Zhuozhou শহরে
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুন, ২০২২ রাত ৮:২২
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×