- Zhuozhou শহরে প্রথম সকাল
আগের পর্বের লিংকঃ চায়না সিরিজ ২ - চায়নার Zhuozhou শহরের পথে
৫/
সাত সকালে ঘুম থেকে উঠে হোটেলেই নাস্তা সেরে ফেললাম।
গত রাতের রেস্টুরেন্ট আর হোটেলের রেস্টুরেন্ট দুই জায়গাতেই চপ-স্টিক ভরসা। এত বড় বড় হোটেলেও কোন চামচ বা কাঁটা-চামচ নেই। পরে চায়নার আরো অনেক জায়গাতেই দেখেছি যে এরা চপ-স্টিকে এতই অভ্যস্ত যে সাধারণত কোথাও চামচ বা কাঁটা-চামচ পাওয়াই যায় না। শুধুমাত্র, অসম্ভব বড় বড় আর দামী রেস্টুরেন্টেই চামচ আর কাঁটা-চামচ মেলে।
আরো একটা জিনিস হল এখানে হালাল খাবার বেশ দুস্প্রাপ্য। সবকিছুতেই কোন না কোনভাবে পর্ক আছে। যেমন, ভাতের ভিতর হালকা করে পর্কের মাংসের কুচি কিংবা সবজি রান্না করছে পর্কের তেল দিয়ে। তাই চীনের ছোট ছোট শহরগুলোতে কেউ যদি খাবার নিয়ে বেশি বাছাবাছি করে তাহলে তাকে না খেয়ে থাকতে হবে। চাইলেই তো সবখানে সবসময় ফলমূল পাওয়া যায় না।
৬/
নাস্তা শেষ হতে না হতেই আমাদের চাইনিজ হোস্টেরা হোটেলে এসে হাজির।
ওদের গাড়িতেই ফ্যাক্টরির উদ্দেশ্য রওয়ানা দিলাম। আগামী কয়েকদিন ওদের ফ্যাক্টরিতে আমাদের সেই বিশেষ যন্ত্রটার পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা করতে হবে। সেই যন্ত্রটার ওজন প্রায় পঞ্চাশ হাজার কেজি। প্রায় হাজারখানেক মডিউল রয়েছে যন্ত্রটাতে। সবকিছু পরীক্ষা করতে বেশ কয়েকদিন সময় লাগবেই।
যাইহোক, সকালবেলা শহরটা একটু ভালোমত দেখার সময় হল। Zhuozhou শহরটা খুবই পরিস্কার, সুন্দর আর ছিমছাম। শহরে মানুষের আধিক্য নেই, নেই যানবাহনের কান ঝালাপালা করা শব্দ। সারা শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বিশাল বিশাল দোকানপাট আর শপিং-মল।
আমরা প্রতিদিন ফ্যাক্টরিতে গিয়ে যন্ত্রটা পরীক্ষা করি। দুপুরবেলা চাইনিজরা আমাদের নিয়ে খেতে বের হয়। চাইনিজদের শরীরের মেটাবলিজম অনেক ভালো। এরা বেশ চিকন-চাকন হলেও খেতে পারে ভালো। দুপুর বারোটার দিকে দল বেঁধে কোন রেস্টুরেন্টে খেতে গেলে খাবার শেষ করতে করতে দুপুর দুইটা-আড়াইটা বেজে যায়। কথায় বলে সরু পেটে গরু আঁটে।
এছাড়া ওরা খুবই মিশুক আর আমুদে। আর যেহেতু ওদের সাথে আমাদের ব্যবসায়িক সম্পর্ক তাই আমাদের আদর-আপ্যায়ণের কোন কমতি করছে না তারা। চীনে প্রচলিত প্রবাদ যে যেই ব্যাবসায়ী তার কাস্টমারকে ভালোমত খাওয়ায় না সেই কাস্টমার তার জিনিস কখনো কিনে না। কাস্টমার ওদের কাছে প্রায় ঈশ্বরের মত। আমাদের হোস্টেরাও নিয়ম মেনে আমাদের ভালো-মন্দ খাওয়াচ্ছে।
বিভিন্ন মিটিং-এ লক্ষ্য করলাম চাইনিজরা প্রচুর চা পান করে। তবে সেই চা আমাদের দেশের মত দুধ-চিনি দেয়া চা না। সেটা বলতে গেলে খুব হালকা করে বানানো চিনি ছাড়া রঙ চা যাতে হয়ত ছোট ছোট গোলাপের বা বিভিন্ন ফুলের কুঁড়ি অথবা বিভিন্ন হারবাল দেয়া। এক কাপ চা শেষ হতে না হতেই কেউ একজন কাপ আবার চা দিয়ে ভরে দিচ্ছে। কাপ নাকি কখনো খালি থাকা যাবে না। সেটা এখানে ভালো দেখায় না। অক্টোবর মাসের হিমেল হাওয়াতে চা খেতে যদিও অতটা খারাপ লাগছে না কিন্তু এত বেশি চা খেতে খেতে পেট পুরো ঢোল হয়ে গেল।
বিকেলের দিকে আমরা শহরটা ঘুরে ঘুরে দেখতাম। এদের শপিং মল, বাজার, রাস্তা-ঘাট এসব দেখতে ভালোই লাগত। এখানকাল বাচ্চাদের একটা জিনিস দেখে খুব হাসি পেল। অনেক বাচ্চাকেই দেখলাম রাস্তা-ঘাট বা শপিং-মলগুলোতে বাবা-মায়ের সাথে ঘুরছে। সব বাচ্চার পরণে সুন্দর পোশাক কিন্তু পাছার জায়গাটা বিশাল এক গোল করে কাটা। শপিং-মলগুলোতেও দেখলাম বাচ্চাদের এমন কাপড় বিক্রি হচ্ছে। পরে দেখলাম, বাচ্চাদের প্রস্রাব চাপলে রাস্তা-ঘাটেই কাটা জায়গাটা জায়গামত সেট করে বসে পড়ে, এতে কেউ কিছু মনে করে না। প্রথমবার, একটা ছোট বাচ্চা মেয়েকে রাস্তাতে এই কাজ করতে দেখে খুব অবাক হলেও আমাদের চাইনিজ হোস্টদের সেটা বুঝতে দেইনি। আমাদের দেশে তো বুড়ো ধামড়া ছেলেরাও রাস্তাতে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করে।
আমাদের ঢাকার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ বড় এই শহরটির লোকসংখ্যা সাত লক্ষেরও কম। মানুষজন শান্তিপরায়ণ, বন্ধুত্বভাবাপন্ন ও মিষ্টভাষী। রাত আটটার পরে রাস্তা-ঘাটে মানুষজন পাওয়া যায় না, দোকান-পাট, শপিং-মল সবকিছুই বন্ধ হয়ে যায়। তাই রাত আটটার আগে ডিনার সারতে না পারলে না খেয়ে থাকার মতই অবস্থা হবে এই শহরে। তবে আমি দুনিয়ার যেখানেই থাকি না কেন সন্ধ্যা সাতটার দিকেই ডিনার সেরে ফেলি। তাই রাত আটটায় খাবারের দোকান বন্ধ হওয়া তেমন কোন বড় সমস্যা না আমার জন্য।
তেমন কোন কারণ ছাড়াই ভালো লেগে গেল শহরটি।
৭/
এবার কিছু ছবি আর ক্যাপশনঃ
হোটেলের আশেপাশ
শহরের নাম না জানা কোন রাস্তা
শহরের নাম না জানা কোন রাস্তা
শহরের নাম না জানা কোন রাস্তা
শহরের নাম না জানা কোন রাস্তা
আমাদের হোটেল
হোটেলের লবি
_____________________________
পরের পর্বের লিংকঃ চায়না সিরিজ ৪ - এবার জিবু শহরে
চায়না সিরিজের সময়কাল ২০১৭ সাল।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুলাই, ২০২২ বিকাল ৩:৫৬