somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চায়না সিরিজ ৩ - Zhuozhou শহরে

২৫ শে মে, ২০২২ রাত ১১:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


- Zhuozhou শহরে প্রথম সকাল

আগের পর্বের লিংকঃ চায়না সিরিজ ২ - চায়নার Zhuozhou শহরের পথে

৫/
সাত সকালে ঘুম থেকে উঠে হোটেলেই নাস্তা সেরে ফেললাম।

গত রাতের রেস্টুরেন্ট আর হোটেলের রেস্টুরেন্ট দুই জায়গাতেই চপ-স্টিক ভরসা। এত বড় বড় হোটেলেও কোন চামচ বা কাঁটা-চামচ নেই। পরে চায়নার আরো অনেক জায়গাতেই দেখেছি যে এরা চপ-স্টিকে এতই অভ্যস্ত যে সাধারণত কোথাও চামচ বা কাঁটা-চামচ পাওয়াই যায় না। শুধুমাত্র, অসম্ভব বড় বড় আর দামী রেস্টুরেন্টেই চামচ আর কাঁটা-চামচ মেলে।

আরো একটা জিনিস হল এখানে হালাল খাবার বেশ দুস্প্রাপ্য। সবকিছুতেই কোন না কোনভাবে পর্ক আছে। যেমন, ভাতের ভিতর হালকা করে পর্কের মাংসের কুচি কিংবা সবজি রান্না করছে পর্কের তেল দিয়ে। তাই চীনের ছোট ছোট শহরগুলোতে কেউ যদি খাবার নিয়ে বেশি বাছাবাছি করে তাহলে তাকে না খেয়ে থাকতে হবে। চাইলেই তো সবখানে সবসময় ফলমূল পাওয়া যায় না।

৬/
নাস্তা শেষ হতে না হতেই আমাদের চাইনিজ হোস্টেরা হোটেলে এসে হাজির।

ওদের গাড়িতেই ফ্যাক্টরির উদ্দেশ্য রওয়ানা দিলাম। আগামী কয়েকদিন ওদের ফ্যাক্টরিতে আমাদের সেই বিশেষ যন্ত্রটার পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা করতে হবে। সেই যন্ত্রটার ওজন প্রায় পঞ্চাশ হাজার কেজি। প্রায় হাজারখানেক মডিউল রয়েছে যন্ত্রটাতে। সবকিছু পরীক্ষা করতে বেশ কয়েকদিন সময় লাগবেই।

যাইহোক, সকালবেলা শহরটা একটু ভালোমত দেখার সময় হল। Zhuozhou শহরটা খুবই পরিস্কার, সুন্দর আর ছিমছাম। শহরে মানুষের আধিক্য নেই, নেই যানবাহনের কান ঝালাপালা করা শব্দ। সারা শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বিশাল বিশাল দোকানপাট আর শপিং-মল।

আমরা প্রতিদিন ফ্যাক্টরিতে গিয়ে যন্ত্রটা পরীক্ষা করি। দুপুরবেলা চাইনিজরা আমাদের নিয়ে খেতে বের হয়। চাইনিজদের শরীরের মেটাবলিজম অনেক ভালো। এরা বেশ চিকন-চাকন হলেও খেতে পারে ভালো। দুপুর বারোটার দিকে দল বেঁধে কোন রেস্টুরেন্টে খেতে গেলে খাবার শেষ করতে করতে দুপুর দুইটা-আড়াইটা বেজে যায়। কথায় বলে সরু পেটে গরু আঁটে।

এছাড়া ওরা খুবই মিশুক আর আমুদে। আর যেহেতু ওদের সাথে আমাদের ব্যবসায়িক সম্পর্ক তাই আমাদের আদর-আপ্যায়ণের কোন কমতি করছে না তারা। চীনে প্রচলিত প্রবাদ যে যেই ব্যাবসায়ী তার কাস্টমারকে ভালোমত খাওয়ায় না সেই কাস্টমার তার জিনিস কখনো কিনে না। কাস্টমার ওদের কাছে প্রায় ঈশ্বরের মত। আমাদের হোস্টেরাও নিয়ম মেনে আমাদের ভালো-মন্দ খাওয়াচ্ছে।

বিভিন্ন মিটিং-এ লক্ষ্য করলাম চাইনিজরা প্রচুর চা পান করে। তবে সেই চা আমাদের দেশের মত দুধ-চিনি দেয়া চা না। সেটা বলতে গেলে খুব হালকা করে বানানো চিনি ছাড়া রঙ চা যাতে হয়ত ছোট ছোট গোলাপের বা বিভিন্ন ফুলের কুঁড়ি অথবা বিভিন্ন হারবাল দেয়া। এক কাপ চা শেষ হতে না হতেই কেউ একজন কাপ আবার চা দিয়ে ভরে দিচ্ছে। কাপ নাকি কখনো খালি থাকা যাবে না। সেটা এখানে ভালো দেখায় না। অক্টোবর মাসের হিমেল হাওয়াতে চা খেতে যদিও অতটা খারাপ লাগছে না কিন্তু এত বেশি চা খেতে খেতে পেট পুরো ঢোল হয়ে গেল।

বিকেলের দিকে আমরা শহরটা ঘুরে ঘুরে দেখতাম। এদের শপিং মল, বাজার, রাস্তা-ঘাট এসব দেখতে ভালোই লাগত। এখানকাল বাচ্চাদের একটা জিনিস দেখে খুব হাসি পেল। অনেক বাচ্চাকেই দেখলাম রাস্তা-ঘাট বা শপিং-মলগুলোতে বাবা-মায়ের সাথে ঘুরছে। সব বাচ্চার পরণে সুন্দর পোশাক কিন্তু পাছার জায়গাটা বিশাল এক গোল করে কাটা। শপিং-মলগুলোতেও দেখলাম বাচ্চাদের এমন কাপড় বিক্রি হচ্ছে। পরে দেখলাম, বাচ্চাদের প্রস্রাব চাপলে রাস্তা-ঘাটেই কাটা জায়গাটা জায়গামত সেট করে বসে পড়ে, এতে কেউ কিছু মনে করে না। প্রথমবার, একটা ছোট বাচ্চা মেয়েকে রাস্তাতে এই কাজ করতে দেখে খুব অবাক হলেও আমাদের চাইনিজ হোস্টদের সেটা বুঝতে দেইনি। আমাদের দেশে তো বুড়ো ধামড়া ছেলেরাও রাস্তাতে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করে।

আমাদের ঢাকার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ বড় এই শহরটির লোকসংখ্যা সাত লক্ষেরও কম। মানুষজন শান্তিপরায়ণ, বন্ধুত্বভাবাপন্ন ও মিষ্টভাষী। রাত আটটার পরে রাস্তা-ঘাটে মানুষজন পাওয়া যায় না, দোকান-পাট, শপিং-মল সবকিছুই বন্ধ হয়ে যায়। তাই রাত আটটার আগে ডিনার সারতে না পারলে না খেয়ে থাকার মতই অবস্থা হবে এই শহরে। তবে আমি দুনিয়ার যেখানেই থাকি না কেন সন্ধ্যা সাতটার দিকেই ডিনার সেরে ফেলি। তাই রাত আটটায় খাবারের দোকান বন্ধ হওয়া তেমন কোন বড় সমস্যা না আমার জন্য।

তেমন কোন কারণ ছাড়াই ভালো লেগে গেল শহরটি।

৭/
এবার কিছু ছবি আর ক্যাপশনঃ


হোটেলের আশেপাশ


শহরের নাম না জানা কোন রাস্তা


শহরের নাম না জানা কোন রাস্তা


শহরের নাম না জানা কোন রাস্তা


শহরের নাম না জানা কোন রাস্তা


আমাদের হোটেল


হোটেলের লবি
_____________________________
পরের পর্বের লিংকঃ চায়না সিরিজ ৪ - এবার জিবু শহরে

চায়না সিরিজের সময়কাল ২০১৭ সাল।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুলাই, ২০২২ বিকাল ৩:৫৬
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সরু চিকেন নেক করিডর সমস্যা এবং সমাধান

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২১ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:৩৭



সরু চিকেন নেক করিডরের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে নেপাল ও ভুটানের মাধ্যমে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সেভেন সিস্টার্সকে যুক্তের ব্যাপারে ভাবছে ভারত

ভারতের অর্থায়নে পরিচালিত বাংলাদেশের রেল সংযোগ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাকীত্ব: আত্মার ঘুণপোকা ও আধুনিক সমাজের অদৃশ্য মহামারী

লিখেছেন মি. বিকেল, ২১ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৫



‘একাকীত্ব’ সাধারণ বিষয় নয়। একা থাকা মানে অজস্র চিন্তার স্রোত মাথায় প্রবাহিত হওয়া। একা থাকা মানে নিজের সাথে থাকা। নিজের চিন্তা ও স্মৃতির সাথে একাকীত্ব আমাদের বেশি করে পরিচয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠকানোটাই ভাল শিখেছি আমরা

লিখেছেন ফেনা, ২১ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১৭



এই বিশাল মহাকর্ষীয় বস্তু সবকিছু নিজের দিকে টেনে নেয়—এমনকি আলোও পালাতে পারে না। কিন্তু কৃষ্ণ গহ্বরের ভিতরে কী ঘটে? সেখানে সময় ও স্থান কেমন আচরণ করে? এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আরব বিশ্বে নারীরা অপমানিত? আমার অভিজ্ঞতা বলছে ভিন্ন কথা

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২১ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৬



বহুদিন ধরে একটি কথা শুনে আসছি—“নারীরা আরব দেশে অসম্মানিত অবস্থায় থাকে।”
কিন্তু আমি আরব দেশে গিয়েছি, থেকেছি, এবং প্রায় দুই মাস ধরে একাধিক জেলায় ঘুরেছি।
সত্যি বলছি—আমি সেখানে কোথাও নারীদের অসম্মানিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় দাবিদাওয়া নিষ্পত্তি সংস্থা : অরাজকতার পালে নতুন হাওয়া!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১:০৩


বাংলাদেশে আজকাল দাবি না জানালে কেউ আর মানুষ থাকে না—ছাত্র, শিক্ষক, গৃহিণী, পুলিশ, পিয়ন, কবি, কুস্তিগির, সবাই 'অধিকার' চায়। তবে অধিকার মানে এখানে মোটেই দায় বা কর্তব্য নয়, বরং ছিনিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×