
জন্ম - সে তো অবধারিতভাবে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলা। যদি কেউ জানতো, তার সময় ফুরিয়ে এসেছে, সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নিতে হবে! তাহলে যথাসম্ভব আসন্ন বিপদ-আপদ এড়িয়ে চলতো। জীবনের সুরক্ষার জন্য সর্বোত্তম পথ বেছে নিতো। অথচ, জানে না বলেই সামর্থ্যবান মানুষেরা কত-শত নিরাপত্তা বিধান মেনে চলেন, তার ইয়াত্তা নেই। ১২ মার্চ, ২০১৮ নেপালের কাঠমুন্ডু ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দূর্ঘটনাকবলিত ব্যক্তিরা ইউএস বাংলার বিএস-২১১ ফ্লাইটে উড়াল দিতো না, যদি অনাগত দূর্ঘটনা সম্পর্কে অবগত থাকতো।

সৃষ্টির রহস্যভরা অজানা কিছু দিক সম্পর্কে মানুষ অবগত নয়! তার মধ্যে জন্ম ও মৃত্যু অন্যতম। এসকল বিষয়ে একমাত্র তিনিই ভালো জানেন, যিনি সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা।
নেপালে বিমান দূর্ঘটনার পর থেকেই মনের ছোট্ট একটা অংশে চিন চিন ব্যাথা করছে। থামছে না কোনভাবেই। নাহ, নেপালে দূর্ঘটনাকবলিত বিমানে আমার কোন নিকটাত্নীয় ছিলো না। কষ্ট হচ্ছে, সিলেটের রাগিব রাবেয়া মেডিক্যাল কলেজের ১৩ জন নেপালি শিক্ষার্থীর জন্য। যারা ডাক্তার হবার দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে আকাশপথে নিজেদের দেশ নেপালে প্রিয়জনদের কাছে ফিরতে চেয়েছিলো। বাবা-মা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজনদের ডাক্তার হবার আগাম বার্তা পৌছে দেবার জন্য কাছে খুশি মনে ফেরৎ যাচ্ছিলেন।
ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! বাড়ির সীমানায় গিয়েও দেখা হলো না কারো মুখ। কারো সাথে কথা হলো না। অনেক নেপালী পরিবারকে বুকে চাপা কষ্ট নিয়ে সেই আত্নবিশ্বাসী তরুণ/তরুণী হবু ডাক্তারের নিথর দেহ সংগ্রহ করতে হলো। সাথে বাংলাদেশী অনেক ভাইবোনকেও পরদেশে অকালে প্রাণ বিসর্জণ দিতে হলো। এতটাই নির্দয় আর হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে যে অনেকের চেহারা চিনতেও কষ্ট হয়েছে
ইউএস বাংলার ফ্লাইট বিএস-২১১ মোট ৬৭ জন যাত্রী নিয়ে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪ হাজার ৪০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত ত্রিভুবন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে যখন চক্কর দিচ্ছিল জমিনে নামার জন্য, তখনও অনেকেই হয়তো জানতো না বিমানের ছোট্ট জানালা দিয়ে পৃথিবীকে দু-চোখ মেলে এই শেষবার দেখা!

সানজিদা হক, মো. রফিক উজ জামান ও ছোট্ট অনিরুদ্ধ জামানের কথা আলাদা করে বলতে হয়। কিছুদিন আগেই জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার আদায়ে রফিক উজ জামান এর বলিষ্ঠ কন্ঠস্বরের ঝংকার শুনেছি। তাঁর স্ত্রী সানজিদা হকও ছিলেন অমায়িক। আপনজনেরা কিভাবে সইবে পুরো পরিবারের একত্রে এমন অভিমানী প্রস্থান?
এছাড়া পাইলট আবিদ সুলতান, সহকারী পাইলট পৃথুলা রশীদ, বৈশাখী টিভির সাংবাদিক ফয়সালসহ বাংলাদেশী যাত্রীদের মধ্যে আরো অনেকে ছিলেন যারা ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মোবাইল ডিভাইসে জীবনের শেষ সেলফি তুলে ফেসবুকে প্রচারের মাধ্যমে প্রিয় মানুষদেরকে জানান দিয়েছিলেন, “আমরা পাহাড়ী কন্যাখ্যাত নেপালে ঘুরতে যাচ্চি”। কেউ একান্ত সময় কাটাতে, আবার কেউ গেছেন অফিসের কাজে। ঘূনাক্ষরেও কেউ টের পাননি এটাই তাদের জীবনের শেষ যাত্রা ! আর দেখা হবে না প্রিয় মুখগুলোর সাথে।” বিবাহবার্ষিকী উদযাপনে রেজওয়ানুল হক শাওন স্ব-স্ত্রীক নেপালে যাচ্ছিলেন। শাওনের স্ত্রী ফেসুবুকে যে স্ট্যাটাস দিয়েছেন- “এবং যাত্রা শুরু হলো” অত:পর শাওনকে রেখে এটাই অনন্তের পথে তাঁর শেষ যাত্রা হয়ে থাকলো।

ঘটনার পর থেকেই ত্রিভূবন বিমানবন্দর কতৃপক্ষ ও ইউএস বাংলা একে অপরকে দোষারোপে লিপ্ত। শোনা গেছে, ইউএস বাংলার ওই বিমান এর আগেও সৈয়দপুরে বিকল হয়েছিল। আবার ইউএস বাংলার বিএস-২১১-এর পাইলট ও ত্রিভূবন বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারের কথোপকথন থেকেও নেপাল কতৃপক্ষের ভুল নির্দেশনার কথা এখন সবার জানা। আবার শোনা যাচ্ছে, ইউএস বাংলা কতৃপক্ষ’র চাপে মানসিক অবসাদগ্রস্ত অবস্থায়ও বিমান পরিচালনায় বাধ্য হয়েছেন পাইলট আবিদ। হয়ত তদন্তের ফলাফল প্রকাশের পর আরো নির্ভেজাল তথ্য জানা যাবে। বেরিয়ে আসবে দূর্ঘটনার প্রকৃত কারন।

যা কিছু রটে কিছুটা হলেও সত্যি বটে! ঘটনা আর যাই হোক, ৫১ টি তাজা প্রাণ নিয়ে ইউএস বাংলার ফ্লাইট বিধ্বস্ত হবার সাথে সাথে অনেক মানুষের স্বপ্ন ও জীবনের আনন্দ চিরতরে মুছে গেছে। এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ও অনাকাঙ্খিত মৃত্যু কারোরই কাম্য নয়। যোগাযোগ ব্যাবস্থায় আধুনিকতার পরশ লেগেছে অনেক আগেই। উড়োজাহাজ আবিস্কার তারই প্রত্যক্ষ ফল। যেহেতু, অনাগত সময় তথা ভবিষ্যতের কথা কেউ জানি না। এক্ষেত্রে তাই সাবধানতা অবলম্বন করাই শ্রেয়।
এ দূর্ঘটনায় নিহতদের আত্নার শান্তি কামনা করি। আহতরা দ্রুত আরোগ্য লাভ করুক। সৃষ্টিকর্তা তাদের সকলের পরিবারকে এ শোক সইবার শক্তি দান করুন। পাশাপাশি মানুষের যাত্রা নিরাপদ করতে পরিবহন কতৃপক্ষ আরো বেশি সচেতন ও আন্তরিক হোক, এটাই কামনা।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুন, ২০২২ সকাল ১১:০৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



