মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে নির্যাতন ও প্রাণের ভয়ে দশ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি বর্তমানে কক্সবাজারে অস্থায়ী শিবিরে মানবেতর জীবন যাপন করছে। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের উপর সাম্প্রতিক নিষ্ঠুর, নির্দয় বর্বরতা হিংস্র পশুকেও হার মানিয়েছে। যার চিত্র বিশ্ববিবেককে নাড়া দিয়েছে।
মৌলিক চাহিদা পুরণ না হলেও জীবন হারানোর ভয় নেই বলে এখন তারা বাংলাদেশকেই নিরাপদ মনে করছে। কিন্তু, বিশ্ব মানচিত্রে যে দেশের অবস্থান খুঁজতে আতশ কাঁচ দরকার পড়ে সেখানে অগণিত জনগণের ভীড়ে উপরন্তু দশ লাখেরও বেশি মানুষকে আবাসন, খাবার ও অন্যান্য সুবিধা প্রদান বোঝা হয়ে দাড়িয়েছে বাংলাদেশের জন্য। তাছাড়া আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থানও সুসংহত নয়। তবুও মানবতার প্রশ্নে আপোসহীন হয়ে বাংলাদেশ তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছে। বাংলাদেশ সরকার, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দাতব্য সংস্থা তাদের সর্বাত্নক সহযোগিতায় কাজ করে যাচ্ছে নিরলসভাবে। করবে যতদিন না তারা তাদের নাগরিকত্ব ও হারানো অধিকার ফিরে না পান।
কিন্তু, মুনাফালোভী তামাক কোম্পানিগুলো দেশের আইন লঙ্ঘণ করে তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থ কায়েমের উদ্দেশ্যে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির মাঝে তামাকের বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা চালাচ্ছে। যাতে তারা নেশাজাত দ্রব্য সেবনে উৎসাহী হন।সম্প্রতি উখিয়ায় কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শনে দেখা যায়, আকিজ টোব্যাকো কোম্পানি “আকিজ বিড়ি” এর বিজ্ঞাপন প্রচারে রোহিঙ্গাদের ভাষাগত সুবিধার্তে মিয়ানমারের ভাষা ব্যবহার করছে। এতে অনেক আশ্রয়প্রাপ্ত মানুষ নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে।
শরণার্থী শিবিরে তামাক কোম্পানি কতৃক প্রচারিত তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন রোহিঙ্গা শিশুদেরকেও প্রলুব্ধ করছে।
এছাড়াও তারা রাজধানীসহ সারাদেশে বিভিন্ন স্থানে ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো, আবুল খায়ের ট্যোবাকো, আকিজ টোব্যাকো, ঢাকা টোব্যাকোসহ অন্যান্য তামাক কোম্পানি বিজ্ঞাপন প্রচারণা ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারে উদ্বুদ্ধকরন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। দিনের পর দিন নিত্য নতুন আঙ্গিকে আইন লঙ্ঘণ করে তামাকের বিজ্ঞাপন প্রদর্শণ করে চলছে। আর এ কাজে তারা বিক্রয়স্থল-কে বিজ্ঞাপনের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছে। যা তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুসারে সম্পূর্ন অবৈধ এবং শাস্তিমূলক কাজ।
রোহিঙ্গা শিবিরে তামাক কোম্পানির আরো কিছু প্রচারণা কার্যক্রমের চিত্র।
তরুণদেরকে লোভনীয় চাকরীর প্রলোভন দিয়ে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের মাধ্যমে নানা ইভেন্ট আয়োজন, বিনামূল্যে কোম্পানির লোগো সম্বলিত টি-শার্ট, লাইটার, ফ্রি সিগারেট, ফ্রিজসহ বিভিন্ন ধরনের উপহারসামগ্রী প্রদানের মাধ্যমে তামাকজাত দ্রব্যের ব্রান্ড প্রমোশন ও প্রচারণা কার্যক্রম পরিচালনা করছে বিভিন্ন তামাক কোম্পানি।
এছাড়াও তামাক কোম্পানিগুলো বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে রাস্তায়, পার্কে ও বিভিন্ন জনসমাগম স্থলে ভ্রাম্যমাণ তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বিশেষ দিবস ও অনুষ্ঠানে (নতুন বছরের প্রথম দিন, স্বাধীনতা-বিজয় দিবস, বৈশাখী মেলা, বই মেলা) তামাক কোম্পানিগুলো বিভিন্ন ধরনের আগ্রাসী প্রচারণার মাধ্যমে মানুষকে ধূমপানে আসক্ত করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে যা সুস্পষ্টভাবে ২০০৫ সালে প্রণীত “ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫” এর লঙ্ঘণ ।
ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ এর ধারা ৫ এর (ছ) এ বলা আছে, তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়স্থলে যে কোন উপায়ে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করিবেন না বা করাইবেন না। কিন্তু, জনস্বার্থে প্রণীত একটি দেশের আইন লঙ্ঘণ করে শরণার্থী শিবিরে তামাক কোম্পানির এমন আগ্রাসী প্রচারণা ও সমস্যায় জর্জরিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠিকে তামাকজাত দ্রব্য সেবনে যেভাবে তারা উদ্বুদ্ধ করছে তা রীতিমতো উদ্বেগজনক!
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, এমনিতেই তারা বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। তার উপর তামাক কোম্পানিগুলোর এ ধরনের অপপ্রচার তাদের নেশার জগতে ঢোকার রসদ জোগাচ্ছে একথা নিশ্চিতভাবে বলা যায়। তাই, সময় থাকতে ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও কতৃপকক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি বিষয়টি আমলে নিয়ে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।