কৃষি প্রধান দেশ বাংলাদেশ। উর্বর মাটি, দূর্যোগ সহনশীল আবহাওয়া, প্রাকৃতিক বৈচিত্রতার কারণে বঙ্গদেশ কৃষি উৎপাদনের জন্য বরাবরই আদর্শ স্থান। তাই বংশ পরম্পরায় সিংহভাগ মানুষ কৃষিকেই নিজ ধ্যান-জ্ঞান, পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন যাদের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। সময়ের সাথে সাথে কৃষিতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। বীজ, সার, কীটনাশকের সহজলভ্যতা, প্রযুক্তির ব্যবহার ও সেচ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়নের ফলে কৃষিতে উৎপাদন বেড়েছে। এক সময়ের ‘তলাবিহীন ঝুঁড়ি’ আখ্যা পাওয়া বাংলাদেশ আজ বিশ^ দরবারে স্বগৌরবে উজ্জ¦ল, বৈশি^কভাবে উন্নয়নশীল দেশের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে সেখানে কৃষি সেক্টরের কৃতিত্ব কম নয়। বৈশি^ক স্বীকৃতিও মিলেছে অনেক ক্ষেত্রে। এর মূলে রয়েছেন আমাদের কৃষক সমাজ।
কৃষি তথ্য সার্ভিস এর মতে, বাংলাদেশ ইলিশ মাছ উৎপাদনে বিশে^ প্রথম এবং কাঠাল উৎপাদনে দ্বিতীয়। ধান, সব্জি ও পেয়াজ উৎপাদনকারী দেশের মধ্যে বাংলাদেশ তৃতীয়। চা এবং ছাগল উৎপাদনে বাংলাদেশ চতুর্থ। আম উৎপাদনে সপ্তম এবং মোট ফল উৎপাদনে ২৮তম দেশ বাংলাদেশ। অনেকের কাছে তথ্যগুলো অজানা হতে পারে, তবে সত্যি হচ্ছে- বাংলাদেশের মাটি, সোনার চেয়েও খাঁটি। এদেশের আবহাওয়া এবং উর্বর মাটিতে কৃষক সোনা ফলায়। বৈশি^কভাবে বিভিন্ন র্যাঙ্কিং আমাদের আশান্বিত করে। পক্ষান্তরে, কিছু সংবাদ বিপরীত চিন্তার উদ্রেক ঘটায়। যেমন: বাংলাদেশে প্রতিদিন মাত্র ০.৪ শতাংশ জনগোষ্ঠী ফল আহরণ করে এবং ২.৩% জনগোষ্ঠী নূন্যতম প্রয়োজনীয় সব্জী খায়। প্রতিবছর ২.৭ মিলিয়ন মানুষের জীবন রক্ষা পেত, যদি এই মানুষগুলোকে পর্যাপ্ত পরিমাণ সবজি ও ফল-মূল গ্রহণ করানো সম্ভব হতো। তাহলে বৈশি^ক পর্যায়ে সব্জী উৎপাদনে ৩ নং দেশে মানুষ পর্যাপ্ত সব্জী গ্রহণ করতে পারে না। এর অনেক কারণ থাকতে পারে তবে হতে পারে- চাহিদার তুলনায় উৎপাদন স্বল্পতা রয়েছে। কারণ প্রতিবছর অনেক কৃষি পণ্য বিপুল অর্থ ব্যয়ে আমদানী করতে হয় এবং সেটা বহুকাল ধরে চলে আসছে।
২০২০ সালে প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, বছরে ৮০ হাজার কোটি টাকার খাদ্য ও কৃষিপণ্য আমদানি করতে হয়েছে। ২০১৫ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে দেশে আমদানীকৃত কৃষি ও খাদ্যপণ্যের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিশ্বব্যাংক জানায়, এ সময়ে বার্ষিক গড়ে ৭২০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। ঐ সময়কালে বাংলাদেশী মুদ্রায় এর পরিমাণ ছিলো ৬০ হাজার কোটি টাকার বেশি। তুলা আমদানি ব্যয় যোগ করে কৃষিপণ্য আমদানিতে ঐ বছর ব্যয় ৮০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। ২০২১-২২ অর্থবছরে শুধু চাল আমদানিতে ব্যয় হয় ৪ হাজার ৬৮০ কোটি এবং গমে ১৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে যা ছিলো ৩১৬০ কোটি। একই সময়ে আমদানি ব্যয় দেড় লাখ কোটি টাকা ছাড়াবে বলেও হুশিয়ারি দিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞরা যা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ‘খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ’ এ বাক্যটি আর নেতৃত্বস্থানীয় পর্যায়ের লোকজন মুখে আওড়ায় না।
খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্পূর্ণ দেশীয় উৎপাদনের সাথে জড়িত। তাই আমাদের সেদিকে মনোনিবেশ করা ছাড়া আর বিকল্প কোন উপায় নেই, সেটা সবাই জানে। কারণ ‘খাদ্য দ্রব্য’ জীবন বাঁচানোর অধিক গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ বিধায় বর্তমান পরিস্থিতিতে এটি ক্রমেই সহজলভ্যতা হারাতে চলেছে। হতে পারে এমন দিন অতি নিকটে, যখন মানুষ অর্থ পকেটে নিয়ে ঘুরবে কিন্তু খাদ্য মিলবে না! সাম্প্রতিককালে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের বৈদেশিক বানিজ্যের ক্ষেত্রে অর্থ এবং অপরিহার্যতা থাকা স্বত্ত্বেও অনেক সময় খাদ্য বা জরুরি পণ্য আমদানি সম্ভব হয়নি। ভোজ্য তেল আমদানী নিয়ে বাংলাদেশও সাম্প্রতিক বছরে বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। প্রতিটা দেশের নিজস্ব খাদ্য চাহিদা মেটানোর নিজস্ব পলিসি আছে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানো এবং পর্যাপ্ত মজুদ নিশ্চিত করে তবেই বড় বড় খাদ্য উৎপাদনকারী রাষ্ট্রগুলো রপ্তানী করছে। বিশ^ বাজারে এর প্রভাব পড়ছে। তাছাড়া মূদ্রাস্ফীতি, বৈদেশিক মূদ্রার দর বৃদ্ধির কারণেও আমদানিতে সমস্যা হয়। বর্তমানে যদিও আফ্রিকার বিশেষ অঞ্চলসহ অনেক দেশে খাদ্য রয়েছে। তথাপিও সার্বিকভাবে বৈশি^ক খাদ্য দূর্ভিক্ষ না থাকলেও সমগ্র বিশ^ সে পথেই হাঁটছে বলে আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে। যা বাংলাদেশের জন্য একটি সতর্ক সংকেত। এই সতর্কতার অংশ হিসেবে বাংলাদেশে কৃষি ক্ষেত্রের আবর্জনা পরিস্কার করা বাঞ্ছনীয়।
‘আবর্জনা’ রুপক অর্থে ব্যবহৃত হলেও প্রকৃতপক্ষে, কৃষি উৎপাদনে কিছু ক্ষতিকর চাষাবাদকে বোঝানো হয়েছে। ‘তামাক’ এই আবর্জনার মধ্যে অন্যতম। বর্তমানে দেশে মোট আবাদযোগ্য জমি রয়েছে ৩ কোটি ৭৬ লক্ষ ৭ হাজার একর। স্বাধীনতা পরবর্তী এই অনেক অনাবাদী পতিত জমি কৃষি উৎপাদনের আওতায় আসলেও জনসংখ্যার আধিক্য, দ্রুত এবং অপরিকল্পিত নগরায়ন, জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাবসহ নানাবিধ কারণে তা প্রকৃতপক্ষে অনেক কম। বর্তমান আবাদী আরো কমে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে খাদ্যের অভাব/স্বল্পতা অদূর ভবিষ্যতেই বাংলাদেশের জন্য একটি বড় বোঝা হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে। তাই সময় থাকতে সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তার স্বার্থেই তামাক চাষ বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
বাংলাদেশে ৯৯,৬০০.২৪ একর জমি তামাক চাষে ব্যবহৃত হচ্ছে (কৃষি পরিসংখ্যান বর্ষগ্রন্থ- ২০২১)। বিশে^ উৎপাদিত তামাকের ১.৩ শতাংশ বাংলাদেশ থেকে আসে। যা দেশের খাদ্য উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে এবং এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে খাদ্য সঙ্কট তৈরী করতে পারে। তামাক চাষ মাটির উর্ব্বরতা শক্তি হ্রাস করে যেটা সর্বজন স্বীকৃত। এমনকি কৃষকও সেটা জানে। তামাক চাষের কারণে খাদ্য শস্য চাষের জমি কমে যাচ্ছে। দেখা যায়, দেশের যে সকল জেলায় তামাক চাষ হয় সেখানে পুষ্টিকর খাদ্য সংকট রয়েছে। পরিবেশ, প্রাণীকূলেও তামাক চাষের বিরুপ প্রভাব দেখা যাচ্ছে। এক একর জমিতে যে পরিমান তামাক উৎপন্ন হয় এটি শুকানোর জন্য প্রয়োজন প্রায় ৫ টন কাঠ। পার্বত্য এলাকায় তামাক চাষ ও প্রক্রিয়াজাত করার কারণে বনভুমি দেদারচে উজার হচ্ছে। দেশে ৩০% বন উজাড় হয় শুধুমাত্র তামাক পোড়াতে। তামাক চুল্লিতে প্রতি বছর ২৯ লক্ষ ৩২ হাজার গাছ পোড়ানো হয়। উপরন্তু, তামাক চাষে ব্যবহৃত কীটনাশক ও রাসায়নিক জীব-বৈচিত্র, প্রাণীচক্রের অপূরণীয় ক্ষতি করেছে। তামাক চাষীদের মধ্যে প্রতি ৪ জনের একজন ‘গ্রীণ টোব্যাকো সিকনেস’ বিষক্রিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়। একজন তামাক সেবী ৫০টি সিগারেট সেবর করলে যে পরিমাণ নিকোটিন গ্রহণ করে ঠিক সেই পরিমাণ নিকোটিন একজন তামাক চাষী একদিনেই শোষণ করে! যা রীতিমতো ভয়ানক! তামাক চাষ প্রবণ এলাকায় মানুষের মধ্যে বিশেষত: গর্ভবতী মহিলাদের নানাবিধ স্বাস্থ্যগত সমস্যা হয়। তারা প্রতিবন্ধী, বিকলাঙ্গ সন্তান জন্ম দেয়। ফলে ঐ সমস্ত এলাকায় প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠির হার বেশি।
বর্তমানে পৃথিবীর ১২৫টির অধিক দেশে প্রায় ৪ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে তামাক চাষাবাদ হচ্ছে। দেখা যায় যে, পৃথিবীর শীর্ষ তামাক উৎপাদনকারী দেশগুলোর অধিকাংশই বাংলাদেশসহ নি¤œ ও মধ্যম আয়ের দেশ। তামাক চাষ সারা পৃথিবীর ২-৪ শতাংশ বন উজাড়ের জন্য দায়ী। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, ১৯৭০ সাল থেকে তামাকের কারণে বিশ্বব্যাপী (গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে) আনুমানিক ১.৫ বিলিয়ন হেক্টর বন বিলুপ্ত হয়ে গেছে। যা ২০% বার্ষিক গ্রিনহাউস গ্যাস বৃদ্ধির প্রধান কারণ! ২০১৩ সালে ইন্টারন্যাশনাল কোস্টাল ক্লিন-আপ বাংলাদেশসহ ৯২টি দেশের সাগর থেকে যে বর্জ্য সংগ্রহ করে, তার মধ্যে ১ম স্থানে রয়েছে সিগারেট ফিল্টার।
এত ভয়াবহতার পরেও তামাক চাষ লাভজনক এবং তামাক-কে ‘অর্থকরী ফসল’ হিসেবে জাহির করার প্রবণতা সব সময় লক্ষ্য করা যায়। দু:খজনক হলেও সত্য- এখনো দেশের পাঠ্যপুস্তকে তামাক অর্থকরী ফসল হিসেবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। তামাক শিল্প এবং রাজস্ব আয়ের বড় উৎস হিসেবেও ব্যপক প্রসার হয়েছে। কিন্তু, আদতে তামাক চাষ তামাক কোম্পানির জন্য লাভজনক, কৃষকের জন্য নয়। বান্দরবানে ৯০ শতাংশ কৃষি জমিদে ক্ষতিকর তামাক চাষ করা হচ্ছে। যদি কৃষকের জন্য তামাক চাষ লাভজনক হতো তাহলে বান্দরবানসহ বৃহত্তর রংপুর, কুষ্টিয়া, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজারসহ তামাক চাষ প্রবণ এলাকাগুলোতে দরিদ্র মানুষ খুঁজে পাওয়া যেতো না। এ সকল জেলাগুলোতে মানুষের জীবন-যাত্রা অনুন্নত থাকতো না। মূলত, তামাক কোম্পানিগুলো কৃষকদের দাঁদনের ফাঁদে ফেলে তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করছে। কারণ ‘তামাক’ তাদের প্রধান ব্যবসায়েক কাঁচামাল। যে কোন উপায়ে ব্যবসার কাঁচামালের যোগান নিশ্চিত করতে চাইবে বহুজাতিক তামাক কোম্পানিগুলো। আমার, আপনার কিংবা রাষ্ট্রের কি ক্ষতি হচ্ছে বা হতে পারে সেটা তাদের মাথা ব্যথার কারণ নয়।
তামাকের ক্ষতি আমাদের মাথা ব্যথা। তাই কৃষকদের পণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত এবং বিকল্প ফসল উৎপাদনে উৎসাহিত করার মাধ্যমে তামাক চাষ হতে ফিরিয়ে আনতে আশু পদক্ষেপ নিতে হবে। তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যে আপীল বিভাগ থেকে নির্দেশনা রয়েছে, সেটা অনুসরণ জরুরি। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের ধারা-১২ তে তামাক উৎপাদন নিয়ন্ত্রণে, বিশেষত: তামাক চাষ নিরুৎসাহিত করতে একটি নীতি প্রণয়নের নির্দেশনা রয়েছে। যতদুর জানা যায়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে একটি খসড়া নীতিমালা তৈরী করা হয়েছে। সময়ের প্রয়োজনে নীতিটি চূড়ান্ত করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দেশে তামাক চাষ নির্মূল অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। কারণ, আমাদের খাদ্য সঙ্কট প্রতিরোধ এবং তামাকের করাল গ্রাস থেকে জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ, অর্থনৈতিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। তামাকমুক্ত করতে হবে দেশ।
এমন পরিস্থিতিতে এ বছর পালিত হচ্ছে বিশ^ তামাকমুক্ত দিবস। ১৯৮৭ সাল থেকে বিশে^র বিভিন্ন দেশে দিবসটি উদযাপন করা হচ্ছে। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা ২০২৩ সালে বিশ^ তামাকমুক্ত দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে-"Grow food: not tobacco" বাংলা ভাবানুবাদ করা হয়েছে “তামাক নয়, খাদ্য ফলান।” জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তন, নগরায়ন, বৈশি^ক যুদ্ধসহ বিভিন্ন কারণে এ বছর তামাকমুক্ত দিবসের প্রতিপাদ্যটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।
তাছাড়া আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যেই বৈশি^ক নের্তৃবৃন্দের সামনে দেশকে তামাকমুক্ত করার অঙ্গীকার করেছেন। তিনি ২০১৬ সালে ‘সাউথ এশিয়ান স্পীকার্স সামিট’ এ বলেন, “আমরা ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে তামাকের ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করতে চাই।” তার এ ঘোষণা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, দপ্তর, বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন। তামাক নিয়ন্ত্রণ শুধুমাত্র এককভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ নয়, এক্ষেত্রে সবাইকে নিজ নিজ অধিক্ষেত্র থেকে কাজ করতে হবে।
দেশে তামাকমুক্ত বা দেশে তামাক ব্যবহার ০৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে বিদ্যমান ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন’ প্রণয়নসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে বিদ্যমান আইনটি সংশোধনের মাধ্যমে যুগোপযোগী করা প্রয়োজন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এফসিটিসি’র আলোকে ইতোমধ্যেই আইন সংশোধনের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। আইনটি শক্তিশালী করা হলে দেশের মধ্যবয়সী এবং তরুণদের মাঝে তামাক ব্যবহার বহুলাংশে কমে আসবে। তামাকজনিত রোগ ও অকালমৃত্যু হ্রাস পাবে। কিন্তু, তামাক কোম্পানিগুলো সরকারের জনস্বাস্থ্য রক্ষার উদ্দেশ্য ব্যহত করতে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে। সেগুলোতে কর্ণপাত করা যাবে না। কারণ তারা জনস্বাস্থ্য উন্নয়নের অংশীদান নয়, তারা প্রজন্ম ধ্বংসের কারিগর। আমাদের ছেলে-মেয়েদের ধূমপানের নেশা দিয়ে ভয়ঙ্কর মাদকের দিকে ঠেলে দিচ্ছে
‘ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো’ কোম্পানিতে সরকার ও সরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১০% শেয়ার রয়েছে। সরকারের উচ্চপদস্থ একাধিক কর্মকর্তা বিএটি’র পরিচালনা পর্ষদে প্রতিনিধিত্ব করছেন। যা সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রচেষ্টাকে জনগনের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। সরকারকে অতি দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে তামাক কোম্পানি থেকে শেয়ার প্রত্যাহার করার জন্য। আমাদের একটি পুরনো আইন ‘এসেনসিয়াল কম্যুডিটি এ্যাক্ট-১৯৫৬’তে তামাক ‘জরুরি পণ্য’ হিসেবে অন্তভূক্ত রয়েছে। ‘কৃষি বিপণন আইন-২০১৮’ তে তামাক অর্থকরী ফসলের মধ্যে অন্যতম হিসেবে রাখা হয়েছে। এরকম কিছু কিছু বিষয় তামাক কোম্পানিকে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে নানা সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। পুরণো যে সকল আইন, নীতি, অধ্যাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণের সমস্যা সৃষ্টি করে এমন বিষয় সন্নিবেশিত রয়েছে সেগুলো সংস্কারের মাধ্যমে যুগপোযোগি করতে হবে। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার ‘ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল-এফসিটিসি’র আর্টিকেল ৫.৩ অনুসারে তামাক কোম্পানির প্রভাব বন্ধে ‘গাইডলাইন’ প্রণয়নও অত্যন্ত জরুরি। সর্বোপরি, নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় তামাক কোম্পানির নগ্ন হস্তক্ষেপ বন্ধ করা এবং বিদ্যমান আইনটির কার্যকর বাস্তবায়ন অতীব জরুরি। তা না হলে আমাদের কাঙ্খিত ফলাফল অর্জন সম্ভব নয়।
জলবায়ু পরিবর্তন এবং নানান কারণে খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এমনিতেই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণ, দূষণ নিয়ন্ত্রণ, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলা করে দ্রুত বর্ধনশীল জনগণের আগামী দিনের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং আগামী প্রজন্মকে তামাক, মাদকের ছোবল থেকে রক্ষা করা অতীব জরুরি বিষয়। এ পথে ‘তামাক’ বড় বাধা। যা অতিক্রম করতে রাজনৈতিক অঙ্গীকার এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, দপ্তর, বিভাগগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্তদের সদিচ্ছা ও তার প্রতিফলনই আজকের দিবসে প্রত্যাশা করছি
মো. আবু রায়হান, উন্নয়ন কর্মী, কলাম লেখক
[email protected]