শবে বরাত
ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা
প্রণেতাঃ
ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
এমএম (ঢাকা), লিসান্স, এমএ, এম-ফিল, পিএইচ ডি (মদীনা)
সহকারী অধ্যাপক, আল-ফিকহ বিভাগ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া, বাংলাদেশ
----------গত কিস্তি পড়ুন।
তৃতীয় প্রশ্নঃ শা'বানের মধ্য রাত্রিতে হাজারী নামায পড়ার কি হুকুম?
উত্তরঃ শা'বানের মধ্য রাত্রিতে একশত রাকাত নামাজে প্রতি রাকাতে দশবার সূরা কুল হুওয়াল্লাহ (সূরা ইখলাস) দিয়ে নামাজ পড়ার যে নিয়ম প্রচলিত হয়েছে তা সম্পূর্ণরূপে বিদ'আত।
এ নামাযের প্রথম প্রচলনঃ
এ নামাযের প্রথম প্রচলন হয় হিজরী ৪৪৮ সনে। ফিলিস্তিনের নাবলুস শহরের ইবনে আবিল হামরা নামীয় একলোক বায়তুল মুকাদ্দাস আসেন। তার তিলাওয়াত ছিল খুব সুন্দর। তিনি শা'বানের মধ্য রাত্রিতে নামাজে দাড়ালে তার পিছনে এক লোক এসে দাঁড়ায়, তারপর তার সাথে তৃতীয় জন এসে যোগ দেয়, তারপর চতুর্থ জন। তিনি নামায শেষ করার আগেই বিরাট একদল লোক এসে তার সাথে যুক্ত হয়ে পড়ে।
তারপর যখন পরবর্তী বছর আসল, তার সাথে অনেকেই এসে নামায পড়ল। আর এতে করে মাসজিদে আক্সাতে এ নামায ছড়িয়ে পড়ল। তারপর এমনভাবে আদায় হতে লাগল যে অনেকেই তা সুন্নাত মনে করে নিল। (ত্বারতুসীঃ হাওয়াদেস ও বিদ'আ পৃঃ১২১, ১২২, ইবনে কাসীরঃ বিদায়া ওয়ান নিহায়া ১৪/২৪৭, ইবনুল কাইয়েমঃ আল-মানারুল মুনিফ পৃঃ৯৯)।
এ নামাযের পদ্ধতিঃ
এ নামাযের পদ্ধতি হলো প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পরে সূরা ইখলাস দশবার করে মোট একশত রাকাত নামায পড়া। যাতে করে সূরা ইখলাস ১০০০ বার পড়া হয়। (এহইয়ায়ে উলুমুদ্দীন (১/২০৩)।
এ ধরণের নামায সম্পূর্ণ বিদ'আত। কারণ এ ধরণের নামাযের বর্ণনা কোন হাদীসের কিতাবে আসেনি। কোন কোন বইতে এ সম্পর্কে যে সমস্ত হাদীস উল্লেখ করা হয় সেগুলো কোন হাদীসের কিতাবে আসেনি। আর তাই আল্লামা ইবনুল জাওযী (মাওদু'আত ১/১২৭-১৩০), হাফেয ইরাকী (তাখরীজুল এহইয়া), ইমাম নববী (আল-মাজমু' ৪/৫৬), আল্লামা আবু শামাহ (আল-বা'ًয়েস পৃঃ ৩২-৩৬), শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যা, (ইকতিদায়ে ছিরাতুল মুস্তাকীম ২/৬২৮), আল্লামা ইবনে 'আররাক (তানযীহুশ শরীয়াহ ২/৯২), ইবনে হাজার আল-আসকালানী, আল্লামা সূয়ূতী (আল-আমর বিল ইত্তেবা পৃঃ৮১, আল-লাআলিল মাসনূ'আ ২/৫৭), আল্লামা শাওকানী (ফাওয়ায়েদুল মাজমু'আ পৃঃ৫১) সহ আরো অনেকেই এ গুলোকে "বানোয়াট হাদীস" বলে সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন।
এ ধরণের নামাযের হুকুম
সঠিক জ্ঞানের অধিকারী আলেমগণের মতে এ ধরণের নামায বিদ'আত; কেননা এ ধরনের নামায আল্লাহর রাসূলও পড়েননি। তার কোন খলীফাও পড়েননি। সাহাবাগণও পড়েননি। হেদায়াতের ইমাম তথা আবু হানিফা, মালেক, শাফেয়ী, আহমাদ, সাওরী, আওযায়ী, লাইস সহ অন্যান্যগণ কেউই এ ধরণের নামায পড়েননি বা পড়তে বলেননি।
আর এ ধরণের নামাযের বর্ণনায় যে হাদীসসমূহ কেউ কেউ উল্লেখ করে থাকে তা উম্মাতের আলেমদের সর্বসম্মত মতে বানোয়াট। (এর জন্য দেখুনঃ ইবনে তাইমিয়ার মাজমু' ফাতাওয়া ২৩/১৩১,১৩৩,১৩৪, ইকতিদায়ে ছিরাতে মুস্তাকীম ২/৬২৮, আবু শামাহঃ আল-বা'য়েছ পৃঃ ৩২-৩৬, রশীদ রিদাঃ ফাতাওয়া ১/২৮, আলী মাহফুজ, ইবদা' পৃঃ২৮৬,২৮৮, ইবনে বাযঃ আত্তাহযীর মিনাল বিদ'আ পৃঃ১১-১৬)।
চতুর্থ প্রশ্নঃ শা'বানের মধ্য রাত্রির পরদিন কি রোযা রাখা যাবে?
উত্তরঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বহু সহীহ হাদীসে প্রমাণিত হয়েছে যে, তিনি শা'বান মাসে সবচেয়ে বেশী রোযা রাখতেন। (এর জন্য দেখুনঃ বুখারী, হাদীস নং ১৯৬৯, ১৯৭০, মুসলিম, হাদীস নং ১১৫৬, ১১৬১, মুসনাদে আহমাদ ৬/১৮৮, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ২৪৩১, সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস নং ২০৭৭, সুনানে তিরমিঝি, হাদীস নং ৬৫৭)।
সে হিসাবে যদি কেউ শা'বান মাসে রোযা রাখেন তবে তা হবে সুন্নাত। শাবান মাসের শেষ দিন ছাড়া বাকী যে কোন দিন রোযা রাখা জায়েয বা সওয়াবের কাজ। তবে রোজা রাখার সময় মনে করতে হবে যে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেহেতু শা'বান মাসে রোজা রেখেছিলেন তাকে অনুসরন করে রোযা রাখছি।
অথবা যদি কারও আইয়ামে বেদের নফল রোযা তথা মাসের ১৩,১৪,১৫ এ তিনদিন রোযা রাখার নিয়ম থাকে তিনিও রোযা রাখতে পারেন। কিন্তু শুধুমাত্র শা'বানের পনের তারিখ রোযা রাখা বিদ'আত হবে। কারণ শরীয়তে এ রোযার কোন ভিত্তি নেই।
আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর রাসূলের পরিপূর্ণ পদাঙ্ক অনুসরন করে চলার তৌফিক দিন। আমীন।
(((সমাপ্ত)))
-----------
এ বইটি সম্পূর্ণ পড়তে
[link|http://aburazin.wetpaint.com/page/শবে

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




