somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সেলফোট্রন

০৭ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ৩:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[পর্ব – ১]


য়ারা বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকার পর বলল, “তুমি এমন কেন?”
বই থেকে মুখ তুলে আসিমো য়ারার দিকে তাকালো। চোখে তার বিস্ময়। পাল্টা প্রশ্ন করল, “কেমন আমি?”
“সারাক্ষণ তোমার সাথে চলি তারপরও তুমি বুঝো না কিছু?”
“কি বুঝি না?”
রাগে কিটমিট করতে লাগল য়ারা। “আমি তোমাকে ভালোবাসি এটা কি তুমি বুঝো না? নাকি বুঝেও না বুঝার ভান করো?”
রাগে তার গাল লাল হয়ে গেছে।
আসিমো বই বন্ধ করে ব্যাগে রাখলো। য়ারার দিকে ঘুরে বসল। তার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, “দেখো য়ারা, গত সপ্তাহেও তুমি আমাকে একবার জিজ্ঞেস করেছিলে যে ‘ভালোবাসা কি?’ তখন তোমাকে আমি বলেছিলাম, ভালোবাসা-প্রেম এই ধরনের আবেগ আমি বুঝি না। গত বছর আমার সামনে এ্যাকসিডেন্ট করে আলভা ছেলেটা মারা গিয়েছে। আমি তখন বুঝিনি যে আমার অভিব্যক্তি কেমন হবে। আমি চুপচাপ ছিলাম। তাকে বাঁচাতে হবে ভেবেই তাকে কোলে তুলে দৌড়ে হাসপাতালে নিয়ে যাই। সে মারা যায়। কিন্তু, আমি বুঝি না দুঃখ কি! কেউ মারা গেলে কিভাবে দুঃখ পাবো সেটা আমার অনুভূতিতে নেই। কেন নেই আমি জানি না। সবাই হাসে, আমি বুঝি না কেন হাসে। এখন আমি কিন্তু রাগ হচ্ছি না। রাগ আমার অনুভূতিতে নেই। আমি তোমার সাথে স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলছি। এই তুমি আমাকে বললে যে তুমি আমাকে ভালোবাস, আমি বুঝতে পারছি না যে ভালোবাসা কি বা তুমি এই কথা বলার পর আমার ভিতর কি অনুভূতি হওয়ার দরকার বা তোমাকে কি উত্তর দেয়ার দরকার।” একটু থেকে আসিমো আবার বলল, “আমি জানি না য়ারা, আমি জানি না।” আসিমোর চোখে কোন আবেগ নেই। নিরাবেগ চোখ জ্বল জ্বল করছে। মুখে মৃদু হাসির ছোঁয়া। যেটা সব সময়ই থাকে।
“এই প্রশ্নগুলোই আমি করছি তোমাকে যে, কেন তোমার ভিতর এগুলো নেই? তুমি তো মানুষ, কোন রোবট না। তাই না? নাকি রোবট?”
“আমি জানি না য়ারা।” বিস্মিত হয়ে য়ারা আবার প্রশ্ন করলো, “তুমি মানুষ কিনা রোবট এটাও তুমি জানো না?”
“না।” উত্তর দিয়ে য়ারার চোখের দিকে তাকিয়ে চুপচাপ বসে রাইল আসিমো।
“তাহলে বই পড়ো কেন সারাক্ষণ?”
“আমার মনে হয় যে, এটা করে আমি অনেক কিছু জানতে পারছি।” স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দিলো আসিমো। সেই নিরাবেগ চোখে তাকিয়ে আছে য়ারার চোখের দিকে।
য়ারা বলল, “আমার মনে হয় তোমার কোন মানসিক সমস্যা আছে। হয় ডাক্তার দেখাও, না হয় তুমি নিজে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে বের করো।” বলে উঠে চলে গেল য়ারা।
আসিমো তার ব্যাগ থেকে বই বের করে আবার পড়তে শুরু করলো।

টার্মিস বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠটা গাছ দিয়ে সাজানো। গাছগুলোর নিচে আবার একটি করে বেঞ্চ রাখা। পাতা ঝরে পড়ছে। হালকা বাতাস বইছে। বিকালের এই সময়টাতে ছেলেমেয়েদের কেউ কেউ এখানে বসে পড়ে সময় কাটায়, আবার কেউ কেউ দল বেঁধে আড্ডা দিয়ে সময় কাটায়। আসিতো এখানে নিত্যদিনের মত পড়তে বসে। কখনও কখনও তার সঙ্গি হয় য়ারা, কখনও কখনও সে একাই থাকে। য়ারা চলে যাওয়ার পরও তার মধ্যে কোন ভাবান্তর দেখা দেয় না। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসা পর্যন্ত সে পড়তে থাকে। জেনেটিক সায়েন্সের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সে। ভার্সিটেতে একমাত্র সেই সব বিষয়ে সর্বোচ্চ নাম্বার তুলে। কিভাবে সে ৯৯/১০০ পায় তা কেউ বুঝে না।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলে আসিমো চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করলে তার সামনে রাস্তায় একটি হাইপার কার এসে থামে। ছোট একটি গাড়ি দু’জন বসা যায়। আসিমো গাড়িটা চিনে। তার সহপাঠি ভিনেলের গাড়ি। গাড়িটার চাকা নেই। মাটি থেকে ছয় ইঞ্চি উঁচুতে ভেসে থাকে সবসময়। এ্যান্টি-গ্রাভিটি টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়েছে। টেকনোলজিটা আরও দেড় শতাব্দি আগে আবিষ্কার করা হলেও এতদিন উন্মুক্ত করা হয় নি। পরীক্ষার মধ্যে ছিল। গত ১৫ বছর ধরে সরকারি অনুমোদন পেয়ে বিভিন্ন ট্রান্সপোর্ট কোম্পানি নিজেদের মত করে ব্যবহার করছে।
গাড়ির দরজার গ্লাস নামতেই ভিনেল আসিমোকে ডেকে বলল, “ফ্রি আছো নাকি রাতে? নাকি ব্যস্ত?”
বসা থেকে উঠতে উঠতে আসিমো বলল, “তেমন কোন কাজ নেই। কেন?”
“তাহলে আজ রাতটা থিসিসের কাজ করতাম আমার বাসায়। সময় তো পেরিয়ে যাচ্ছে। কাজ তো এখনও ধরা হল না।”
“ঠিক আছে, চলো তাহলে। তোমার বাড়িতেও কখনও যাওয়া হয় নি। বলে আসিমো ভিনেলের গাড়িতে উঠে বসল।”
দরজা লাগতেই হাইপার কার টার্মিস ভার্সিটির পিচঢালা কালো পথের উপর দিয়ে ভাসতে ভাসতে চলতে লাগলো ভিনেলের
বাড়ির দিকে।
ভিনেল ফ্র্যাঙ্ক। আসিমো’র থিসিস পার্টনার। থিসিসের সুবাদে তাদের পরিচয়। তারপর থেকে ভিনেল আসিমোর সাথে যথেষ্ঠ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে চলে। কিন্তু, আসিমো মনে করে যে, তাদের একসাথে থিসিসের কাজ করাই হচ্ছে সম্পর্ক, বন্ধুত্ব কি তা বুঝের ভিতর নেই। অবশ্য এটা নিয়ে ভিনেল তাকে কোন প্রশ্নও করে না যে, সে তাকে বন্ধু মনে করে কি না। ঝগড়া তো হচ্ছে না, তাহলে তো আর সমস্যা নেই, এভাবেই চলতে থাকুক।
সেক্টর-এস। এই সেক্টরে জনসাধারণের প্রবেশ নিষেধ। এখানে সমাজের ও দেশের উঁচু পদের মানুষদের বসবাস। যেমন, বিজ্ঞানী, মন্ত্রী, শিল্পপতি, বিচারপতি ইত্যাদি। বেশ সাজানো গুছানো সেক্টর। প্রতিটা বাড়ি এক একর জায়গার উপর নির্মিত। বাড়ি তো নয়, এক একটা যেন বিশাল অট্টালিকা। এই সেক্টরের সার্বিক নিয়ন্ত্রণের জন্য আলাদা একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। অন্যান্য সেক্টরের বাসিন্দা থেকে এই সেক্টরের সুযোগ সুবিধা অনেক বেশি ও আধুনিক।
ভিনেলের গাড়ি সেক্টরের সবচেয়ে ভিতরের দিকের একটি বাড়ির মূল গেটের সামনে এসে থামতেই নীল একটি রশ্মী তার গাড়ি স্ক্যান করে পরিচয় কনফার্ম করে গেট আপনাতেই খুলে গেল। বিশাল লন পারি দিয়ে বাড়ির মূল ফটকের সামনে এসে গাড়ি থামতেই ভিনেল ও আসিমো গাড়ি থেকে নামলো। গাড়ি একাই চলে গেল গ্যারেজের দিকে।
বাড়ি দেখে আসিমোর ভিতরে কোন প্রতিক্রিয়া দেখা দিল না। কারণ, ‘অবাক’ হওয়ার আবেগ তার ভিতর কাজ করে না। ভিনেলকে অনুসরণ করে সে ঢুকে গেল বাড়ির ভিতর। দোতলার এক কর্ণারের ঘরে ঢুকলো তারা। বেশ সাজানো গুছানো ঘর। ঘরে ঢুকতেই ভিনেল আসিমো’কে বলল, “তুমি ফ্রেশ হয়ে নেও, আমি কিছু খাবার ব্যবস্থা করছি,” বলে বের হয়ে গেল।
খাবার পর্ব শেষ হলে আসিমো ভিনেলের সাথে তার স্টাডিরুমে গেল। বিশাল সে ঘর শুধু বই আর বই দিয়ে ভরা। এককোণে বড় একটা টেবিলে কম্পিউটার রাখা। তার আশে পাশে কিছু কাগজ। টেবিলের বিপরীত পাশেরই আরও একটা দরজা, দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলো তারা। বিশাল ঘরের মধ্যখানে লম্বা একটি টেবিল, যার অর্ধেকের বেশির স্থান জুরেই জেনেটিক সায়েন্সের বিভিন্ন গবেষণার যন্ত্রপাতি। তাকে তাকে সাজানো কাচের বোতলে বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য। কিছু কিছু বোতলে বিভিন্ন মৃত প্রাণীর দেহ সংরক্ষণ করা। দুটি রেফ্রিজারেটরের একটিতে কিছু কাচের বোতল ও অন্যটিতে ড্রিংস।
“এত সব ল্যাব তোমার তৈরি?” ঢুকেই জিজ্ঞেস করলো।
“না, আমার মা জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন।” একটু হেসে উত্তর দিলো ভিনেল।
“ছিলেন? এখন কোথায় তিনি?”
“দুই বছর আগে ‘ওয়াল’স ল্যাবরেটরি’তে একটা বিস্ফোরণ ঘটেছিল, শুনেছিলেন?”
“হ্যা।”
“আমার মায়ের হাতেই সেটা ঘটে। তিনি সেখানে সাথে সাথে মারা যান।”
“মার্থা ফ্র্যাঙ্ক তোমার ছিলেন? বাহ্, তিনি তো হিউম্যান ক্রোমজমের রোগ প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া নিয়ে কাজ করছিলেন। আমাদের থিসিস যেটা নিয়ে।”
“হ্যা, ঠিক বলেছো। মা তাঁর অনেক কিছুই আমার সাথে শেয়ার করতেন। আমিও তাকে কিছু কিছু বিষয়ে সাহায্য করার চেষ্টা করতাম। যেহেতু আগে থেকেই এই বিষয়ের উপর আমার স্টাডি ছিল তাই ভাবলাম এটা নিয়েই থিসিস করি, যেন তার কাজটাকে আমি অন্তত শেষ করতে পারি।”
“তোমার বাবা কি করেন?”
“বাবা, রোবটিক্স সায়েন্টিস্ট। রোবট সাইকোলজি নিয়ে কাজ করছেন।” একটু থেমে আবার জিজ্ঞেস করল ভিনেল, “তোমার পরিবারে কে কে আছে?”
“আমার পরিবার নেই। আমি একা থাকি।”
“……দুঃখিত, আমি জানতাম না।”
“দুঃখ পাওয়ার কিছু নেই। আসো কাজ শুরু করি।”
“হুম…” বলে সে রাতের মত কাজ শুরু করল তারা। টানা ছয় ঘন্টা কাজ করে ভিনেল চলে গেলেও আসিমো কাজ করতে লাগলো। তার চোখে কোন ক্লান্তি নেই।

সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ৩:০৬
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×