somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সেলফোট্রন

২৭ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ৮:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[পর্ব – ২]

থিসিসের প্রাইমারি স্টাডির ফাইলগুলো নিয়ে সকালে তারা প্রোফেসরের সাথে দেখা করতে গেল একত্রেই। ভার্সিটির কাজ শেষ বের হতেই আসিমোর সাথে য়ারার দেখা হল। য়ারা চুপচাপ তার চোখের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। স্বাভাবিক ভাবেই আসিমো য়ারাকে জিজ্ঞেস করল, “তুমি কি কিছু বলতে চাও আমাকে?”
“কেন?” একটু রুক্ষ ভাবে জিজ্ঞেস করল সে।
“যেভাবে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছো, তাই মনে হল যে কিছু বলবে।”
“না, কিছু বলবো না।” য়ারা চোখে রাগ। একজনকে সে ভালোবাসা প্রকাশ করল, কিন্তু সাথে সাথে সে প্রত্যাখান হল। এর চেয়ে বেশি অপমানের কি আছে। যুগ যুগ ধরে মেয়েরা তাদের ইতিহাস অক্ষুন্ন রেখেছে যে, নিজ থেকে আগ বাড়িয়ে কখনও তাদের মনের কথা প্রকাশ করবে না, যদি প্রিয়জনকে হারাতেও হয়, তাও না। তাদের মনের প্রশ্ন, ছেলেরা তাদের মনের কথা বা আবেগ বুঝে না কেন?
“আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে যাই। পরে কথা হবে।” বলে তাকে পাশ কাটিয়ে আসিমো চলে গেল। আবারো প্রত্যাখিত হল য়ারা। সে মেনে মনে ভাবছিল যে, আসিমো তার সাথে বসে কিছু সময় কথা বলবে। গতকালের বিষয়টা নিয়ে বিবেচনা করে তার ভালোবাসার পক্ষে সায় দিবে। কিন্তু আসিমো যে চলে যাচ্ছে। তার মুখের স্বাভাবিক মুচকি হাসি ছাড়া আর কোন অভিব্যক্তির লক্ষণ নেই।
টিচার্স কমপাউন্ড থেকে বেরিয়ে লাইব্রেরীর দিকে গেল আসিমো। দিনটা সেখানেই থিসিস স্টাডি করে কাটাবে। ভিনেল চলে গেল বাড়িতে।
স্টাডি শেষ করে বের হতে হতে আসিমো’র সন্ধ্যা হয়ে গেল। লাইব্রেরীর ক্যান্টিন থেকে একটা ড্রিংস কিনে বাড়ির দিকে রওনা হল। কাধে ব্যাগ, হাতে ড্রিংস, মুখে মৃদু হাসির রেখা – আসিমো স্টেশনে এসে দাঁড়াতেই কিছুক্ষণের মধ্যে হাইপার গ্রাভ ট্রেন এসে থামলো। শূন্যে ভাসমান ট্রেন। স্পিড - কিলোমিটার প্রতি সেকেন্ড। শুরুতেই মৃদু একটা ঝাকুনি দিয়ে শুরু হয়, আর থামার সময় একটু ঝাকুনি। এছাড়া মাঝের সময় বাহিরে না তাকালে বুঝার সাধ্য নেই যে একটি ট্রেন এতটা গতিতে চলছে। এক মিনিটের বেশি সময় ট্রেনে থাকতে হয় না আন্তঃনগর ট্রেনগুলোতে।
হাতের ড্রিংস শেষ হতে হতে আসিমো তার এ্যাপার্টমেন্টে পৌছে গেল।
দুই দিন টানা খাটুনির পরও তার মুখে ক্লান্তির তেমন একটা ছাপ নেই। তবুও বিছানার দিকে তাকাতেই যেন তাকে কোন এক মায়ার মত টানতে লাগলো। খাটের সামনের মেঝেতে ব্যাগ ফেলে সোজা হয়ে বিছানায় পড়ল আসিমো। বিছানার নরম স্পর্শে চোখ বুজে এল যেন নিজের কোন নিয়ন্ত্রন ছাড়াই।
আসিমোর এ্যাপার্টমেন্ট খুবই ছোট। দু’টা রুম, একটা টয়লেট, একটা বারান্দা। বেডরুমের সাথেই স্টাডিরুম, অন্যভাবে বলা যায়, স্টাডিরুমের একপাশে ছোট একটা বিছানা, অন্য পাশে একটা সোফা, আর পড়ার টেবিলের পাশেই বারান্দায় যাওয়ার দরজা। অন্যরুমটা হচ্ছে কিচেন কাম ডাইনিং রুম। সেটার সাথেই টয়লেট যুক্ত। কিচেন ও ডাইনিং বেশ গুছানো হলেও স্টাডিরুম বেশ অগোছালো। যেখানে সেখানে বই পড়ে আছে। পড়ার টেবিলেও বইয়ের স্তুপ, আর তার মাঝেই একটা হলোগ্রাফিক কম্পিউটার। টেবিলের সামনের দেয়ালে বিশাল একটা কাচের হলোক্লিপ বোর্ড লাগানো।
রাত ১১টা।
হঠাৎ ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠল আসিমো। সেই পুরাতন ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন। দরদর করে ঘামছে তার শরীর। শ্বাস নিঃশ্বাসের বেগও বৃদ্ধি পেয়েছে। যখনই ঘুমায় তখনই এই একই দুঃস্বপ্ন দেখে সে।
“সে কোন একটা অপারেশন বেডে শুয়ে আছে। তার মুখ বরাবর অতি উজ্জ্বল লাইট জ্বলছে। বিছানার সাথে তার মাথা বা-দিকে মুখ করে বেধে রাখা হয়েছে। তাকে ঘিরে অনেকজন দাঁড়িয়ে আছে। সবাই সাদা পোশাক পড়া। তার কানের পিছনের কাটা হচ্ছে। তারপর মাকরসার মত কিলবিল করতে করতে সেখান দিয়ে কিছু একটা ঢুকে যাচ্ছে। আসিমো ভয়ে চিৎকার করতে চাচ্ছে কিন্তু পারছে না, তার সেই শক্তিটুকু নেই শরীরে। তারপর আবার তার চোখের সামনে কিলবিল করতে থাকার মাকরসার মত আরও একটা কিছু দেখে সে। ঢুকানোর জন্য নেয়া হচ্ছে………” ঠিক তখনই তার ঘুম ভেঙে যায়। চিৎকার করে উঠে বসে। হাতাতে থাকে কানের কাছে, যেন তাড়াতে হবে জিনিসটাকে।
কিছুক্ষন বসে থেকে উঠে যায়। কিচেন থেকে একগ্লাস পানি খায়। বারান্দায় দাঁড়িয়ে প্রশান্তির এক দীর্ঘশ্বাস নেয়। তখনই তার খেয়ালে আসে, দুঃস্বপ্নের বিষয়টা নিয়ে একটু স্টাডি করা দরকার। সাথে সাথে ঘরে ঢুকে বসে যায় কম্পিউটারের সামনে। একটার পর একটা আর্টিকেল পড়তে থাকে। হঠাৎ একটা নামে তার চোখ আটকে যায় “ড. ভিক্টর ফ্র্যাঙ্ক”, তার থিসিস পার্টনার ভিনেল ফ্র্যাঙ্কের বাবা। গতকাল রাতে তাদের বাড়িতেই ছিল সে। ভিনেলের কাছ থেকে জেনেছিল যে, তার বাবা রোবটা সাইকোলজি নিয়ে কাজ করে। মনে তার কৌতুহল তৈরি হয়। আগ্রহ নিয়ে পড়া শুরু করে ভিক্টর ফ্র্যাঙ্কের লিখা আর্টিকেল “হিউম্যান ড্রিম ইজ পাস্ট অর এ্যাক্সপেক্টিং ফিউচার”।
বিশাল বড় আর্টিকেল পড়তে পড়তে একটা মাঝের কিছু কথা তাকে বেশ চিন্তিত করে।
“………………আমরা যা স্বপ্ন দেখি তা আসলে কি? আমাদের অতীত নাকি প্রত্যাশিত ভবিষ্যত? অতীত হলে সেটা হচ্ছে, কোন দুর্ঘটনা বা কোন ভীতিকর স্মৃতি যা হয়তো আমরা সময়ে স্রোতে অবচেতন মনে ভুলে গেছি, যা সেই সময়ের ভয়কে আবার একটু করে মনে করিয়ে দেয়া, যেখানে আমাদের সচেতন মন সেটাকে ভুলে যেতে চেলেও অবচেতন মন ভুলতে দেয় না। তা স্বপ্ন হয়ে ফিরে এসে মনে করিয়ে দেয়।
আর যদি সেটা অতীতের কোন ঘটনা না হয়ে থাকে, তাহলে সেটা হচ্ছে, মনের সুপ্ত কোন বাসনা, কোন কিছু পাওয়ার। যেটা আমরা ভবিষ্যতে পাওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকি। যা আমাদের স্বপ্নে বাস্তব হয়ে দেখা দেয়। জাগ্রত অবস্থায় সচেতন মনে তা স্মরণে না থাকলেও ঘুমের অবচেতন মনে পাওয়ার সেই তীব্রতাই স্বপ্নে বাস্তবতার অনুভূতি দেয়। অনেক সময় এই বাস্তবতা আমাদের অপ্রিয় কিছু হলেও, সেটা আসলে আমাদের নিয়ন্ত্রনের বাহিরে অবচেতন মনের তীব্র বাসনা।…………” বেশ কয়েকবার পড়ল আসিমো আর্টিকেলটা।
তার মনে সাথে সাথে কিছু প্রশ্ন দেখা দিল-
“তাহলে কি আমার স্বপ্নের সাথে আমার অতীতের কোন সম্পর্ক আছে?”
“আমার অতীত?”
“আমি কে?”
“আমার জন্ম কিভাবে?”
“যে কোন বৈজ্ঞানিক উপায়ে শিশু জন্ম নিক না কেন, প্রকিয়ার জন্য বাবা-মা’র শুক্রাণু-ডিম্বানু লাগবেই। তাহলে আমার বাবা-মা কে?”
“আমার অতীত সম্পর্কেই বা আমি জানি না কেন? ভিনেল তো তার শৈশব সম্পর্কে সবকিছুই জানে।”
সিদ্ধান্ত নিল যত দ্রুত সম্ভব ভিনেলের বাবা ড. ভিক্টর ফ্র্যাঙ্কের সাথে দেখা করতে হবে। তিনি হয়তো কোন পথ দেখাতে পারবেন।

সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ৮:২৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×