অস্ত্র তো অনেকেই কিনতে পারে, তবে তা চালানোর জন্য সাহসের প্রয়োজন। প্রয়োজন মেধার, প্রয়োজন অভিজ্ঞতার, এবং বিচার করার। তেমনি সব ক্ষেত্রেই এ কথাটি মুল্যবান, আপনি যা করছেন, তা কি মানুষের ভালোর জন্য না ভাড়ামীর জন্য। এখন দেখা যায় বেশির ভাগ টিভি চ্যানেল থেকে টাকার কারনে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের বার করে দিয়ে, সেই টাকা দিয়ে অনভিজ্ঞ চার পাঁচ জন ফ্রেসার দিয়ে কাজ করানো হয়। যাদের অন্তত নিম্ন জ্ঞানটুকু থাকেনা, তারা কি করবে? আপনারা পাশের কোলকাতার দিকে তাকান, তাদের কর্মচারী মোট ৩০ থেকে ৫০ জন।আর বেশি হলে ৭০। তাদের দিয়ে কাজ করিয়েই লাভজনক হয়ে উঠছে তাদের প্রতিষ্ঠানগুলো। এখানে একজন মার্কেটিংয়ের লোক হয়ে যায় নিউজের কর্ণধার। একজন ব্যবসায়ীর হাতে ছেড়ে দেয়া হয় টিভি চ্যানেলগুলো। আর নিউজের ক্ষেত্রে এমনও দেখেছি, মালিকের দৈনিক কর্মসূচির ওপরও একজন রিপোর্টার, ক্যামেরা ম্যানকে রাখা হয়।
আপনি একবার টিভি স্ক্রিণ এর ওপর তাকান, দেখুন বিজ্ঞাপনের কি ছড়াছড়ি। কোলকাতার চ্যানেলগুলো দেখুন, কতটা ফ্রেস। এখানে খবরেও থাকে বিজ্ঞাপন, মাঝে মধ্যে তা আবার নিউজের ছবিটাকেও প্রায় ঢেকে দেয়। আর স্ক্রলের কথা কি বলবো, তিন স্তর বিশিষ্ট। আপনি খবর বা নাটক দেখবেন, না স্ক্রল দেখবেন ? মাথা মোটা লোক দিয়ে কি জাতীর ভবিষ্যত গড়া সম্ভব। এখানের সব টিভি চ্যানেলগুলোর মালিক ব্যবসায়ী, তাই সব চ্যানেলেই টাকা পয়সা তো বাড়ায়ই না, আবার বেতনের ধির গতি বিদ্যমান। এমনও হয় মাঝে মধ্যে, দু থেকে ছয় মাস পর্যন্তও দেরি হয় বেতন দিতে । সংবাদের গ্রহন যোগ্যতা যে থাকবে তারও তেমন কোনো অবকাশ নেই। কারণ মালিক ও তার সুযোগ সুবিধাবাহী আজ্ঞাবহ সংবাদকর্মী ও প্রগ্রামকর্মীদের দারা তৈরি হয়, যা সবার গ্রহন যোগ্যতা পায়না বলেই মনে করি। ইতো মধ্যে বাংলাদেশের অনেক বিজ্ঞাপনতো ভারতের টিভি চ্যানেলে প্রচারিত হচ্ছে। এমনও দিন আসবে যখন আর বাংলাদেশের জন্য বিজ্ঞাপন তৈরি হবেনা। সবার জন্য নিয়ম থাকলেও এসব মিডিয়ার জন্য কোনো নীতিমালা নেই। আর যখন তখন ছাটাই তো আছেই। আপনি নিজেও জানবেন না, আগামী কাল যখন সময় মত অফিসে যাচ্ছেন, গেট থেকে জানানো হলো আপনার চাকরী নেই। আপনি প্রতিবাদ করার সময়টুকুও পাবেন না। প্রশ্ন করলে বলা হবে, উপরের নির্দেশ, সেই উপরটা যে কোন তলায় অবস্থিত, তা আপনি ইহ জন্মেও খুঁজে পাবেন না। আপনারা যারা মিডিয়ার বাইরে, তারা বুঝতেই পারবেন না মিডিয়া কর্মীদের সাথে কি ঘটনা ঘটে চলছে অহরহ। এর মধ্যে একজন মিডিয়া কর্মীর একটা প্রতিবেদনে দেখলাম, তিনি লিখেছেন, গার্মেন্টস কর্মীদের নালিশ করার জায়গা আছে, সংবাদ কর্মী বা মিডিয়া কর্মীদের তা নেই। আমি নতুন প্রজন্ম সহ অনেককেই জিজ্ঞাসা করি বাংলাদেশের মিডিয়া সম্পর্কে, তাদের উত্তরটা হয়, দেখিনা। কবে দেখেছে, তাও মনে করতে পারবেনা। এমনকি বেশিরভাগ অভিনেতা-নেত্রীকে তারা চেনেও না। আর সংবাদ কর্মীদের নামও বলতে পারেনা। সেই ২১শে টেলিভিশনের মুন্নি সাহা, জই মামুন, নাজমুল আশরাফ, ডালিম,সুপন রায় ছাড়া আর কাউকেই চেনেনা। চিনবে কি করে, টিভির রিমোর্টের বাটমে বাংলাদেশী চ্যানেল থাকলেও কোনো অনুষ্ঠান এখন আর দর্শকের চোখ ছুঁয়ে যায়না। একটু আশে পাশে চোখ মেলে তাকালেই বুঝতে পারবেন। বেশি দুর যেতে হবেনা। মিডিয়ার এই দূর্দিনে এখনও সময় আছে, আপনারা দয়া করে অভিজ্ঞতার মুল্যটুকু খুঁজুন না হলে বাংলাদেশের মিডিয়া বলতে কিছুই থাকবেনা। দেখছেন না কেমন ধস নেমেছ, চলচ্চিত্র, নাটক, অডিও শিল্পে । চোখের সামনে আপনাদেরও পতন দেখতে হবে আগামীতে। অতএব সাধু সাবধান।