বিদ্যুতের খুঁটিতে(পিলারে) এক শিশুকে বেঁধে রাখা হয়েছে। শিশুটার বয়স কত আর হবে? এই সাত কি আট বছর
অথচ এই শিশুটার গায়ে স্কুলের ইউনিফর্ম থাকার কথা। তার কাঁধে থাকার কথা স্কুলের ব্যাগ। বাবার হাত ধরে তার স্কুলে আসার কথা। স্কুল প্রাঙ্গণে খেলাধুলায় তার সময় কাটানোর কথা....
খাতায় আঁকিবুঁকি করে তার দিনগুলো পেরোনোর কথা। মায়ের কোলে মাথা রেখে তার ঘুমানোর কথা...
একটা স্বপ্নের মতো তার শৈশবটা সোনালি হওয়ার কথা ছিল...।কিন্তু..? কিন্তু এই ঘুণে খাওয়া সমাজ তাঁকে সোনালি শৈশবের বদলে উপহার দিয়েছে ক্ষুধার জ্বালা, তাঁকে শিখিয়েছে কিভাবে পেটের জন্য দু মুটো ভাতের যোগাড় করতে হয়।
শিশুটার হাতে খাতা কলম না দিয়ে, বিদ্যা উপহার না দিয়ে, তাঁকে দিয়েছে চুরি বিদ্যা...
শিশুটার হাত পা বাঁধা। তার করুণ মায়াবী চেহারা। দেখলেই মানুষের পাথর মনও মোমের মত গলে যাবার কথা। অথচ গলছে না একদল মানুষের মন। না তারা মানুষ হতে পারে না। তারা নরপশু। মানুষের মুখোশ পড়া একদল হায়েনারা শিশুটাকে লাঠি দিয়ে মারছে তো মারতেই আছে। আর উৎসুক জনতা এই দৃশ্য এমনভাবে ঘিরে আছে যেন কোন ম্যাজিশিয়ান ম্যাজিক দেখাচ্ছে। তারা চেয়ে চেয়ে দেখছে শিশুটার বুকফাটা কান্না। দেখছে শিশুটার বেঁচে থাকার আকুলতা।
শুধু তাই নয়... হায়েনারা শিশুটাকে মারতে মারতে এক সময় তার দেহ থেকে প্রাণটাই কেঁড়ে নিল। এই মৃত্যুর দৃশ্যটাও উৎসুক জনতাকে দেখতে হল।
সেদিন যখন শিশুটাকে হত্যার ভিডিও দেখি শরীরের প্রতিটা লোম দাঁড়িয়ে গিয়েছিল... ইচ্ছে হয়েছিল সব কয়টা জানোয়ারকে মেরে কুকুর দিয়ে তাঁদের মাংস খাওয়ায়।
এটা রাজনের হত্যার ঘটনা।এরপর সাগর, রাকিবদের তো আরো বর্বরোচিতভাবে হত্যা করা হয়। পায়ু পথ নল দিয়ে বাতাস ঢুকিয়ে....
আল্লাহ্...
সেদিন একটা কবিতা লিখেছিলাম। আজ সেটাই শেয়ার করলাম।
..
এমপি মন্ত্রী করলে চুরি পুলিশ থাকে প্রহরী
পথ-শিশু করলে চুরি খেতে হয় লাঠির বারি
এমপি মন্ত্রী চুরি করে টাকার উপরে ঘুমাতে
দেব-শিশু চুরি করে প্রাণটা তাহার বাচাঁতে
......
চুরির দায়ে অবুঝ শিশুর হাতে পায়ে
শেকল পড়িয়ে আঘাত করে সারা গা'য়ে
মার খেতে খেতে যায় ভাঙ্গে শিশুর হাঁড়
মায়া লাগেনা তবু ঐ পশু হারামজাদার
........
মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এলে
মায়ার সুরে দেবশিশু কেদেঁ বলে
"অ ভাই আমারে এক গলাস পানি দেওরেবা, আমার গলা হুকায় গেছে"
"নে ঘাম খা" বলে শালা নরপিশাচের বাচ্চা তারে ঘাম দিয়েছে।"
কাঁদিতে কাঁদিতে চাইল পানি, বিনিময়ে পেল ঘাম
আজো এই সমাজে গরিবের নাইরে কোন দাম।
......
সেদিন ঐ ছোট্ট শিশু রাজন
চুরির দায়ে মুল্য দিল জিবন
হাপাঁতে হাপাঁতে পানির তৃষ্ণায়, ছটফট করতে করতে
আজিকে আবার সাগর মরল ঐ নরপশুদেরই হাতে
আর কতজন মরতে হবে সাগর,রাজন,রাকিব?
আর কতকাল মরতে হবে জনম দুঃখী গরিব?
......
উপর দিয়ে মানুষের বেশ, ভিতরদেশে পশু
তাইতো তারা দ্বিধা করেনা হত্যা করতে শিশু
হায়রে মানুষরূপী পশু!!
ওয়াক থু থু.....
এসব পশুদের উপর ওয়াক থু থু.....
.....
হাজার হাজার রাজনরা অকাতরে দিচ্ছে প্রাণ
কোথায় আজ মানবতা, মানবতার জয়গান?
মানবতা উতলাইয়া প'রে ধনীদের কিছু হলে
মানবতা ঘুমাইয়া থাকে গরিবদের জিবন গেলে
হায়রে মানবতা!!!
ওয়াক থু থু.....
এসব মানবতার উপর ওয়াক থু থু.......
------ আকতার আর হোসাইন।
হিন্দু কি মুসলিম, বৌদ্ধ কি খ্রিস্টান প্রতিটা শিশুরই বেড়ে উঠা হোক আনন্দে উল্লাসে, তাঁদের জীবন হোক স্বপ্নের মত রঙিন। মহান আল্লাহর কাছে সেই প্রার্থনা করি।আমিন।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ২:৫৪