ভরা মজলিশ কাঁপিয়ে হেঁইচ্চো করে হাঁচি দিলেন জুয়েল সাহেব। পাশে বসা সহকর্মী সালমা বেগম বললেন, ‘মুখে হাত দিয়ে হাঁচি দিতে হয় জুয়েল সাহেব।’ জুয়েল সাহেব বিজ্ঞের মতো বললেন, আমি জানি। ভালো কথা আপনি জানেন, কিন্তু জেনে আর কী লাভ হলো বলুন?
জানা বিষয় তো আর নাইওর যাওয়ার শাড়ি নয় যে লোহার বাক্সে সযত্নে উঠিয়ে রাখতে হবে। এমন নানারকম খুব ছোট ছোট কাজ করি আমরা, যা একটু সচেতন হলেই এড়ানো সম্ভব। পথেঘাটে যেখানে সেখানে থুথু ফেলি, নাকের সর্দি ফেলি কিন্তু এই সামান্য অসচেতনতা থেকে হাজার রোগের জীবাণু ছড়িয়ে দিই সবার মাঝে। আবার জনসমক্ষে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়াও একটা অনেক জানা মানুষের অজানা খামখেয়ালিপনা। নিজে তো ধ্বংস হচ্ছেনই, পাশাপাশি আরও অনেককে ঠেলে দিচ্ছেন অনিশ্চিত ধ্বংসের দিকে। এমনি হাজারো বিষয়েই আমাদের জ্ঞান রয়েছে, কিন্তু সেই জ্ঞানের প্রতিফলন ঘটানো হয়ে ওঠে না। এ তো গেল প্রাত্যহিক জীবনযাত্রার কথা। অনেক নীতিকথা আমরা হরহামেশাই বিজ্ঞের মতো বলি, কিন্তু তা মেনে চলার কোনো চেষ্টা করি না। তেমনি মানুষের ছোট্ট আয়ুষ্কালের জীবনে আমরা অনেক কিছুই জানি, তবে যা কিছু জানি তা মেনে চলি কি? চলি না। এই যেমন সবাই জানি, মিথ্যা বলা মহাপাপ, ছোটবেলায় কমপক্ষে ৫০ বার পড়েনি এমন শিক্ষিত জন পাওয়া দুরূহ। কিন্তু ক’জন মানি এই বাক্যটা। হরহামেশা মিথ্যা বলতে একটুও ভাবি না, মিথ্যা বলা মহাপাপ। অনেক নীতিবাক্য আমরা জানি, সচরাচর ব্যবহার করি তবে কথায় বেশি, কাজে কম। আবার অনেক আগে জানতাম এখন ভুলে গেছি। তবে মনে পড়লে মানতে দোষ কি? ঠিক তেমনি কিছু খুব জানা কথা নতুন ভাবে, নতুন করে মনে করিয়ে দেয়ার সামান্য প্রয়াস।
* মিথ্যা বলা মহাপাপ।
* আত্মহত্যা করা মহাপাপ।
*. ঘুষ দেয়া ও নেয়া সমান অপরাধ।
* কুৎসা ও কান কথা থেকে দূরে থাকুন।
* রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন।
* তুচ্ছ বিষয়ে বিতর্ক এড়িয়ে চলুন।
* অতিথিকে বিদায় দেয়ার সময় দরজা পর্যন্ত এগিয়ে যান।
* নিজের ভুল স্বীকার করার মতো সাহসী হোন।
* রাগান্বিত অবস্থায় কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না।
* অন্যের কাছে যে ব্যবহার প্রত্যাশা করেন, আগে নিজে সে আচরণ করুন।
উপরে বর্ণিত দশটি বাক্যই আমরা বহুবার শুনেছি। কিন্তু এর ভেতরের পাঁচটি বাক্য অনুসারেও কি জীবন পরিচালিত করি?
করি না। কিংবা করি। যদি করি তাহলে তো খুব ভালো, কিন্তু যদি না করি তাহলে এখন থেকে করব—এটা তো ভাবতে পারি। ভাবনাই নাকি কাজকে অর্ধেক সফল করে তোলে। তাহলে মানি বা না মানি, ভাবতে তো দোষ নেই, অন্তত অর্ধেকটা করি। বাকি অর্ধেক আপনার ভাবনাই আপনাকে বাধ্য করাবে করতে। কীভাবে? একবার ভেবেই দেখুন না, ভাবনা কীভাবে আপনার অর্ধেক কাজ পূর্ণাঙ্গ করে দেয়। তাই আজ থেকেই যা জানি তার আংশিক হলেও মেনে চলার চেষ্টা করি, তাহলে জীবনটা সুন্দর থেকে সুন্দরতর হয়ে উঠবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৮:৫৯