somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বউ কে নিয়ে সমস্যায় পড়েছি - কি করি বলুন তো

১৮ ই মে, ২০১৪ রাত ১১:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গত মাসের মাঝামাঝি বউ জানাল প্রতিদিন তাকে ১০০ টাকা করে দিতে হবে, স্বভাবের বাইরে যেতে পারলাম না তাই প্রশ্ন করা হল না কেন? আমি 'কেন' টা জানতেই চাই না। মুখের দিকে তাকালাম, এমনই হয়ত।
প্রতিদিন নয়, যেদিন তুমি অফিসে যাবা সেইদিন সেইদিন। অফিস অফ তো টাকা বন্ধ।
মুখ নামিয়ে নিউজ পেপারের দিকে মনযোগ দিলাম, কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে 'আরিত্রিকা'। ও হ্যা, আরিত্রিকা আমার বউয়ের নাম। এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে কিছুক্ষণ আমি জানি। আমি জানি আমার স্বভাব অনুযায়ী আমি কিছুই বলব না। এতো দিনেও মেয়েটা বুঝল না, বোঝে, হয়ত অন্য কিছু।

কিভাবে আমি ১০০ টাকা দেব? বেতন যা পাই বাড়ী ভাড়া, সংসার খরচ, টুকিটাকি করে কিছু থাকে না বলতে গেলে। নিজের জন্য তেমন কোন খরচ নাই। অতিরিক্ত খরচের মধ্যে রয়েছে ছোট কিছু শখ পুরন করা। তাও তেমন কিছু না, স্যালারি পেয়ে মাসের প্রথমে আরিত্রিকাকে সাথে নিয়ে নিউ মার্কেট থেকে একটা করে গল্পের বই কেনা। বাজেট ৩০০ টাকা, খুব মেরে কেটে হলে ৩৫০ টাকা। ৩০০ টাকার কম হলে আরো ভালো। সেই ২০০০ সাল থেকে প্রতি মাসে ১ টা করে বই কিনি। শুধু মাত্র বই মেলা আসলে আমার খরচ বাড়ে। ১৫০০ টাকা। বই লিস্ট রেখে দেই, সারা বছর ধরে কিনি। দুইটা নিউজ পেপার নিই, বংলা, ইংরেজী বিল ৪৫০+ টাকার মত আসে। অফিসে লাঞ্চ ৩০/৩৫ টাকার বেশি হয় না। রুটি সবজির পার্টি, চা। সিগারেট ৩/৪টা। বাসা থেকে বাস স্টান্ড, সেখান থেকে অফিস, অফিস থেকে বাসা, এই তো। সবই তো জানে সে। কোথা থেকে কাট করব খরচ?

অফিসে যাবার সময় দেখি হাতে ছোট একটা বক্স, ১/২ লিটার আইসক্রিমের বক্স থেকে একটু বড়, চ্যাপ্টা। তাকালাম, দ্বিধাভরা মুখ, এক টুকরো হাসি দিয়ে বললো
খাবার আছে, তোমার ব্যাগে অনায়াসে ধরে যাবে, দুপুরের জন্য।
প্রায় ৭ বছর ধরে এই অফিসে যাই, কোন দিন খাবার নেই নি। ঔ তো ৫ বছর ধরে আছে। তাকিয়ে থাকলাম, মুখে ক্লান্তি ভরা, এই খাবার বানাতে যেয়ে হয়ত। তাকিয়েই থাকলাম।
বড্ড বিব্রত সে।
তুমি নিতে পারো
নিলাম, ব্যাগে রেখে ১০০ টাকা পকেট থেকে বের করে দিলাম।

গত ১ মাস ধরে আমি হেটে বাস স্টান্ড যাই আসি, ব্যাগে খাবারের বক্স টাও থাকে। সিগারেট ১/২ টায় নেমে এসেছে। ১০০ টাকা করে দিয়ে গেছি।

আজ বিকালে অফিস থেকে একটু আগে বের হব ভাবছি এমন সময় আরিত্রিকার ফোন, আমি কি আজ অফিস থেকে আগে আসতে পারব কিনা জানতে চায়, বললাম না।
আচ্ছা।

ফোন রাখার পরেই মনে হল পারতাম তো, কেন না বললাম? কি জানি!

সাধারণত আমি বাসায় ফিরি রাত ৯ টার একটু আগে, বাস থেকে নামার পরে খুব চা খেতে ইচ্ছা করল, বাসায় বললে সাথে সাথে চা পাওয়া যাবে জেনেও দোকানের চা খেতে ইচ্ছা করল। বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত সাড়ে ৯টা।

যথা নিয়মে বেল চাপলে ও দরজা খোলে, ঘরে ডুকতেই মনে হলো আরিত্রিকা একটু খুড়িয়ে হাটছে,

কি হইছে তোমার?
নিউমার্কেটে গিয়েছিলাম, আসার সময় বাসে উঠতে যেয়ে একটু লেগেছে।

বছরে একবার দুইবার সে একা বের হয়, বললাম
রিকশায় যাতায়াত করতে পারতে।
আমার কথায় ম্লান একটা হাসি উপহার দিল যার অর্থ রিকশায় যাতায়াত আমাদের জন্য বিলাসিতা।

আমি এখন আমার টেবিলে বসে ব্লগে লিখছি, আমার টেবিলের একটা বই রাখা, বইটার নাম The Cambridge Encyclopedia of Stars
by
James B. Kaler

কোন একদিন বই কিনতে যেয়ে নিউমার্কেটে একটা দোকানে বইটা দেখেছিলাম, সেকেন্ড হ্যান্ড বই তাও দাম ৩ হাজার টাকা। আরিত্রিকা কে বলেছিলাম সারা জীবনেও আমি এই বইটা কিনতে পারব না।

বই টা এখন আমার সামনে। চোখে ভাসছে গত একমাসের ১০০ টাকার হিসাব, বাসে উঠতে যা্ওয়া রমণীর হাতে একটা বইয়ের ব্যাগ, হয়ত অদ্ভুত ভালোবাসায় আকড়ে আছে

আরিত্রিকা ঘুমাচ্ছে পাশে বিছানায়। বাচ্চাদের মত ঘুমায়, জড়সড় হয়ে। আর একটা অপরাধ বোধ কেন জানি আমাকে কুরে কুরে খাচ্ছে।

কি যে করব বুঝতেছি না



সর্বশেষ এডিট : ২১ শে অক্টোবর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১০
৬৪টি মন্তব্য ৬৩টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×