somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কান্ডারি অথর্ব
আমি আঁধারে তামাশায় ঘেরা জীবন দেখেছি, আমার বুকের ভেতর শূণ্যতা থেকে শূণ্যরা এসে বাসা বেঁধেছে, আমি খুঁজেছি তোমাকে সেই আঁধারে আমার মনের যত রঙ্গলীলা; আজ সাঙ্গ হতেছে এই ভবের বাজারে।

বায়োনিক

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





Please Sir accept the request from Wave 100 gm of 2^33 Bit Video Massage to your Cornea.

Thanks already decoded here.

বেণু তার আজকের সারাদিনের দৃষ্টিতে ধারনকৃত কিছু দৃশ্য আমার কর্নিয়াতে পাঠিয়েছে। বেণুর কর্নিয়া সারাদিন যেসব দৃশ্য দেখেছে সেখান থেকে কিছু দৃশ্য; মস্তিষ্কে ইন্সটলকৃত প্রোগ্রাম, এডিট করে বাইনারী ডিজিটে এনকোড করে ওয়েভে সিগন্যাল পাঠিয়েছে। আমার কর্নিয়া সেই বাইনারী আকারে পাঠানো ভিডিও ম্যাসেজটি ডিকোড করে দেখছে। আমি যে গ্রহে আছি সেখানকার ওয়েভ, হান্ড্রেড জি এম হিসেবে সনাক্ত করা হয়ে থাকে।

বেণু ভীষণ কষ্টে জীবন যাপন করছে। ওর কেনা পানিও শেষ হয়ে এসেছে। খুব দ্রুত টাকা পাঠাতে হবে ওর ডেবিট কার্ডে। পানি কিনতে হবে। এখন আর ওর ট্রাকের পেছনে লাইন ধরে দাড়িয়ে পানি কেনার মত শক্তি নেই। প্ল্যানেট গ্রাফাইটের সিটিজেনশীপ পেলেই ওদের এখানে আনার দ্রুত ব্যবস্থা করতে হবে। বাড়ির ছাদের উপর আমার একমাত্র ছেলেটি খুব শখ করে ম্যানগ্রোভ লাগিয়েছে। দেশে ম্যানগ্রোভ বন ধ্বংস হয়ে যাবার পর এখন এটি একটি শখে পরিনত হয়েছে। বেশির ভাগ মানুষ নিতান্তই শখ থেকে বাড়ির ছাদে ম্যানগ্রোভ চাষ করে। আমার ছেলেও ওদের স্কুলের বন্ধুদের কাছ থেকে শুনে ওর মায়ের কাছে বায়না ধরে ম্যানগ্রোভ কিনিয়েছে। বেণু একহাজার টাকা দিয়ে খুব সস্তায় একটি ম্যানগ্রোভ কিনে দিয়েছে ছেলেকে। রাস্তায় নাকি এক ফেরিওয়ালা বিক্রি করছিলো। সাথে আবার এক কেজি লবণও ফ্রিতে পেয়ে বেণু দারুণ খুশি হয়েছে। আমার ছেলেটিও বেশ আমার মতই একরোখা হয়েছে। একবার যেটা মাথায় আসবে সেটা না হওয়া পর্যন্ত এক মুহূর্তের জন্যও স্থির থাকবেনা। এখন ম্যানগ্রোভ নিয়ে তার সারাদিনের ব্যস্ততা। বেণুরও আসলে কিছু করার থাকেনা। আমার অভাব বুঝতে নাদেয়ার জন্যই এক বাক্যে ছেলের সকল বায়না মেনে নিতে হয় বেণুকে। তার উপর ওকে একাই সংসার সামলাতে হয়। বেণুকে আজ অনেক দিন পর দেখলাম। চেহারায় বয়সের ছাপ পরেছে। সারাদিন শুধু পানির জন্য ট্রাকের পেছনে লাইন ধরে দাড়িয়ে থাকতে থাকতে যে পরিমান কষ্ট ওকে করতে হয়, সত্যি অমানবিক পরিশ্রমের একটি কাজ।

আমি তখন দেশে থাকি। কত কষ্ট করেই না প্রতিদিন অফিসে যেতে হতো। অফিস থেকে বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত প্রায় বারোটা বেজে যেতো। তারপর আবার ভোর রাতে বাস কাউন্টারে যেয়ে লাইনে দাড়িয়ে টিকেট কাটতে হতো। এত লম্বা লাইন হতো যে বাসের ছাদে স্ট্যান্ডিং টিকেট পেয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হতো। রাস্তায় সারি বদ্ধ হয়ে বাসগুলো দাড়িয়ে থাকত। তারপর একবাসের ছাদ হতে অন্যবাসের ছাদের উপর দিয়ে হেটেই অফিসে যেতে হতো । রাস্তা দিয়ে হেটে যাওয়া সম্ভব ছিলোনা। সেখানে ফুটপাথ দখল করে রাখতো পানি আর বিদ্যুৎ ফেরিওয়ালারা। লিটার প্রতি পানির মূল্য ছিলো একহাজার টাকা আর এক ইউনিট বিদ্যুৎ এর মূল্য ছিলো পাঁচশ টাকা। অথচ আমি প্ল্যানেট গ্রাফাইটে আসার এতদিন পরেও দেশের অবস্থার কোন উন্নতি হয়নি। বরং দিন দিন দুঃসহ হয়ে উঠেছে জীবন ধারন করা।

এইতো আজ হতে বছর পাঁচ আগের কাহিনী। আমি তখন দেশেই ছোট একটা ব্যাবসা করতাম। আমাদের দেশ তখন আমদানীতে স্বয়ং সম্পূর্ণ একটি দেশ। সামান্য শৌচ কর্মের পানিও আমাদের আমদানী করতে হত। আমি সেই সময় পানি আমদানী করার একটি লাইসেন্স কিনেছিলাম খুব সস্তায় মাত্র চার কোটি টাকা দিয়ে। তখন আমি পানি বিক্রি করতাম লিটার প্রতি একহাজার টাকা করে। পানির তখন দুটি ভাগ ছিলো। খাবার পানির মূল্য নিত্য ব্যবহার্য পানির চেয়ে কিছুটা দামী ছিলো। লিটার প্রতি পাঁচশ টাকা ভেরী করত। কিন্তু এখন আর সেই ব্যাবস্থা টুকুও নেই। খাবার পানি আলাদা করে বিক্রি করা হয়না। যাই হোক মঞ্জু নামে আমার অফিসে এক পিয়ন ছিলো। প্রকৃত আদর্শ বান বলতে যা বোঝায় তার সবগুনই তার মধ্যে বিদ্যমান ছিলো। আমি রোজই বাসায় ফেরার আগে কিছু পানি নিয়ে যেতাম স্টক হতে কিন্তু আমাকে বাঁধা দিত মঞ্জু। বলত স্যার আপনার নিজের কোম্পানি হলেও দেশের মানুষের জন্য একটু হলেও বিবেক বোধ আপনার থাকা উচিত। আপনি নাহয় ফ্রি পানি ব্যবহার করছেন। কিন্তু একটি বার ভেবে দেখুন যারা রাতদিন এক করে কত শ্রম আর টাকার বিনিময়ে সামান্য কিছু পানি পেয়ে কত কষ্টেই না জীবন ধারন করছে। একদিন এমন কষ্ট আপনার পরিবারেরও হতে পারে। আমি তখন মঞ্জুকে ধমক দিয়ে বলতাম এত নীতি কথা আমার সাথে বলিস না। নিজে বাঁচলে বাপের নাম। জানিস না। আমার আমাদানী কৃত পানি আমি নিবোনাত কে নেবে ? নিজে পানির ব্যাবসা করে যদি এতটুকু সুযোগ না নেই তাহলে কিভাবে হবে ? কিন্তু মঞ্জুর সেই অভিশাপ আমার জীবনে খুব ভালো ভাবেই লেগেছিলো। আমি ক্রমাগত ব্যাবসায় লস করতে থাকি। আমার পাশাপাশি আরও অনেকেই ততদিনে পানি আমদানী শুরু করে দিয়েছিলো। আমার চেয়ে অনেক কম মূল্যেই তারা পানি দিত। এরপর এমন অবস্থা হল যে ব্যাংক হতে ঋণ নিয়ে প্রায় দেউলিয়া হবার উপক্রম হতে হলো। এমন সময় প্ল্যানেট গ্রাফাইটে একটি চাকরীর বিজ্ঞাপন দেখে এপ্লাই করি। চাকরীটা আমার হয়েও যায় আইটির কাজ জানি বলে। ব্যাস তারপর থেকে এখানেই পরে আছি। হয়ত আর কিছুদিন গেলে এখানকার সিটিজেনশীপ পেয়ে যাবো। তারপর বেণু আর সিফাতকে এখানে এনে নিজের কাছে রাখতে পারবো। আমাদের আর কোন কষ্টই তখন থাকবেনা।

পৃথিবী বসবাসের জন্য এতটাই ঘনবসতিপূর্ণ হয়ে পরেছে যে মানুষ এখন সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহ গুলোতেও বসবাস করা শুরু করে দিয়েছে। তেমনই এক গ্রহ এই প্ল্যানেট গ্রাফাইট। চারিদিকে লাল রঙের সমতল ভূমি। কোথাও কোথাও কৃত্রিম উপায়ে গাছ লাগানো হয়েছে। চাষাবাদ ও গবাদী পশু পালনের জন্য কসমিক রে ব্যবহার করে প্রানী আর উদ্ভিদের DNA ও RNA স্ট্রাকচার সহ ক্রোমোজোমের বিভাজনে ফাংশন গত পরিবর্তন আনা হয়েছে। এখানে হাইড্রোজেন আর অক্সিজেনের আধিক্যের কারনে কৃত্রিম ভাবে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে একটি বড় আকারের দীঘি সৃষ্টি করা সম্ভব হয়েছে। এই দীঘি হতে পুরো গ্রহের পানির চাহিদা মেটানো হয়।

আমার কোম্পানি হতে আমার দেখাশোনা করার জন্য একটি বায়োনিক জাইনয়েডকে নিয়োগ করা হয়েছে। নাম মেলিসা। দেখলে মনেই হবেনা যে মেয়েটি মানুষ নয় একটি রোবট। রোবট বলে যে তাকে অবজ্ঞা করব তেমন সাহস আমার নেই বরং অনেক ক্ষেত্রে আমার চেয়ে অধিক পরিমান তীক্ষ্ণ জ্ঞান সম্পন্ন একটি জাইনয়েড এই মেলিসা। মেলিসার সাথে আমার একাকীত্বের এই প্ল্যানেট গ্রাফাইটের জীবন বেশ সুন্দর কেটে যায়। মাঝে মাঝে আমার লেখা কবিতাগুলো ওকে পড়ে শুনাই। খুব আবেগ নিয়ে আমার সেই কবিতা আবৃত্তি শুনে যায় মেলিসা। মাঝে মাঝে কাজে এতই মগ্ন হয়ে থাকতে হয় যে খাবারের কথা ভুলে যাই। কিন্তু মেলিসা আমার জন্য খাবার নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। অদ্ভুত এক মায়ায় জড়িয়ে ফেলেছে মেলিসা আমাকে। মেলিসার কথা বেণুকে জানানো হয়নি। জানলে হয়ত আমাকে ভুল বুঝতে পারে। ভাবছি একদিন বলেই দিবো মেলিসার কথা। হয়ত মেলিসা যে একটি রোবট এটা জানলে আমাকে অন্তত পক্ষে ভুল বুঝবেনা।

মেলিসাকে বেশ উদাস লাগছে। কর্নিয়ার ভিজুয়ালাইজেশন সিক্স ডি এক্টিভ করলাম। সেন্সর সিগন্যাল দিচ্ছে গ্রাফাইট সেক্টর নাইনে একটি মন্দির ভেঙে ফেলা হয়েছে। মেলিসার বাবাকে কিডন্যাপ করা হয়েছে। মেলিসার বাবা সেই মন্দিরের প্রধান গার্ড হিসেবে কাজ করেন। মন্দিরের মূর্তিটিও চুরি করে নিয়েছে। নাহ ইদানীং ইনকাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বেশ বেড়ে গেছে। ওদের উপযুক্ত শিক্ষা দেয়া প্রয়োজন। ইনকা হলো এখানকার সবচেয়ে নীচু শ্রেণীর জাতি। পুঁজিবাদী গ্রাফাইট ওদেরকে দরিদ্র করে রেখেছে। বেঁচে থাকার তাগিদে তাইত ওরা বেছে নিয়েছে এমন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড। কিন্তু গ্রাফাইটের জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে হলেও ওদেরকে দমন করতে হবে। আমি মেলিসার সেন্সরে ডাটা পাঠিয়ে দিলাম যেন এই নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে। ওর বাবাকে আমি উদ্ধার করব। মেলিসার সেন্সর নীরব। বুঝলাম এখন আর কোন ডাটাই ও পাঠাবেনা যতক্ষণ ওর বাবাকে ছাড়িয়ে আনার কোন ব্যাবস্থা না করা হয়।

Hexa forces please get all the site location that I am sending to you. Its emergency please tries to find out Inka criminal alive.

ম্যাসেজটি পাঠিয়ে সাথে সম্ভাব্য কিছু আইডেন্টিটি ম্যাপ পাঠালাম হেক্সা ফোরসের ওয়েবে। এই সাইট লোকেশন গুলো এমন যে, কেউ লুকিয়ে থাকলে খুব দ্রুত ভিডিও ডাটা নিয়ে কাজ করতে পারে। দুই ঘণ্টার মধ্যে ইনকাদের একটি দল গ্রেপ্তার হলো হেক্সা ফোরসের কাছে। বিষয়টি এত দ্রুত ঘটে যাবে ইনাকারাও কল্পনা করতে পারেনি। ওদের কর্নিয়ার সেন্সর এতটা তীক্ষ্ণ নয়। দারিদ্রতার কারনে খুব নিম্ন মানের সেন্সর ব্যবহার করেই ওদের সন্তুষ্ট থাকতে হয়। আর এই সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছে হেক্সা। কসমিক রে দিয়ে তৈরি আইসিসের মূর্তিটি এত সুন্দর দেখতে যে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়া অসম্ভব। সূর্য থেকে বিকিরিত কসমিক রেগুলোকে ফিলামেন্টে ধারন করে কাজটি করা হয়েছে। এরজন্য প্রতি সেঞ্চুরিতে 100 EeV প্রতি স্কয়ার কিলোমিটারে শক্তি সম্পন্ন এবং কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড বিকিরিত কসমিক রে ফ্লাক্স ঘনত্ব ~ 0.25 eV/cm3 সম্পন্ন শক্তি দিয়ে ফিলামেন্টে ধারন করে অত্যন্ত নিখুঁত ভাবে মূর্তিটি তৈরি করা হয়েছে। হেক্সার কল্যানে অখ্যত অবস্থায় মূর্তিটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। হঠাত মেলিসার ঠোঁটের সেন্সর থেকে ডাটা এলো আমার ব্রেনের সাথে যুক্ত করে রাখা মাইক্রো র‍্যামে। সেই ডাটা সিগন্যাল আমার ঠোঁটে বুঝে নিলাম। সেই সিগন্যাল স্পর্শ করল মানুষের প্রতি এক জাইনয়েডের ভালোবাসার অনুভূতি। বিট বাই বিট এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। র‍্যামের একটি সেক্টরে স্থায়ী কিছু মেমোরি দখল করে নেবে সেই অনুভূতি। হয়ত আমারও র‍্যাম সাময়িক ভাবে সেই সিগন্যাল গ্রহন করাতেই ব্যাস্ত হয়ে পরবে। সেখানে নতুন কোন কবিতা লেখার ইচ্ছে জাগবে।

মেলিসা আমাকে ধীরে ধীরে মানসিক ভাবে দুর্বল করে তুলেছে। আমার মনে হলো আমার ডায়মেন্সনের টাইম স্লট যেন হঠাৎ করেই পরিবর্তিত হয়ে গেছে। বুঝতে পারছি এটা মেলিসারই কাজ। আমার কর্নিয়া থেকে খুব কৌশলে পাসওয়ার্ড চুরি করে টাইম স্লট দশ বছর পেছনে নিয়ে গেছে। আমার ঘরের স্পেস উল্টে গেছে। ডানের সব কিছু বামে আর বামের সবকিছু ডানে চলে এসেছে। কোন কিছুই জায়গা মত পাচ্ছিনা। ডান হাতের টাইম স্লট চেক করে দেখি আমার হাতে এখন সময় রয়েছে পঁয়তাল্লিশ বছর। অথচ গতকালকেও যেটা ছিলো পঁয়ত্রিশ বছর। অর্থাৎ এই মুহূর্তে আমার বয়স পঁচিশ বছর। এই বয়সে আমাকে বেণু দেখতে পেলে ভীষণ কষ্ট পাবে। তাই কর্নিয়ায় বেণুর আইপি আপাতত কিছুদিনের জন্য ডি এক্টিভ করে রাখলাম। ভাবছি এতটা স্বার্থপর কি করে হয়ে গেলাম ? সামান্য একটি জাইনয়েড কি করে আমাকে মোহাচ্ছন্ন করে ফেলেছে ?

আইসিসের মন্দির পুনরায় তৈরি করা হয়েছে। মেলিসা সপ্তাহ খানিকের জন্য গেছে আইসিসের পূজা করতে। ভাবলাম আমিও সপ্তাহ খানিকের জন্য কোথাও হতে ঘুরে আসি। কিছুটা হলেও মেলিসার শূন্যতা পূরণ হবে। অনেক ভেবে সমুদ্রে একটি ছোট শীপ নিয়ে রওনা হলাম। এক সপ্তাহ সমুদ্রে ঘুরে বেড়াবো বলে। শীপ নিয়ে সমুদ্রের মাঝে চলে এসেছি। মাঝ রাতে সমুদ্রের তলদেশ হতে ভয়ানক ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়ে পুরো শীপ ডুবে গেলো। আমিও ভাসতে ভাসতে একটি দ্বীপে এসে পৌঁছালাম। যখন জ্ঞান ফিরল নিজেকে আবিষ্কার করলাম সেই অচেনা দ্বীপের সৈকতে। পানিতে ভিজে আমার সকল বায়োনিক সিস্টেম নষ্ট হয়ে গেছে। অতএব এখন কেবলই অপেক্ষায় থাকা যদি দূরে সমুদ্রের বুকে কোন শীপ দেখতে পাওয়া যায় তবেই হয়ত বাড়িতে ফেরা হবে।

একাকীত্ব আমাকে গ্রাস করে নিয়েছে। নির্জন একটি জায়গায় এভাবে একা একজন মানুষের পক্ষে জীবন যাপন করা দুর্বিষহ। মাঝে মাঝে মনে হয় আত্মহত্যা করি। কিন্তু সেখানেও স্রষ্টার পাপ পুণ্যের ছক করে দেয়া রয়েছে। আমি চাইলেই নিজেকে হত্যা করতে পারিনা। আবার স্রষ্টাও আমাকে আমার প্রাপ্য মৃত্যু বুঝিয়ে দিচ্ছেনা। বেঁচে থাকা যতই সীমাহীন যন্ত্রণা ভোগের কারণ হোকনা কেন জীবন ধারন আমাকে করতেই হবে। এ ছাড়া অন্যকোন উপায় এই মুহূর্তে আমার জন্য স্থির করা নেই। অতএব জীবন মৃত্যুর হিসাব না মিলিয়ে যতদিন এভাবে বেঁচে থাকতে হবে আমি বেঁচে আছি। আমি এখন যে জায়গায় আছি তার নাম আমার জানা নেই। চারিদিকে সমুদ্র। যতদূর দৃষ্টি যায় শুধু আকাশের সাথে সমুদ্রের মিলিত রেখাই চোখে পরে। মাঝের এই জায়গাটি একটি ছোট দ্বীপ। অন্যান্য দ্বীপ কেমন হয় জানিনা। তবে এই দ্বীপটি বেশ অদ্ভুত ধরনের। এখানে গাছ বলতে শুধু নারকেল আর কলা গাছের প্রাচুর্যতা। সেই কলা গাছ ঘেরা জঙ্গল পেরুলে কিছুদূর এগুতেই একটি মন্দির। মন্দিরের সামনে একটি গাছের গুড়ি দিয়ে তৈরি কিছুটা উঁচুতে গোলাকার একটি বেদী রয়েছে। খুব সম্ভবত এই বেদীর উপর মানুষের বলী দেয়া হত। শরীর থেকে ধরটাকে কেটে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হত। যার প্রমান বেদীর পাশে মাটিতে পরে থাকা মানুষের মাথার খুলীগুলো। তবে এই দ্বীপটিতে এই মুহূর্তে আমি ছাড়া আর কেউ নেই। আজ প্রায় এক মাস হয়ে গেলো আমি এই দ্বীপে আছি। পুরো দ্বীপ চষে দেখা হয়ে গেছে। কোথাও কোন প্রাণের স্পন্দন খুঁজে পাইনি। শুধু অপেক্ষায় আছি যদি দূরে সমুদ্রের বুকে কোন শীপ দেখতে পাই তবে হয়ত বাড়িতে ফেরা হবে। নতুবা মৃত্যুর অপেক্ষায় দিনগুনে যাওয়া ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই।

কিসের যেন শব্দ হল। এই একমাসে এমন ধরনের কোন শব্দ শুনতে পাইনি। এখানকার বাতাসের প্রতিটা গতিবিধী আমার এখন চেনা। সেই চেনার রাজত্যে অচেনা এই শব্দ চমকে দিচ্ছে বার বার। বাঁশের সাথে বাঁশের ঘর্ষণেই কেবল এমন শব্দ তৈরি হতে পারে। কিন্তু এই দ্বীপে আজ পর্যন্ত কোন বাঁশঝার নজরে পরেনি। তাহলে এই শব্দ কোথা হতে আসছে। আমার শোনার ভুল হতে পারে। কিন্তু না নিয়মিত শব্দটি হয়েই চলছে। ধীরে ধীরে আরও প্রকট আকার ধারন করছে শব্দটি যেন আমার খুব কাছেই চলে আসছে। পেছনে ফিরে তাকানোর সময় পেলামনা। মুহূর্তেই পেছন থেকে কে যেন আমার মাথায় প্রচণ্ড রকম জোড়ে একটা বাড়ি দিল। আমি তাৎক্ষনিক জ্ঞান হারালাম। মনে হল যেন আমার বহুদিনের আকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু আজ আমাকে বরণ করে নিতে এসেছে। আর আমি সমুদ্রের স্রোতের সাথে ভেসে যাচ্ছি স্বর্গে। আমার চারিদিকটা সাদা মেঘে ছেয়ে গেলো মুহূর্তেই। বেণুকে দেখতে পেলাম সেই মেঘের ফাঁকে। আমাকে দুহাত বাড়িয়ে ডাকছে। এইতো আমি বেণুর হাত ধরে স্বর্গের দরজার কাছে পৌঁছে গেছি। স্বর্গে আগুন থাকার কথা নয়। কিন্তু আমি আগুনের তাপ অনুভব করছি। মনে হচ্ছে যেন আমার চারিদিকে দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুনের লেলিহান শিখা। চোখ খুলে তাকাতেই গাঁ শিউড়ে ওঠার মত পরিস্থিতি হলো। আমাকে মন্দিরের সামনের বেদীর উপরে বেঁধে রেখে চারিদিকে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। আর অদ্ভুত আকৃতির ও রং দিয়ে সজ্জিত কিছু মানুষ বেদীর চারিদিকে নেচে গেয়ে উল্লাস করছে। এই গানের অর্থ বুঝতে পারছিনা। তাদের ভাষা বিচিত্র ধরনের। সেই ভাষার পাঠ উদ্ধার করা আমার সাধ্যে নেই। শুধু বুঝতে পারছি এরা এখন আমাকে আগুনে ঝলসে কীমা করবে। তারপর সবাই মিলে আমাকে দিয়ে তাদের ভোজন সম্পন্ন করবে।

Please Sir accept the request from Wave 100 gm of 2^33 Bit Video Massage to your Cornea.

Please Sir accept the request from Wave 100 gm of 2^33 Bit Video Massage to your Cornea.

Please Sir accept the request from Wave 100 gm of 2^33 Bit Video Massage to your Cornea.

Thanks already decoded here.

স্বপ্ন ভেঙে গেলো মেলিসার ভিডিও ম্যাসেজ পেয়ে। এতক্ষন আমি তাহলে স্বপ্ন দেখছিলাম। এই স্বপ্নটি কিছুদিন হলো প্রায় রোজই দেখছি। স্বপ্নের ব্যাখ্যা দাড় করাতে চেষ্টা করেছি বহুবার কিন্তু যতবার ব্যাখ্যা খুঁজেছি কোন রকম সমাধানে আসতে পারিনি। আজই মেলিসার ওখানে যেতে হবে। মেলিসার ইচ্ছে আমি যেন ওর জন্মদিনটা এবার ওর সাথে থেকেই উদযাপন করি। অতএব আমাকে এক্ষুনি রওনা হতে হবে। এখন প্রায় ভোর যদি ওর ওখানে যেতেই হয় সকালের প্রথম পূজা ধরতে তবে পূজার আগেই পৌঁছাতে হলে আমাকে এক্ষুনি রওনা দিতে হবে। মেলিসার ইচ্ছে ওর সাথে থেকে আমি আজকের দিনটাতে আইসিসের পূজা করি। ইদানীং গ্রাফাইটের ট্রেনগুলো বেশ উন্নতি লাভ করেছে। ম্যাগনেটিক ফিল্ডের দ্বারা পরিচালিত বলে এই ট্রেন চলতে মাটি স্পর্শ করতে হয়না। তার উপর রয়েছে অভিকর্ষ ত্বরণের বিপরীতমুখী প্রভাব। পাশের সিটের ভদ্রলোকটি ভীষণ বিরক্তির কারণ হয়ে উঠেছে। ঘন ঘন কথা বলা এই ধরনের মানুষের একধরনের রোগ। সাধারনত যাত্রা পথে এদের কথা বলার গতি বেড়ে যায়। হয়ত সময়গুলো কাটিয়ে নেয়ার এটি একটি কৌশল। সাধারনত অচেনা মানুষের সাথে পরিচয় করার মাঝে সংকোচ বোধ কাজ করে তবে এই শিল্পটি যারা রপ্ত করতে পেরেছে তাদের জন্য যে কোন যাত্রা শুভ হবে। নানান ধরনের বিষয় নিয়ে কথা বলেই চলেছে। মনে হচ্ছে যেন সর্ব বিষয়ে মহা জ্ঞানী কোন মানুষের সাথে পরিচয় হয়েছে। এখন আমাকে মূর্খ পেয়ে জ্ঞান দান করছে। লক্ষ করলাম আমাকে যখন জ্ঞান দিচ্ছে তার চোখে মুখে বেশ তৃপ্তির হাসি ফুটছে। বেশ ! তিনি যদি আমার মত মূর্খকে কিছু জ্ঞান দান করে তৃপ্ত হন তবে আমার কোন ক্ষতি নেই। তাই আমিও ভদ্রলোকের কথার সাথে মাথা নেড়ে যাচ্ছি।

ট্রেনের গতি ধীরে ধীরে বেড়ে চলেছে। সীট বেল্ট বেঁধে নেয়ার জন্য এলাউন্স করা হলো। আমি সীট বেল্ট বেঁধে নিয়েছি। ট্রেনের জানালার গ্লাসে পৃথিবীর সংবাদ প্রচারিত হচ্ছে। সংবাদে প্রচারিত হচ্ছে পুরো পৃথিবীময় সাইবার যুদ্ধের ভিডিও ফুটেজ। বেশ কিছুদিন যাবত পরাশক্তি দেশগুলোর মাঝে সাইবার স্পেস দখল নিয়ে স্নায়ু যুদ্ধ চলে আসছিলো। শেষ পর্যন্ত সেটা রুপ নিয়েছে ভয়ানক যুদ্ধে। একে একে সব দেশের সিস্টেম ক্রাশ করে ফেলা হচ্ছে। ম্যালফাংশন ভাইরাস ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। একের পর এক অটো ডিএক্টিভ হয়ে যাচ্ছে সব আইপি এড্রেসগুলো। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সন্মুখিন হতে হচ্ছে উন্নয়নশীল দেশগুলোর কারন এই দেশগুলো চলছিলো ভাড়া করা আইপি নিয়ে। এই মুহূর্তে বেণু আর সিফাতের জন্য ভীষণ দুশ্চিন্তা হচ্ছে। ব্যাংকের ডেবিট কার্ড ও এটিএম সিস্টেম ইনএক্টিভ হয়ে পরার কারনে মানুষের পক্ষে কিছু ক্রয় করাও সম্ভব হচ্ছেনা। আমি খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম আজই আমাকে দেশে ফিরে গিয়ে ওদের এখানে আনার ব্যাবস্থা করে ফেলতে হবে আমার কোম্পানির কাছে অনুরোধ করে। পরিস্থিতির ভয়াবহতা তুলে ধরলে কোম্পানি নিশ্চয় আমাকে নিরাশ করবেনা। ওরা আমার পরিবারকে এখানে আনার জন্য অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহন করে আমাকে সাহায্য করবে।

বেণুর সাথে যোগাযোগ করার কোন সিগন্যালই কাজ করছেনা। আমাকে তাহলে দেশে যেয়েই ওদের নিয়ে আসতে হবে। আমার উদ্বিগ্নতা দেখে পাশের সীটে বসে থাকা ভদ্রলোকটি বলল ব্রাদার এখন ট্রেন থেকে নামলেই যে সকল সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে সেটা ভাবা বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়। পৃথিবীগামী রকেট কোবাল্ট-বি এর টিকেট আগামী একমাসের আগে পাবেন না। কারন আপনার অবগতির জন্য বলছি এই একটি মাত্র পৃথিবীগামী রকেটটি এক মাস পরপর পৃথিবী থেকে গ্রাফাইট আর গ্রাফাইট থেকে পৃথিবীতে চলাচল করে। ভদ্রলোকের কথাগুলো যেন শেল আকারে আমার হৃদপিণ্ডে আঘাত করছে। আমি আমার সীটের স্টপ বাটন চেপে ধরলাম। যেন এই ট্রেন নয় আমি আমার জীবনকেই এই মুহূর্তে থেমে যাওয়ার জন্য আকুল ভাবে নিবেদন করছি। ট্রেন গ্রাফাইট সেক্টর সেভেনে এসে থামল। আমি ট্রেন থেকে নেমে স্টেশনের ওয়েটিং চেম্বারে বসে আমার কর্নিয়া থেকে মেলিসার আইপি এড্রেস ডিএক্টিভ করছি আর আমার দুচোখ দিয়ে নীরবে অশ্রু ধারা নেমে আসছে। চোখ বন্ধ করে যেন বেণুকে দেখতে পাচ্ছি। আমার চারিদিকটা সাদা মেঘে ছেয়ে গেলো মুহূর্তেই। বেণুকে দেখতে পেলাম সেই মেঘের ফাঁকে। আমাকে দুহাত বাড়িয়ে ডাকছে। এইতো আমি বেণুর হাত ধরে পৃথিবীর মাটিতে নেমে এসেছি।





সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০১৫ রাত ১১:৪৬
৩৫টি মন্তব্য ৩৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×