somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন আদর্শ মায়ের কথা বলছি...

২৭ শে জুন, ২০১৩ রাত ৮:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কবি জীবনানন্দ দাস'কে চেনে না বা তার কবিতা পড়ে নি এমন বাঙালি পাওয়া দুস্কর।
কিন্তু আমরা ক'জন তার মায়ের সম্পর্কে জানি?

কুসুমকুমারী দাশ একজন বাঙালি মহিলা কবি। কবির জ্যেষ্ঠ পুত্র কবি জীবনানন্দ দাশ।

জীবনীঃ
কবি কুসুমকুমারী দাশ বরিশাল জেলার বরিশাল শহরেই ২১ শে পৌষ ১২৮৯ বঙ্গাব্দে এক বিদ্যানুরাগী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা চন্দ্রনাথ দাশ এবং মাতা ধনমণি দাশ। চন্দ্রনাথ ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করায় গ্রামবাসীদের বিরোধিতায় আগৈলঝাড়া উপজেলার "গৈলা" গ্রামের পৈতৃক ভিটা ছেড়ে বরিশাল সদরে চলে আসেন। কুসুমকুমারী একটি পারিবারিক পরিমণ্ডল পেয়েছিলেন। বরিশাল ব্রাহ্মসমাজ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত মেয়েদের হাই স্কুলে তিনি ৪র্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়েন। এরপর বালিকাদের অভাবের জন্য স্কুলটি বন্ধ হয়ে গেলে কুসুমকুমারীকে তাঁর বাবা কলকাতায়, রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের গৃহে রেখে বেথুন স্কুলে ভর্তি করেন। একবছর পর ব্রাহ্মবালিকা বোর্ডিং-এ লাবণ্যপ্রভা বসুর তত্ত্বাবধানে পড়াশোনা করেন।

প্রবেশিকা শ্রেণীতে পড়ার সময়েই ১৮৯৪ সালে ১৯ বছর বয়সে তাঁর বিয়ে হয় বরিশালের ব্রজমোহন ইনস্টিটিউশন-এর প্রধান শিক্ষক সত্যানন্দ দাসের সঙ্গে। তাঁরই অনুপ্রেরণায় কুসুমকুমারী সাহিত্য চর্চা চালিয়ে যান। বরিশালের ব্রাহ্মসমাজের সভা-উৎসব-অনুষ্ঠানে কুসুমকুমারী যোগদান করতেন। তিনি ১৩১৯ থেকে ১৩৩৮ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত প্রায় প্রতি বছরই, বরিশাল ছাত্র সংঘের সপ্তাহকালব্যাপী মাঘোত্সবের মহিলা দিবসের উপাসনায় আচার্যের কাজ করেছেন। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এমন একটি স্বাভাবিক স্বাভাবিক মর্যাদার অধিকারিণী হয়েছিলেন যে, শুধু মহিলাদের উৎসবে নয়, ব্রাহ্মসমাজের সাধারণ সভাতেও তিনি আচার্যের কর্মভার কাজ করেছেন।
তাঁর মৃত্যু হয় কলকাতার রাসবিহারী এভিনিউ এর বাড়িতে।

সাহিত্যকর্মঃ
ছোটবেলা থেকেই কবিতা ও প্রবন্ধ লিখতেন কুসুমকুমারী। রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়, শিশুদের জন্য যে চিত্রশোভিত বর্ণশিক্ষার বই লিখেছিলেন, তার প্রথম ভাগে কুসুমকুমারী রচিত যুক্তাক্ষরবিহীন ছোট ছোট পদ্যাংশ ছিল। তিনি সম্পাদক মনোমোহন চক্রবর্তীর অনুরোধে লিখেছেন "ব্রহ্মবাদী" পত্রিকায়। তাঁর অল্প কিছু কবিতা প্রকাশিত হয়েছে "প্রবাসী" ও "মুকুল" পত্রিকায়। তাঁর কবিতায় বার বার এসেছে ধর্ম, নীতিবোধ, দেশাত্মবোধ। কাব্য মুকুল (১৮৯৬) তাঁর কাব্যগ্রন্থ। "পৌরানিক আখ্যায়িকা" নামের একটি গদ্যগ্রন্থও তিনি রচনা করেন।
তার অনেক লেখাই এখন পাওয়া যায় না, কারণ এর বেশিরভাগই নষ্ট হয়ে গিয়েছে কিংবা হারিয়ে গিয়েছে এবন কবি নিজেও কিছু লেখা নষ্ট করে ফেলেছেন অপ্রকাশিত রেখেই।
তার রচিত "আদর্শ ছেলে", যার প্রথম চরণ "আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে", বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সর্বাধিক পরিচিত।

সম্মাননাঃ
"নারীত্বের আদর্শ" এক প্রবন্ধ প্রতিযোগীতায় কুসুমকুমারী স্বর্ণ পদকে ভূষিত হন।

এক নজরে কবি কুসুমকুমারী দাশঃ
নামঃ কুসুমকুমারী দাশ
জন্মঃ ১৮৭৫, বরিশাল
মৃত্যুঃ ১৯৪৮, কোলকাতা 1948
স্বামীঃ সত্যানন্দ দাশ
সন্তানঃ জীবনানন্দ দাশ (১৮৯৯-১৯৫৪)
অশোকানন্দ দাশ
সুচিত্রা দাশ (১৯১৫-১৯৮০)
পিতা-মাতাঃ চন্দ্রনাথ দাশ এবং মাতা ধনমণি দাশ

আদর্শ ছেলে
আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে
কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে ?
মুখে হাসি, বুকে বল তেজে ভরা মন
"মানুষ হইতে হবে" --- এই তার পণ,
বিপদ আসিলে কাছে হও আগুয়ান,
নাই কি শরীরে তব রক্ত মাংস প্রাণ ?
হাত, পা সবারই আছে মিছে কেন ভয়,
চেতনা রয়েছে যার সে কি পড়ে রয় ?
সে ছেলে কে চায় বল কথায়-কথায়,
আসে যার চোখে জল মাথা ঘুরে যায় |
সাদা প্রাণে হাসি মুখে কর এই পণ ---
"মানুষ হইতে হবে মানুষ যখন" |
কৃষকের শিশু কিংবা রাজার কুমার
সবারি রয়েছে কাজ এ বিশ্ব মাঝার,
হাতে প্রাণে খাট সবে শক্তি কর দান
তোমরা মানুষ হলে দেশের কল্যাণ।


বসন্তে
উত্সব গান, মধুময় তান
আকাশ ধরণী-তলে
কুঞ্জে কুঞ্জে বিহগ কণ্ঠে
লতায় পাতায় ফুলে |
হৃদয়ে সবার দিয়েছে রে দোল
নাচিয়া উঠিছে প্রাণ,
(এ যে) নূতন দেশের মোহন ঝঙ্কার
নূতন দেশের গান |
এ বসন্ত কার, দিতেছে বাহার
চেতনার ঢেউ খুলি
কেবা আপনার, কেবা পর আর
ব্যবধান গেছে খুলি
আজ সে এসেছে দেবদূত হয়ে
জাগাতে সহস্র প্রাণ,
কে আসিবি আয়, ওই শোনা যায়
আনন্দময়ের গান |
কে বাঁচিবি আয়, বাতাসে বাতাসে
পরশে চেতনা জাগে ;
কে বাঁচিবি আয়, হৃদয়ে হৃদয়ে,
আজি নব অনুরাগে |

উৎসর্গঃ কুসুমকুমারী'র মতো সকল রত্নগর্ভাদের।

বরেণ্য ব্যাক্তিদের নিয়ে আরও কিছু লেখা

সাইট লিংক
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০১৩ ভোর ৬:১৭
৩১টি মন্তব্য ৩১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×