মানবজাতি সৌন্দর্যপ্রিয় সৃষ্টি। বাড়িতে যখন কোন বিশেষ অতিথি আগমনের কথা থাকে, মানুষ তখন দু এক দিন পূর্ব হতে তার আপ্যায়ণের প্রস্তুতি নিতে থাকে, যাতে কোনরূপ ত্রুটি বা কমতি পরিলক্ষিত না হয়। ঘর বাড়ি সুন্দর করে গুছিয়ে রাখা হয়, সাধ্যমত ভালো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়, টেবিলে সুন্দর মত পরিবেশন করা হয়, এমনকি পরিবারের সবাই পরিপাটি পোশাক পরিধান করে মেহমানকে স্বাগত জানায়।
তদ্রূপ পবিত্র পবিত্র রমাদান মাস মুসলমানদের নিকট অত্যন্ত প্রিয় ও মূল্যবান একটি মাস। এর যথাযথ মূল্যায়ন করা আমাদের অবশ্য কর্তব্য। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এ মাসটির মর্যাদা উপলব্ধি করে অপেক্ষা করতে থাকে। অন্যথায় মনে হয় বিনা নিমন্ত্রণে রমাদান এসে হুট করে চলে গেল।
আজ পবিত্র রজব মাসের প্রথম দিন চলে গেল । রজব আর শাবান মাত্র দুটি মাস বাকি আছে রমাদান আসতে। রমাদান যেন আমাদের দোরগোড়ায় কড়া নাড়ছে। তাই আমাদের সকলের উচিত আসন্ন রমাদানকে সুন্দর করে স্বাগত জানানোর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা ।
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র রমাদান মাসে তার বান্দাদের রব্বের নৈকট্য অর্জনের জন্য রমাদান মাসে দুটি উপহার দান করেছেন, একটি দিবাগত সিয়াম ও অপরটি রাত্রিকালীন নফল সালাত। আর্থিক ইবাদতের কথা স্মরণ রেখে মানুষ এ মাসেই যাকাতের ব্যবস্থা করে থাকে। ধনীদের মধ্যে কেউ আবার উমরাহ করতে চলে যান। এ মাসেই কদরের রাত্রিতে মানবজাতির কল্যানে সঠিক পথ প্রদশর্নের জন্য তার চিরন্তন বাণী আল কোরআন নাযিল করেন। আসুন আমরা এবার রমাদানে কোরআনকে সাধ্যমত মূল্যায়নের চেষ্টা করি। এজন্য অবশ্যই কিছু উদ্যোগ নেয়া আবশ্যক। যেমনঃ
নিয়মিত অনুশীলন :
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা প্রতিদিন কোরআন তিলাওয়াত করতে না পারলেও রমাদান মাসে কোরআন পড়ার চেষ্টা করি। যেহেতু নিয়মিত পাঠের অভ্যাস নেই তাই ইচ্ছা থাকা স্বত্বেও রমাদানে তা নিয়মিত হয়ে উঠে না। আসুন আজ থেকে প্রতিদিন দশ মিনিট অর্থসহ কোরআন তিলাওয়াতের অভ্যাস গড়ে তুলি। কোন কারণে দিনে হয়ে না উঠলে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে লক্ষ্য পূরণ করে নেই। অন্যথায় পরের দিন তা বিশ মিনিট করে নিবো।
অনুধাবনের চেষ্টা :
কোন একটি সুরা বাছাই করি এবং তা অনুধাবনের জন্য পর্যাপ্ত তাফসির পড়ি এবং পরিবারের লোকজন কিংবা বন্ধু বান্ধবের সাথে আলোচনা করি। এতে পাঠে আনন্দ ও স্পৃহা তৈরি হবে। ছোট সুরা হলে রমাদান পর্যন্ত কয়েকটি সুরা আমরা সুন্দরমত বুঝতে পারবো। ।
কার্যে রূপান্তর :
নিয়মিত কোরআন তিলাওয়াতের দরুণ আমরা আল্লাহর যে আহকাম শিখতে পারবো তা ব্যক্তিজীবনে কার্যে রূপান্তর করার আপ্রাণ চেষ্টা করবো। এতে রমাদান মাসে দেখতে পাবো, নিজের ভিতর বড় একটা পজিটিভ পরিবর্তন এসেছে। তখন রমাদানের আগমনের আনন্দ ভীষণভাবে উপলব্ধি করতে পারবো এবং মূল্যায়ণ করতে পারবো।
হিফজের লক্ষ্য :
এই দুই মাসে কোন একটি সুরা বা কয়েকটি ছোট সুরা মুখস্থ করার লক্ষ্য রাখতে পারি। যেমন : ত্রিশ আয়াত বিশিষ্ট অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ সুরা মুলক কিংবা সকলের খুব পছন্দের সুরা রাহমান কিংবা ত্রিশ নম্বর পারার কয়েকটি ছোট সুরা। প্রতিদিন দুই তিন আয়াত মুখস্থ করতে পারলে রমাদান আসার পূ্র্বেই আমরা নিজেদের লক্ষ্য পূরণ করতে পারবো ইনশাআল্লাহ। এক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা করে পড়তে পারলে খুব দ্রুত ও সহজ হয়। নতুন সুরা দিয়ে নামাজ পড়ার আনন্দই অন্যরকম।
রাত্রিকালীন নফল সালাত :
রমাদানে যেহেতু আমরা তারাবিহ নামাজ পড়ি তাই এখন থেকেই পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ সালাতের পাশাপাশি ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে নিয়মিত দুই রাকাত নামাজ পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারি। এক্ষেত্রে আমরা যে দুই তিনটি নতুন আয়াত মুখস্থ করবো তা নামাজের মধ্যে বারংবার তিলওয়াত করতে পারি এতে হিফজের সুন্দর অনুশীলন হবে এবং দীর্ঘসময় নামাজে দাড়িয়ে থাকার একটা অভ্যাস তৈরি হবে। এতে করে রমাদান মাসে মাঝরাতে দীর্ঘ সময় নফল নামাজে দাঁড়িয়ে থাকতে সুবিধা হবে যা আমাদের প্রিয় নবীর প্রিয় একটি সুন্নত।
কোরআনের ভাষা শিখা :
আমরা সকলেই জানি কোন অনুবাদই আসল লেখার সম্পূরক হতে পারে না, তা যত উৎকৃষ্ট ভাবেই অনুদিত হোক না কেন। আমরা যারা কোরআনকে তার প্রকৃত ভাষায় জানতে চাই তারা আজ থেকেই আরবি ভাষার একটা কোর্স শুরু করতে পারি। ইউটিউবে এমন অনেক ভিডিও পাওয়া যায়। নিচে শেয়ারকৃত লিংকটি একটি সহজ আরবি শিক্ষা পদ্ধতি। প্রতিদিন ৩/৪ মিনিটের এই কোর্সটি করে এই দুই মাসে যে কেউ কোরআনের ২৫% আরবি বুঝতে পারবে ইনশাআল্লাহ। এতে করে রমাদান মাসে তারাবিহ নামাজে ইমামের কিরাত কিছুটা হলে আপনার হৃদয়ে দাগ কাটবে।
আসুন নিজের জীবন থেকে প্রতিদিন কিছুটা সময় বের করি এবং রমাদানকে তার মর্যাদা অনুপাতে স্বাগত জানাতে সাধ্যমত চেষ্টা করি।
বি:দ্র: লেখাটি কেবল ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য। অন্যদের অযথা সময় নষ্ট না করে পোস্টটি এড়িয়ে যাওয়ার জন্য বিশেষভাবে আহবান করছি।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৮