
[বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ এই পোস্টে কোন দলিল প্রমাণ যুক্ত করা হয় নি। লেখাটি বিশেষ করে চিন্তাশীল অবগত মুমিন মুসলমানদের জন্য যারা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পূর্ব থেকেই ওয়াকিবহাল। অনুগ্রহ করে ইসলামবিদ্বেষীরা পোস্টে এসে অযথা মন্তব্য করে নিজের ও অপরের সময় নষ্ট করবেন না। সচেতন থাকার জন্য অগ্রিম ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। ]
আমরা সবাই জানি, ইসলাম ধর্মে মূল স্তম্ভ পাঁচটি। ঈমান, সালাত, সাওম, যাকাত ও হজ্জ। আপনি প্রকৃত মুমিন নাকি মুনাফিক তার নির্ভর করছে আপনার ঈমানের উপর। আল্লাহ তায়ালার উপর পূর্ণ বিশ্বাসস্থাপনের পাশাপাশি নবী রাসূল, ফেরেশতা, আসমানী কিতাব, শেষ বিচার দিবস, তকদিরের ভালোমন্দ, পুনরুত্থান ইত্যাদি বিষয়ে পূর্ণ বিশ্বাস রাখা ঈমানের অন্তর্ভুক্ত। এ বিশ্বাস পুরোপুরি মনস্তাত্ত্বিক বিষয় যা আপনার আচার-আচরণ ও কাজকর্মের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। শরীয়তের অনেক হুকুম আমরা নিজেদের দুর্বলতার হেতু পালন করতে পারি না কিন্তু তা অস্বীকার করা ঈমান বহির্ভূত কাজ।
দ্বিতীয় স্তম্ভ সালাত। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের ডাকে সাড়া দেওয়ার মাধ্যমে এটাই প্রকাশ পায় যে, জীবনে যে কোন কিছুর ঊর্ধ্বে আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা। সালাত হচ্ছে আল্লাহর সাথে বান্দার যোগাযোগ স্থাপন । আমরা যদি সালাতকে অনুধাবন করতে পারি তাহলে জীবনে আমূল পরিবর্তন ঘটা সম্ভব।
তৃতীয় স্তম্ভ সাওম، যার আক্ষরিক অর্থ বিরত থাকা। পূর্ণ এক মাস সাওম আমাদের আল্লাহর হুকুম পালনের জন্য বৈধ জিনিস থেকে বিরত থাকতে অভস্ত্য করে। যে অভ্যাস আমাদের হারাম থেকে কিভাবে বিরত থাকতে হয় তার শিক্ষা দেয়।
চতুর্থ স্তম্ভ যাকাত যা ইসলামী অর্থনীতিকে গতিশীল রাখে। যথাযথভাবে যাকাত আদায় করলে সম্পদ এক শ্রেণির লোকের নিকট কুক্ষিগত থাকে না বরং সর্বস্তরের মানুষের নিকট ঘুরতে থাকে। যাকাত আমাদের অন্তরের কৃপণতা দুর করে এবং সেই সাথে এটাও বুঝায় সম্পদের মালিক একমাত্র আল্লাহ, তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে সম্পদের মালিকানা দান করেন।
পঞ্চম স্তম্ভ হজ্জ, যার মাহাত্ম্য ও তাৎপর্য নিজস্ব অভিজ্ঞতা লাভের মাধ্যমে অর্জিত হয়। হজ্জ আমাদের শিক্ষা দেয়, শক্তি সামর্থ্য থাকলে আল্লাহর হুকুম পালনের জন্য আমরা পরিবার পরিজন ধন সম্পদ এমনকি নিজ মাতৃভূমি ছেড়ে হাজার কিলোমিটার পথ পারি দিতে প্রস্তুত।
স্তম্ভগুলোকে যদি আমরা সংখ্যার মাধ্যমে প্রকাশ করি তবে ঈমানের সংখ্যা হবে ১ আর বাকিগুলোর সংখ্যা হবে ০। প্রতিটি স্তম্ভের সাথে ঈমাণ জড়িত অর্থাৎ ১০। কিন্তু যদি ঈমান না থাকে তাহলে বাকিগুলোর মান কেবল ০। হাদিসে আছে, শেষ জমানায় ঈমাণ ধরে রাখা ততটাই কঠিন, যতটা কঠিন জলন্ত অঙ্গার হাতে নিয়ে রাখা। জুম্মার নামাজে মসজিদে জায়গা হয় না, রাস্তায় মুসুল্লিদের নামাজ পড়তে দেখা যায়। কিন্তু অন্য ওয়াক্তে মসজিদ পুরো ফাঁকা থাকে। আবার মসজিদ থেকে বের হয়েই চায়ের দোকানে সিগারেট হাতে দেখা যায় অথচ গায়ে প্রচলিত ইসলামি লেবাস, মুখে দাঁড়ি। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর মানুষ যখন হালাল হারাম তোয়াক্কা না করে লাল পানি পানাহার করে, রঙ্গমঞ্চে ফুর্তি করে চানরাত উদযাপন করে তখন সিয়ামের খাতায় কেবল শূন্য ছাড়া আর কি থাকতে পারে? ঢাক ঢোল পিটিয়ে গণহারে যাকাতের টাকায় শাড়ি লুঙ্গি বিতরণ করা বিত্তশালী লোকটির কাছে যখন কেউ গোপনে সাহায্য প্রার্থনা করে কিংবা বিপদে পড়ে ধার চেয়ে বসে তখন তার হৃষ্টপুষ্ট উজ্জ্বল মুখাবরণ মলিন হয়ে যায়। বখিলতা তার অন্তরকে গ্রাস করে এবং সে ভুলে যায় সম্পদের প্রকৃত মালিকের কথা। কয়েকবার হজ্জ করে আসা নামের পাশে আলহাজ্ব উপাধি লাগানো ধবধবে সাদা জুব্বা পরিহিত লোকটা যখন অন্যয়ভাবে অপরের সম্পদ আত্মসাৎ করে, নিজের পরিবারকে পাশ্চাত্যের আদর্শে গড়ে ধর্মের বুলি আওড়ায় তখন এ ধরনের ধর্ম ব্যবসায়ীদের জন্য সমাজে অজ্ঞ লোকদের চোখে ইসলাম দোষী হয়। ঈমান তাহলে কোথায়???
ঈমান আসলে কোথায়!!! আমার অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, ঈমান প্রকৃত পক্ষে সবর আর শোকরের মাঝে নিহিত। গোটা জীবনটাই পরীক্ষায় পরিপূর্ণ। অনেক সময় জীবনে এমন কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয় যা মানুষের ঈমানকে নাড়া দিয়ে দেয় যেমন তীব্র ভূমিকম্পে পাহাড়সম অট্টালিকা নড়েচড়ে উঠে। আল্লাহ নেয়ামত দান করে যেমন পরীক্ষা করেন তেমনি নেয়ামত থেকে বঞ্চিত করেও বান্দার প্রতিক্রিয়া দেখেন। এমতাবস্থায় সবর ধারণ করাই একমাত্র সমাধান, পরিস্থিতি কোনভাবে বোধগম্য নয় তবুও আল্লাহর ফয়সালায় শোকর জ্ঞাপন করাই ঈমান।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে সর্বাবস্থায় সবর ও শোকর করার তৌফিক দান করুক এবং ঈমানের সাথে কবুল করুক। আমীন ! ! !
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১:৪১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




