সদ্য পাশে করে জয়েন করা স্যারকে পছন্দ করার ঘটনা, খুব কমন হয়ে গেছে আজকাল। এই ধরণের পছন্দ গুলোকে বলে “ বাছুর প্রেম!” দমকা হাওয়ার মত আচমকা আসে আবার চট করে চলে যায়। আমিও তার অপেক্ষায় আছি। এই প্রেম একসময় চলে যাবে হুট করে! আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করবে বিবেক। স্বপ্ন থেকে বাস্তবে ফিরে আসতে হবে। এরকম অহরহ হচ্ছে। আগেও হয়েছে। হবেও।
প্রথমে একটা ব্যাপার পরিষ্কার করে নেই। আমি লীরা! আমি কোন স্যারকে পছন্দ করিনা। আমার বাছুর কিংবা পোনা প্রেম ধরণের কিছু হয়নি। আমি বলব আমার খুব কাছের এক বান্ধবীর কথা । যে কিনা কথায় কথায় অভিমান করে, চোখে সবসময় স্বপ্ন থাকে, ঘোরের মধ্যেই থাকে বেশি।
একদিন হয়েছে কি! আমাদের ক্লাসে স্যার খাতা দিল। মিডটার্মের খাতা। ৫০ নম্বরের! আমরা একে অন্যেরটা দেখছি। কাড়াকাড়ি হচ্ছে নিজেদের মধ্যে। কারোই খুব একটা ভাল নম্বর আসেনি। স্যার অনেক কড়া করে খাতা কাটেন। ২০ এর উপরে কেউ পেয়েছে কিনা এটা হচ্ছে গবেষণার বিষয়। আমি বা পাশে ফিরে লক্ষ্য করলাম তিথী কাঁপছে। আমি তিথীকে দেখে কিছুটা অবাক হয়ে গেলাম। কি ব্যাপার! সে কাঁপছে! পরীক্ষা খারাপ হয়েছে নাকি! আমি তার হাত থেকে খাতা টেনে নিলাম! ৩২ পেয়েছে। আরেব্বাপরে! অনেক বেশি নাম্বার তো। এত কঠিন প্রশ্নে এত নম্বর! বাব্বাহ্!
-কিরে! তুই তো অনেক মার্ক পেয়েছিস! সবচাইতে বেশি।
তিথী ফিসফিস করে কি বলল বোঝা গেলনা! আমি সামনের দিকে একটু এগিয়ে গেলাম। ওহ্! বলতে ভুলে গেছি! তিথী হচ্ছে সেই মেয়ে যে বাছুর প্রেমে আক্রান্ত! তিথী কোনমতে ঢোক গিলে বলল তার খাতায় যোগে ভুল হয়েছে। স্যার ভুল করে দুইটা প্রশ্নের নাম্বার যোগ করেননি। আমি তো উল্লাসে ফেটে পড়লাম। “আরে! কি বলিস! এত সূবর্ণ সুযোগ! যা গিয়ে উনাকে দেখিয়ে দে। উনি তোকে যোগ করে নাম্বার বাড়িয়ে দিবেন।“ বলেই চোখ টিপে দিলাম।
তিথীর কানের গোড়া পর্যন্ত লাল হয়ে গেছে। সেদিন কিছুতেই আর বলতে পারলোনা। আমার আর তিথীর বাসা কাছাকাছি। আমরা একসাথে যাই হেঁটে। বাসা ফেরার পথে একটা ফুলের নার্সারিও পড়ে। তিথী আজকে ওখানে দাঁড়িয়ে গেল। গোলাপ গাছের ওখানে যেয়ে মনোযোগ দিয়ে দেখতে লাগলো! আমি দুষ্টুমি করে জিজ্ঞেস করলাম।
-কিরে? কার জন্য?
তিথী জবাব দিলনা। চলে আসলো। কালকেই নিয়ে যাবে হয়তো। হাসতে হাসতে বাসায় আসলাম। তিথীর পছন্দের ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই। বাসায় ঢুকতেই পরিচিত কণ্ঠস্বরের আওয়াজ পেলাম। এই কন্ঠস্বর তো আগেও শুনেছি... আমি ভাবছি... এটা কিভাবে সম্ভব।
ঠিক আধা ঘন্টা পর। আমি মাথায় কাপড় দিয়ে বসে আছি। আমার পাশে আমার বাবা বসা। মা পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে ছেলেপক্ষ দেখতে এসেছে। আমি কিছু বোঝার আগেই আমার আঙ্গুলে আন্টি পড়িয়ে দিয়ে তারা বিদায় নিল। এভাবে এনগেজমেন্ট হয়ে যাবে কে জানত! রাত বাড়ছে। আমি দাঁড়িয়ে আছি বারান্দায়। ভাবছি! তিথীকে একটা কল দিব। কাল ওর জন্মদিন। ওর জন্য একটা বিশাল সারপ্রাইজ আছে। ওর বাছুর প্রেমে পড়া স্যারের সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। ও কি এর পরেও এই প্রেম ধরে রাখবে? নাকি মনোযোগ দিয়ে পড়ালেখা করবে! মেয়েটা পড়ালেখায় অনেক ভাল।