somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দোলনা-১

১৮ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ৮:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.

প্রচণ্ড যন্ত্রণায় বাঁকা হয়ে যাচ্ছে শরীর! মীরার কপালে বিন্ধু বিন্দু ঘাম! হাত দিয়ে সাদা চাদর মুঠো করে ধরে আছে। কুঁচকে যাচ্ছে কপাল। সাথে চাদরও!
মাথার উপরে টিউবলাইটের আলোটা ঝাপসা হয়ে আসে! জোর করে চোখে খুলে রাখার চেষ্টা করে মীরা। চোখের সামনে লাল একটা পর্দা খেলা করে। বার বার নেমে আসতে চাইছে সেই লাল পর্দাটা। বিভিন্ন রঙ দেখতে পাচ্ছে সে। কোনটা কি রঙ বুঝে ওঠার আগেই দেখা দিয়ে মিলিয়ে যাচ্ছে। মীরা ঠোঁট চেপে ব্যাথা সামলানোর চেষ্টা করে। চোখ ফেটে পানি বেরিয়ে আসে তার ।

মীরা মেলানোর চেষ্টা করে এর আগে এই ধরণের ব্যাথার অভিজ্ঞতা হয়েছে কিনা! ছোটবেলায় সাইকেল চালাতে গিয়ে পড়ে গিয়েছিল একবার। পুরো গায়ের উপর এসে পড়েছিল সাইকেলটা। মীরা গড়িয়ে পড়েছিল রাস্তার পাশে! অনেক ব্যাথা পেয়েছিল সে। তখন কি এমন ব্যাথা লেগেছে?

সে কিছু ভাবতে পারছেনা। বার বার এলেমেলো হয়ে যাচ্ছে সব কিছু। ব্যাথায় বার বার চিন্তায় ছেদ পড়ছে।

তারপর আরেকদিন চলন্ত বাস থেকে লাফিয়ে নামতে গিয়ে গড়িয়ে পড়েছিল। হাত পা ছড়ে খুব খারাপ অবস্থা হয়েছিল সেবার। মীরা প্রথমে ভেবেছিল একটা দুটো হাড় ঠিক ভেঙ্গে গেছে। বেশ কিছুদিন ভুগেছে। একলা চলতে পারেনি। এই যা! এমন ব্যাথা কি তখনও ছিল?
নাহ! ভাল কিছু চিন্তা করতে হবে। স্থিরভাবে চিন্তা করতে পারছেনা। ব্যাথাটা বাড়ছে ক্রমশ!
কলেজে থাকতে এক ছেলে তাকে পছন্দ করত অনেক! খুব সুন্দর করে একটা প্রেমপত্র দিয়েছিল একটা। মীরা জবাব দেয়নি। দিতে পারেনি
হয়ত।

অনেকদিন ছিল তার কাছে। কয়েকটা লাইন এখনও কানে বাজে।

...... জানিনা! কখনও বসে সুর্যাস্ত দেখতে পারবো কিনা। জানিনা তোমার সাথে হেঁটে হেটে নদীর পাড় ধরে দিগন্তের কাছে যেতে পারবো কিনা! তারপরও তুমি থাকবে আমার কল্পনায়... আমি তোমাকে তোমার চাইতেও বেশি ভালবাসি...

মীরা মাঝে মাঝে ভাবে এই বাস্তবতায় আবেগের কোন দাম নেই। তারপরও হার মানতে হয়!
হেরে যেতে হয়। মীরা সেই আঁকাবাঁকা লেখা ছেলেটির শুদ্ধতম আবেগে হেরে গিয়েছিল। অথচ কোথায় যে চলে গেল সেই ছেলেটি । মীরা পরেরদিন ক্লাসে এসে আর পায়নি। কাউকে জিজ্ঞেস করতে পারেনি। কাকে জিজ্ঞেস করবে। কে কি ভাববে। মীরা মনে মনে বহুবার ভেবে রেখেছে ছেলেটা কোন একদিন সামনে এসে দাঁড়াবে । মীরা কোন ভূমিকায় যাবেনা! বরং সোজাসুজি বলবে, “ একটা চিঠি লিখে উধাও হয়ে গেলে চলবে। এতো হেয়ালিপনা চলবে না সামনে!” ছেলেটা নিশ্চয় খুব অবাক হবে। মীরা কোন কিছুর পরোয়া না করে বলবে,” একটা রিকশা নাও না! আমার অনেক গরম লাগছে”

অপারেশন থিয়েটার। ডাক্তার চিন্তিত ভঙ্গীতে তাকিয়ে আছে আঁকাবাঁকা রেখাগুলোর দিকে। রোগীর হার্টবিট বেশ কম। পালস পাচ্ছে একটু পর পর। নার্সরাও কিছুটা ভীত! ডাক্তার চোখ বন্ধ করে একবার সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করলো!

মীরার মনে হল কেউ একজন তার পেটের আঁতি টেনে বের করছে। সে দাঁত দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরেও সামলাতে পারছেনা। নোনা স্বাদ লাগছে মুখে। ঠোঁট কেটে গেছে হয়ত। জ্ঞান হারাতে যাচ্ছে সে।

জ্ঞান হারাবার ঠিক পুর্বমুহুর্তে তার কাছে মনে হল সে কিছু একটা শুনেছে।




একটা শিশু কাঁদছে। মীরা জানেনা শিশুটা কার। কিন্তু তার কাছে বুকের মধ্যে কেমন যেন করে ওঠে!


মীরার স্বামী খুব শৌখিন! ডুপ্লেক্স বাসার সামনে বিশাল সুইমিং পুল আছে। মীরার সাথে তাঁর বয়সের অনেক তফাৎ। দোতলার দক্ষিণের বিশাল ঘরটায় তারা থাকে। উনি বেশিরভাগ সময় দেশের বাইরে থাকেন। মীরার বারান্দা দিয়ে শুধু আকাশ না, তার বাড়ির সামনের বিশাল অংশ দেখা যায়। লনের সবুজ ঘাস। সুইমিং পুলের পানি। মীরা বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। সুইমিং পুলের পানিতে চাঁদের প্রতিচ্ছবি পড়েছে। বাগান থেকে ঘ্রাণ আসছে তীব্র।

কেঁদে ওঠে কেউ! মীরা নিচে তাকিয়ে দেখে আঁকুপাঁকু ভঙ্গীতে নড়ছে একজন। মীরা তার ছেলেটার দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে। কি ছোট ছোট হাত পা! চোখ টলমল করছে। মীরা তার ছেলের চোখে নদীর স্বচ্ছতা দেখতে পায়।
আচ্ছা তার ছেলের চাইতে পরিস্কার চোখের পানি কি কোথাও আছে?

অসম্ভব!

পৃথিবীর সবচাইতে পরিস্কার পানির চাইতে তার ছেলের চোখের পানি অনেক বেশি পবিত্র।

মীরার গল্প করার মত কেউ নেই। সারাদিন সে তার ছেলের সাথে গল্প করে। তার বাবুটাও কি বুঝে যেন চুপ করে থাকে গল্পের সময়। বড় টানাটানা চোখ! মায়ায় ভর্তি! বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মীরা। বারান্দায় রাখা কাঠের দোলনায় বসে!
লাজুক লাজুক মুখে গল্প করে! সেই হারিয়ে যাওয়া চিঠির গল্প। চিঠি দিয়ে হারিয়ে যাওয়া মানুষটির গল্প। ধুলোপড়া স্মৃতির গল্প।

দোলনার সাথে স্মৃতি থাকে। এক মায়ের নাড়িছেঁড়া ভালবাসা থাকে।

লেখনীও থেমে যায় একসময়!
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×