অনেকে আমাদের একটা স্বপ্ন দেখায়, এমন একটা স্বপ্ন যেখানে আমরা দেখতে পাই দুনিয়াতে কাগজের টাকা বা অর্থকে ধাক্কা দিয়ে ক্রিপ্টো কারেন্সি সব দখল করে নিচ্ছে। দুনিয়া থেকে ব্যাঙ্ক ব্যবস্থা গায়েব হয়ে যাচ্ছে, টাকার ব্যবহার হচ্ছেনা, ডলারকে কেউ পাত্তা দিচ্ছেনা ইত্যাদি ইত্যাদি।
শুনতে খুব অবাক লাগলেও এই পরিবর্তন একদিন হতে পারে। কতটুকু সম্ভব এই মুদ্রার বিবর্তন তা সঠিকভাবে বলা যাবেনা। হবে হয়তো, তবে এখনি হয়ে যাচ্ছে তা না। খুব তাড়াতাড়ি হলেও অন্তত কয়েকটা জেনারেশন চলে যাবে। আমরা থাকবেনা তখন।
সম্পদ যে বিনিময় করা যায় এই জিনিস মানুষ প্রথম বুঝেছিলো যিশুর জন্মের ১ লাখ ২৮ হাজার বছর আগে। তখন থেকে মানুষ দ্রব্য বিনিময় শুরু করেছিলো। মানে একটা অর্থনৈতিক ধারার জন্ম হয়।
আমরা যদি অর্থ, মুদ্রা বা ব্যাঙ্ক এসবের ইতিহাস দেখি তাহলে পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম ব্যাঙ্ক আইডিয়ার জন্ম হয়ে ছিলো ব্যাবিলনে যেটাকে আমরা এখন ইরাক নামে চিনি। ব্যাঙ্ক মানে এমন কিছু যেখানে মানুষ তাদের সম্পদ সংরক্ষণ করে রাখতো যেমন শস্য, পশু, কৃষিকাজে ব্যবহৃত হাতিয়ার এবং মূল্যবান ধাতু ইত্যাদি।
এই ব্যাঙ্ক আবিষ্কারের ঘটনা ৩০০০ খ্রিষ্টপূর্বের ঘটনা। মানে যীশুর জন্মের ৩ হাজার সাল আগে।
ঐ যুগে বিনিময় হিসেবে ছিল পণ্য to পণ্য। পশু দিয়ে শস্য বা শস্য দিয়ে পশু এভাবে ব্যবসায়িক ধারা বা অন্য দ্রব্য বিনিময় চলতে থাকে।
পণ্য to পণ্য থেকে মানুষ মুদ্রা হিসেব কড়ির ব্যবহার শুরু করলো ১৩০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। তখন কড়ি হয়ে গেল বিনিময়ের প্রধান মাধ্যম। তখন এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপে মুদ্রা হিসেবে কড়ির ব্যবহার হইতে থাকলো। সময় এগোতে থাকলো।
বিনিময়ের জন্য প্রথম ধাতব মুদ্রার ব্যবহার শুরু করলো চীন। ১০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ আগের কথা সেটা। চীনের পশ্চিম ঝু রাজবংশ ধাতব মুদ্রা নিয়ে আসলো। আমার পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে এই পরিবর্তনকে তখন পর্যন্ত সবচাইতে যুগান্তকারী বলা যায়। কারন পণ্য দিয়ে পণ্য নেয়া বা কড়ির ব্যবহার থেকে ধাতব মুদ্রার প্রচলনের মাধ্যমে অর্থের মানদণ্ড নির্ধারণ করা সম্ভব হলো।
পশ্চিমা বিশ্বে ধাতব মুদ্রা এসেছে ৬৮৬ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে। লিডিয়ার রাজা আলিয়াত্তেস প্রথম পশ্চিমা বিশ্বের ধাতব মুদ্রার ব্যবহার চালু করেন। লিডিয়া হচ্ছে বর্তমান তুরুষ্ক।
একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক যদি খেয়াল করি তাহলে দেখা যায় যতগুলো যুগান্তকারী পরিবর্তন আমরা দেখি তার বেশিরভাগই চীনাদের আইডিয়া থেকে।
কারণ ধাতব মুদ্রা থেকে কাগজের মুদ্রাতে আসার আইডিয়াও চীনাদের। তাদের চলমান মুদ্রা ধাতব তৈরির জন্য যেই ধাতু ব্যবহার হতো তার ঘাটতি দেখা দিলে তারা কাগজে মুদ্রার প্রচলন শুরু করে দিল। এই ঘটনার পিছনে হাত ছিল চীনের সম্রাট হিউয়েন সাঙ সর্বপ্রথম ধাতব থেকে কাগজে মুদ্রার প্রচলন শুরু করেন। আর এই যুগান্তকারী ঘটনার সাল হচ্ছে ৮০৬ খ্রিষ্টাব্দে
ওহ আচ্ছা, আরেকটা মজার ব্যাপার হলো কাগজ যে মুদ্রা এই জিনিস ইউরোপ জানতে পারলো কাগজে মুদ্রা আবিষ্কারের আরো ৪০০ বছর পরে মার্কোপোলো ১২৭৫ খ্রিষ্টাব্দে চীন গিয়ে দেখে এই ঘটনা।
এরপর ১৬৬১ সালে ইউরোপে সুইডেন প্রথম দেশ যারা কাগুজে মুদ্রার প্রচলন করে।
আপনি এই পরিবর্তনকে ৫ মিনিটের লেখায় পড়ে অনুধাবন করতে পারেন কিন্তু এই পরিবর্তনের পিছনে হাজার হাজার বছর সময় লেগেছে। তাহলে প্রশ্ন কাগজের মুদ্রা থেকে ডিজিটাল মুদ্রায় আসতে আমাদের কত সময় লাগবে।
সেই দিন কবে আসবে যখন রিজার্ভ ব্যাঙ্কে ডলারের পরিবর্তে ক্রিপ্টো কারেন্সি জমা থাকবে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা হবে ক্রিপ্টো।
ক্রিপ্টো কারেন্সির যেই আইডিয়া সেটা পণ্য to পণ্য থেকে কড়ি বা কড়ি থেকে ধাতবে আসার মত যুগান্তকারী ঘটনা।
আমরা দেখে যেতে পারি আর না পারি, তবে একদিন হয়তো আসলেই ক্রিপ্টো হবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা। সেটা কখন হবে আমরা কেউ বলতে পারিনা।
তবে এরকম কিছু যদি হয় তাহলে দেখা যাবে চীনারা এর জন্য দায়ী। ডলারকে পিছনে ফেলতে তারা অনেক কিছুই করতে পারে, আর ক্রিপ্টো কারেন্সির ব্যবহার শুরু করে তারা সেই কাজ করতে পারে। আবার ক্রিপ্টো ব্যবহার করলে চীনা সরকারের যেই নজরদারি প্রক্রিয়া সেইটাতেও বাধা তৈরি হবে। হ্যা, সেই সমস্যাও হয়তো তারা সমাধান করবে।
এখন কথা হচ্ছে এত এত ক্রিপ্টো কারেন্সির মধ্যে কোন কারেন্সিটাকে আমরা জন মানুষের কারেন্সি হিসেবে ধরতে পারি ? যেটাকে মানুষ কাগজের মুদ্রার পরিবর্তে ব্যবহার করবে। কোন কারেন্সি যা খুব সাধারণ কোনো মানুষ ব্যবহার করতে পারবে।
বিটকয়েন, ইথিরিয়াম, Pi নাকি অন্যকিছু।
এই প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা হবে পরবর্তী ব্লগে। ততদিন ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মার্চ, ২০২১ রাত ২:৩৭