somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শ্রী রমেশ্চন্দ্র মুজুমদারের ‘ বাংলাদেশের ইতিহাস’ গ্রন্থের ভূমিকাঃ আবশ্যক বিতর্ক

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“ইতিহাসের দিক হইতে পূর্ববঙ্গের ‘বাংলাদেশ’ নাম গ্রহনের কোন সমর্থন নাই। ‘বাংলা’র পূর্বরূপ ‘বাঙ্গালা’ নাম মুসলমানদের দেওয়া – নামটি বাংলার একটি ক্ষুদ্র অংশের নাম ’বঙ্গাল’ শব্দের অপভ্রংশ, ইহা ‘বঙ্গ’ শব্দের মুসলমান রূপ নহে। মুসলমানেরা প্রথম হইতেই সমগ্র বঙ্গদেশকে মুলুক বাঙ্গালা বলিত। চতুর্দশ শতাব্দী হইতেই ‘বাঙ্গালা’ (Bangalah) শব্দটি গৌড় রাজ্য বা লখনৌতি রাজ্যের প্রতিশব্দরুপে বিভিন্ন সমসাময়িক মুসলিম গ্রন্থে ( যেমন ‘সিরাত- ই- ফিরোজ শাহী’ ) ব্যবহৃত হইয়াছে। পরে হিন্দুরাও দেশের এই নাম ব্যবহার করেন। পর্তুগীজরা যখন এদেশে আসেন তখন সমগ্র ( পূর্ব পশ্চিম- উত্তর- দক্ষিন) বঙ্গদেশের এই ‘বাঙ্গালা’ নাম গ্রহন করিয়া ইহাকে বলেন ‘Bengala’ পরে ইংরেজরা ইহার ঈষৎ পরিবর্তন করিয়া লেখেন Banglah । সুতরাং দেখাযাইতেছে যে ইংরেজের আমলে যে দেশ Bengal বলিয়া অভিহিত হইত, মুসলমান শাসনের প্রথম হইতেই সেই সমগ্র দেশের নাম ছিল বাঙ্গালা-বাংলা। সুতরাং বাংলাদেশ ইংরেজ আমলের Bengal প্রদেশের নাম- ইহার কোন এক অংশের নাম নয়। বঙ্গদেশের উত্তর-দক্ষিন-পূর্ব-পশ্চিম সকল অংশের লোকেরাই চিরকাল বাঙ্গালী বলিয়াই নিজেদের পরিচয় দিয়াছে, আজও দেয়। ইহাও সেই প্রাচীন বঙ্গাল ও মুসলমানদের মুলুক ‘বাঙ্গালা’ নামই স্মরণ করাইয়া দেয়। আজ পশ্চিমবঙ্গের লোকেরা বাঙ্গালী বলিয়া পরিচয় দিতে পারিবে না ইহাও যেমন অদ্ভুত, অসঙ্গত ও হাস্যকর, ‘বাংলাদেশ’ বলিলে কেবল পুরববঙ্গ বুঝাইবে ইহাও তদ্রুপ অদ্ভুত, অসঙ্গত ও হাস্যকর।
দীর্ঘকাল ধরিয়া বাঙ্গালা, বাংলাদেশ, বাঙ্গালী শব্দগুলি সমগ্র Bengal বা বাংলা অর্থে ব্যবহৃত হওয়ার পর আজ হঠাৎ কেবলমাত্র পূর্ববঙ্গকে ( যাহা আদিতে মুসলমানদের ‘বাঙ্গালা’ রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিলোনা – ‘বঙ্গ ওয়া বাঙ্গালাহ’ তার প্রমান ), বাংলাদেশ বলিতে হইবে এরূপ ব্যবস্থা বা ঘোষণা করার অধিকার কোন গভরমেনটের নাই। উপরে উল্লিখিত কারনগুলি ছাড়া আরও একটি কারনে ইহা অযৌক্তিক । অবিভক্ত বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সাহিত্য ও সংস্কৃতির গঠনে যাহারা বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী অধিবাসী তাঁহাদের পূর্বপুরুষদের অবদানও যথেষ্ট ছিল। সুতরাং পশ্চিমবঙ্গকে বাদ দিয়া ‘বাংলাদেশ’ ও ইহার অধিবাসীদের বাদ দিয়া ‘বাঙ্গালী জাতি’ কল্পনা করা যায় না। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য লর্ড কারজন যখন বাংলাকে দুই ভাগ করিয়াছিলেন, তখন পশ্চিম অংশেরই নাম রাখিয়াছিলেন Bengal অর্থাৎ ‘বাংলা’ । বর্তমান বাংলাদেশ তখন পুরববঙ্গ ( East Bengal) বলিয়া অভিহিত হইত।
বর্তমান পূর্ববঙ্গের রাষ্ট্রনায়কগণ ইতিহাস ও ভূগোলকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করিয়া ভাবাবেগের দ্বারা পরিচালিত হইয়া তাঁহাদের দেশের ‘বাংলাদেশ’ নাম গ্রহন করিয়াছেন। ভারত সরকার ও পশ্চিমবঙ্গ সরকার ইহার কোন প্রতিবাদ করেন নাই- ইহার কারন সম্ভবত রাজনৈতিক। সাধারণ লোকে কিন্তু ‘বাংলাদেশ’ নামের অর্থ পরিবর্তনকে সম্পূর্ণ গ্রহন করিতে পারে নাই। তাহার প্রমান- এখনও পশ্চিমবঙ্গের লোকরা দৈনন্দিন কথাবার্তায় ও লেখায় পশ্চিমবঙ্গকে ‘ বাংলাদেশ’ নামে অভিহিত করে; ভারতের আন্তঃরাজ্য ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী পশ্চিমবঙ্গের দলগুলি ‘বাংলা দল’ নামে আক্ষায়িত হয় এবং পশ্চিমবঙ্গে হরতাল পালিত হইলে তাহাকে ‘বাংলা বন্ধ’ বলা হয়। আমরাও বাংলা নামকে উৎখাত করার বিরোধী। সেইজন্য বর্তমান গ্রন্থের ‘ বাংলাদেশের ইতিহাস’ নাম অপরিবর্তিত রাখা হইল। শুধু পূর্ববঙ্গ ও পশ্চিমবঙ্গ নহে- ত্রিপুরা এবং বর্তমান বিহার ও আসাম রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত বাংলা-ভাষী অঞ্চলগুলোকেও আমরা ‘বাংলাদেশ’ এর অন্তর্গত বলিয়া গণ্য করিয়াছি এবং এই সমস্ত অঞ্চলেরই ইতিহাস এই গ্রন্থে আছে।”
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৫৭
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×