বনানীর এফ আর টাওয়ার এর আগুনে পুড়ে আমি মারা গেছি আজ বেশ কয়েকদিন হলো , আগুনে পুড়ে মরার সময় যে কঠিন কষ্ট আমি পেয়েছি এখন আর সেই কষ্ট নেই , মরার পরে আমার আত্মা বাতাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে , আমি বাতাসের মত ভেসে ভেসে সবজায়গায় ঘুরতে পারছি , যদিও আমার এই অদৃশ্য শরীর কেউ দেখতে পাচ্ছে না । মজার বেপার হলো আমি ঠিক জীবিত মানুষের মতো সবকিছু দেখতে পারছি,শুনতে পারছি কিন্তু আমার কোনো অস্তিত্ব কেউ টের পাচ্ছে না । কেউ টেরপাচ্ছে না কথাটা মনে হয় ভুল বললাম কারণ কাল রাতে যখন মিরপুরে একটা ফাঁকা মাঠের কোনায় ভেসে বেড়াচ্ছিলাম রাতজাগা কিছু নেড়িকুত্তা আমার দিকে মুখ ফিরিয়ে ঘেউ ঘেউ করে ডাকতে শুরু করলো ।প্রাণীদের মনে হয় কিছুটা অতীন্দ্রিয় ক্ষমতা থাকে ।গতকাল বাসায় গিয়েছিলাম বাবা উপুড় হয়ে পেপার পড়ছেন মুখ টা বেশ মলিন , আর মা দেখলাম বেলা বারোটায় ঘুম ডাক্তার মনে হয় কড়া ডোজের ঘুমের ওষুধ দিয়েছেন ।
ভাসতে ভাসতে রাজউক এর অফিসে গেলাম , ওখানে অনেকেই দেখলাম এইসব নিয়েই কথা বলছেন । মন্ত্রীর ব্রিফিং এর সময় ঘুমানো ওই সদস্য দেখলাম বেশ বিমর্ষ , পিওন কে ধমকের সাথে চা দিতে বললেন কিন্তু চা তার টেবিলে ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে সেদিকে খেয়াল নেই ।কাকে যেন মোবাইল এ বললেন সাবধান ফাইল গুলো কাউকে দেখিও না ,শালার সোশ্যাল মিডিয়ার জ্বালায় মহা বিপদে আছি। একজন পিওন দেখলাম রাজউক ভবনের পাশে অনুমতি বিহীন চায়ের দোকানে একজন বাড়িওয়ালা কে বলছে ভাই এই টাকায় হবে না এখন অনেক কে ম্যানেজ করতে হচ্ছে আরো পঞ্চাশ না দিলে আপনার বিল্ডিং এর তিনতলা থেকে উপরের চার তোলা ভেঙে ফেলতে হবে । যেখানে বড় অফিসারদের দুশ্চিন্তায় থাকার কথা সেখানে একজন দেখলাম খোশ মেজাজে ফোনে গিন্নিকে বলছেন শোনো অনেক খরচ করে আমি পরিদর্শনের ১৪ টিমের একটার প্রধান হয়েছি , সব ই আল্লাহর ইচ্ছা বুঝলে গিন্নি এইবার মালয়েশিয়ায় বাড়ি কিনে ফেলবো । আগুনেই কপাল খুলে গেলো ।মনটা খারাপ হয়ে গেলো এইসব ছোট মনের বড় মানুষের চিন্তা কথা শুনে ।
মন খারাপ করে বাতাসে ভাসতে ভাসতে চলে এলাম মিরপুর ফায়ার সার্ভিস অফিসে ওই লোকটাকে দেখলাম যে জীবন বাজি রেখে আমাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিল মুখটা মলিন , পাশের আর একজনকে কে বলছে ভাই নামাজ পরে আল্লাহর কাছে দোআ করছি আর যেন কোনো মায়ের কোল খালি না হয় ।দুইজন দেখলাম ফুটো হয়ে যাওয়া পানির হোস পাইপ সারতে সারতে গজ গজ করছে ,বিষয় টা দেখ আমরা ফুটা পাইপ ঠিক কইরা কাম করি হালায় পাইপ কেননের পয়সা দেয় না আর পিচ্চি পাইপের উপর বইয়া লাখ টাকা পাইয়া গেলো , আমগো বাসায় খাওনের পয়সা নাই হেইডা কেউ দেহে না ।
মনটা খারাপ করে চলে এলাম পাশেই দশনম্বর গোলচক্করে মরার আগে মাঝে মাঝে এখানে যেতাম , সবকিছু আগের মতোই সবাই ব্যাস্ত ,একজন ট্রাফিক সার্জেন্ট দেখলাম কেছ দিচ্ছে হেলপার এসে বললো স্যার টাকা দিচ্ছি কেছ দিয়েন না সার্জেন্ট টা কোনো কথা না শোনার মত নির্লিপ্ত ভাবে কেছ দিয়ে দিলো , এটা দেখে মনে হলো আসলে দেশে এখনো সৎ লোক আছে , সবাই ঘুষখোর না ।ওভারব্রিজ এর উপর আগের মেয়র এর লাগানো বাগান বিলাস গাছ গুলি অযত্নে পানির অভাবে শুকিয়ে যাচ্ছে উনি বেঁচে থাকলে মনে হয় এমনটি হতো না ।আমার খুব স্বপ্ন ছিল একটা বাড়ি হবে যেখানে লাল বাগান বিলাস আগুনের মতো ফুটে থাকবে সেটা না হয়ে আমি নিজেই আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে গেলাম।আমার মৃত্যু কিছুই বদলাবে না শুধু ফেসবুকে একটু আলোচনা আর পত্রিকার সংবাদ হবে ।আমাদের ঘুনে ধরা সমাজে বেঁচে থাকাটাই একটা অদ্ভুত বেপার , মৃত্যু যেন স্বাভাবিক একটা নিয়মের মত হয়ে গেছে ।মরার পরে এইটুকু বুঝলাম যে মরে আর যার পরিবারের লোকেরা মরে তাদের খুব অসহায় আর দুঃখী সময় কাটে ।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা এপ্রিল, ২০১৯ রাত ৯:৫৮