তিলোত্তমা ঢাকা শহর চৈত্র মাসের বৃষ্টিতে ডুবিয়া গিয়াছে , সিঙ্গাপুর কে যে উন্নয়নে আমরা ছাড়াইয়া গিয়াছি তাহা এখন আর ব্যাখ্যা করিবার প্রয়োজন নাই কারণ সিঙ্গাপুর কেন পৃথিবীর কোনো দেশের রাজধানী এইভাবে তাহাদের নাগরিকদের জন্য খোলা সুইমিং পুলের ব্যবস্থা অদ্যবধি করিয়া দেখাইতে পারে নাই পরিবেও না , এমনকি খোদ ভেনিস শহরেও আপনি এমন পচা ড্রেনের পানি পাবেন না সেটা হলফ করিয়া বলিতে পারি । ড্রেনের পচা পানিতে আপনার পুরোনো খোস পঁচড়া চুলকাইয়া মজা লইবার মোক্ষম সুযোগ ফিরিয়া আসিবে ।
প্রাচ্যের ভেনিস বলিয়া আমরা এখন ঢাকা কে দাবি করিতে পারি । যাহারা এই জলাবদ্ধতা লইয়া সমালোচনা করেন তাহারা কেন বুঝিতেছেন না পানির আর এক নাম জীবন ।পানি পানি করিয়া যাহারা পদ্মা বা তিস্তার কথা লিখেন সেই শহুরে বুদ্ধিজীবীরা এখন পানির নাম শুনিলে চমকাইয়া উঠিবেন । আকাশে মেঘ দেখিলে পানির ভয়ে জলাতঙ্ক রুগীর মত আচরণ করিবেন ।
দেখুন খোদ চৈত্র মাসে নদী শুকাইয়া গেলেও ঢাকায় আপনি নদীমাতৃক বাংলাদেশ এর রূপ উপভোগ করিতেছেন সেটাই বা কম কিসে ? আমরা একমাত্র দেশ যাদের ফ্লাইওভার এ ওয়াটার বাস চালানো যায় , তা মশাই এই সুযোগ আপনি কোথায় পাবেন বলুন ?
অবস্থাদৃষ্টে মনে হইতাছে মানুষ নৌকার প্রয়োজনীয়তা বুঝিয়া এখন হইতে নৌকা দেখিলেই তাহাতে ভালোলাগায় খুশিতে বা ঠেলায় (ফেসবুক ট্রল ) দাঁড়াইয়া থাকিবেন । বিরোধী দলের ষড়যন্ত্রে কেহ কেহ রাস্তায় ধানের চাষের চেষ্টা করিয়াছেন ।এইবার আর রাস্তা নয় ফ্লাইওভার আর এক্সেলেটর লাগানো ওভারপাস এ পানি , এইগুলি কংক্রিট ও লোহার তৈরী সেখানে ধান লাগাইবার কিঞ্চিৎ সুযোগও নাই ।
রাত্র জাগিয়া রক্ষা করা গণতন্ত্রের স্বার্থে কোটি টাকা দিয়া জলকামান কেনা হইয়াছে । জলকামান এ রঙিন জল নয় ড্রেনের কালো ময়লা জল ভরিব আর মারিবো, কি মজা , কি মজা যার শরীরে এইজল একবার লাগিবে তাহাকে হুইল পাউডার দিয়া ধুইলেও শরীরের রংঅনেকদিন আফ্রিকার মানুষের মত হইয়া থাকিবে। কয়লা ধুইলে ময়লা যাইতে পারে কিন্তু আমাদের ঢাকার ময়লা পানি পরিষ্কার করিবে এমন বস্তূ এখনো আবিষ্কার হয় নাই ।
একটি বিশেষ দল এইসব বুঝিয়া মনে হয় গামছা প্রতীক বাছিয়া লইয়াছেন , পানির ঠেলা হইতে ইজ্জতের রক্ষা করিবার একটাই সম্বল গামছা ।
পানির কারণে যানবাহন গুলো বেপরোয়া গতিতে চলিতে পারিবে না ফলে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকটাই কমিয়ে যাইবে । ভালো রাস্তা গুলো নষ্ট হইবে আর নুতন টেন্ডার হইবে , কে খুশি না বলুন ঠিকাদার , প্রকৌশলী , বাঁশ বিক্রেতা থেকে অতি পাতি নেতারা সবাই ন্যায্য হিস্সা পাইবে ।
ঢাকার প্রাচীন নাম পানামা নাগরী ছিল, সেই ঐতিহ্য ফিরিয়া আসিতেছে আমরা ঢাকাকে উন্নয়ন করিয়া পচাপানি নাগরী হিসাবে প্রতিষ্ঠা করিয়াই ছাড়িব । বর্ষা কালে আদর করিয়া ডাকিব জলঢাকা ।ইতোমধ্যে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ দূষিত বায়ু ও পানির নাগরী হিসাবে আমরা নিজেদের অধিকার স্বগৌরবে প্রতিষ্ঠা করিয়া লইয়াছি ।ঢাকা এতটাই পরিষ্কার যে খোদ মেয়র কে ময়লা ফেলিয়া তাহা পরিষ্কার করিয়া দেখাইতে হয় । যদিও অপয়া ফেসবুকে বিষয়টা গোপন করিবার ব্যার্থতার জন্য প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা বরখাস্ত হইয়াছেন ।
খোঁড়া খুড়ি তে আমরা গিনেস বুকে নাম উঠাইবো এতে কারো সন্দেহ থাকলে ঢাকা ঘুরিয়া দেখুন । একটু অসাবধান হইলে নিজেই খোঁড়া হইয়া যাইবেন ।
এই যে উন্নয়নের বন্যা অনেকক্ষন ধরিয়া তাহা দেখিতেই তো ট্রাফিক জ্যাম , ভাড়া দিবেন একবার বসে থাকবেন সারাদিন এই সুযোগ কোন শহরে আছে বলুন? সুতরাং উন্নয়নের পক্ষে থাকুন তাহা হইলে দুইহাজার একচল্লিশ সালে দেখিবেন উন্নয়ন কাহাকে বলে কত প্রকার ও কি কি ।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই এপ্রিল, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৫১