somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনায় অটোয়াবাসী বাংলাদেশীদের শোক ও সং‌হতি প্রকাশ

১০ ই মার্চ, ২০০৯ রাত ১১:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঢাকার পিলখানা বিডিআর সদর দফতরে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক নৃশংস ঘটনায় আর সকলের মতই হতবাক ও মর্মাহত হন কানাডার রাজধানী অটোয়া অঞ্চলে বসবাসরত বাংলাদেশীগণ। এ প্রেক্ষিতে গত ৮ই মার্চ ২০০৯, স্থানীয় কার্লটন ও অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রীগণ এবং ক'জন স্থানীয় বাংলাদেশী মিলে এক নাগরিক শোকসভার আয়োজন করেন কার্লটন বিশ্ববিদ্যালয়ের বেল থিয়েটার মিলনায়তনে। অটোয়াবাসী বাংলাদেশীরা বহুলাংশে সাড়া দেন জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে ঐক্যবদ্ধ হবার উদাত্ত আহবানে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে সমবেত সকলে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। পরে ঘটে যাওয়া নির্মম শোকাবহ এই ঘটনার আলোক-চিত্রভিত্তিক একটি স্লাইড প্রদর্শিত হয় শোক সংগীতের আবহে। অটোয়াবাসীদের মধ্যে যাঁরা তাঁদের নিকটাত্মীয়, বন্ধু বা সহকর্মীদের হারিয়েছেন তাঁরা স্মৃতিচারণ করেন হারানো প্রিয়জনের সাথে কাটানো আবেগঘন মুহূর্তগুলোর। বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকে।

অনুষ্ঠানে নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে এবং ঘটনার স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষী ব্যক্তিদে দৃষ্টান্তমূক শাস্তি দাবী করে স্মারকলিপি পাঠ করা হয়। এতে এই অশান্ত সময়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে ঐক্যের শক্তিতে বলীয়ান হওয়ার এবং সদ্যপ্রতিষ্ঠিত গণতন্ত্রকে সুসংহত করার আহবান জানানো হয়। উপস্থিত সকলের স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিটি পরে বাংলাদেশ দূতাবাস মারফত বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়। অনুষ্ঠান শেষে সকলে সমবেত ভাবে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেন।

===================================================

স্মারকলিপি

প্রিয় বাংলাদেশের জনসাধারণ,

গত ২৫শে ফেব্রুয়ারী ২০০৯ ঢাকার পিলখানাস্থ বাংলাদেশ রাইফেলস সদর দপ্তরে ঘটে যাওয়া অনাকাংক্ষিত মর্মান্তিক ঘটনার প্রেক্ষিতে আমরা কানাডার অটোয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশী নাগরিক বৃন্দ একটি নাগরিক শোক সভায় মিলিত হয়েছি। এই অপ্রীতিকর ধ্বংসাত্মক ঘটনায় মর্মান্তিক ভাবে নিহত বাংলাদেশের ৫৮ জন দক্ষ সেনা কর্মকর্তা, তাঁদের পরিবারের পাঁচ সদস্য, সীমান্তরক্ষী বাংলাদেশ রাইফেলস এর ছয়জন ও সেনাবাহিনীর একজন সহ মোট সাতজন চৌকষ সৈনিক এবং রিকশাচালক ও ছাত্রসহ তিন জন নিরীহ পথচারীর সকলের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি। এছাড়া এখনো নিখোঁজ রয়েছেন হতভাগ্য চারজন সেনা কর্মকর্তা। নিহত ও নিখোঁজ সকলের পরিবাবরবর্গ যে কী গভীর শোকে আচ্ছন্ন তা বর্ণনা করার ভাষা আমাদের নেই। শুধু এটুকু আপনাদের জানাতে চাই, আপনাদের হৃদয়ের রক্তক্ষরণ আমাদেরকেও ব্যাথিত করে, আপনাদের শোকে আমরা সমব্যাথী, আমরা আপনাদের পাশেই আছি।এছাড়া আমরা এ ঘটনায় আহত সকলের আশু আরোগ্য কামনা করছি।

এই অকল্পনীয় বিধ্বংসী ঘটনায় জাতি তার সেরা ক’জন সন্তানকে হারিয়েছে। জাতির যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে, তাতে আমরা মর্মাহত ও বাকরুদ্ধ। আজ বাংলাদেশের বড় দুর্দিন। অতীত আমাদের শিখিয়েছে, দুর্দিনে এই জাতি সকল বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হতে জানে। এই অশান্ত সময়ে, জাতির এই চরম দুর্দশার সময়ে আমরাও তাই সমস্ত আবেগ, ক্রোধ, প্রতিহিংসার ঊর্ধ্বে উঠে শান্তির পক্ষে, মিলনের পক্ষে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের প্রতি একাত্মতা ঘোষনা করছি।

জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সরকার এবং তার সহযোগী সকল সামরিক, আধা-সামরিক ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং প্রচার মাধ্যম সহ সকলে যে বিচক্ষণ ও দায়িত্বশীল ভূমিকা রেখেছেন তা প্রশংসনীয়। আমরা চাই, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে যথাসম্ভব স্বচ্ছতার সাথে দ্রুত এই আত্মবিধ্বংসী ঘটনার মূল উদঘাটিত হোক এবং দেশের প্রচলিত আইনে অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। এই ঘটনার পেছনে দীর্ঘমেয়াদী কোন বৈষম্য বা ব্যর্থতা দায়ী থাকলে তার প্রতিকারের ব্যবস্থা করা হোক। সেই সাথে,আমরা বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা, প্রতিরক্ষা বাহিনীর অন্তর্ঘাত, রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন, এবং রাজনৈতিক বিদ্বেষ প্রসূত সকল হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ তদন্ত এবং বিচার দাবী করছি।

আমরা চাইনা কোন অশুভ শক্তির ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে এমন আর কোন আত্মঘাতী সংঘাতে লিপ্ত হোক। দীর্ঘদিনের অস্বাভাবিক অবস্থা পেরিয়ে বাংলাদেশ আজ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। আমরা চাই দেশি-বিদেশি সকল চক্রান্ত প্রতিহত করে জয়ী হোক, দীর্ঘজীবি হোক বাংলাদেশের বহু ত্যাগে অর্জিত এই গণতন্ত্র।

কার্লটন বিশ্ববিদ্যালয় ও অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ
অটোয়া-প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিকবৃন্দ
৮ই মার্চ ২০০৯, অটোয়া, কানাডা

===========================================
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মার্চ, ২০০৯ ভোর ৪:৩৭
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×