somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাকড়াসা পর্ব

২৩ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ১১:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক দেশে ছিল এক মাকড়াসা। সে ছিল খুব পেটুক। খাওয়ার গন্ধ পেলে হয়, সেখানে উপস্থিত হতে মুহুর্ত বিলম্ব হত না। তার আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধু-বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশী সবাই এ বিষয়ে অবগত ছিল এবং অনেকেই কোন ভোজ অনুষ্ঠান থাকলে তাকে দাওয়াত দিত। কিন্তু পরিস্থিতি ক্রমেই নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছিল কারণ মাকড়াসার লোভ দিন দিন বেড়েই চলছিল।

শেষ পর্যন্ত অবস্থা এমন দাড়াল যে কেউ তাকে দাওয়াত দিক বা না দিক সে ভোজে এসে উপস্থিত হত। শুধু তাই না কোন ধরনের সৌজন্যের তোয়াক্কা না করে সে এমনভাবে খেত যে নিমন্ত্রিত অতিথিদের খাবারে টান পড়ে যেত।

সবাই বাধ্য হয়ে কোন ভোজ অনুষ্ঠান আয়োজন করলে অতি গোপনে করতো যাতে মাকড়াসা না জানতে পারে।

মাকড়াসার ছিল কিছু অর্বাচীন এবং লোভী ছেলেপুলে ও আত্মীয়-স্বজন। তারাও সুযোগে মাকড়াসার সাথে থেকে খাবারের ভাগ নিত। এরা মাকড়াসাকে গোপন ভোজের খবর গোপনে জানিয়ে দিত। সবাই বাধ্য হয়ে মাকড়াসা এবং তার অর্বাচীন-পেটুক-লোভীর দলকে এড়িয়ে চলতে শুরু করল এবং দুর-দুরান্তে যেয়ে ভোজের আয়োজন করতে শুরু করল।

পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ আকার ধারন করল এবং সবাই বাধ্য হয়ে ভোজের আয়োজন বাদ দিতে শুরু করল অথবা একান্ত না হলে অনেক দূরে যেয়ে অতি সংগোপনে আয়োজন করত।

এহেন পরিস্থিতিতে মাকাড়াসার মাথায় হাত দশা। ফাও ভোজের জন্য তার প্রাণ অস্থির হয়ে উঠল কিন্তু ভোজের কোন খবর নেই। মাকড়াসা তার শুভানুধায়ীদের নিয়ে শলা-পরামর্শ করতে বসল। যেমন পীর তেমন তার মুরীদান। ফাও খেয়ে অভ্যস্ত বার হাত লম্বা জিভ নিয়ে তারা তাদের জন্য মানানসই বুদ্ধি দিল।

ঠিক হল মাকড়াসার কোমরে রশি বেধে সবাই চারিদিকে ছড়িয়ে পড়বে এবং ভোজের গন্ধ পাওয়া মাত্র রশিতে টান দেবে। মাকড়াসা টানের দিক লক্ষ্য করে সদল-বলে দ্রুত সেখানে হাজির হবে।

যেমন ভাবা তেমন কাজ। লোভীর দল হাতে রশি নিয়ে রওয়ানা দিল। মাকড়াসা এদিকে জালের কেন্দ্রে বসে পেটে তা দিতে লাগল আর একটুখানি মুচকি হাসল।

অনেক সময় চলে যায় অপেক্ষায় কিন্তু কোন দিক থেকেই টান আসে না! মাকড়াসা অস্থির হয়ে উঠল। কেউই কি ভোজ আয়োজন করছে না? খিদেয় এদিকে পেটে চর পড়ার যোগার।

এমনি সময় মনে হল যেন উত্তর দিক থেকে হালকা টানের ভাজ পাওয়া গেল। মাকড়াসার মুখে হাসি ঝিলিক দিয়ে উঠল। সে নিশ্চিত হবার জন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল। উত্তর দিকের কাবিল মাকড়াসার নড়াচড়ার আভাস না পেয়ে আরো জোরে টান দিল।

মাকড়াসা এইবার উত্তর দিকে যাত্রা শুরু করল। ঠিক তখনই পশ্চিম দিকের কাবিল ভোজের খোজ পেয়ে দিল হ্যাচকা টান। এহেন পরিস্থিতিতে মাকড়াসা যখন উত্তর-পশ্চিম কোনে হেলে পরছিল তখনি দক্ষিণ দিকের কাবিল তার উপস্থিতি জানান দিল। মাকড়াসা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল, যাক বাবা উপুর হয়ে পড়ে সম্মান খোয়াতে হয়নি।

কিন্তু স্বস্তি বেশীক্ষণ স্থায়ী হল না। মাকড়াসা যখন ভাবছে সে কোন দিকে আগে যাবে, কোন দিকের ভোজ বেশী মুখোরোচক হবে, ঠিক তখনই পূব দিকের কাবিল তার কাজের ফলাফল জানাতে দিল বেমক্কা টান। চতুর্মুখী টানে এইবার মাকড়াসার কপালে ঘাম দেখা দিল। সে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিল প্রথম টান যেহেতু উত্তর দিক থেকেই এসেছে কাজেই উত্তরমুখেই আগে যাওয়া যাক।

কিন্তু অন্য কাবিলেরা ছাড়বে কেন? তারা কাজ কম কি করেছে। মাকড়াসা আসছে না দেখে তারা আরো জোরে রশি টানতে শুরু করল। সবার চাপাচাপিতে রশি মাকড়াসার কোমরে চেপে বসতে শুরু করল। এবার জান বাচানো দায়! মাকড়াসা চিৎকার করে আর সবাইকে বলল রশি না টানতে। কিন্তু তার কথা কেউ শুনতে পেল না, কারণ সবাই অনেক দূরে ছিল।

মাকড়াসা আসছে না দেখে সব কাবিল ভাবল দূরত্বের কারণে টান যথেষ্ট জোরে হয়নি হয়তোবা। তাই তারা আরও জোরে টানতে লাগল। ইতিমধ্যে অন্য সমস্ত কাবিলেরাও ঈষাণ, নৈঋত ইত্যাকার নানাবিধ কোন থেকে ভোজের খবর পৌছে দিল।

ইতিমধ্যে মাকড়াসার জেরবার অবস্থা, রীতিমত ছেড়ে দে মা কেঁদে বাচি। কিন্তু কাবিলেরা তো আর জানে না। তারা সমস্ত শক্তি দিয়ে টানতেই থাকল। রশির চতুর্মুখিক বৃত্তীয় টানে মাকড়াসার কোমর এর মধ্যে অতি সরু হয়ে গিয়েছে। টানাটানি আর কিছুক্ষণ চললে খেল খতম।

যাই হোক এ পর্যায়ে গল্পের প্রয়োজনে সমস্ত রশি ছিড়ে যায়, মাকড়াসা হাফ ছেড়ে বাঁচে। কিন্তু ততক্ষণে মাকড়াসার কোমর চিরদিনের জন্য সরু হয়ে গিয়েছে। এই হল মাকড়াসার সরু কোমর রহস্য!

[এটি একটি উপকথা]

শিক্ষাঃ অপকর্মের অভ্যন্তরীন ভারে কর্মা তার প্রাপ্য শাস্তি ভোগ করতে পারে। আমাদের আশে-পাশের গিরগিটি সম্প্রদায় এবং তাদের লটবহরের অপকর্মের ভার আমাদের আশ্বস্ত করে যে গিরগিটিরা তাদের প্রাপ্য শাস্তি পাবে। কিন্তু এই মাকড়াসা-রশি প্রক্রিয়ায় কচ্ছপ সম্প্রদায়ের কোন অবদান নেই এবং এটা অনেকাংশে দৈবের উপর নির্ভশীল। কাজেই কচ্ছপদের উচিত হবে কচ্ছপ-গিরগিটি মিথষ্ক্রিয়ার মাধ্যমে প্রাপ্ত রায়ের প্রয়োগ ঘটিয়ে প্রাপ্য বুঝিয়ে দেওয়া [কচ্ছপ আর গিরগিটির গল্প] দ্রষ্টব্য। এটাই হবে সম্মানজনক অর্জন।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×