এক অতি সুন্দরী ললনা প্লেনে করে নিজ দেশ সুইজারল্যান্ডে যাচ্ছেন। তার পাশের সিটেই বসেছেন একজন শান্ত ও সৌম্য দর্শন পাদ্রি। যথাযথ সম্ভ্রম প্রদর্শনপূর্বক ওই সুন্দরী ললনা পাদ্রিকে জিজ্ঞেস করেন, ‘ফাদার, আমি আপনার কাছে কি একটি অনুগ্রহ প্রার্থনা করতে পারি?’
পাদ্রি জবাব দিলেন, ‘অবশ্যই অবশ্যই পারবে হে আমার চাইল্ড। বলো, তোমার জন্য কী করতে পারি?’
সুন্দরী : ফাদার, সমস্যাটা এখানেই। আমি অনেক টাকা খরচ করে অত্যাধুনিক একটি ‘হেয়ার রিমুভার’ কিনেছি। কিন্তু এর ফলে কাস্টমের ধার্যকৃত ডিক্লারেশন সীমা অতিক্রম করে ফেলেছি। আমি নিশ্চিত, কাস্টম আমার এই অত্যন্ত দামি ও প্রয়োজনীয় জিনিসটি বাজেয়াপ্ত করে ফেলবে। আপনি কি মনে করেন, আপনার এই জুব্বার (cassock) ভেতরে এ দ্রব্যটি লুকাতে পারবেন?
পাদ্রি : অবশ্যই পারব মাই চাইল্ড। কিন্তু আমি যে, মিথ্যে কথা বলতে পারি না।
সুন্দরী : বিশ্বাস করুন ফাদার, আপনার চেহারাটি এত নিষ্পাপ ও শান্ত সৌম্য যে, কাস্টম অফিসার আপনাকে ঘুণাক্ষরেও কোনো রকম সন্দেহ করবে না। কোনো প্রশ্ন করবে না। কাজেই আপনার জন্য কোনো মিথ্যা কথা বলার দরকার পড়বে না।
এটা বলে পাদ্রির হাতে হেয়ার রিমুভারটি ধরিয়ে দিলেন। প্লেনটি বিমানবন্দরে পৌঁছার পর যথারীতি পাদ্রি কাস্টমসের সম্মুখে উপস্থিত হলেন। কিছুটা সন্দেহজনক মনে হওয়ায় কর্তব্যরত কাস্টম অফিসার জিজ্ঞেস করে বসলেন- ‘ফাদার, আপনার কাছে কি ডিক্লেয়ার করার মতো কোনো দ্রব্য রয়েছে?’
পাদ্রি জবাব দিলেন, ‘আমার মাথা থেকে কোমর পর্যন্ত ডিক্লেয়ার করার মতো কোনো দ্রব্য নেই, মাই চাইল্ড।’
এ রকম অদ্ভুত জবাব পেয়ে কাস্টম অফিসার কিছুটা অবাক হলেন। কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, তাহলে কি ধরে নেবো যে, আপনার কোমর থেকে নিচ পর্যন্ত কিছু রয়েছে?
পাদ্রি স্মিত হেসে জবাব দিলেন, তোমার এ ধারণাটি পুরোপুরি মিথ্যা নয়, মাই চাইল্ড। সেখানে একটা মার্ভেলাস স্মল ইনস্ট্রুমেন্ট রয়েছে। ছোট্ট চমৎকার এ বস্তুটি নারীরা অত্যন্ত গোপনে ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু আমি তোমাকে গ্যারান্টি দিতে পারি যে, আমার এ দ্রব্যটি আজতক কোনো নারী কর্তৃক ব্যবহৃত হয়নি!
কাস্টম অফিসার অট্টহাসি হেসে বললেন, ‘চলে যান ফাদার, পরের জন আসেন।’
দেশের প্রথম শ্রেণীর একটি পত্রিকা সংস্কৃতি জগতের এক দিকপালের সাক্ষাৎকার ছাপিয়েছে। মেয়র নির্বাচনে সরকারের অপকীর্তি তুলে ধরে পত্রিকাটি সরকারের যতটুকু বিরাগভাজন হয়েছে, এখন এসব সাক্ষাৎকার প্রচারের মাধ্যমে সে ক্ষতিপূরণ করার চেষ্টা করছে। ‘সব্যসাচী’ নামে অভিহিত এই দিকপাল সহস্র নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে সরকার সমর্থিত মেয়র প্রার্থীদের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি মনে করেন, রাজনীতির জায়গা থেকে নয়, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও বিবেকের জায়গা থেকেই তিনি এ সমর্থনটি জানিয়েছেন। তার সেই সাক্ষাৎকারটি পড়ে ওপরের গল্পটি মনে পড়ে গেল।
ওপরের সুন্দরীকে যে কায়দায় এই ফাদার উদ্ধার করেছেন, অনেকটা একইভাবে বর্তমান সরকারকে উদ্ধার করছেন বুদ্ধিবৃত্তিক, সাংস্কৃতিক ও বিনোদন জগতের কিছু পুরোহিত। শান্ত, সৌম্য ও বাকপটু এই ফাদারের ভূমিকা পালন করেছে মূলত কিছু গণমাধ্যম এবং তাদের আশ্রিত, প্রশ্রয়প্রাপ্ত ও বিশেষ প্রক্রিয়ায় প্রস্ফুটিত কিছু বুদ্ধিজীবী। এই ললনার হেয়ার রিমুভারের মতো সরকারের অনেক ‘দাগ রিমুভার’ জনগণের দৃষ্টিসীমার আড়ালে রেখে দিচ্ছে। এরা অবশ্য সর্বদা এই ফাদারের মতো বুদ্ধি প্রয়োগ করেন না, প্রায়ই (বুদ্ধিবৃত্তিক) লাঠিয়াল সেজে সরকারকে উদ্ধার করেন। টকশোতে প্রতিপক্ষ বক্তার চোখ তুলে ফেলার হুমকি দেন, প্রতিপক্ষ নারী মেয়রকে কাপড় খুলে ফেলার নির্দেশ দেন অথবা পাশে বসা বক্তাকে ক্যামেরার সামনেই হাত দিয়ে আঘাত করে বসেন।
জনগণের বারোটা বাজাতে গিয়ে সরকার নিজেও অনেক বালা-মুসিবতে পড়ে গিয়েছিল। উপরিউক্ত পাদ্রির মতো আমাদের পুরোহিতেরা কথার ভেলকি এবং বিশেষ চেতনার স্ফুলিঙ্গ দেখিয়ে সরকারকে সেসব বেকায়দা অবস্থা থেকে উদ্ধার করেছেন। যখন যে সমস্যা এসেছে, এই ফাদাররা উপরিউক্ত সুন্দরীর হেয়ার রিমুভার লুকানোর কায়দায় তা লুকিয়ে ফেলেছেন। যেসব সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবী এখনো ঘুম থেকে উঠেই বলেন- খাম্বা; তাদের মুখে কখনোই শেয়ারবাজারে ৩৩ লাখ বিনিয়োগকারীর সর্বনাশের কথা, পদ্মা সেতুর মহাকেলেঙ্কারির কথা, হলমার্ক, ডেসটিনি, কুইক রেন্টাল, কালো বিড়াল ইত্যাদির কথা শোনা যায় না।
আর এর পেছনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে এ দেশের গণমাধ্যমের বড় একটা অংশ। বেশির ভাগ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মালিকপক্ষ নিজেদের ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য কিংবা করপোরেট স্বার্থ টিকিয়ে রাখার জন্য নিজ নিজ মিডিয়াকে একধরনের ঘুষ হিসেবে ব্যবহার করেছেন। প্রয়োজনের সময় এরা জনগণের স্বার্থে বা জনগণের পক্ষে কথা না বলে এক প্রকার দানবের পক্ষে দাঁড়িয়ে গেছেন। এই দানবেরা রাষ্ট্রের মৌলিক চরিত্রটিই আজ সমূলে বদলে ফেলেছে। এরা একটি গণতান্ত্রিক (যদিও তাতে খানিকটা ভুলত্রুটি ছিল) রাষ্ট্রকে পুরোদস্তুর পুলিশি রাষ্ট্র বানিয়ে ফেলেছে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


