somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফেবল - দ্য লস্ট চ্যাপ্টারস - আমার ভাল লাগা একটা কম্পিউটার গেম

২৭ শে মার্চ, ২০১০ রাত ৯:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার একটা বদস্বভাব হল, একটা কিছু ভাল লাগলে সেইটা নিয়ে প্যাচাল পাড়তে পাড়তে আশেপাশের মানুষের কান পঁচায়ে দেই। যেমন, ভাল লাগা কোন কম্পিউটার গেম। কয়েকদিন আগেই খেলে সারলাম একটু পুরান একটা গেম - Fable - The Lost Chapters. খেলে নিয়ে কাহিনী বর্ণনা করতে গিয়ে ইতিমধ্যে একজন ননগেমারের কান পঁচিয়েছি, দেখি এখানে আরো কান পাওয়া যায় নাকি :)



খেলার ধরণঃ রোল প্লেয়িং (অর্থাৎ আপনাকে একটি চরিত্র দিয়ে গেমের দুনিয়ায় ছেড়ে দেওয়া হবে, সেখানে আপনি চড়ে বেড়িয়ে আকাম-কুকাম-সুকাম-মারামারি মোটামুটি সবই করতে পারবেন), সাথে কিছুটা অ্যাকশন-অ্যাডভেঞ্চার শ্রেণীতেও পড়ে।

খেলার সময় ও পরিবেশঃ মধ্যযুগের দুনিয়া। যাদুবিদ্যা, রাক্ষস-খোক্কস, দৈত্যদানো, দস্যু সবই আছে। এখানে রাত-দিন হয়, অনেকগুলো গ্রাম আছে, শহরও আছে, আছে অনেকরকম মানুষ।

খেলতে হলে যা লাগেঃ

গেমটা ২০০৬ এ বের হওয়া। তাই এখনকার কম্পিউটারে খেলা খুবই সহজ।

Windows XP
1.4 GHz processor
256 MB System RAM
64 MB shader-capable AGP card
3 GB HDD space
বিস্তারিত এখানে পাবেন।

আগেই বলেছি খেলাটা রোল প্লেয়িং। গেমে আপনি অ্যালবিওন রাজ্যের হিরোদের গিল্ড থেকে একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, পরীক্ষা পাস করা হিরো, মানুষকে সাহায্য করার জন্য আপনাকে পেলেপুষে বড় করা হয়েছে বড় হয়ে আপনি কি করবেন সেটা আপনার ব্যাপার খেলার মজা এখানেই।

গেমটির কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক আছে। তার একটি হল চরিত্র গঠন বা Alignment। খেলা এগোনর সাথে সাথে আপনার চরিত্র গঠন হতে থাকবে। আপনি যত "ভাল কাজ" করবেন, আপনার চরিত্র তত "ফুলের মত পবিত্র" হতে থাকবে। আপনার নাম দিকে দিকে ছড়াতে থাকবে, রাস্তায় মানুষ আপনাকে দেখে আপনাকে কাছে পাওয়ার আনন্দে উল্লাস করবে। আপনি খুব ভাল হলে আপনার মাথার উপরে একটা Halo দেখা যাবে, মাথার চারপাশে তিনটা আলোর প্রজাপতি ঘুরতে থাকবে আপনি কোথাও একটু দাঁড়ালেই। খুব বেশি ভাল হলে মেয়েরা নিজেই বিয়ের প্রস্তাবও দেয়া শুরু করে খেলার প্রথমদিকে তেমন পাত্তা না দিলেও B-)

ভাল হিরো -



"ভাল কাজের" মধ্যে আছে বিপদে-আপদে মানুষকে সাহায্য করা। কোন মায়ের দুষ্ট ছেলে বনে খেলতে গিয়ে উলটাপালটা জিনিস খেয়ে জ্বরে পড়ল, মা আপনাকে এসে বলবে "কিছু একটা কর বাবা! আমার ছেলেকে বাঁচাও"। আপনি স্থানীয় এক ডাইনীর সাথে কথা বলে ওষুধের জিনিস যোগাড় করে দেবেন, ওষুধ তৈরি হলে মাকে দেবেন, ছেলে সুস্থ হয়ে গেলে মা আপনাকে ধন্যবাদ দেবে গদগদ হয়ে।

অথবা, কোন এক দম্পতির বিবাহবার্ষিকীতে ছেলেটির মা একটা উপহার কিনে আসার পথে ডাকাতদের হাতে পড়ে মারা গেল, উপহার লুট হয়ে গেল। আপনি সেটা উদ্ধার করে সেই দম্পতিকে দিয়ে দিন। বেচারা মায়ের ভূত শেষ ইচ্ছাপূরণ দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ধন্যবাদ দিয়ে কবরের ঘুমে ফেরত যাবে, সেই দম্পতিও সুখী।

প্রতিটা ভাল কাজের সাথে আপনার চরিত্রের "Alignment" আরো ভাল হবে, চেহারায় নূর আসবে।

খারাপ হিরো -



চাইলে খারাপও হওয়া যায়। কেমন? ধরেন, কোন ডাকাত দলের সাথে মিলে কোন একটা গ্রাম উজাড় করে দিলেন। বিভিন্ন ট্রেডরুটে বণিকদের মেরে মেরে তাদের ধনসম্পত্তি লুট করলেন। খারাপ হওয়ার সাথে সাথে আপনার চেহারা বীভৎস হতে থাকবে, চূড়ান্ত খারাপে মাথায় শয়তানের মত দুটা শিং গজাবে। মানুষজন আপনাকে দেখে ভয়ে কুঁকড়ে যাবে।

এবার আসি গেমপ্লেতে। গেমটায় নিজের ইচ্ছামত কাজ করে বেড়াতে পারবেন ঠিকই, কিন্তু কাহিনী আগানোর জন্যে আপনাকে নির্দিষ্ট কিছু কাজ বা quest সারতে হবে। এই কাজগুলোর বেশিরভাগ আপনি পাবেন গিল্ড থেকে, যার আপনি আজীবন সদস্য, এবং কিছু কিছু আশেপাশের গ্রাম-শহরের মানুষ থেকে। চোখের সামনে হিরো পেলে মানুষ আর কাকে ধরবে বিপদে?

এই নির্দিষ্ট কাজগুলার মধ্যে ভাল-খারাপ দুইই আছে। আপনি সবই করতে পারেন, কয়েকটা বাদে বাকিগুলোর কোন কোনটা বাদও দিতে পারেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল, প্রতিটা কাজের আছে পুরস্কার - অর্থ ও খ্যাতি। গেমের দুনিয়ায় হিংস্র ডাকাতদল, পাথরের দৈত্য এসবের সাথে লড়াই করে টিকে থাকতে হলে লাগবে ভাল অস্ত্র, মজবুত বর্ম, খাবারদাবার এইসব। কোয়েস্ট গুলো করে যে টাকা পাবেন, তাতে বেশ চলে যায়। প্লাস, কাউকে মারলে তার সাথের যাবতীয় জিনিসপত্র আপনার হয়ে গেল :D

আর খ্যাতি? কিছুই না করে নামের আগে "liberator" টাইপ একটা উপাধি লাগালে মানুষ বিরক্ত হয়ে বলবে, "এহ! কোত্থেকে আসছে মুক্তিদাতা একখান!' তার চেয়ে হিংস্র ওয়্যারউলফের হাত থেকে একটা গ্রামকে বাঁচান, মানুষ নিজেই আপনাকে বলবে "lib-bera-tor!" বা খ্যাতি আরো ছড়ালে অ্যা্রেনায় ডাক পড়বে মল্লযুদ্ধের জন্য, জেতার পরে আপনাকে দুনিয়ায় যে কেউ চিনবে।

চাইলে গেমে ঘরসংসার করার উপায়ও আছে। বিখ্যাত হলে মেয়েরা নিজেরাই আংটি চেয়ে বসবে, অত খ্যাতি না থাকলেও পটানোর চেষ্টা করে দেখতে পারেন, উপহার দিয়ে, সুন্দর কথা বলে, নিজের শৌর্যবীর্য তুলে ধরে সফল হতেও পারেন। বিয়ে করতে হলে লাগবে সেই শহরেই একটা বাড়ি। বিয়ের পরে বউকে খাতির-যত্ন করতে, নিয়মিত উপহার দিতে ভুলবেন না, নাহলে দুদিন পরে শুরু হবে কথায় কথায় ঝারি। আন্তর্জাল ঘেটে দেখলাম, ডেভেলপারদের বাচ্চাকাচ্চা নেওয়ার অপশন রাখারও চিন্তা ছিল, পরে বাদ দিয়েছে।

বিয়ের পরে ডিভোর্সও দেয়া যায় - বউকে দীর্ঘদিন যাবত উপেক্ষায় রাখলে একদিন নিজেই তালাক দেবে, কুইক সলিউশন, বউ পেটান ;) ডিভোর্সের পরে বউ আপনার ওই বাড়িতেই ভাড়া থাকা শুরু করবে।

আমার তিন শহরে তিনখান বউ ছিল - সবকয়জনকেই দেখেশুনে বড় বাড়িতে রেখেছি, কাউকে পিটাইনাই বা ডিভোর্স দেইনাই। এরমাঝে একজন এক শহরের মেয়র, অ্যা্রেনায় আমার বীরত্ব দেখে নিজেই আমার কাছে প্রস্তাব দেন, বিয়ের আগে শহরের লোকজনের মুখে শুনতে পাই তার গোপন কথা- তার বোন একজন গরীব ছেলেকে ভালবাসতো, কিন্তু নিজের আভিজাত্য রক্ষার জন্য মেয়রসাহেবা সেই বোনকে খুন করে লাশ গুম করে ফেলেছেন। আমার সামনে দুটা রাস্তা, মেয়রকে বিয়ে করে ক্ষমতাবান মেয়র বঊ পাওয়া, অথবা প্রমাণস্বরূপ ওই বোনের একটা চিঠি পুলিশকে দেখিয়ে এই কাহিনী ফাঁস করে মেয়রকে হটান, তারপর নিজেই মেয়র হয়ে যাওয়া। ভাবলাম, আগে বিয়ে করেই নেই, তারপর হাটে হাঁড়ি ভাংবো। চিঠি যোগাড় করা মাত্র আমার মেয়র বউ এসে হুমকিধামকি দিয়ে চিঠিটা নিয়ে আমাকে একটা ঘরে আটকে রেখে গেল। বোকার মত কিছুক্ষণ আটকা থাকলাম, এরপর ওই শহরে গেলেই পুলিশচীফ আমাকে জিগেস করে, "মেয়রসাহেবার মন খারাপ কেন? উনারে তুমি কি কইসো?"

গেমের মূল কাহিনী হচ্ছে, শুরুতে আমাদের হিরো এক পিচ্চি ছেলে। মা, বাবা, বড় বোনের সাথে সুখী জীবন। তারপরে একদিন গ্রামে কারা যেন আক্রমণ করে, ছেলেটার বাবা মারা যায়, দুর্বৃত্তরা মাকে নিয়ে যায়, বোন অন্ধ হয়ে জঙ্গলে হারিয়ে যায়। এতিম, অসহায় ছেলেটাকে গিল্ডের এক প্রৌঢ় হিরো আশ্রয় দিয়ে নিয়ে যান গিল্ডে, যাতে সে প্রশিক্ষণ নিয়ে একসময় বড় হিরো হয়, হারিয়ে যাওয়া মা-বোনকে খুঁজে বের করতে পারে।

অনেক লম্বা বর্ণনা দিয়ে ফেললাম। এককথায়, গেমটা ভালো। কাহিনীতে প্যাঁচ আছে, গতি আছে, অনেকরকম তলোয়ার, বর্ম, অনেকরকম স্পেল নিয়ে অনেকরকম শত্রুর সাথে মারামারির মজা আছে। গেমটার কাল্পনিক দুনিয়াটা অনেক বিস্তৃত, তাতে অনেকরকম মানুষের দেখা মেলে। সবচেয়ে মজা হল, কাহিনীর বাধ্যবাধকতার বাইরে গিয়ে অনেক আকাম করা যায়। গেমটার AI খুব ভাল না, কিন্তু এত কিছুর মধ্যে সেটাকে খুব বড় সমস্যা মনে হয়নি।

এত পুরানো গেমের রিভিউ এখানে এতদিনে আমার বদলে আর কেউ লিখলে আমি হয়ত ভাবতাম, "এ এদ্দিনে কই থিক আইল?" কারণ বলি, কম্পু অনেক পুরানো হয়ে যাওয়ায় নতুন গেমগুলা খেলতে পারছিনা, তাই ঘেটেঘুটে পুরান সব গেম খেলছি।

জানিনা কয়জনের কান পঁচাতে পারলাম :) কারো ভাল লেগে থাকলে জানাবেন, খারাপ লাগলেও। অতি অবশ্যই বানান ভুল থাকলে জানাবেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০১০ রাত ১:৪৯
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×